ফোনে প্ল্যান্ট ইনচার্জের সঙ্গে কথা বলে সিকিউরিটি সাহেব অফিসের জিপ আর ড্রাইভার শিউলালকে সঙ্গে দিয়ে দিলেন। প্রথমেই পদ্মা আর তার কাকাকে নিয়ে গাড়ি পৌঁছল বাড়িতে। না, সতী আর সাবিত্রী ফেরেনি! শুকনো মুখ করে পদ্মা আর তার কাকাকে বাড়িতে নামিয়ে পুরুষোত্তম শিউলালকে নিয়ে বার্নপুরের আনাচে কানাচে তন্নতন্ন করে খুঁজল কোনও হাসপাতাল কোনও নার্সিংহোম বাদ গেল না। কোথাও কোন খোঁজ পেল না। বৃষ্টি থামার নাম নেই রাত বাড়ছে ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে। মন চাইছে না তবু নিয়মমাফিক লোকাল থানায় একটা মিসিং ডায়েরি করাতে হল।
শিউলাল জানতে চায়! “অব কীধর?” তখন অনেক রাত। তখনও সমানভাবে বৃষ্টি পড়ে যাচ্ছে। এবার কোথায়? বড় সাংঘাতিক প্রশ্ন! সত্যিই তো কোথায় যাবে পুরুষোত্তম? মেয়েদের না নিয়ে খালি হাতে কীভাবে গিয়ে দাঁড়াবে পদ্মার মুখোমুখি? পুরুষোত্তম চিৎকার করে একটু কাঁদতে চায়! একটা নির্জন খালি জায়গায় গিয়ে অন্ধকারে একটু বসতে চায়! একা একা নিজের ছোটবেলার মুখোমুখি হয়ে সে জানতে চায় কেন এমন হল? কোন অপরাধে এ বিপদ ঘটল? তার ছেলেবেলা তো মিশে আছে দামোদরের কালো জলে।
বৃষ্টি যেন আরও বাড়ল মূহুর্মূহু বাজের ঝলকানি আর ভয়ংকর মেঘের গর্জন। পাড়ের ওপর এক জায়গায় উদ্ভ্রান্তের মতো বসে বৃষ্টিতে ভিজছিল পুরুষোত্তম চোখের জল অবিরল বৃষ্টিধারায় ধুয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ শিউলালের গলায় আর্তচিৎকার শুনলো যেন! ঝা জি!
চমকে ফিরে তাকায় পুরুষোত্তম। সঙ্গে সঙ্গে চারধার ঝলসে যাওয়া তীব্র রূপোলি আলো আর ভয়ংকর শব্দে নদীর আশপাশে কোথাও বাজ পড়ল। আচমকা ভয়ে চোখ বুজে হাত দিয়ে কান ঢেকে ফেলেছিল পুরুষোত্তম। এক মূহুর্তের ধন্ধ কাটতেই মনে হলো নদীর পাড়ে কি কিছু ছিল? এরই মধ্যে শিউলাল বুদ্ধি করে হেডলাইট জ্বালিয়ে জিপটা নদীর পাড়ে নিয়ে এসেছে। হ্যাঁ, হ্যাঁ, কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। পুরুষোত্তম আর শিউলাল কাদা ভেঙে ছুটে গেল জলের কাছাকাছি! হে ঈশ্বর! এতো সতী আর সাবিত্রী! মেয়েদের খুঁজে পাবার পর প্রথমেই আশংকায় বুকটা কেঁপে উঠলো ওরা বেঁচে আছে তো?! পাগলের মতো পুরুষোত্তম কাদামাখা শরীরে প্রাণের চিহ্ন খোঁজে। নাকের শ্বাস পড়ছে কিনা বোঝার চেষ্টা করে। শ্বাস পড়ছে খুব ধীরে।
—বেঁচে আছে, আমার মেয়ে দুটো বেঁচে আছে।
শিউলাল জানতে চায়! “অব কীধর?” তখন অনেক রাত। তখনও সমানভাবে বৃষ্টি পড়ে যাচ্ছে। এবার কোথায়? বড় সাংঘাতিক প্রশ্ন! সত্যিই তো কোথায় যাবে পুরুষোত্তম? মেয়েদের না নিয়ে খালি হাতে কীভাবে গিয়ে দাঁড়াবে পদ্মার মুখোমুখি? পুরুষোত্তম চিৎকার করে একটু কাঁদতে চায়! একটা নির্জন খালি জায়গায় গিয়ে অন্ধকারে একটু বসতে চায়! একা একা নিজের ছোটবেলার মুখোমুখি হয়ে সে জানতে চায় কেন এমন হল? কোন অপরাধে এ বিপদ ঘটল? তার ছেলেবেলা তো মিশে আছে দামোদরের কালো জলে।
বৃষ্টি যেন আরও বাড়ল মূহুর্মূহু বাজের ঝলকানি আর ভয়ংকর মেঘের গর্জন। পাড়ের ওপর এক জায়গায় উদ্ভ্রান্তের মতো বসে বৃষ্টিতে ভিজছিল পুরুষোত্তম চোখের জল অবিরল বৃষ্টিধারায় ধুয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ শিউলালের গলায় আর্তচিৎকার শুনলো যেন! ঝা জি!
