![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/04/Ramakrishna-.jpg)
যখন সামনে দিয়ে স্টিমার চলে যায় তখন তার ