শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫


ইসরোর চন্দ্রযান-৩। ছবি: সংগৃহীত।

চাঁদের মাটি ছুঁতে আর বেশি দেরি নেই। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর তৈরি চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম এই মুহূর্তে একেবারে চাঁদের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। ভারতীয় সময় অনুযায়ী আগামী বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে ল্যান্ডার বিক্রমের চাঁদের মাটিতে অবতরণের কথা।

কোথায় অবতরণ হবে? চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে তার নামার কথা। কিন্তু দক্ষিণ মেরু দুর্গম খানাখন্দে ভরা। ল্যান্ডার বিক্রমের চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মাটিতে তুলনায় মসৃণ জমি চাই। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো তারই সন্ধানে করছে।
সোমবার ইসরো কিছু ছবি শেয়ার করেছে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখার আগে চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছে ল্যান্ডার বিক্রম। তার শক্তিশালী ক্যামেরায় তোলা ছবি ইসরো সমাজমাধ্যমের পাতায় ভাগ করে নিয়েছে। সেই টুইটে ইসরো এও লিখেছে, ‘‘এই সব ছবি চাঁদের বহু দূরের ছবি। ছবিগুলি তোলা হয়েছে বিক্রমে থাকা উচ্চ প্রযুক্তির ল্যান্ডার হ্যাজার্ড ডিটেকশন অ্যান্ড অ্যাভয়েড্যান্স ক্যামেরা (এলএইচডিএসি) দিয়ে। এই ক্যামেরা বিক্রমে চাঁদের মাটিতে সফল ভাবে অবতরণের জন্য নিরাপদ জায়গা খুঁজতে সাহায্য করে।’’
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৫: কোন আলো লাগলো ‘পুত্রবধূ’-র চোখে

অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-৩: অভিনয় নয়, কিশোর মনে-প্রাণে একজন গায়ক হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করতে চেয়েছিলেন

চাঁদের মাটিতে ছড়িয়ে অনেক ছোট বড় গর্ত। ছিটিয়ে রয়েছে বহু পাথরও। বিশেষজ্ঞদের মতে, চাঁদে ছড়িয়ে থাকা উঁচু ঢিবিও ল্যান্ডার বিক্রমের অবতরণের পথে বাধা উঠতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর প্রাথমিক লক্ষ্য হল, গর্ত, উঁচু ঢিবি বা পাথর এড়িয়ে তুলনায় সমান ও মসৃণ জায়গা খুঁজে বার করা। সেখানেই আগামী বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে বিক্রমকে নামানো হবে।

বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম ‘রোভার প্রজ্ঞান’কে পেটের ভিতর নিয়ে চাঁদের মাটিতে নামবে। অনেকটা পাখির পালকের মতো নামবে সে। চন্দ্র অভিযানের এই পর্যায়টিই সবথেকে জটিল। চার বছর আগে এই পর্যায়ে এসে ইসরোর ‘চন্দ্রযান-২’ ব্যর্থ হয়েছিল। সে বার ওই পর্যায়ে এসে ব্যর্থ হয় ইসরোর ‘চন্দ্রযান-২’। এ বার ইসরো সফল হয় কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়। গত বারের মতো এ বারও সর্বশেষ এবং সবচেয়ে কঠিন পর্যায়টির দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশ।
আরও পড়ুন:

মন্দিরময় উত্তরবঙ্গ, পর্ব-৩: কোচ কামতেশ্বরী মন্দিরের স্থাপত্য এক অনন্যসাধারণ মিশ্রশৈলীর উদাহরণ

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৬৯: ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড কোনও ভাবেই শরীরে ঢুকছে না? অজান্তেই এই সব অসুখ ডেকে আনছেন কিন্তু

চাঁদে মানুষহীন মহাকাশযান পাঠানোর ক্ষেত্রে এটি ইসরোর তৃতীয় অভিযান। এর আগে দু’বার ইসরোর অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। ইসরো-র পরিকল্পনা অনুযায়ী চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করার কথা ‘চন্দ্রযান-৩’ এর। সফল ভাবে ল্যান্ডার বিক্রম যদি চাঁদের মাটি ছুঁয়ে ফেলে তবেই রোভার প্রজ্ঞানকে অবতরণ করাতে পারে। পুরো পর্ব সফল ভাবে মিটলে ভারতীয় মহাকাশ অভিযানের ইতিহাস অন্য শিখরে পৌঁছবে। সে ক্ষেত্রে আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের পরে চতুর্থ দেশ হিসাবে ভারত তালিকায় জায়গা করে নেবে। পাশাপাশি, এই প্রথম বার চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে কোনও দেশ পা রাখবে। এখনও চাঁদের দক্ষিণ মেরু অনাবিষ্কৃত।
আরও পড়ুন:

ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে তারাপীঠ পুণ্যভূমির পবিত্র নদী দ্বারকা

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৩: কানে ব্যথা? তেল দেবেন কি?

ইতিমধ্যেই ইতিহাসে জায়গা করে নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে রাশিয়ার। রবিবার রুশ মহাকাশযান ‘লুনা-২৫’ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে চাঁদের মাটিতে। গতকাল রবিবার এই খবর জানিয়েছে রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা রসকসমস। রসকসমস পরিকল্পনা অনুযায়ী, মহাকাশযান ‘লুনা-২৫’ সোমবার চাঁদে নামার কথা ছিল। যদিও সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল।

উল্লখ্য, রাশিয়া গত ৪৭ বছরে এই প্রথম বার চন্দ্রাভিযানে অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হল। লুনা-২৫ চন্দ্রাভিযানের জন্য দেশের কোষাগার থেকে খরচ হয়ছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার সমমূল্যের রাশিয়ান রুবল। এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় কৃতিত্ব পেতে বহু বছরে এই প্রথম ক্ষমতার বাইরে গিয়ে এমন একটি প্রকল্পের অনুমতি দিয়েছিল রাশিয়া। তবু অভীষ্ট সাধন হল না। সোমবার চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফল অবতরণ করতে পারলে নতুন ইতিহাস তৈরি করতে পারত রাশিয়া। কারণ এর আগে কোনও দেশই দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযানের সফল অবতরণ করতে পারেনি। এই মুহূর্তে ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে ভারত ভারতীয় চন্দ্রযান-৩। বুধবার চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান-৩ এর অবতরণ করার কথা।

আপনার রায়

ইসরোর চন্দ্রযান-৩ কি তৃতীয় বারের এই অভিযানে সাফল্যের স্বাদ পাবে?

Skip to content