চমকে ফিরে তাকায় পুরুষোত্তম। সঙ্গে সঙ্গে চারধার ঝলসে যাওয়া তীব্র রূপোলি আলো আর ভয়ংকর শব্দে নদীর আশপাশে কোথাও বাজ পড়ল। আচমকা ভয়ে চোখ বুজে হাত দিয়ে কান ঢেকে ফেলেছিল পুরুষোত্তম। এক মূহুর্তের ধন্ধ কাটতেই মনে হলো নদীর পাড়ে কি কিছু ছিল? এরই মধ্যে শিউলাল বুদ্ধি করে হেডলাইট জ্বালিয়ে জিপটা নদীর পাড়ে নিয়ে এসেছে। হ্যাঁ, হ্যাঁ, কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। পুরুষোত্তম আর শিউলাল কাদা ভেঙে ছুটে গেল জলের কাছাকাছি! হে ঈশ্বর! এতো সতী আর সাবিত্রী! মেয়েদের খুঁজে পাবার পর প্রথমেই আশংকায় বুকটা কেঁপে উঠলো ওরা বেঁচে আছে তো?! পাগলের মতো পুরুষোত্তম কাদামাখা শরীরে প্রাণের চিহ্ন খোঁজে। নাকের শ্বাস পড়ছে কিনা বোঝার চেষ্টা করে। শ্বাস পড়ছে খুব ধীরে।
—বেঁচে আছে, আমার মেয়ে দুটো বেঁচে আছে।
হঠাৎ শিউলাল সতীর শরীরের ওপর তার পরনের রেনকোটটা ঢাকা দিয়ে দিতেই খেয়াল হল দুবোনের কাদামাখা শরীরে কোনও পোশাক নেই। হতভম্ব পুরুষোত্তমও তড়িঘড়ি নিজের ভেজা রেনকোট দিয়ে সাবিত্রীর আব্রু সামলায়। রেনকোট দিয়ে ঢাকা দেবার আগে সাবিত্রীর গালে গলায় কাঁধে হাতে আঁচড় কামড়ের ক্ষতচিহ্ন দেখে পুরুষোত্তম সতীরও একই অবস্থা। এই দুটি ফুলের মতো কিশোরীর সঙ্গে কী ঘটেছে, কেন তারা বাড়ি ফিরতে পারেনি পুরুষোত্তম ও শিউলাল দুজনেই বুঝতে পারল।
—হাসপাতালে নিয়ে যাব না শিউলাল। আমাদের কোম্পানি ডাক্তারের যে নার্সিং হোম আছে ওখানে নিয়ে চলো।
বয়স্ক ডাক্তারবাবু পুরুষোত্তমকে চেনেন। তিনি একটাও প্রশ্ন করেননি। বলেছিলেন ‘ওরা দুজনেই খুব দূর্বল। এখানেই থাক। সুস্থ হলে বাড়ি নিয়ে যেও।’
একমাস লেগেছিল সুস্থ হতে। পুরুষোত্তম ছুটি নিয়েছিল। সে মনেপ্রাণে চাইছিল দুঃস্বপ্ন কেটে গিয়ে আবার সব আগের মতো হয়ে যাক। মেয়েরা আগের জীবনে ফিরে যাক। পুরুষোত্তম সমাজের মুখোমুখি হতে চায়নি। নোংরা ঘাঁটা সেই সব মানুষদের যারা কাদা ছোঁড়াতেই আনন্দ পায়। সতী সাবিত্রী দুজনেই ক্রমশ সেই রাতের রক্তাক্ত ক্ষতের যন্ত্রণা থেকে শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠছিল ঠিকই কিন্তু মানসিকভাবে সেই আতঙ্ক সেই দম-আটকানো ভয়ঙ্কর স্মৃতির থেকে কিছুতেই নিজেদের বের করতে পারছিল না। এর ওপর শুরু হল পুলিশি তদন্তের নামে প্রহসন। পুলিশের থেকে রোজই কেউ না কেউ এসে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ধর্ষণের সমস্ত বিবরণ এই কিশোরী নির্যাতিতাদের কাছে জানতে চাইতো। অস্বস্তিদায়ক প্রশ্ন করে করে পুরুষোত্তমের মেয়েদের রোজ রোজ বিব্রত করতো। তাদের ভুলতে চাওয়া দগদগে অতীতকে খুঁচিয়ে দিত। সতী-সাবিত্রী এভাবে প্রতিদিন মানসিক ধর্ষণের শিকার হতে থাকলো। পদ্মা জানাল মেয়েরা আর পুলিশের কুৎসিত প্রশ্নের কোনও উত্তর দেবে না। অনেক হয়েছে তদন্ত।
