রবিবার ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫


‘চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা’; ‘আমি ভালোবাসি চাঁদ, ভালোবাসি জোছনা, ভালোবাসি স্নিগ্ধ কোমল আলোটিকে’ অথবা, ‘চাঁদ জেগে আছে আজো অপলক, মেঘের পালকে ঢালিছে আলো’- চাঁদ নিয়ে সমগ্র পৃথিবীতে মানুষের ভালোবাসা, আদিখ্যেতা, নানান উপাচার ও লোকাচার প্রচলিত। রাতের অন্ধকার সমগ্র পৃথিবীর উপর যখন রহস্যের কুহেলিকা বিছিয়ে দেয়, তখনই হাসিমুখে স্নিগ্ধতার প্রতীকস্বরূপ চাঁদ উঠে রাতের আকাশে। সুপ্রাচীনকাল থেকে, অতি আধুনিক যুগ পর্যন্ত চাঁদের জোছনার এক আলাদা মাহাত্ম্য আছে মানুষের কাছে।

আমরা জানি, পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদ, পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয়, প্রায় সাড়ে ২৯ দিন, একে ভূগোলবিদরা বলেন চান্দ্রমাস। আকাশে চাঁদের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির ওপর নির্ভর করে, সমগ্র মাসকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, শুক্লপক্ষ এবং কৃষ্ণপক্ষ। শুক্লপক্ষ শেষ হয় পূর্ণিমার মাধ্যমে এবং কৃষ্ণপক্ষ শেষ হয়, অমাবস্যার অমানিশি শেষে।
আমরা জানি, ঘুম বা নিদ্রা হল মানুষ-সহ অন্যান্য সকল প্রাণীর নিত্য কাজকর্মের ফাঁকে সাময়িক বিশ্রাম নেওয়ার একটি স্বাভাবিক পদ্ধতি। এই সময়, সচেতন ক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়াগুলি কিছুটা স্তিমিত থাকে। এই নিদ্রামগ্ন অবস্থায় মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণীর সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পায়, কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন, মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নিদ্রার বড়ই প্রয়োজন।

চাঁদ পৃথিবীর মানুষকে কিছুটা হলেও অধিক সময় জাগিয়ে রাখে। শুক্লপক্ষে মানুষ কিছুটা দেরিতে ঘুমাতে যান অথবা, বিছানায় সময় করে শুতে গেলেও, ঘুম আসে দেরিতে। ফলে, রাত্রে ঘুমানোর সময় সীমা কমে যায়। পূর্ণিমার রাত যতই এগিয়ে আসে, সত্যি বলতে কি, মানুষের ঘুম ততই কমতে থাকে। ফলস্বরূপ, পূর্ণিমার রাতে অথবা তার আগের বা পরের রাতে, গড়পড়তা ৩০-৫০ মিনিট কম ঘুম হয় মানুষের। এছাড়াও, বিছানায় শুতে যাওয়ার সময় পরিবর্তিত হয়ে থাকে ৩০ থেকে ৮০ মিনিট। একে ‘লুনার ফেজ এফেক্ট’ বলে। এটা কোন তত্ত্বকথা নয়, বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার প্রকাশ এটি। ‘সায়েন্স অ্যাডভান্স’ নামক একটি বিজ্ঞান পত্রিকায় ‘ঘুমের উপর চাঁদের প্রভাব’ নিয়ে একটি গবেষণাধর্মী নিবন্ধ প্রকাশিত হয়।
আরও পড়ুন:

সব লেখাই বিজ্ঞানের: এক বিস্তৃত বাঙালি বিজ্ঞানী সাধন বসু

এই দেশ এই মাটি, পর্ব-৩৭: সুন্দরবনের নদীবাঁধের ভবিতব্য

‘চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা’; ‘আমি ভালোবাসি চাঁদ, ভালোবাসি জোছনা, ভালোবাসি স্নিগ্ধ কোমল আলোটিকে’ অথবা, ‘চাঁদ জেগে আছে আজো অপলক, মেঘের পালকে ঢালিছে আলো’- চাঁদ নিয়ে সমগ্র পৃথিবীতে মানুষের ভালোবাসা, আদিখ্যেতা, নানান উপাচার ও লোকাচার প্রচলিত। রাতের অন্ধকার সমগ্র পৃথিবীর উপর যখন রহস্যের কুহেলিকা বিছিয়ে দেয়, তখনই হাসিমুখে স্নিগ্ধতার প্রতীকস্বরূপ চাঁদ উঠে রাতের আকাশে। সুপ্রাচীনকাল থেকে, অতি আধুনিক যুগ পর্যন্ত চাঁদের জোছনার এক আলাদা মাহাত্ম্য আছে মানুষের কাছে।

আমরা জানি, পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদ, পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয়, প্রায় সাড়ে ২৯ দিন, একে ভূগোলবিদরা বলেন চান্দ্রমাস। আকাশে চাঁদের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির ওপর নির্ভর করে, সমগ্র মাসকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, শুক্লপক্ষ এবং কৃষ্ণপক্ষ। শুক্লপক্ষ শেষ হয় পূর্ণিমার মাধ্যমে এবং কৃষ্ণপক্ষ শেষ হয়, অমাবস্যার অমানিশি শেষে।

আমরা জানি, ঘুম বা নিদ্রা হল মানুষ-সহ অন্যান্য সকল প্রাণীর নিত্য কাজকর্মের ফাঁকে সাময়িক বিশ্রাম নেওয়ার একটি স্বাভাবিক পদ্ধতি। এই সময়, সচেতন ক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়াগুলি কিছুটা স্তিমিত থাকে। এই নিদ্রামগ্ন অবস্থায় মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণীর সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পায়, কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন, মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নিদ্রার বড়ই প্রয়োজন।

