রবিবার ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫


ফ্রাঞ্জ রেইচেল্ট

নামটা শুনতে ভারী অদ্ভুত লাগছে! তাই না! দর্জি কি করে উড়তে পারেন! তিনি কি সত্যিই উড়তে পারতেন নাকি এ শুধু প্রচার মাত্র? এসব বিষয় নিয়ে কিছু কথা বলব আজকের লেখায়।

ফ্রাঞ্জ রেইচেল্ট। অস্ট্রিয়ান বংশোদ্ভূত ফরাসি দর্জি, যিনি ফ্রাঁসোয়া রেইচেল্ট নামেও পরিচিত। ১৮৭৮ সালে ১৬ অক্টোবর অস্ট্রিয়াতে তাঁর জন্ম। পরবর্তীকালে একজন সফল দর্জি হিসেবে নিজেকে ফ্রান্সে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

তিনি পরিধানযোগ্য প্যারাসুট স্যুট তৈরি করেছিলেন বিমান চালকদের জন্য। এই স্যুটটি প্যারাসুটে রূপান্তরিত হবে এবং বিশেষ আপদকালীন অবস্থায় বিমান থেকে ঝাঁপ দেওয়ার সময় পাইলটকে সাহায্য করবে— এই আশা নিয়েই তাঁর এই উদ্ভাবন। মূলত জলরোধি বিশেষ এক ধরনের সিল্কের কাপড় দিয়ে এই স্যুটটি প্রস্তুত করা হয়েছিল। ১৯১০ সালে তার আবিষ্কারের কার্যকারিতার প্রাথমিক পরীক্ষাগুলি মোটামুটি ভালোই ছিল।

তিনি তাঁর অ্যাপার্টমেন্টের বিল্ডিংয়ের পাঁচ তলা থেকে এই স্যুট পরা অবস্থায় ডামির সাহায্যে পরীক্ষা করেছিলেন। যদিও তাঁর ডামির পা ভেঙে গিয়েছিল। আসলে স্যুটটি বাতাসের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু এ প্রসঙ্গে তাঁর মত ছিল যে— যদি তাঁর কাছে আরও ৫০ কিংবা ১০০ মিটার কাপড় বেশি থাকতো তাহলে ফলাফল চমৎকার হতো। পরবর্তীকালে তিনি এই স্যুটটির ডিজাইনে আরও পরিবর্তন এনেছিলেন। অনেক বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন। কিন্তু হায়! সাধনার সঙ্গে যখন অহংকার বা অভিমান মিশে যায় তখন তা পতনের কারণ হয়। আত্মবিশ্বাস যখন আত্মাভিমানে পরিণত হয় তখন ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী।

রেইচেল্ট তাঁর আবিষ্কারের যাথার্থতা প্রমাণ করার জন্য একটি উচ্চ প্ল্যাটফর্ম চেয়েছিলেন। সেই মর্মে তিনি বারংবার প্যারিসিয়ান প্রিফেকচার অব পুলিশের কাছে আইফেল টাওয়ার থেকে পরীক্ষা করার অনুমতির জন্য আবেদন করেছিলেন। দ্য অ্যারো ক্লাব দে ফ্রান্স ঘোষণা করেছিল — যে, বিমানচালকদের জন্য একটি নিরাপত্তা প্যারাসুট তৈরি করতে পারবে যার ওজন ২৫ কিলোগ্রামের বেশি হবেনা তাকে দেওয়া হবে ১০ হাজার ফ্রাঙ্ক পুরস্কার। এই ঘোষণাটি বিশেষভাবে রেইচেল্টকে তার আবিষ্কারের গুরুত্ব প্রমানের জন্য অনুপ্রেরিত করেছিল।

প্রথম প্রথম তাঁর আবেদনগুলি প্যারিসিয়ান পুলিশের কাছে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেনি। অবশেষে ডামির সাহায্যে তিনি এই পরীক্ষাটি করবেন এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১৯১২ সালে অনুমতি আদায় করেন।

৪ ফেব্রুয়ারি। সকালেই রেইচেল্ট তাঁর নিজের বানানো কাপড়ের প্যারাসুট পরে আইফেল টাওয়ারে পৌঁছে যান। পৌঁছেই তিনি স্পষ্ট করে দেন যে, তিনি নিজেই ব্যক্তিগতভাবে এই পরীক্ষাটি করবেন আইফেল টাওয়ার থেকে ঝাঁপ দিয়ে। সেখানে উপস্থিত সকলের অনুরোধ, পুলিশের নিষেধ সবকিছুকে উপেক্ষা করে তিনি আইফেল টাওয়ার থেকে ঝাঁপ দেন। সেই ঝাঁপই ছিল তাঁর জীবনের শেষ ঝাঁপ। প্যারাসুট ঠিকমতো না খোলায় ১৮৭ ফুট নিচে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়। পরের দিন সংবাদপত্রগুলি এই ‘বেপরোয়া উদ্ভাবক’ এর মৃত্যু দিয়ে চিত্রিত করেছিল তাদের খবরের কাগজের পাতা। সংবাদ মাধ্যম পুরো ঘটনাটা ভিডিও রেকর্ডিং করে।

১৯১১ সালে রাশিয়ায় গ্লেব কোটেলনিকড নামে এক উদ্ভাবক একটি ন্যাপস্যাক প্যারাসুট আবিষ্কার করেছিলেন। তাই রেইচেল্ডকে তাঁর উদ্ভাবনের জন্য যতটা নয়, তার থেকে বেশি তাঁর অভিমানের জন্য স্মরণ করা হয়। ‘ফ্লায়িং টেলর’ তাঁর আন্তরিক আকাঙ্খার সঙ্গে প্যারাসুট স্যুটটি ডিজাইন করেছিলেন।

Skip to content