শনিবার ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫


ছবি: প্রতীকী।

পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টান কাটিয়ে ফেলেছে আদিত্য-এল১। এখন পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে বেরিয়ে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট ১-এর আরও কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে ইসরোর এই সৌরযান। ইসরো জানিয়েছে, পৃথিবী এবং সূর্যের মধ্যবর্তী জায়গায় থাকা ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট ১ এর চারদিকে হ্যালো কক্ষপথ রয়েছে। আদিত্য-এল১ সেখানে থেকে সে তার কাজ করবে।

ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্টের মধ্যে এল১ থেকে এল৫ এই পাঁচটি পয়েন্ট আছে। সব পয়েন্টই ত্রিমাত্রিক। একমাত্র এল১ পয়েন্টকেই কেন বেছে নিয়েছে ইসরো? বিজ্ঞানীদের কথায়, এল১ পয়েন্ট থেকে মহাজাগতীয় বস্তু নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়। মহাকাশে ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট এমন জায়গায় অবস্থান করে যেখানে দু’টি বড় বস্তুর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আকারে ছোট অন্য বস্তুর সাহায্যে কেন্দ্রাভিমুখী বলের ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়।
ইসরো এই নিয়ে পাঁচ বার মহাকাশযানকে পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে পাঠাতে সফল হল। এর আগে চন্দ্রযান-৩-এর ক্ষেত্রেও একই সাফল্য পেয়েছে ইসরো। গত ২ সেপ্টেম্বর সূর্যের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিল আদিত্য-এল১। পৃথিবীর কাছে মোট পাঁচটি কক্ষপথ পরিবর্তন করে টান কাটিয়ে বেরিয়ে যায় সৌরযান। ইসরো তাদের এক্স হ্যান্ডলে লিখেছে, সোমবার ভারতীয় সময় রাত ২টো নাগাদ আদিত্য-এল১ পঞ্চম কক্ষপথ বদল করে পৃথিবীর টানের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে।

আদিত্য-এল-১ অভিযানের জন্য বরাদ্দ হয় প্রায় ৩৭৮.৫৩ কোটি টাকা। চাঁদের মতো সূর্যের পৃষ্ঠে যেহেতু নামা সম্ভব নয়, তাই উচ্চ প্রযুক্তির ‘আদিত্য-এল১’ মহাকাশযানকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পাঠানো হবে। মহাকাশযান ওই নির্দিষ্ট স্থান (পয়েন্ট) অবধি গিয়ে ঘুরতে থাকবে। ওই পয়েন্টকে ‘ল্যাগরেঞ্জিয়ান পয়েন্ট ১’ বলা হয়। এখানে সূর্য এবং পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি থাকে না। এই ‘ল্যাগরেঞ্জিয়ান পয়েন্ট ১’-এ ‘আদিত্য-এল১’-কে পৌঁছে দিলে সেটি আজীবন সেখানে থেকে যাবে। ইসরো সেটাই করতে চাইছে।

উৎক্ষেপণের পর প্রায় ১৬ দিন আদিত্য-এল১ পৃথিবীর চারিদিকে পাক খেতে থাকবে। এই ক’দিন সূর্যের দিকে পাড়ি দেওয়ার জন্য মোট পাঁচটি ধাপে গতিবেগ লাভ করবে আদিত্য। এর পর টানা ১১০ দিন ধরে সূর্যের অভিমুখে যাত্রা করবে আদিত্য এল১। তার পরে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করবে।
আরও পড়ুন:

স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক চাই? জাদুর মতো কাজ করবে সরষে তেল

রণবীরের প্রাক্তনের সংখ্যা খুব কম নয়, তবে স্ত্রী আলিয়া শুধু বন্ধুত্ব রেখেছেন দীপিকা-ক্যাটরিনার সঙ্গেই, কেন?

