যা দেখা যায় না, তা নিয়ে আমরা সচরাচর মাথা ঘামাই না। বাস্তব সত্য বলে, যা আমরা গ্রহণ করি তা আসলে ইন্দ্রিয় ক্ষমতা অনুযায়ী গ্রহণীয় উপাদান সকল এবং বৌদ্ধিক উৎকর্ষতার উপর নির্ভরশীল। সেই কারণেই এই সত্য সকলের কাছে সমান হয় না বা সমান রূপে প্রকাশিত হয় না। আর সে কারণে তারা সত্য হিসেবে যা প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তা অশোধিত চিন্তা, বুদ্ধি ও ইন্দ্রিয় বাসনা চরিতার্থ করতে, ভুল ধারণা সকল। তাই-ই দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে। ধর্ম এবং ধর্ম আচরণের মধ্যে যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে, তা প্রায় অনেকেই বুঝতে চান না।
ধর্ম যেমন আচার সর্বস্ব হতে পারে না, আবার আচরণের কারণ ধর্ম-বর্জিত হতে পারে না। স্বামী প্রেমশানন্দজি, স্বামী শ্রদ্ধানন্দজিকে চিঠিতে লিখছেন, “আমরা বাইরের সব জানি। আমি কে জানি না”। আর “জগতে ধর্মের প্রচার হইয়াছে ধর্ম বিজ্ঞানের প্রচার হয় নাই। ধর্মবিজ্ঞানের বিচার প্রণালী ঠিক বিজ্ঞানের ন্যায়।” আমরা জগতের সব কিছুই জানতে চাই। পাশাপাশি বিজ্ঞানের আবিষ্কার আমাদের আরও সুখ দেবে প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু অন্তরের খবর কেউ নেয় না।
ধর্ম যেমন আচার সর্বস্ব হতে পারে না, আবার আচরণের কারণ ধর্ম-বর্জিত হতে পারে না। স্বামী প্রেমশানন্দজি, স্বামী শ্রদ্ধানন্দজিকে চিঠিতে লিখছেন, “আমরা বাইরের সব জানি। আমি কে জানি না”। আর “জগতে ধর্মের প্রচার হইয়াছে ধর্ম বিজ্ঞানের প্রচার হয় নাই। ধর্মবিজ্ঞানের বিচার প্রণালী ঠিক বিজ্ঞানের ন্যায়।” আমরা জগতের সব কিছুই জানতে চাই। পাশাপাশি বিজ্ঞানের আবিষ্কার আমাদের আরও সুখ দেবে প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু অন্তরের খবর কেউ নেয় না।
আসল কথা হল— আমাদের ইন্দ্রিয়গুলি ভোগ্য বিষয় হিসেবে জগতের এত উপকরণ পায় যে আর ভিতরের দিকে তাকানোর সময় থাকে না বা দরকার হয় না। তার সীমার মধ্যে এত ভান্ডার রয়েছে, যা অফুরন্ত। তাই সেই সব ভোগ করতে করতে জরাগ্রস্থ হয়, কিন্তু ভোগের বাসনা আর শেষ হয় না। ধর্ম বিজ্ঞান লাভ করার প্রয়োজনীতা খোঁজে পায় না।
“পরাঞ্চি খানি ব্যতৃণৎ স্বয়ম্ভূস্তস্মাৎ পরাঙ্ পশ্যতি নান্তরাত্মন্। কশ্চিদ্ধীরঃ প্রত্যগাত্মানমৈক্ষদ্ আবৃত্তচক্ষুরমৃতত্বমিচ্ছন্।।” (কঃউঃ২।১।১)
ইন্দ্রিয়সকল বাইরের দিকে উন্মুক্ত। ভগবান স্বয়ম্ভু নিজেই বাইরের দিকে খোদাই করে দিয়েছেন। তাই বিষয় ভোগে ব্যস্ত। অন্তরাত্মাকে দেখতে পায় না। অন্তরের দিকে মোড় ফেরিয়ে কোনও কোনও বিবেকী, যাঁরা অমৃত্ব পেতে ইচ্ছা করেন তারা-ই লাভ করেন। সে কারণে সকলে অন্তরাত্মাকে দেখতে পায় না। স্বামী যতীশ্বরানন্দজি, ‘ধ্যান ও আধ্যাত্মিক জীবন’ গ্রন্থে লিখছেন, “মরণের পরে আমাদের জীবনের কথা আমরা কদাচিৎ চিন্তা করে থাকি। …মৃত্যুর পরে জীবাত্মার কী হয়? ভবিষ্যৎ বর্তমানের মতোই সত্য, কিন্তু খুব কম লোকেই তা নিয়ে মাথা ঘামান। বর্তমান জীবনের নানা আকর্ষণে মুগ্ধ হয়ে আমরা কদাচিৎ ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করি।”
ইন্দ্রিয়সকল বাইরের দিকে উন্মুক্ত। ভগবান স্বয়ম্ভু নিজেই বাইরের দিকে খোদাই করে দিয়েছেন। তাই বিষয় ভোগে ব্যস্ত। অন্তরাত্মাকে দেখতে পায় না। অন্তরের দিকে মোড় ফেরিয়ে কোনও কোনও বিবেকী, যাঁরা অমৃত্ব পেতে ইচ্ছা করেন তারা-ই লাভ করেন। সে কারণে সকলে অন্তরাত্মাকে দেখতে পায় না। স্বামী যতীশ্বরানন্দজি, ‘ধ্যান ও আধ্যাত্মিক জীবন’ গ্রন্থে লিখছেন, “মরণের পরে আমাদের জীবনের কথা আমরা কদাচিৎ চিন্তা করে থাকি। …মৃত্যুর পরে জীবাত্মার কী হয়? ভবিষ্যৎ বর্তমানের মতোই সত্য, কিন্তু খুব কম লোকেই তা নিয়ে মাথা ঘামান। বর্তমান জীবনের নানা আকর্ষণে মুগ্ধ হয়ে আমরা কদাচিৎ ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করি।”
আরও পড়ুন:
অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-৫৬: সংসারীরা কেমন করে সংসার করবেন? কী বলেছেন শ্রীরামকৃষ্ণ?
