![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/11/Ramayana.jpg)
রামের অভিষেকের সময় হয়ে এল। দশরথ সে কাজের গতিবিধি দেখে শুনে মনে মনে ভাবলেন, এবার রানি কৈকেয়ীর প্রাসাদে যেতে হবে। অভিষেক কর্মের আগে সে বৃত্তান্ত তাঁকে না জানানো যে ভারি অন্যায় হবে। যদিও এ বিষয়ে রামের কাছে আগেই তাঁর মানসিক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজা। কৈকেয়ী রাজার প্রিয়তমা পত্নী। কিন্তু জ্যেষ্ঠপুত্র কৌশল্যানন্দন রামের অভিষেকের সংবাদ রাজ্যবাসী জেনে গেলেও কৈকেয়ীকে তিনি যেন সচেতনভাবেই বিষয়টি থেকে দূরে রাখতে চেয়েছেন। বৃদ্ধ রাজা তরুণী, রূপবতী, কেকয়রাজকন্যা কৈকেয়ীর প্রতি বড় দুর্বল।
কিন্তু রাজা হিসেবে তিনি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছেন। সুযোগ্য জ্যেষ্ঠপুত্র রাম রাজ্যবাসীরও অত্যন্ত প্রিয়। রাজ্যের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে তাই রামের হাতেই তুলে দিতে চেয়েছেন রাজ্যের ভার। আর রামের অভিষেকের সিদ্ধান্তের বিরোধী পক্ষ রূপে তিনি সন্দেহ করেছেন ভরতকে, তাঁর মাতামহ কেকয়রাজকে এবং ভরতমাতা কৈকেয়ীকেও। কিন্তু কেন এই সন্দেহ, শঙ্কা দশরথের মনে বাসা বেঁধেছিল? কী কারণে ধার্মিক, নির্মলচিত্ত ভরতের প্রতি পিতার এমন বিরূপ মনোভাব তার কোনও স্পষ্ট ইঙ্গিত দেননি আদিকবি।
অভিষেকের আয়োজন সমাপ্ত। কোশলাধিপতির উদ্বিগ্নতার কিছুটা অবসান। এবার তাঁকে যেতে হবে কৈকেয়ীর প্রাসাদে। রাজা অন্তঃপুরে প্রবেশ করলেন। কিন্তু রাজমহিষী কোথায়? রাজা শুনলেন, প্রিয়তমা কৈকেয়ী গোঁসাঘরের মেঝেতে শুয়ে আছেন রাগ করে। রাজপ্রাসাদের বিলাসী কোমল শয্যা ছাড়া যিনি ঘুমোন না, সেই আদরিণী রানির এমন কী হল যে ভূমিশয্যা নিলেন? রাজা মনে মনে ভারি দুঃখ পেলেন, গভীর দুশ্চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে উঠে পা বাড়ালেন গোঁসাঘরের দিকে।
কিন্তু রাজা হিসেবে তিনি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছেন। সুযোগ্য জ্যেষ্ঠপুত্র রাম রাজ্যবাসীরও অত্যন্ত প্রিয়। রাজ্যের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে তাই রামের হাতেই তুলে দিতে চেয়েছেন রাজ্যের ভার। আর রামের অভিষেকের সিদ্ধান্তের বিরোধী পক্ষ রূপে তিনি সন্দেহ করেছেন ভরতকে, তাঁর মাতামহ কেকয়রাজকে এবং ভরতমাতা কৈকেয়ীকেও। কিন্তু কেন এই সন্দেহ, শঙ্কা দশরথের মনে বাসা বেঁধেছিল? কী কারণে ধার্মিক, নির্মলচিত্ত ভরতের প্রতি পিতার এমন বিরূপ মনোভাব তার কোনও স্পষ্ট ইঙ্গিত দেননি আদিকবি।