আদিত্য এল১-এ মোট সাতটি পে-লোড আছে। দু’টি মূল পেলোড হল ভিসিবল এমিশন লাইন করোনাগ্রাফি(ভিইএলসি) এবং সোলার আল্ট্রাভায়োলেট ইমেজিং টেলিস্কোপ (এসএউআইটি)। আর বাকি ৫টি পেলোড হল— সোলার লো এনার্জি এক্স-রে স্পেক্ট্রোমিটার (এসওএলইএক্সএস), হাই এনার্জি এল১ অরবিটিং এক্স-রে স্পেক্ট্রোমিটার (এইচইএল১ওএস), আদিত্য সোলার উইন্ড পার্টিকল এক্সপেরিমেন্ট (এসপিইএক্স) এবং প্লাজ়মা অ্যানালাইজ়ার প্যাকেজ ফর আদিত্য (পিএপিএ)। এই পে-লোডগুলি ফটোস্ফিয়ার থেকে ক্রোমোস্ফিয়ার কিংবা সূর্যের একে বারে বাইরের দিকের স্তর কোরোনা, পর্যবেক্ষণ করবে। ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট পৌঁছানোর পরে এই ভিইএলসি পেলোড প্রতিদিন ১,৪৪০টি ছবি তুলে পাঠাবে। তাই এই পেলোডটিকেই আদিত্য এল-১-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পেলোড বলে মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, চন্দ্রযান-৩-এ মোট চারটি পেলোড আছে।
আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-১৬: আজগুবি ‘নয়’, আজগুবি নয়, সত্যিকারের কথা!

চলো যাই ঘুরে আসি: মধ্যপ্রদেশ বা ছত্তিশগড় নয়, আমাদের এই বাংলাতেই রয়েছেন ডোকরা শিল্পীরা

 

আদিত্য-এল১ মিশনের লক্ষ্য কী?

আদিত্য-এল১ মিশনের লক্ষ্য হল সূর্যের জলবায়ু, সৌর শিখা, সৌর ঝড়-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে ইসরো। সেই সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হবে সূর্য থেকে নির্গত তরঙ্গ, চৌম্বকীয় ক্ষেত্র।
পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে সূর্যের অভিকর্ষ বল, পৃথিবীর অভিকর্ষ বল এবং মহাকাশযানের কেন্দ্রাভিগ বল কাজ করে। ‘ল্যাগরেঞ্জিয়ান পয়েন্ট ১’ বা ‘এল-১’ বিন্দু এমনই একটি অবস্থান যেখানে এই তিনটি বলই পরস্পর বিপরীত ভাবে কাজ করে। ফলে সেখানে ‘আদিত্য-এল১’ স্থির হয়ে থেকে তার কাজ চালিয়ে যেতে পারবে।
৭ ধরনের বৈজ্ঞানিক পেলোড থাকবে ‘আদিত্য-এল১’ মহাকাশযানে। যেগুলির সাহায্যে সূর্যকে নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হবে সূর্যের ফোটোস্ফিয়ার, ক্রোমোস্ফিয়ার, সূর্যের বাইরের স্তরের উপর। নজর রাখা হবে অভিযান সফল হলে বিজ্ঞানের আরও এক দরজা খুলে যাবে। ইসরোর কথায়, ‘ল্যাগরেঞ্জিয়ান পয়েন্ট ১’ বা ‘এল-১’ থেকে সূর্যের সম্বন্ধে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া সহজ হবে।

চন্দ্রযান-৩-এর চাঁদের মাটি ছুঁতে ৪০ দিন সময় লাগলেও, সূর্যের ‘ল্যাগরেঞ্জিয়ান পয়েন্ট ১’-এ পৌঁছতে অনেক বেশি সময় লাগবে। সূর্য এবং পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শূন্য ওই জায়গায় পৌঁছতে ‘আদিত্য-এল১’ এর সময় লাগবে ১২০ দিন অর্থাৎ চার মাস । ‘চন্দ্রযান-৩’-কে পৃথিবী থেকে চাঁদে পৌঁছতে ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার পথে পাড়ি দিতে হয়েছে। সেখানে ‘ল্যাগরেঞ্জিয়ান পয়েন্ট ১’-এ পৌঁছতে ‘আদিত্য-এল১’কে পাড়ি দিতে হবে প্রায় ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে। তাই এত দিন সময় লাগবে। এই প্রথম ইসরো এত দূরে কোনও মহাকাশযানকে পাঠাবে।


Skip to content