জ্যোতির্বিদ রাধাগোবিন্দ চন্দ্র।
রাধাগোবিন্দ চন্দ্র ছিলেন একজন স্বশিক্ষিত, জাতবিজ্ঞানী ও শখের জ্যোতির্বিদ। জ্যোতির্বিজ্ঞান ছিল তাঁর রক্তে, আর ছিল ক্ষুরধার দৃষ্টি ও লেখনী শক্তি।
১৮৭৮ সালে জুলাই মাসে অধুনা বাংলাদেশের যশোর জেলার বগচর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পিতা ছিলেন গোরাচাঁদ চন্দ্র। গ্রামের পাঠশালায় লেখাপড়ায় হাতেখড়ি। সেখানে এক প্রতিযোগিতায় সফল হওয়াতে পেলেন দুটি বই- পাটিগণিত ও ভূচিত্রাবলী। শেষোক্ত বইটি তাঁর জীবনের আমূল পরিবর্তন করে দেয়। ইংরেজিতে শিক্ষিত করার জন্য তাঁর পিতা তাঁকে যশোর জেলা স্কুলে ভর্তি করেন। কিন্তু সেখানে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারলেন না। তিনবার পরীক্ষা দিয়েও এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাশ করলেন না। পড়াশোনা ছেড়ে দিলেন এবং চাকরির সন্ধানে বের হলেন। যশোরে পেয়ে গেলেন কালেকটারিতে কাজ। এর সঙ্গে চালিয়ে গেলেন পড়াশোনাও।
১৮৭৮ সালে জুলাই মাসে অধুনা বাংলাদেশের যশোর জেলার বগচর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পিতা ছিলেন গোরাচাঁদ চন্দ্র। গ্রামের পাঠশালায় লেখাপড়ায় হাতেখড়ি। সেখানে এক প্রতিযোগিতায় সফল হওয়াতে পেলেন দুটি বই- পাটিগণিত ও ভূচিত্রাবলী। শেষোক্ত বইটি তাঁর জীবনের আমূল পরিবর্তন করে দেয়। ইংরেজিতে শিক্ষিত করার জন্য তাঁর পিতা তাঁকে যশোর জেলা স্কুলে ভর্তি করেন। কিন্তু সেখানে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারলেন না। তিনবার পরীক্ষা দিয়েও এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাশ করলেন না। পড়াশোনা ছেড়ে দিলেন এবং চাকরির সন্ধানে বের হলেন। যশোরে পেয়ে গেলেন কালেকটারিতে কাজ। এর সঙ্গে চালিয়ে গেলেন পড়াশোনাও।
ইংরেজি চর্চা ও জ্যোতির্বিদ নিয়ে নিরলস অধ্যায়ন চালিয়ে যান। অন্যদিকে চাকরিতে পদোন্নতি করতে থাকেন তিনি। শেষ অবধি কোষাধ্যক্ষ পদে প্রতিষ্ঠিত হয়। রাধাগোবিন্দ ছিলেন একজন গ্রন্থকীট। রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা ও বিভিন্ন জ্যোতির্বিজ্ঞানের বই পাঠ করেন। পর্যবেক্ষণমূলক জ্যোতির্বিদ্যাতে তাঁর ছিল অসীম উৎসাহ। স্যার জেমস হার্শলের পুত্র এমজে হার্শলের শিষ্যত্ব নেন যশোর কোটের উকিল কাশীনাথ মুখোপাধ্যায়। তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন রাধাগোবিন্দ চন্দ্র। কাশীনাথবাবুর লেখা বই ‘ভূগোলচিত্রম’ এ আঁকা স্টার ম্যাপ দেখে আকাশের গ্রহ-নক্ষত্রের চিনে নেন তিনি।
আরও পড়ুন:
সব লেখাই বিজ্ঞানের: পাতালবন্দি কার্বন-ডাই-অক্সাইড, প্রাণ চাই… চাই মুক্ত বায়ু
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২২: ঠাকুর ও মা সারদার সংসার
রাধাগোবিন্দের আকাশ দর্শনের দ্বিতীয় গুরুদেব ছিলেন শান্তিনিকেতনের বিজ্ঞান শিক্ষক জগদানন্দ রায় মহাশয়। তাঁর কাছ থেকে শিক্ষা চিঠিপত্র ও তাঁর বইপত্রের মাধ্যমে। তাঁর শেখানো আকাশ দেখার কিছু নির্দেশ, তাঁকে খুবই সমৃদ্ধ করেছিল। এইসব সম্বল করে, নিজের একটি বায়নোকুলার নিয়ে প্রতিদিন হ্যালির ধূমকেতু দেখতে থাকেন ও একটু একটু নোট নিতে থাকেন। যশোর থেকে বের হওয়া সেই সময়ের ‘হিন্দু পত্রিকা’র একটি সংখ্যায় তাঁর প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ১৯১২ সালে নিজের গচ্ছিত অর্থের বিনিময় বিলেত থেকে কিনে ফেললেন দূরবীন। চলতে থাকে নিরলস গবেষণা। ১৯১৭ সালে আকাশে দেখতে পেলেন বিশেষ ধরনের নক্ষত্র নাম ‘নোভা’।
আরও পড়ুন:
চলো যাই ঘুরে আসি: অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্পের পথে, পর্ব-২: দু’ চোখ ভরে স্বপ্ন পূরণের আনন্দাশ্রু, অদূরেই যে অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প!