এই দেশ এই মাটি, পর্ব-৩৬: সুন্দরবনের নদীবাঁধের হাল হকিকত
আমরা জীবন দর্শন নিয়ে চিন্তা করি না, দর্শন বিহীন জীবন-যাপন দিকে আমরা বেশি ব্যস্ত। লোকায়ত লক্ষ্যই আমাদের চারিত্রিক। লোকাতীত লক্ষ্য উহ্যই থেকে যায়। দুঃখ, কষ্টের মূল কারণ আমরা খুঁজি না, আপাতদৃষ্ট সমস্যার সমাধান করেই ক্ষান্ত হই। ফল হয়, আবার আনন্দ বা দুঃখ বা কষ্টের সম্মুখীন হই। স্বামী যতীশ্বরানন্দজি আরও লিখছেন, “আধ্যাত্মিক জীবন শুধুমাত্র সামাজিক নীতি শাস্ত্রসম্মত ও সাধারণে যাকে সৎ জীবন বলে থাকে তা নয়, আরও বেশি কিছু। এর জন্য প্রচুর আত্ম সংযম ও পবিত্রতা প্রয়োজন।” ধর্মকে লাভ করা যায়। তার জন্য পুরোদস্তুর দাম দিতে হয়। সাধনও তপস্যা তার মূল্য।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬১: ‘বন্ধু’ তোমার পথের সাথী
দাঁত তোলার পর আবার দাঁত সেট করছেন? সমস্যা ডেকে আনছেন না তো?
শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন ভগবৎ গীতায় বলেছেন—
“মনুষ্যাণাং সহস্রেষু কশ্চিদ্ যততি সিদ্ধয়ে৷ যততামপি সিদ্ধানাং কশ্চিন্মাং বেত্তি তত্ত্বতঃ৷৷” (৭।৩)
হাজার হাজার মানুষের মধ্যে কচিৎ কেউ ভগবান কে জানত আগ্রহী হয়। আবার তার মধ্যে অল্প কেউ তাকে লাভ করে। আচরণ ও ধর্মের প্রাপ্তির জন্য মানুষ অল্প ভাবনা করেন। অন্য সমস্ত কিছুই মূল্য থাকে কিন্তু প্রকৃত সত্তার সম্বন্ধে জানার মূল্য থাকে না।
শ্রীমদ্ভাগবতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন—
“ব্রহ্মচর্যং তপঃ শৌচং সন্তোষো ভূতসৌহৃদম্
গৃহস্থস্যাপ্যৃতৌ গন্তুঃ সর্বেষাং মদুপাসনম্।।” (শ্রীমদ্ভাগবতম্ ১১।১৮।৪৩)
হাজার হাজার মানুষের মধ্যে কচিৎ কেউ ভগবান কে জানত আগ্রহী হয়। আবার তার মধ্যে অল্প কেউ তাকে লাভ করে। আচরণ ও ধর্মের প্রাপ্তির জন্য মানুষ অল্প ভাবনা করেন। অন্য সমস্ত কিছুই মূল্য থাকে কিন্তু প্রকৃত সত্তার সম্বন্ধে জানার মূল্য থাকে না।
“ব্রহ্মচর্যং তপঃ শৌচং সন্তোষো ভূতসৌহৃদম্
গৃহস্থস্যাপ্যৃতৌ গন্তুঃ সর্বেষাং মদুপাসনম্।।” (শ্রীমদ্ভাগবতম্ ১১।১৮।৪৩)
আরও পড়ুন:
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৩৭: যুদ্ধ করার থেকে তা এড়িয়ে যাওয়াটাও রণনীতিরই বড় অঙ্গ
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮০: ঠাকুরবাড়ির ফরাসি-পাচক
সন্তান উৎপাদন ব্যতীত অন্য সময় ব্রহ্মচর্য পালন, পবিত্রতা ও সন্তুষ্টির সঙ্গে নিয়মিত দায়িত্ব পালন এবং জীবজন্তুর প্রতি দয়া— এগুলিই গৃহস্থের কর্তব্য, এ সবই তাঁর উপাসনা। সংসার বিষয়কর্ম অবশ্যই করতে হবে, তবে সংসার পালনের জন্য। বিষয় চিন্তা যত আমাদের বিষয়ী করে আর ঈশ্বরের চিন্তা ঈশ্বর করে তোলে। যাত্রাপালায় যেমন প্রত্যেক ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন সং সাজে; কেউ রাজা, কেউ মন্ত্রী, বা কেউ ভিখারী তেমন, সংসারীর সং সেজে সংসারে উদাসীন থাকা।— চলবে
* অনন্ত এক পথ পরিক্রমা (Ananta Ek Patha Parikrama) : স্বামী তত্ত্বাতীতানন্দ (Swami Tattwatitananda), সম্পাদক, রামকৃষ্ণ মিশন, ফিজি (Fiji)।