বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

শীতের খামখেয়ালিপনা চলছে। এই শীত তো এই গরম। আবহাওয়ার এই অনিশ্চয়তায় ঠিক কত দিন আর শীতের আমেজ থাকবে, তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। কিন্তু শীতকাল মানেই কি প্রবীণদের জন্য ভয়ের? জড়সড় হয়ে যাওয়া? না, তা একেবারেই নয়। বরং একটুখানি সতর্ক হলেই শীতকালও প্রবীণ-প্রবীণারা চুটিয়ে উপভোগ করতে পারেন। তবে এর জন্য বয়স্কদের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদেরও সচেতন ও যত্নবান হতে হবে। করোনা সংক্রমণের জন্য এই বছরেও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

এটা ঠিক বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় অল্প ঠান্ডায়ও তাঁদের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। শীতের সময়ে তাঁরা ভোগেনও নানা অসুখ-বিসুখে। এ বিষয়ে গত পর্বে অর্থাৎ ‘শীত হোক বয়স্কদের জন্যও উপভোগ্য’ শিরোনামে কিছুটা আলোচনা করেছি। আজ এ নিয়ে দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব।
 

কী কী সতর্কতা মেনে চলতেই হবে

প্রয়োজন ব্যতীত শীতকালে রাতে বা ভোরে ঘরের বাইরে যাওয়া কোনওমতেই উচিত নয়।

বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে গেলে অবশ্যই কানটুপি, মাফলার, জুতা-মোজা, হাতমোজা ব্যবহার করুন।

যাঁদের হাঁপানি বা সিওপিডি আছে, তাঁরা সব সময় ইনহেলার প্রস্তুত রাখুন। প্রয়োজন হলেই ব্যবহার করতে হবে।

শীতে বয়স্কদের জন্য শুধু মোটা কাপড় নয়, বরং আরামদায়ক পোশাক বাছাই করুন। মোটা গরমের জামা না পরে বরং হালকা একাধিক কাপড় পরলে শীতকে বেশি আটকানো যায়।

পাকা মেঝের ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে ঘরে চটি বা স্পঞ্জ পায়ে দিন। হাত ও পায়ে মোজা পরিয়ে রাখুন।

ত্বক, ঠোঁট, হাত-পা, নখ-সহ নানা শরীরের অঙ্গের অসুস্থতা থেকে বাঁচতে বিভিন্ন ময়েশ্চারাইজার, ভেসলিন, অ্যালোভেরা ক্রিম-সহ প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহার করুন।

চাদর, বালিশের কাভার নিয়মিত পরিষ্কার করে রোদে শুকাতে দিন।

শোবার ঘরটির দিকে নজর দিন। বিছানা যেন শীতল না হয়ে যায়, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখুন। ঘরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা বা গরম রাখুন। তবে রুম হিটার ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করবেন। কেন না এতে চামড়ায় সমস্যা দেখা দেয়।

দিনে গরম লাগলেও বয়স্কদের জন্য পাখা চালানো ঠিক নয়, চট করে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।

স্নান এবং মুখ হাত-পা ধোয়ার কাজে গরম জল ব্যবহার করুন এতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।

নিয়মিত মলত্যাগের অভ্যাসকে বজায় রাখুন। ঠান্ডার জন্য চেপে রাখবেন না। কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়বে, কষ্ট দেবে।

পাত্রে গরম জল নিয়ে তাতে লবণ দিয়ে দু-তিন মিনিট গরম ভাপ নিলে উপকার পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে শুকনো কাশি, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া থেকে উপশম পাওয়া যায়।

লবঙ্গ বা যষ্টিমধু মুখে দিয়ে রাখলে শুকনো ইরিটেটিং কাশিতে উপশম মিলবে। এ ছাড়া, আদা, তুলসি পাতা, মিছরি ও গোলমরিচ গরম জলে খেলে আরাম পাওয়া যায়।

ধুলোবালি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। যদিও করোনার কারণে এমনিতেই মাস্ক এখন নিয়মিত পরিধান করা বিশেষ জরুরি।

আরও পড়ুন:

ষাট পেরিয়ে, পর্ব-২৩: শীত হোক বয়স্কদের জন্যও উপভোগ্য/১

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪: আপনি কি খেয়ে উঠেই শুয়ে পড়বেন? জানেন কী হচ্ছে এর ফলে

নিয়মিত প্রেসার, হার্ট, সুগারের ওষুধগুলো যেন খাওয়া হয়। সেদিকে নজর রাখা ভীষণ জরুরি।

শীতের সময় রাত জাগা ক্ষতিকর। তাই দ্রুত শুয়ে পড়ার অভ্যাস করুন। পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।

প্রবীণ মানুষেরা মদ্যপান, ধূমপান, অতিরিক্ত চা-কফি পান থেকে বিরত থাকুন।

জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথাসহ অন্য যেকোনও সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

অনেকেই ঠান্ডা লাগলে প্রথমে কিছু না ভেবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ফেলেন। সবসময় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া উচিত। নতুবা প্রয়োজনের সময় সেই ওষুধ কাজ করে না। অল্পতেই ডাক্তার দেখিয়ে নিলে সমস্যা গভীর হয় না।

জড়সড় না হয়ে বরং পরিবারের লোকজনের সঙ্গে সময় কাটান।

ঘরের মধ্যে বা কমপ্লেক্সে বা বাগানে হাঁটুন, হালকা ব্যায়াম করুন। শরীর চাঙ্গা থাকবে।