—হাসপাতালে নিয়ে যাব না শিউলাল। আমাদের কোম্পানি ডাক্তারের যে নার্সিং হোম আছে ওখানে নিয়ে চলো।
বয়স্ক ডাক্তারবাবু পুরুষোত্তমকে চেনেন। তিনি একটাও প্রশ্ন করেননি। বলেছিলেন ‘ওরা দুজনেই খুব দূর্বল। এখানেই থাক। সুস্থ হলে বাড়ি নিয়ে যেও।’
একমাস লেগেছিল সুস্থ হতে। পুরুষোত্তম ছুটি নিয়েছিল। সে মনেপ্রাণে চাইছিল দুঃস্বপ্ন কেটে গিয়ে আবার সব আগের মতো হয়ে যাক। মেয়েরা আগের জীবনে ফিরে যাক। পুরুষোত্তম সমাজের মুখোমুখি হতে চায়নি। নোংরা ঘাঁটা সেই সব মানুষদের যারা কাদা ছোঁড়াতেই আনন্দ পায়। সতী সাবিত্রী দুজনেই ক্রমশ সেই রাতের রক্তাক্ত ক্ষতের যন্ত্রণা থেকে শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠছিল ঠিকই কিন্তু মানসিকভাবে সেই আতঙ্ক সেই দম-আটকানো ভয়ঙ্কর স্মৃতির থেকে কিছুতেই নিজেদের বের করতে পারছিল না। এর ওপর শুরু হল পুলিশি তদন্তের নামে প্রহসন। পুলিশের থেকে রোজই কেউ না কেউ এসে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ধর্ষণের সমস্ত বিবরণ এই কিশোরী নির্যাতিতাদের কাছে জানতে চাইতো। অস্বস্তিদায়ক প্রশ্ন করে করে পুরুষোত্তমের মেয়েদের রোজ রোজ বিব্রত করতো। তাদের ভুলতে চাওয়া দগদগে অতীতকে খুঁচিয়ে দিত। সতী-সাবিত্রী এভাবে প্রতিদিন মানসিক ধর্ষণের শিকার হতে থাকলো। পদ্মা জানাল মেয়েরা আর পুলিশের কুৎসিত প্রশ্নের কোনও উত্তর দেবে না। অনেক হয়েছে তদন্ত।
আরও পড়ুন:
শারদীয়ার গল্প-১: পুরুষোত্তম/২
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৩৩: নতুন গানের ডালি নিয়ে সুরকার, গীতিকার এবং গায়ক-গায়িকারা পুজোর এই সময়েই হাজির হতেন
বার্ণপুর ছোট্ট জায়গা। কানাঘুষো খবর এল কারা কি ভাবে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় দুই বোনকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল? লজ্জায় এই নিয়ে পদ্মা কোন প্রশ্ন করেনি মেয়েদের। কিন্তু এটা পুলিশকে দেওয়া প্রথম দিনের জবানবন্দীতে সে শুনেছিল মেয়েদের জোর করে কোনভাবে অচৈতন্য করা হয়েছিল। পদ্মা জানতে পারলো কে কে জড়িত ছিল এই জঘন্য ঘটনায়। পুরুষোত্তম সব জানতে পেরে এক কাপড়ে দৌড়ে গিয়েছিল থানায় এফআইআর লেখাতে। যাদের কথা পুরুষোত্তম বলল তারা সব রাজনৈতিক মদতে বেড়ে ওঠা গুন্ডা। ওসি তো এফআইআর নিলেনই না, উল্টে তাকেই অপরাধের প্রমাণ জোগাড় করতে বললেন। পুরুষোত্তমের মেয়েরা তাদের গোটা পরিবার কেন পুলিশের তদন্তে সহযোগিতা করছে না, কেন দু-দুবার পুলিশ গিয়ে ফিরে এসেছে- কেন মেয়েদের স্টেটমেন্ট পায়নি এসব নিয়েও বেশ ধমকধামক দিতে শুরু করলেন। বললেন পুলিশ চেষ্টা করেছিল কিন্তু তাদের জন্যেই তদন্ত এগোয়নি। এবার তারা উপযুক্ত প্রমাণ দিলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।