চাঁদ পৃথিবীর মানুষকে কিছুটা হলেও অধিক সময় জাগিয়ে রাখে। শুক্লপক্ষে মানুষ কিছুটা দেরিতে ঘুমাতে যান অথবা, বিছানায় সময় করে শুতে গেলেও, ঘুম আসে দেরিতে। ফলে, রাত্রে ঘুমানোর সময় সীমা কমে যায়। পূর্ণিমার রাত যতই এগিয়ে আসে, সত্যি বলতে কি, মানুষের ঘুম ততই কমতে থাকে। ফলস্বরূপ, পূর্ণিমার রাতে অথবা তার আগের বা পরের রাতে, গড়পড়তা ৩০-৫০ মিনিট কম ঘুম হয় মানুষের। এছাড়াও, বিছানায় শুতে যাওয়ার সময় পরিবর্তিত হয়ে থাকে ৩০ থেকে ৮০ মিনিট। একে ‘লুনার ফেজ এফেক্ট’ বলে। এটা কোন তত্ত্বকথা নয়, বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার প্রকাশ এটি। ‘সায়েন্স অ্যাডভান্স’ নামক একটি বিজ্ঞান পত্রিকায় ‘ঘুমের উপর চাঁদের প্রভাব’ নিয়ে একটি গবেষণাধর্মী নিবন্ধ প্রকাশিত হয়।

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক হোরাসিও ডি লা লিজাসিয়া এক গবেষণায় জানিয়েছেন, গ্রাম, শহর ও মফঃস্বল প্রত্যেকটি অঞ্চলের মানুষের উপর চন্দ্রালোকের এক সুস্পষ্ট প্রভাব আছে, যা কিনা তাদের নিদ্রার উপর প্রভাব বিস্তার করে। তারা আর্জেন্টিনার ৯৮ জন স্বেচ্ছাসেবী দলের উপর দুই চান্দ্রমাস ধরে নিদ্রার ওপর পূর্ণিমার আলোর প্রভাব নিয়ে সমীক্ষা করেন। ঘুমের উপর নজর রাখতে এই স্বেচ্ছাসেবকদের হাতে পরানো হয়েছিল স্লিপ ট্রাকার। স্বেচ্ছাসেবী দলকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করে প্রথম দলকে রাখা হয়েছিল সম্পূর্ণরূপে বিদ্যুৎবিহীন এলাকায়, দ্বিতীয় দলকে রাখা হয়েছিল আধাবিদ্যুৎ যুক্ত এলাকায় এবং তৃতীয় দলকে রাখা হয়েছিল সম্পূর্ণ বিদ্যুৎবিহীন পরিবেশে।

আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬১: ‘বন্ধু’ তোমার পথের সাথী

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১৩: ইন্দিরা দেবী—ঠাকুরবাড়ির আলো!

এ গবেষণায় দেখা গেল, বিদ্যুৎ থাকা বা না থাকা এর ওপর বিদ্যুতের কোন প্রভাবই নেই, কিন্তু চাঁদের আলো স্বল্প হলেও ভূমিকা রয়েছে। গবেষণায় আরও জানা গেল, এই পূর্ণিমার সময় গ্রামাঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলের মানুষ কম ঘুমিয়েছে। এই শুক্লপক্ষে তারা প্রায় প্রত্যেকেই কম ঘুমিয়েছেন। আর্জেন্টিনায় এই গবেষণায় সফলতা লাভের পর, সিয়াটেলের ৪৬৪ জন ছাত্র-ছাত্রীর ওপর এই ঘুম বিষয়ক গবেষণাটি চালানো হয়েছিল। সেখানেও উপরোক্ত ওই একইরকম ফল পাওয়া গিয়েছে।

জৈবঅভিব্যক্তিবাদীরা বলছেন, শুক্লপক্ষের চাঁদনী রাতে মানুষ অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করত ও শিকার করা, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া ও খাদ্য সংগ্রহ করা এবং নানা সামাজিক কাজ করতো তারা এই মায়াবী আলোয়। ফলে দীর্ঘদিনের এই অভ্যাসই গুটি গুটি পায়ে তাদের জিনের মধ্যে ঢুকে গেল।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩৫: মা সারদার ভ্রাতৃবিয়োগ

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮১: কবির ‘গানের ভাণ্ডারী’ দিনেন্দ্রনাথ বৈষয়িক-কারণে শান্তিনিকেতন ত্যাগ করেছিলেন

পিনিয়াল গ্রন্থি থেকে নির্গত মেলাটোনিন সহ অন্যান্য নানান হরমোন আমাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। সূর্যাস্তের সাথে সাথে আমাদের রক্তে মেলাটোনিনের পরিমাণ বাড়তে থাকে, এর ফলে আমাদের চোখে নিদ্রা নামে। এই হরমোন আমাদের নিদ্রা এবং জাগরণচক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে ও অনিদ্রা দূর করে। নিদ্রার উপর পূর্ণিমার আলোর ভূমিকা বিজ্ঞানীদের এক নতুন গবেষণার ক্ষেত্রের জন্ম দিল। পূর্ণিমার আলোকে মেলাটোনিনের পরিমাণ রক্তে হ্রাস পায় বলে, সাময়িক অনিদ্রার সৃষ্টি হয় বলে মনে হয়।

তাই এই আধুনিক যুগে বিজলীবাতি চোখ রাঙালেও, জোছনার স্নিগ্ধ, মায়াবী আলো আমাদের আজও রাত জাগায়, যা এক চরম বিস্ময়ের বিষয়।
* ড. উৎপল অধিকারী, সহ-শিক্ষক, আঝাপুর হাই স্কুল, আঝাপুর, জামালপুর, পূর্ব বর্ধমান।

Skip to content