শীত কাল ঘুরতে যাওয়ার আদর্শ সময়। এই সময় বিভিন্ন মেলা ও উৎসবের সময়। প্রয়োজনীয় সতর্কতা নিয়ে এগুলো উপভোগ করুন। মন ভালো থাকবে। কোথাও ঘুরতে গেলে প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়ে যেতে ভুলবেন না। যাবার আগে নিজস্ব চিকিৎসককে একবার দেখিয়ে তাঁর পরামর্শ নিয়ে গেলে খুব ভালো হয়।

হাতের কাছে জরুরি নম্বর যেমন গৃহ চিকিৎসক, অ্যাম্বুলেন্স, নিকটবর্তী হাসপাতাল বা যদি কোনও স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার সদস্য হোন, তাহলে তাদের নম্বর যাতে প্রয়োজন হলে তৎক্ষণাৎ খুঁজে পাওয়া যায় হাতের কাছে বা চোখে পড়ার জায়গায় রাখুন।
 

শীতের শেষে বিশেষ সাবধানতা

শীতের শেষে যখন তাপমাত্রা আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করে তখন বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় তারা সহজে এই পরিবর্তনশীল আবহাওয়ার সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারে না। তা ছাড়া, তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রোগজীবাণুও সক্রিয় হয়ে ওঠে। সব মিলিয়ে ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে বিভিন্ন অসুখের আশঙ্কা বাড়ে। এই সময়ে বয়স নির্বিশেষে সাধারণত ‘কমন কোল্ড কফে’র সমস্যা দেখা যায়। আচমকা ঠান্ডা লেগে বয়স্কদের কাশি, বুকে ব্যথা হতে পারে। সিওপিডি-র সমস্যা থাকলে সেটা বেড়ে যায়, ডাস্ট অ্যালার্জি এবং তার কারণেও সমস্যা বাড়ে।
 

ফিজিওথেরাপি ও স্পাইরোমেট্রি

শীতকালে যেহেতু বয়স্কদের জড়তা বা ব্যথা বেদনা বাড়ে সেক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি করালে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। যাঁদের স্বাসের সমস্যা তাঁদের ক্ষেত্রে প্রাণায়াম, বিভিন্ন স্বাসের ব্যায়াম, যোগা খুব উপকার দেয়। স্পাইরোমেট্রি র মাধ্যমে ফুসফুসের ধারণ ক্ষমতা বাড়ে। তবে সব ক্ষেত্রেই অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট এর তত্ত্বাবধানে করাই সমীচীন। নতুবা অনেক সময় হিতে বিপরীত হতে পারে।

আরও পড়ুন:

ডায়েট ফটাফট: সব খাবারের সেরা সুপারফুড কিনোয়া খান, ওজন কমান

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৯: গুরুদেবের দেওয়া গুরুদায়িত্ব

 

খাবারদাবার

প্রতিদিন খাবারে শীতের শাক-সব্জি, বিশেষ করে গাজর, টম্যাটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি রাখুন। তবে নিষেধাজ্ঞা থাকলে তা মেনে চলতে হবে।

খাদ্যতালিকায় রাখুন শীতকালীন ফলমূল, ভিটামিন, মিনারেল বা খনিজ লবণ সমৃদ্ধ খাবার, যা শীতে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে। বিশেষ ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদদের পরামর্শ নিন।

সব সময় গরম গরম খাবার খেতে চেষ্টা করুন।

ফ্রিজের বা বাসি খাবার একদম খাবেন না।

জল কম পান করলে কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট-সহ নানা জটিলতা তৈরি হতে পারে। এ জন্য পর্যাপ্ত জল পান করুন। একটু ঈষৎ উষ্ণ জল পান করলে ভালো।

নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে খাবেন। রাতে হালকা খাবার খেতে হবে। নিষেধাজ্ঞা না থাকলে দুধ খেতে পারেন রাতে।

আরও পড়ুন:

স্বাদে-গন্ধে: সামনেই জন্মদিন? বিশেষ দিনের ভূরিভোজে বানিয়ে ফেলুন কাশ্মীরি পদ মটন রোগান জোস!

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২১: কে তুমি নিলে আমার চিরসবুজের ‘অগ্নিপরীক্ষা’

 

ভ্যাকসিন

যাঁরা নেননি, তাঁরা অবশ্যই নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিন নিয়ে নিন। এক বছরের ব্যবধানে পিসিভি ১৩ ও পিপিএসভি ২৩ নিতে হবে। প্রতি বছরের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন না নেওয়া হলে নিয়ে নিন। এরফলে নিউমোনিয়া ও ইনফ্লুয়েঞ্জার সমস্যাকে অনেকটা আটকানো যাবে। যাঁরা করোনার ভ্যাকসিন এখনও নেননি তাঁরা, অবশ্যই সেই ভ্যাকসিন নিয়ে নিন।

যোগাযোগ : ‘বাঁচবো’, ফোন : ৯৯০৩৩৮৮৫৫৬

* ষাট পেরিয়ে (Senior Cityzen – Old age care) ডাঃ ধীরেশকুমার চৌধুরি (Dhires Chowdhury), কর্ণধার ‘বাঁচবো’, সহ সম্পাদক জেরিয়াট্রিক সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া, পশ্চিমবঙ্গ শাখা৷ উপদেষ্টা, প্রোটেক্ট দ্য ওয়ারিয়ার্স।

Skip to content