পুরুষোত্তম ফৌজে কাজ করতো কিন্তু তার মাথা চট করে গরম হয় না। সে ওসিকে শান্তভাবে জানালো তার মেয়েরা আর কোনওভাবে কারও সঙ্গে কোনও কথা বলতে চায় না। পুরুষোত্তম জানালো বেশ মেয়েরা ফিরে এসেছে এবং সে তার অভিযোগ তুলে নিতে চায়। ওসি নাছোড়বান্দা। মিসিং ডায়েরির ভিত্তিতে কেস যখন শুরু হয়েছে তখন কেস চলবে। আসলে এমন নিখরচায় একটা নিটোল ধর্ষণের কেচ্ছা শুনতে পাবার মজাটা কেউই ছাড়তে পারছে না। পুরুষোত্তম কাগজ পেন আর কার্বনপেপার সঙ্গেই নিয়েই এসেছিল। তাই সে কোন তর্কাতর্কিতে না গিয়ে খসখস করে একটা দরখাস্ত লিখে ফেলল। তাতে জানালো পরিবারের তরফ থেকে কারও কোনও জোরাজুরি ছাড়াই স্বইচ্ছায় মিসিং ডায়েরি তুলে নিচ্ছে। তার মেয়েরা বাড়ি ফিরে এসেছে। পুরুষোত্তম জানতো আমাদের দেশের আইনে খামতি নেই। উন্নতিশীল দেশের মতোই সে আইন যথাসম্ভব সাধারণ মানুষকে সাহায্য করার জন্যেই বানানো। সমস্যা আইনের ভাষার নয়। সমস্যা আইনের কার্যকারিতার সমস্যা আইনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপব্যবহারের। এই ওসি ঠিক যা করছেন। রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে কেস লিখছেন না অথচ কেস তুলে নিতেও বাধা দিচ্ছেন। এমনকি পুরুষোত্তমের লিখিত দরখাস্তেরও প্রাপ্তি স্বীকার করতে ওসি রাজি নন।
পুরুষোত্তম ফৌজে কাজ করতো কিন্তু তার মাথা চট করে গরম হয় না। সে ওসিকে শান্তভাবে জানালো তার মেয়েরা আর কোনওভাবে কারও সঙ্গে কোনও কথা বলতে চায় না। পুরুষোত্তম জানালো বেশ মেয়েরা ফিরে এসেছে এবং সে তার অভিযোগ তুলে নিতে চায়। ওসি নাছোড়বান্দা। মিসিং ডায়েরির ভিত্তিতে কেস যখন শুরু হয়েছে তখন কেস চলবে। আসলে এমন নিখরচায় একটা নিটোল ধর্ষণের কেচ্ছা শুনতে পাবার মজাটা কেউই ছাড়তে পারছে না। পুরুষোত্তম কাগজ পেন আর কার্বনপেপার সঙ্গেই নিয়েই এসেছিল। তাই সে কোন তর্কাতর্কিতে না গিয়ে খসখস করে একটা দরখাস্ত লিখে ফেলল। তাতে জানালো পরিবারের তরফ থেকে কারও কোনও জোরাজুরি ছাড়াই স্বইচ্ছায় মিসিং ডায়েরি তুলে নিচ্ছে। তার মেয়েরা বাড়ি ফিরে এসেছে। পুরুষোত্তম জানতো আমাদের দেশের আইনে খামতি নেই। উন্নতিশীল দেশের মতোই সে আইন যথাসম্ভব সাধারণ মানুষকে সাহায্য করার জন্যেই বানানো। সমস্যা আইনের ভাষার নয়। সমস্যা আইনের কার্যকারিতার সমস্যা আইনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপব্যবহারের। এই ওসি ঠিক যা করছেন। রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে কেস লিখছেন না অথচ কেস তুলে নিতেও বাধা দিচ্ছেন। এমনকি পুরুষোত্তমের লিখিত দরখাস্তেরও প্রাপ্তি স্বীকার করতে ওসি রাজি নন।