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২৪: সুন্দরবনের রাজমাতা দেবী নারায়ণী
দু’বছর ধরে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে তা লক্ষ্য করেন ও সেটা নিয়ে লেখালেখি শুরু করেন। যখন তিনি পর্যবেক্ষণ করেন তখনও ওই নক্ষত্রটির আবিষ্কার ও নামকরণ হয়নি। পরে ১৯১৮ সালে পশ্চিম দেশের এক বিজ্ঞানী তা আবিষ্কার করেন ও নামকরণ করেন ‘নোভা অ্যাকুইলি’। এই নক্ষত্র সম্বন্ধে বিশদ তথ্য তিনি পাঠান হার্ভার্ড মানমন্দিরের জ্যোতির্বিদ এডওয়ার্ড চার্লস পিকারিংকে। তিনি সেগুলি ছাপানোর ব্যবস্থা করেন। পরে তিনি হার্ভার্ড বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাভোসো’, লন্ডনে ‘ব্রিটিশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশন’ ও ফ্রান্সের ‘লিয়ঁ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি’র অবৈতনিক সদস্যপদ গ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন:
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২৫: মন বলে আমি মনের কথা জানি না!
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৮২: কীভাবে একসঙ্গে ক্লোরেলা এবং রোটিফারের চাষ করবেন?
‘অ্যাভোসো’ তাঁকে সাড়ে ছয় ইঞ্চির একটি দূরবীন উপহার দেয়। ভ্যারিয়েবল স্টার বা বহুরূপ তারা নিয়ে তিনি গবেষণা করেছেন ও হার্ভার্ড মানমন্দির ও ফ্রান্সের লিয়ঁ মানমন্দির থেকে প্রকাশ করেছেন। ফ্রান্স সরকার তাঁকে ওএআরএফ (অফিসার অফ দি একাডেমিক অফ দি রিপাবলিক অফ ফ্রান্স) সম্মান দেন, ১৯২৮ সালে। বাংলা পঞ্জিকা সংস্কারে তিনি ব্রতী হয়েছিলেন। জনপ্রিয় বিজ্ঞানের বিভিন্ন প্রবন্ধ রচনা করেন, তা মাসিক ‘বসুমতি’ ও ‘দেশ’ পত্রিকায় ছাপান। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় ‘ধুমকেতু’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন। এছাড়াও আরও চারটি বই ড্রাফ্ট অবস্থায় রয়ে গিয়েছে। অর্থকষ্টের মধ্য দিয়ে জীবন কাটাতে কাটাতে ১৯৭৫ সালে চির নিদ্রায় মগ্ন হন। কিন্তু তিনি চিরদিন বেঁচে থাকবেন তাঁর ব্হুধা বিস্তৃত কর্মের মধ্যে দিয়ে।
* ড. উৎপল অধিকারী, সহ-শিক্ষক, আঝাপুর হাই স্কুল, আঝাপুর, জামালপুর, পূর্ব বর্ধমান।