অভিষেকের আয়োজন সমাপ্ত। কোশলাধিপতির উদ্বিগ্নতার কিছুটা অবসান। এবার তাঁকে যেতে হবে কৈকেয়ীর প্রাসাদে। রাজা অন্তঃপুরে প্রবেশ করলেন। কিন্তু রাজমহিষী কোথায়? রাজা শুনলেন, প্রিয়তমা কৈকেয়ী গোঁসাঘরের মেঝেতে শুয়ে আছেন রাগ করে। রাজপ্রাসাদের বিলাসী কোমল শয্যা ছাড়া যিনি ঘুমোন না, সেই আদরিণী রানির এমন কী হল যে ভূমিশয্যা নিলেন? রাজা মনে মনে ভারি দুঃখ পেলেন, গভীর দুশ্চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে উঠে পা বাড়ালেন গোঁসাঘরের দিকে।
প্রায় অন্ধকার ঘর। একরাশ অন্ধকার জমে আছে রাজমহিষীর মনের অন্দরেও। চারপাশে অনাদরে ছড়িয়ে আছে তাঁর বহুমূল্য আভরণ। রাজা জানেন না, মোহাচ্ছন্ন রানি মাটিতে শুয়ে আছেন রাজারই অপেক্ষায়। আহত সর্পিণীর মতো শ্বাস পড়ছে তাঁর। সন্ত্রস্ত পায়ে রাজা এগিয়ে এলেন তাঁর কাছে। গায়ে হাত রাখলেন স্নেহভরে। তিনি জানেন তাঁর প্রিয়তমা মানিনী মহিষী কৈকেয়ীর মান ভাঙাতে হয় বড় যত্নে। “এমন ধূলিশয্যায় কেন শুয়ে আজ দেবি? কে তোমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে দুঃখ দিয়েছে? কেউ কি তোমাকে অপমান করেছে রানি? তোমার এমন অবস্থা দেখে আমার মন যে একেবারে ভেঙে যাচ্ছে! তোমার কি কোনও অসুখ করেছে? তুমি বললে আমার যত রকম রোগের চিকিৎসক আছেন, তাদের পাঠিয়ে দেবো। আচ্ছা দেবী, তোমার আদেশে কি কোনও অবধ্য লোককে বধ করতে হবে? নাকি কোনও বধ্য ব্যক্তিকে মুক্তি দিতে হবে? যদি কোনও দরিদ্রকে তুমি ধন সম্পদ দিতে চাও, আমায় খুলে বলো। এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সব সম্পদের অধিকারী রাজাধিরাজ আমি। আর আমার যা কিছু ধনরত্ন, তুমিই তো তার অধীশ্বরী। তোমার যা মনে হয়, আমি তা অবশ্যই দেব তোমাকে। শুধু অভিমানে এমন মুখ ফিরিয়ে থেকো না।” বৃদ্ধ রাজা কাতর মিনতি করলেন রানিকে।
আর কৈকেয়ী? তিনি রাজার কথা শুনে উঠে বসলেন। ধীরে ধীরে অভীষ্টকে করায়াত্ত করবেন তিনি। রাজার হাতে তুলে দেবেন নিশ্চিত মৃত্যুর বিষপাত্র। “দেব, আমাকে কেউ অপমান করেনি বা দুঃখ দেয়নি। কিন্তু আমার প্রিয় ইচ্ছা পূরণের ভার নিয়ে আপনি তা এই মুহুর্তে পূরণ করুন। আর এই প্রিয় কাজ করার আগে আপনি প্রতিজ্ঞা করুন যে আমি যা চাইব, আপনি তাই দেবেন।” অবোধ হরিণ যেন নিজের বিনাশের জন্য ধীরে ধীরে জালের মধ্যে ঢুকে পড়ছে— রাজা দশরথ জানতে পারলেন না তিনি মরণফাঁদে পা দিয়েছেন নিজের অজান্তেই।
আর কৈকেয়ী? তিনি রাজার কথা শুনে উঠে বসলেন। ধীরে ধীরে অভীষ্টকে করায়াত্ত করবেন তিনি। রাজার হাতে তুলে দেবেন নিশ্চিত মৃত্যুর বিষপাত্র। “দেব, আমাকে কেউ অপমান করেনি বা দুঃখ দেয়নি। কিন্তু আমার প্রিয় ইচ্ছা পূরণের ভার নিয়ে আপনি তা এই মুহুর্তে পূরণ করুন। আর এই প্রিয় কাজ করার আগে আপনি প্রতিজ্ঞা করুন যে আমি যা চাইব, আপনি তাই দেবেন।” অবোধ হরিণ যেন নিজের বিনাশের জন্য ধীরে ধীরে জালের মধ্যে ঢুকে পড়ছে— রাজা দশরথ জানতে পারলেন না তিনি মরণফাঁদে পা দিয়েছেন নিজের অজান্তেই।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/10/Ramayana_1-2.jpg)
শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ২১: মন্থরার মন্ত্রণাবিষ—নয় রাজসিংহাসন, হোক নির্বাসন
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/10/Uttamkumar-4.jpg)
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৯: দুঃসময়ের স্মৃতিগুলো ‘কার পাপে’? [১৫/০৮/১৯৫২]
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/11/samayupdates-Ayodha-9.jpg)
বাইরে দূরে: অযোধ্যা: ইতিহাস ও জনশ্রুতি /২
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/10/samayupdates_Rabindranatha-Tagore-5-1.jpg)
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৩৯: ঠাকুরবাড়ির বিয়েতে এমন জাঁকজমক আর হয়নি
অযোধ্যাপতি স্মিত হেসে বললেন, “তুমি কি জানো না, একমাত্র রাম — সে ছাড়া এই জগতে তুমি হলে আমার সবচেয়ে প্রিয়। এই হৃদয়খানিও তুলে তোমার হাতে দিতে পারি, রানি। তোমার তো এমন সংশয় থাকার কথা নয়। আমি শপথ করে বলছি, তুমি যা চাইবে, তা দিয়ে তোমাকে খুশি করব।”
কৈকেয়ী বুঝলেন, দশরথ তাঁর বশীভূত। এবার কার্যসিদ্ধির পালা। উচ্চস্বরে কৈকেয়ী বললেন, “মহারাজ, আপনি যে শপথ করলেন এবং আমাকে বর দিতে সম্মত হলেন, তা ইন্দ্র সহ সব দেবতারা এসে শুনুন। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, তারা, দিন রাত্রি, আকাশ, পৃথিবী, অন্তরীক্ষ, গন্ধর্ব, যক্ষ, রাক্ষস, ভূত, নিশাচর, আর যত অন্যান্য জীব — সকলে আপনার বাক্য শুনুন। হে দেবতাগণ, রাজাধিরাজ দশরথ আমাকে বর দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন।” এ কথা উচ্চারণ করেই কৈকেয়ী স্মরণ করিয়ে দিলেন, সেই দেবাসুরের যুদ্ধের কথা। যুদ্ধক্ষেত্রে আহত রাজার শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তুলেছিলেন তিনি। রাজা তখন দুই বর দিতে চেয়েছিলেন। আজ সেই বরদানের সময় এসেছে।
“মহারাজ, আপনি রামের জন্য অভিষেকের যে আয়োজন করেছেন, সে আয়োজনে ভরতের অভিষেক হোক। আর, রাম বল্কল, মৃগচর্ম, জটা ধারণ করে বনবাসে যাক চোদ্দো বছরের জন্য—এই দুই বর আমি আপনার কাছে চাইছি। আপনি সত্য শপথ করেছেন। এবার সেই অনুসারে আমার এই দুটি ইচ্ছা পূরণ করুন।”—কৈকেয়ী থামলেন।
কৈকেয়ী বুঝলেন, দশরথ তাঁর বশীভূত। এবার কার্যসিদ্ধির পালা। উচ্চস্বরে কৈকেয়ী বললেন, “মহারাজ, আপনি যে শপথ করলেন এবং আমাকে বর দিতে সম্মত হলেন, তা ইন্দ্র সহ সব দেবতারা এসে শুনুন। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, তারা, দিন রাত্রি, আকাশ, পৃথিবী, অন্তরীক্ষ, গন্ধর্ব, যক্ষ, রাক্ষস, ভূত, নিশাচর, আর যত অন্যান্য জীব — সকলে আপনার বাক্য শুনুন। হে দেবতাগণ, রাজাধিরাজ দশরথ আমাকে বর দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন।” এ কথা উচ্চারণ করেই কৈকেয়ী স্মরণ করিয়ে দিলেন, সেই দেবাসুরের যুদ্ধের কথা। যুদ্ধক্ষেত্রে আহত রাজার শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তুলেছিলেন তিনি। রাজা তখন দুই বর দিতে চেয়েছিলেন। আজ সেই বরদানের সময় এসেছে।
“মহারাজ, আপনি রামের জন্য অভিষেকের যে আয়োজন করেছেন, সে আয়োজনে ভরতের অভিষেক হোক। আর, রাম বল্কল, মৃগচর্ম, জটা ধারণ করে বনবাসে যাক চোদ্দো বছরের জন্য—এই দুই বর আমি আপনার কাছে চাইছি। আপনি সত্য শপথ করেছেন। এবার সেই অনুসারে আমার এই দুটি ইচ্ছা পূরণ করুন।”—কৈকেয়ী থামলেন।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/10/English_tinglish.jpg)
ক্লাসরুম: Appropriate Prepositions কাকে বলে জানো কি?
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/09/Concentration.jpg)
মনের আয়না: পরীক্ষার আগে হারাচ্ছে মনঃসংযোগ? কী করলে ফিরবে মনঃসংযোগ? জেনে নাও মনোরোগ বিশেষজ্ঞের মতামত
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/02/mitali-De-2.jpg)
যোগা-প্রাণায়াম: কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন? প্রাণায়ামে হবে শ্বাসকষ্টের উপশম, জেনে নিন কীভাবে করবেন
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2022/09/Muttan.jpg)
অতিথি আপ্যায়নে চাই পাঁঠার মাংসের লোভনীয় পদ? চিন্তা নেই ১০ মিনিটেই জমে যাবে পুজোর ভূরিভোজ! কেমন করে?
এ তো বাক্য নয়, এ যে উত্তপ্ত লোহার শলাকা— রাজার হৃদয়ে মুহূর্তে বিঁধল এসে। সামনে বাঘ দেখে অসহায় হরিণের মতো ভয়ে রোমাঞ্চিত হয়ে উঠল রাজার সর্বাঙ্গ। সেই আচ্ছাদনহীন ভূমিতলেই দুঃখে, শোকে, রাগে, ঘৃণায় কাঁপতে কাঁপতে বসে পড়লেন পৃথিবীর অধীশ্বর, রাজা দশরথ। শুধু বলতে পারলেন — ‘অহো, ধিক!’ জ্ঞান হারালেন তারপর।
ফিরে এল চেতনা। সঙ্গে গভীর বেদনা, নিষ্ফল ক্রোধ, বাঁধ-না-মানা শোক। এ কী হল! রাজ্যের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে সুযোগ্য পুত্রের রাজ্যাভিষেকের আদেশ দিয়েছিলেন রাজা। তার সব আয়োজন সম্পূর্ণ। এমন আনন্দ আয়োজন — বৃথা হয়ে যাবে কি এক লহমায়? ক্রোধে ফেটে পড়েন রাজা— “রাজবংশধ্বংসকারিণি, পাপবুদ্ধি, নৃশংস- রাম তোমার কি ক্ষতি করেছে? সে তো কৌশল্যার থেকেও তোমার প্রতি বেশি অনুগত। তুমি তার এমন অনিষ্ট ভাবলে কীভাবে? সমস্ত রাজ্যবাসী রামের গুণে মুগ্ধ। তারা অপেক্ষা করছে অভিষেকের সেই শুভ মুহূর্তের। কোন অপরাধে এমন যোগ্য, গুণবান ছেলেকে আমি বনবাসে পাঠাবো?
