স্বামী বিবেকানন্দ।
মানুষ চাই, মানুষ চাই, মানুষ চাই, তাহলেই সব কিছু হয়ে যাবে, স্বামীজি অনেক আগেই ঘোষণা করেছিলেন। প্রকৃত কয়েকজন মানুষ হলেই স্বামীজি পৃথিবীকে উল্টে দিতে পারতেন। বলতেন, আশিষ্ট, দ্রঢ়িষ্ঠ, বলিষ্ঠ, মেধাবী মানুষ চাই। নিঃস্বার্থ, বীর্যবান, পরহিতায় কর্ম সম্পন্ন মানুষের খুব প্রয়োজন; যাদের উর্বর মস্তিষ্ক ও প্রকৃত হৃদয়বান শরীর। ক্ষাত্রবীর্য ও ব্রহ্ম তেজ সম্পন্ন যুবক, যারা একখানা রুটি পেলে জগতের জন্য প্রাণ দিতে পারে।
চারিদিকে যে হাহাকার শুনি তার কারণ এই যথার্থ মানুষের অভাব। স্বামীজি করাচিতে ‘বেদান্ত’ ভাষণে বলছেন, “ভারতে ঘোর কপটতা প্রবেশ করিয়াছে। চাই চরিত্র চাই ও চরিত্র বল যাহাতে মানুষ একটা ভাবকে মরণ কামড়ে ধরিয়া থাকিতে পারে।”
স্বামী প্রেমেশানন্দ একটি চিঠির কিছু মূল্যবান বক্তব্য খুব অনুধাবন যোগ্য। সারগাছি থেকে ১৬.১.১৯৪৮ সালে একটি চিঠিতে তিনি লিখছেন, “পূর্বে লোকে একটা কিছু নিয়া থাকিত। এখন something of everything সকলের চাই। তাহাতেই সমস্যা এত জটিল হইয়া পড়িয়াছে। এখন কার কী প্রয়োজন, কে কিসের অধিকারী, কার কী কর্তব্য কিছুই স্থির নাই। সন্ন্যাসীর স্কন্ধের উপর গৃহস্থের কর্তব্য ভার দেখা যায়, গৃহস্থ সন্ন্যাসীর ন্যায় উদাসীন। সকলেই সকল বিষয়ের সহিত সম্বন্ধে যুক্ত। কে মুক্তি চায়, কে উন্নতি চায় তা তো বুঝিনা।”
স্বামী প্রেমেশানন্দ একটি চিঠির কিছু মূল্যবান বক্তব্য খুব অনুধাবন যোগ্য। সারগাছি থেকে ১৬.১.১৯৪৮ সালে একটি চিঠিতে তিনি লিখছেন, “পূর্বে লোকে একটা কিছু নিয়া থাকিত। এখন something of everything সকলের চাই। তাহাতেই সমস্যা এত জটিল হইয়া পড়িয়াছে। এখন কার কী প্রয়োজন, কে কিসের অধিকারী, কার কী কর্তব্য কিছুই স্থির নাই। সন্ন্যাসীর স্কন্ধের উপর গৃহস্থের কর্তব্য ভার দেখা যায়, গৃহস্থ সন্ন্যাসীর ন্যায় উদাসীন। সকলেই সকল বিষয়ের সহিত সম্বন্ধে যুক্ত। কে মুক্তি চায়, কে উন্নতি চায় তা তো বুঝিনা।”
আরও পড়ুন:
অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-৫৭: আমরা বহির্জগতের সব জানি, কিন্তু আমি কে জানি না…
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৩৮: যে শাসক বেশি কথা বলেন তাঁর পতন অনিবার্য
শাস্ত্র একে নিঃশ্রেয়স ও অভ্যুদয় বলেছে। প্রত্যেকে তার প্রকৃত অনুযায়ী কর্ম করে অভীষ্ট ফল লাভ করবে। তা নিঃস্বার্থ ভাবে অনুষ্ঠেয়। কর্মে উদাসীন থাকা কর্ম থেকে মুক্তি নয়। আবার যথেচ্ছ কর্ম করাও কর্মের উদ্দেশ্য নয়। ন্যায় অন্যায় বোধ না থাকলে মানুষ মানুষ নয়।
স্বামী প্রেমেশানন্দ লিখছেন, “এই সৃষ্টিতে সব জিনিসের সঙ্গে সব জিনিসের অল্পবিস্তার যোগ আছে। সন্ন্যাসীর নিশ্চিন্ত জীবনের জন্য সুভিক্ষ দেশ চাই। যোগীর কার্যে উপযোগী দেহের জন্য বিশুদ্ধ পিতৃ-বীর্য ও মাতৃ রক্ত নাই। ধর্ম সাধনের জন্য, জ্ঞান বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য,সুচিন্তিত রাষ্ট্রনীতি আবশ্যক। ইত্যাদি ইত্যাদি…”
স্বামী প্রেমেশানন্দ লিখছেন, “এই সৃষ্টিতে সব জিনিসের সঙ্গে সব জিনিসের অল্পবিস্তার যোগ আছে। সন্ন্যাসীর নিশ্চিন্ত জীবনের জন্য সুভিক্ষ দেশ চাই। যোগীর কার্যে উপযোগী দেহের জন্য বিশুদ্ধ পিতৃ-বীর্য ও মাতৃ রক্ত নাই। ধর্ম সাধনের জন্য, জ্ঞান বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য,সুচিন্তিত রাষ্ট্রনীতি আবশ্যক। ইত্যাদি ইত্যাদি…”
আরও পড়ুন:
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১২: সুখলতা রাও— ছোটদের পরী
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৫১: কচ, দেবযানী ও মহান শুক্রাচার্য— প্রেম, প্রতিহিংসা, উদারতায় অনন্য তিন দৃষ্টান্ত?