আরও পড়ুন:
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২০: তোমরা যা বলো, তাই বলো…
পরিযায়ী মন, পর্ব-১১: ঘরের কাছে জলমহল—চাঁদনি জলটুঙ্গি
পুরষোত্তমের ফৌজ জীবনের বহুদিনের সঙ্গী ছিল জীবেশ যোশী। বয়েসে একটু বড়। মারাঠী। ল’ পড়ে প্রাকটিস শুরু করেছিলো। কিন্তু শেষমেশ ইন্ডিয়ান আর্মি জয়েন করল। জীবেশের কাছ থেকে সে আইনের অনেককিছু শিখেছে। জীবেশ একেবারে রিটায়ারমেন্টের কাছাকাছি এসে কাশ্মীরের অনন্তনাগে জঙ্গি হামলায় শহিদ হল। জীবেশ শিখিয়েছিল পুলিশের কাছে খবরদার প্রমাণ না রেখে কোনওদিন কাগজ জমা না দিতে।
— বেশ আমি রেজিস্ট্রি করে পাঠিয়ে দেবো। আপনি এখনও কোনও এফ আই আর করেননি। আপনি তো আমার চেয়ে ভালো আইন জানেন। এফ আই আর নেই। অপরাধীদের অ্যারেস্টের প্রশ্নই নেই। অপরাধীর কেস আদালতে উঠলেও আইপিসি ২৫৭ অনুযায়ী মাননীয় বিচারপতির কাছেও দরখাস্ত করা যেত। তাই এই দরখাস্তের পর আপনাকে তদন্ত বন্ধ করতেই হবে। বন্ধ না করলে অভিযোগেড় ভিত্তিতে এফ আই আর না নেওয়া কিন্তু বার বার প্রায় রোজ তদন্তের নামে আমার মেয়েদের অপমান করা হয়েছে। এই সমস্ত ব্যাপারটা প্রকাশ হয়ে যাবে।
ওসি আর বাড়াবাড়ি করেননি।
কিন্তু এরপরেও সংসারের কারো মধ্যে যেন জীবন নেই। যন্ত্রের মতো চলাফেরা করছে চারজন মানুষ। সতী আর সাবিত্রী তো মাটির থেকে চোখ তোলে না। পুরুষোত্তমও তাকাতে পারেনা তার দুই সন্তানের দিকে। কিন্তু ওদের দিকে না তাকিয়েও সে বুঝতে পারে ওদের চোখে জল। ভিতরে ভেতরে কলঙ্কের অপমান জমে থাকা রাগ দূর্ভাগ্যের যন্ত্রণা কান্না হয়ে গুমরে উঠছে। পদ্মাও এখন আর কথা বলে না। মেয়েদের স্কুলে না পাঠানোর সিদ্ধান্তটাও তার। পুরুষোত্তম একবার বলার চেষ্টা করেছিল। বোধহয় ওদের স্কুলে না পাঠানোটা ঠিক হবে না। পদ্মা শান্তভাবে বলেছিল মেয়ে না হলে মেয়েদের জ্বালা যন্ত্রণা অপমান এসব ঠিক বোঝা যায় না। স্কুলের হেডমিস্ট্রেসের সঙ্গে গিয়ে পদ্মা কথা বলে এসেছে- তিনি বলেছেন কোন চিন্তা না করতে মেয়েরা যখন চাইবে তখন স্কুলে আসতে পারবে। তবে পড়াশোনাটা বাড়িতে যেন চালিয়ে যায়। এরপর পদ্মার সঙ্গে আর কোন কথা হয়নি। রাতে মেয়েদের আঁকড়ে ধরে শুয়ে থাকে পদ্মা। না হলে এখনও আতঙ্কে ওরা দুজন ঘুমোতে পারেনা। পুরুষোত্তমের কাছে এ পরিস্থিতি ক্রমশঃ দূর্বিষহ হয়েওঠে। চেনা নিজের পরমপ্রিয় মানুষেরা এভাবে অচেনা হয়ে যাবে? নাকি এরা সকলেই নিঃশব্দে বলছে বাবা হিসেবে সংসারে সকলের মধ্যে বড়ো হবার সুবাদে পুরুষোত্তমের উচিৎ ছিল সকলকে আগলে রাখা। সবরকমের বিপদাপদ থেকে রক্ষা করা। কিন্তু সে তা পারেনি। এই বোবার মতো বেঁচে থাকতে থাকতে অস্থির হয়ে ওঠে পুরুষোত্তম!! মেয়েদের এই সর্বক্ষণ মাথা নামিয়ে রাখা বাড়িটার মধ্যে একটা দমবন্ধ অবস্থা তৈরি করেছে। এরই মধ্যে ঘটে যায় আরও একটা ঘটনা।
— বেশ আমি রেজিস্ট্রি করে পাঠিয়ে দেবো। আপনি এখনও কোনও এফ আই আর করেননি। আপনি তো আমার চেয়ে ভালো আইন জানেন। এফ আই আর নেই। অপরাধীদের অ্যারেস্টের প্রশ্নই নেই। অপরাধীর কেস আদালতে উঠলেও আইপিসি ২৫৭ অনুযায়ী মাননীয় বিচারপতির কাছেও দরখাস্ত করা যেত। তাই এই দরখাস্তের পর আপনাকে তদন্ত বন্ধ করতেই হবে। বন্ধ না করলে অভিযোগেড় ভিত্তিতে এফ আই আর না নেওয়া কিন্তু বার বার প্রায় রোজ তদন্তের নামে আমার মেয়েদের অপমান করা হয়েছে। এই সমস্ত ব্যাপারটা প্রকাশ হয়ে যাবে।
ওসি আর বাড়াবাড়ি করেননি।
কিন্তু এরপরেও সংসারের কারো মধ্যে যেন জীবন নেই। যন্ত্রের মতো চলাফেরা করছে চারজন মানুষ। সতী আর সাবিত্রী তো মাটির থেকে চোখ তোলে না। পুরুষোত্তমও তাকাতে পারেনা তার দুই সন্তানের দিকে। কিন্তু ওদের দিকে না তাকিয়েও সে বুঝতে পারে ওদের চোখে জল। ভিতরে ভেতরে কলঙ্কের অপমান জমে থাকা রাগ দূর্ভাগ্যের যন্ত্রণা কান্না হয়ে গুমরে উঠছে। পদ্মাও এখন আর কথা বলে না। মেয়েদের স্কুলে না পাঠানোর সিদ্ধান্তটাও তার। পুরুষোত্তম একবার বলার চেষ্টা করেছিল। বোধহয় ওদের স্কুলে না পাঠানোটা ঠিক হবে না। পদ্মা শান্তভাবে বলেছিল মেয়ে না হলে মেয়েদের জ্বালা যন্ত্রণা অপমান এসব ঠিক বোঝা যায় না। স্কুলের হেডমিস্ট্রেসের সঙ্গে গিয়ে পদ্মা কথা বলে এসেছে- তিনি বলেছেন কোন চিন্তা না করতে মেয়েরা যখন চাইবে তখন স্কুলে আসতে পারবে। তবে পড়াশোনাটা বাড়িতে যেন চালিয়ে যায়। এরপর পদ্মার সঙ্গে আর কোন কথা হয়নি। রাতে মেয়েদের আঁকড়ে ধরে শুয়ে থাকে পদ্মা। না হলে এখনও আতঙ্কে ওরা দুজন ঘুমোতে পারেনা। পুরুষোত্তমের কাছে এ পরিস্থিতি ক্রমশঃ দূর্বিষহ হয়েওঠে। চেনা নিজের পরমপ্রিয় মানুষেরা এভাবে অচেনা হয়ে যাবে? নাকি এরা সকলেই নিঃশব্দে বলছে বাবা হিসেবে সংসারে সকলের মধ্যে বড়ো হবার সুবাদে পুরুষোত্তমের উচিৎ ছিল সকলকে আগলে রাখা। সবরকমের বিপদাপদ থেকে রক্ষা করা। কিন্তু সে তা পারেনি। এই বোবার মতো বেঁচে থাকতে থাকতে অস্থির হয়ে ওঠে পুরুষোত্তম!! মেয়েদের এই সর্বক্ষণ মাথা নামিয়ে রাখা বাড়িটার মধ্যে একটা দমবন্ধ অবস্থা তৈরি করেছে। এরই মধ্যে ঘটে যায় আরও একটা ঘটনা।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১৬: শ্রীমায়ের সাধনা
কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-১০: রাজ ও স্প্যানিশ