তুমি জানো কৈকেয়ী, রামকে কাছে দেখে আমার বড় আনন্দ হয়। সে আমার বড় আদরের। জল ছাড়া যদি শস্য সজীব থাকে, তাও হয়তো সম্ভব। কিন্তু রামকে ছেড়ে আমি বাঁচতে পারবো না। তুমি এই নৃশংস চিন্তা ত্যাগ করো রানি। এতো নিষ্ঠুর হয়ো না।” জগতের আশ্রয়, পৃথিবীপতি মহাপ্রতাপ রাজা আজ নিরাশ্রয়, নিঃসহায়। চোখের সামনে যেন ঘনিয়ে আসছে অন্ধকার, পায়ের নিচে সরে যাচ্ছে মাটি। আবার জ্ঞান হারানোর মুহূর্তে অসহায় আর্তিতে পায়ে পড়লেন কৈকেয়ীর। শুধু অস্ফুট স্বরে বলতে পারলেন—‘দেবি, প্রসন্ন হও’।— আঁধার নেমে এল অযোধ্যাপতির চোখে। —চলবে
ফিরে এল চেতনা। সঙ্গে গভীর বেদনা, নিষ্ফল ক্রোধ, বাঁধ-না-মানা শোক। এ কী হল! রাজ্যের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে সুযোগ্য পুত্রের রাজ্যাভিষেকের আদেশ দিয়েছিলেন রাজা। তার সব আয়োজন সম্পূর্ণ। এমন আনন্দ আয়োজন — বৃথা হয়ে যাবে কি এক লহমায়? ক্রোধে ফেটে পড়েন রাজা— “রাজবংশধ্বংসকারিণি, পাপবুদ্ধি, নৃশংস- রাম তোমার কি ক্ষতি করেছে? সে তো কৌশল্যার থেকেও তোমার প্রতি বেশি অনুগত। তুমি তার এমন অনিষ্ট ভাবলে কীভাবে? সমস্ত রাজ্যবাসী রামের গুণে মুগ্ধ। তারা অপেক্ষা করছে অভিষেকের সেই শুভ মুহূর্তের। কোন অপরাধে এমন যোগ্য, গুণবান ছেলেকে আমি বনবাসে পাঠাবো?
তুমি জানো কৈকেয়ী, রামকে কাছে দেখে আমার বড় আনন্দ হয়। সে আমার বড় আদরের। জল ছাড়া যদি শস্য সজীব থাকে, তাও হয়তো সম্ভব। কিন্তু রামকে ছেড়ে আমি বাঁচতে পারবো না। তুমি এই নৃশংস চিন্তা ত্যাগ করো রানি। এতো নিষ্ঠুর হয়ো না।” জগতের আশ্রয়, পৃথিবীপতি মহাপ্রতাপ রাজা আজ নিরাশ্রয়, নিঃসহায়। চোখের সামনে যেন ঘনিয়ে আসছে অন্ধকার, পায়ের নিচে সরে যাচ্ছে মাটি। আবার জ্ঞান হারানোর মুহূর্তে অসহায় আর্তিতে পায়ে পড়লেন কৈকেয়ীর। শুধু অস্ফুট স্বরে বলতে পারলেন—‘দেবি, প্রসন্ন হও’।— আঁধার নেমে এল অযোধ্যাপতির চোখে। —চলবে
*শাশ্বতী রামায়ণী (Saswati Ramayani – Ramayana) : ড. অমৃতা ঘোষ (Amrita Ghosh) সংস্কৃতের অধ্যাপিকা, আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল মহাবিদ্যালয়। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সম্পাদিত গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বেশ কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ।