রবিবার ৬ অক্টোবর, ২০২৪


শ্রীরামকৃষ্ণদেব ও মা সারদা। ছবি: সংগৃহীত।

বেলুড়মঠের দুর্গাপুজোর আগে ঠাকুর রানি রাসমণির দুর্গাপুজো ও তাঁর ভক্তদের বাড়ির দুর্গাপুজোয় গিয়েছেন। এমনই একজন হলেন বংশীধর দত্ত। ১৭৭৪ সালে নিজের পৈতৃক বাড়িতে ঠাকুরদালান নির্মাণ করে বংশীদরের ঠাকুরদা জানকীরাম দুর্গাপুজো শুরু করেন। তাঁর নাতি বংশীধর দত্ত, ৫৫ নম্বর প্রামাণিক ঘাট রোডের নতুন বাড়িতে ১৮৫৪ সালে দুর্গাপুজো শুরু করেন। এই দত্তবাড়ির পুজোতে বিভিন্ন সময়ে সারদা মা ও ঠাকুরের সব শিষ্যরা এসেছেন।
ঠাকুরের ইষ্টদর্শনে তিন মায়ের স্বরূপ একাকার হয়ে আছে। এক মন্দিরের মা ভবতারিণী, অপরজন নহবতে তাঁর সহধর্মিণী যাঁকে তিনি আদ্যাশক্তি ষোড়শীরূপে পুজো করেছেন। আর তৃতীয়জন তাঁর গর্ভধারিণী মা। ঠাকুর সারদাকে নিজেই বলেছেন যে, সত্যই তাঁকে আনন্দময়ী মা রূপে দেখতে পান। ঠাকুর হেসে বলছেন, ”তিনি নানাভাবে লীলা করছেন। তিনি একাধারে মহাকালী, নিত্যকালী, শ্মশানকালী, রক্ষাকালী, ও শ্যামাকালী।”
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১৭: মা সারদার ভগবতী সাধনা

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৪: পানমশলা খেলে ক্যানসার হয়?

তন্ত্রে আছে— যখন এই সৃষ্টি ছিল না, ছিল ঘন অন্ধকার, তখন কেবল নিরাকার মহাকালী মহাকালের সঙ্গে অবস্থান করছিলেন। কোমলস্বভাবা শ্যামাকালী বরাভয়দায়িনী, গৃহীর ঘরে তাই তাঁরই পুজো হয়। দুর্ভিক্ষ, ভূমিকম্প, মহামারী, খরা, বন্যা থেকে রক্ষা করেন রক্ষাকালী। শ্মশানকালী, যখন মহাপ্রলয় হয়, তখন সৃষ্টির বীজগুলো গুছিয়ে রাখেন, পরবর্তি সৃষ্টির জন্য। আদ্যাশক্তি মহামায়া সৃষ্টির পর জগতের মধ্যে থেকেই জগৎ প্রসব করেন। কালী দূরে আছেন আমাদের চেতনার, তাই তিনি কালো। দূর থেকে আকাশ নীল দেখায়, কাছে গেলে কোন রঙ নেই, তেমনই কালী। এই হলেন ঠাকুরের ইষ্টদেবী।
জ্যৈষ্ঠমাসের শুক্লা একাদেশী তিথিতে পানিহাটিতে বৈষ্ণবদের বিশেষ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ১২৯২ সালে ঠাকুর তাঁর শিক্ষিত ভক্তদের নিয়ে ‘হরিনামের হাট-বাজার’ দেখাতে যান সেখানে। সকাল দশটার মধ্যে আহারাদি শেষ করে যখন সকলেই যাবার জন্য তৈরি হলে সারদা সঙ্গে যাবেন কিনা, ঠাকুরের মত জানতে চাইলেন।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২০: সুন্দরবনের বসন্ত রোগ নিরাময়কারী দেবী শীতলা

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২১: ওঠো ওঠো রে! বিফলে প্রভাত বহে যায় যে!

ঠাকুর তখন একজন মহিলা ভক্তকে বললেন, ‘তোমারা তো যাচ্চ, যদি ওর ইচ্ছা হয় তো চলুক’। এই কথা শুনেই শ্রীমা বুঝে যান যে ঠাকুর মন খুলে অনুমতি দিচ্ছেন না। তিনি যাওয়ার ইচ্ছা ত্যাগ করলেন এই বলে যে ভিড়ে তাঁর উৎসব দেখা হবে না। তাঁর অনুমতি নিয়ে মহিলাভক্তরা সবাই নৌকায় ওঠেন। ঠাকুর ফিরে এসে বলেন যে, ‘অত ভিড়, তার উপর ভাবসমাধির জন্য সকলে আমাকে দেখছিল, ও সঙ্গে না গিয়ে ভালই হয়েছে, ওকে দেখলে লোকে বলত, হংস-হংসী এসেছে। ও খুব বুদ্ধিমতী’।
প্রবোধবাবু কিছুদিন হল জয়রামবাটিতে রয়েছেন। সন্ধ্যার আগে হঠাৎ একটি চিঠি পেয়ে মহালয়ার রাতের অন্ধকারে আড়াইক্রোশ দূরের শ্যামবাজারে যাবেন স্থির করেন। পরদিন সকালের বিশেষ কাজে যোগ দিতে না পারলে শত্রুদের দ্বারা তার খুব ক্ষতি হবার সম্ভাবনা। সারদা মা তাকে বলেন, ‘প্রবোধ, এ’রাতে তোমার যাওয়া হবে না, তুমি ভোররাতে যেও’। প্রবোধবাবু শুনে বলেন যে, তাকে যেতেই হবে। শ্রীমা বলেন যে, যে লোকটি চিঠি নিয়ে এসেছিল, সে চেনা কিনা। প্রবোধবাবু জানান যে সে সম্পূর্ণ অপরিচিত।
আরও পড়ুন:

ইতিহাস কথা কও, পর্ব-১৫: দেবদেউল কথা ও গোসানিমারি কামতেশ্বরী মন্দির

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৬: বহু জনমের মায়া, ধরিল যে কায়া, ওগো ‘শিল্পী’ সে তো শুধু তোমারই ছায়া

সারদা তখন বলেন, ”যখন শত্রুতা চলচে, তখন এই অন্ধকার রাতে তোমার শত্রুরা মন্দ করার জন্যে পথে লোক রেখে দিতে পারে। তারা কিছু না করলেও বর্ষায় খালবিলের রাস্তায় সাপখোপ আছে, তার থেকে বিপদ হতে পারে। পুজোর মাথায় বিদেশ থেকে লোক চাকরি করে ঘরে ফেরে এই ভেবে খালের ধারে কোন দুষ্টলোক তোমার খারাপ করতে পারে। তাই বলছি, তোমার যাওয়া হবেনা। অম্বিকে ভোররাতে তোমাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরপথে বড়রাস্তা দিয়ে শ্যামবাজারে পৌঁছে দিয়ে আসবে।” অলৌকিক শ্রীমায়েরও দর্শনশক্তি।—চলবে।
* আলোকের ঝর্ণাধারায় (sarada-devi): ড. মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় (Dr. Mousumi Chattopadhyay), অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, বেথুন কলেজ।

Skip to content