বাজার দোকান করতে পদ্মাই যেতো। পদ্মার এমন একটা ব্যক্তিত্ব আছে যেটা টপকে সচরাচর ওকে কেউই ছোটবড় কথা বলতে পারতো না। তবে সেদিন একটা খোলা জিপে যারা সতী-সাবিত্রীর সঙ্গে এই জঘন্য কাজে লিপ্ত ছিল সেই রাজনৈতিক মদতপুষ্ট গুন্ডারদল বাজার থেকে পদ্মাকে ফলো করে বাড়ি অবধি শুধু আসেনি ক্রমাগত তাকে টিটকিরি করেছে।
বাড়িতে ঢুকে দরজা বন্ধ করে এই প্রথম হাউহাউ করে কেঁদে ফেলল পদ্মা। পুরুষোত্তম জানতে চায় কী হয়েছে! পদ্মা জবাব দেয় না। পুরুষোত্তম পদ্মাকে কোনওদিন এভাবে ভেঙে পড়তে দেখেনি। সে বারবার জানতে চায় কি হয়েছে? কেন পদ্মা এ্রমন করছে? পদ্মা কথার জবাব না দিয়ে চোয়াল শক্ত করে স্থিরভাবে তাকিয়ে থাকে। পুরুষোত্তমের ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙ্গে। যা সে কোনওদিন করেনি সেদিন তাই করে বসল। চিৎকার করে বলতে লাগল।
—আমি থানায় কমপ্লেন করেছিলাম। কিন্তু আমার মেয়েদের ওপর দিনের পর দিন যে অন্যায় মানসিক অত্যাচার চলছিল আমি সেটা সহ্য করতে পারছিলাম না। এর মধ্যে ওই জঘন্য রাক্ষসগুলোর নাম জানতে পেরে আমি থানায় গেলাম ওদের নামে ডায়েরি করতে। ওই গুণ্ডাদের টিকিবাঁধা বড় বড় নেতাদের কাছে-পুলিশ এদের ভাল করে জানে চেনে। ওসি নানা অপযুক্তি দিয়ে কোন তদন্ত করেনি। আমি তখন ঠিক করলাম মিসিং ডায়েরিও তুলে নেব। রোজ রোজ বাড়িতে এসে আমার মেয়েদের বিরক্ত করার কোনও সুযোগ দেবনা । এতো বদমায়েশ যে ডায়েরি তুলে নিতেও দেবে না। আমি রেজিস্ট্রি করে আমার অ্যাপ্লিকেশন পাঠিয়ে দিয়েছি। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আর কী-ই করতে পারি আমি? বলো না আর কি করতে পারি আমি? সারা দুনিয়া সারা সমাজ অন্যায়ে অসৎ মানুষে ভরে গিয়েছে। আমি একা একা আর কী করবো?
পুরুষোত্তম জানতো এ প্রশ্নের উত্তর হয়না – পদ্মার কাছেও স্বাভাবিক ভাবে এ প্রশ্নের কোন উত্তর নেই! কিন্তু পদ্মা উত্তর দিলো। ভারতীয় ফৌজের এক্স সার্ভিসম্যান পুরুষোত্তম ঝা-কে চমকে দিয়ে পদ্মা উত্তর দিল।
—বাইশ বছর আগে যে ভারতীয় ফৌজের নির্ভীক জওয়ানের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছিল- তারমধ্যে সাহসের প্রতিবাদের সত্যের যে আগুন দেখেছিলাম তা আজ বোধহয় পুরোপুরি নিভে গেছে, না? একদল নেকড়ে তোমার মেয়েদের শরীরের রক্ত চেটে খেলো আর তুমি একজন জওয়ান হয়ে বাড়ির ভেতর মুখ লুকিয়ে রয়েছো? অথচ সেই রক্তলোভী পশুগুলো বহাল তবিয়তে ঘুরছে ফিরছে। আজ বাজার থেকে বাড়ি পর্যন্ত সারা রাস্তাটা জিপ নিয়ে আমার পেছন পেছন আমায় কুৎসিত নোংরা ইঙ্গিত করতে করতে এ আমাদের বাড়িটা দেখে গেল। কাল হয়ত এসে আমার মেয়ে দুটোকে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে!! আর তুমি নিজের থেকে নিজে পালাচ্ছো কারণ এখন তোমার ভেতর সে প্রতিবাদের সাহস সে জেদ আর দুচোখে সে আগুন আর নেই! একদিন যে ফৌজে ছিলে সে কথা হয়ত আজ মনেও নেই।—চলবে।
বাড়িতে ঢুকে দরজা বন্ধ করে এই প্রথম হাউহাউ করে কেঁদে ফেলল পদ্মা। পুরুষোত্তম জানতে চায় কী হয়েছে! পদ্মা জবাব দেয় না। পুরুষোত্তম পদ্মাকে কোনওদিন এভাবে ভেঙে পড়তে দেখেনি। সে বারবার জানতে চায় কি হয়েছে? কেন পদ্মা এ্রমন করছে? পদ্মা কথার জবাব না দিয়ে চোয়াল শক্ত করে স্থিরভাবে তাকিয়ে থাকে। পুরুষোত্তমের ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙ্গে। যা সে কোনওদিন করেনি সেদিন তাই করে বসল। চিৎকার করে বলতে লাগল।
—আমি থানায় কমপ্লেন করেছিলাম। কিন্তু আমার মেয়েদের ওপর দিনের পর দিন যে অন্যায় মানসিক অত্যাচার চলছিল আমি সেটা সহ্য করতে পারছিলাম না। এর মধ্যে ওই জঘন্য রাক্ষসগুলোর নাম জানতে পেরে আমি থানায় গেলাম ওদের নামে ডায়েরি করতে। ওই গুণ্ডাদের টিকিবাঁধা বড় বড় নেতাদের কাছে-পুলিশ এদের ভাল করে জানে চেনে। ওসি নানা অপযুক্তি দিয়ে কোন তদন্ত করেনি। আমি তখন ঠিক করলাম মিসিং ডায়েরিও তুলে নেব। রোজ রোজ বাড়িতে এসে আমার মেয়েদের বিরক্ত করার কোনও সুযোগ দেবনা । এতো বদমায়েশ যে ডায়েরি তুলে নিতেও দেবে না। আমি রেজিস্ট্রি করে আমার অ্যাপ্লিকেশন পাঠিয়ে দিয়েছি। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আর কী-ই করতে পারি আমি? বলো না আর কি করতে পারি আমি? সারা দুনিয়া সারা সমাজ অন্যায়ে অসৎ মানুষে ভরে গিয়েছে। আমি একা একা আর কী করবো?
পুরুষোত্তম জানতো এ প্রশ্নের উত্তর হয়না – পদ্মার কাছেও স্বাভাবিক ভাবে এ প্রশ্নের কোন উত্তর নেই! কিন্তু পদ্মা উত্তর দিলো। ভারতীয় ফৌজের এক্স সার্ভিসম্যান পুরুষোত্তম ঝা-কে চমকে দিয়ে পদ্মা উত্তর দিল।
—বাইশ বছর আগে যে ভারতীয় ফৌজের নির্ভীক জওয়ানের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছিল- তারমধ্যে সাহসের প্রতিবাদের সত্যের যে আগুন দেখেছিলাম তা আজ বোধহয় পুরোপুরি নিভে গেছে, না? একদল নেকড়ে তোমার মেয়েদের শরীরের রক্ত চেটে খেলো আর তুমি একজন জওয়ান হয়ে বাড়ির ভেতর মুখ লুকিয়ে রয়েছো? অথচ সেই রক্তলোভী পশুগুলো বহাল তবিয়তে ঘুরছে ফিরছে। আজ বাজার থেকে বাড়ি পর্যন্ত সারা রাস্তাটা জিপ নিয়ে আমার পেছন পেছন আমায় কুৎসিত নোংরা ইঙ্গিত করতে করতে এ আমাদের বাড়িটা দেখে গেল। কাল হয়ত এসে আমার মেয়ে দুটোকে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে!! আর তুমি নিজের থেকে নিজে পালাচ্ছো কারণ এখন তোমার ভেতর সে প্রতিবাদের সাহস সে জেদ আর দুচোখে সে আগুন আর নেই! একদিন যে ফৌজে ছিলে সে কথা হয়ত আজ মনেও নেই।—চলবে।
* বসুন্ধরা এবং… দ্বিতীয় খণ্ড (Basundhara Ebong-Novel Part-2) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’।