একজন চরিত্রবান সন্তানই, ন্যায় নিষ্ঠাবান ধর্মপরায়ণ পিতা হতে পারেন। তিনি যে আবার উত্তম সন্তান সমাজকে উপহার দেবেন তার জন্য সমাজ, জাতি, দেশ গর্ব অনুভব করবেন। আমাদের ভুল এই, যে সন্তান আমার বলে ভাবি সে যে সমাজেরও একটি অঙ্গস্বরূপ তা ভুলে যায়। তার সঙ্গে জাতি কূলের সম্মান জড়িত তা মনে রাখার প্রয়োজন। তার বেড়ে ওঠার ও ন্যায় সদাচারের উপর সমাজের সুস্থ থাকা নির্ভর করে। এগুলো না ভেবে শুধু জীবনের কারণে পুত্র উৎপাদনে সমাজের কোনও কল্যাণ নাই; নিজেরও নাই। যিনি পিতৃপুরুষদের ‘পুত’ নামক নরক থেকে উদ্ধার করেন, তাকে পুত্র বলা হয়।
সন্তানের কল্যাণে পিতামাতার কল্যাণ, বংশের কল্যাণ। সমাজের কল্যাণ। উপাসনার দ্বারা সন্তান জগতের কল্যাণ স্বরূপ হয়। তা আমরা সকল মহাপুরুষদের জীবন দৃষ্টি উপলব্ধি করিতে পারি। স্বামীজি সেবাব্রতকে পূজা-ব্রতে পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। তার কাছে নিপীড়িত, দলিত, বঞ্চিত, শোষিত মানুষেরা দেবতা স্থান পেয়েছে। তম গুণে আচ্ছন্ন জাতীয় জীবনকে তিনি ঝাকুনি দিয়ে নাড়াতে চেয়েছিলেন। বঞ্চিত যারা চিরকালই বঞ্চিত থেকে শোষিত হবে তা তিনি কিছুতেই স্বীকার করতে পারতেন না।
সন্তানের কল্যাণে পিতামাতার কল্যাণ, বংশের কল্যাণ। সমাজের কল্যাণ। উপাসনার দ্বারা সন্তান জগতের কল্যাণ স্বরূপ হয়। তা আমরা সকল মহাপুরুষদের জীবন দৃষ্টি উপলব্ধি করিতে পারি। স্বামীজি সেবাব্রতকে পূজা-ব্রতে পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। তার কাছে নিপীড়িত, দলিত, বঞ্চিত, শোষিত মানুষেরা দেবতা স্থান পেয়েছে। তম গুণে আচ্ছন্ন জাতীয় জীবনকে তিনি ঝাকুনি দিয়ে নাড়াতে চেয়েছিলেন। বঞ্চিত যারা চিরকালই বঞ্চিত থেকে শোষিত হবে তা তিনি কিছুতেই স্বীকার করতে পারতেন না।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮১: কবির ‘গানের ভাণ্ডারী’ দিনেন্দ্রনাথ বৈষয়িক-কারণে শান্তিনিকেতন ত্যাগ করেছিলেন
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৫: সুর হারানো হারানো সুর
স্বামীজি বলছেন, “তোমরা কোন নিষ্ফলা দেবতার অন্বেষণে ধাবিত হইতেছ। আর তোমার সম্মুখে তোমার চারিদিকে যে দেবতাকে দেখিতেছ সেই বিরাটের উপাসনা করিতে পারিতেছ না। আবশ্যক চিত্রশুদ্ধি। কিরূপে এই চিত্রশুদ্ধি হইবে। প্রথমে বিরাটের পুজো। তোমার সম্মুখে তোমার চারিদিকে যাহারা রহিয়াছে তাহাদের পুজো। ইহাদের পুজো করিতে হইবে। সেবা নহে, সেবা বললে আমার অভিপ্রেত ভাবটি ঠিক বুঝাইবে না। পূজা শব্দেই ওই ভাব ঠিক প্রকাশ করা যায়।”
স্বামীজি চাইতেন স্বদেশবাসিগণ বিরাটের পুজোয় ব্রতী হোক। এই সম্মুখে যে বিরাট শরীরধারী মনুষ্য দেবতারা যাঁরা রয়েছে তাঁদের পুজো। তাদের জাগরণের মধ্য দিয়ে সমাজের প্রকৃত জাগরণ। প্রকৃত মানুষ সমাজের সেই কাজটি সম্পন্ন করতে পারে।
স্বামীজি চাইতেন স্বদেশবাসিগণ বিরাটের পুজোয় ব্রতী হোক। এই সম্মুখে যে বিরাট শরীরধারী মনুষ্য দেবতারা যাঁরা রয়েছে তাঁদের পুজো। তাদের জাগরণের মধ্য দিয়ে সমাজের প্রকৃত জাগরণ। প্রকৃত মানুষ সমাজের সেই কাজটি সম্পন্ন করতে পারে।
* অনন্ত এক পথ পরিক্রমা (Ananta Ek Patha Parikrama) : স্বামী তত্ত্বাতীতানন্দ (Swami Tattwatitananda), সম্পাদক, রামকৃষ্ণ মিশন, ফিজি (Fiji)।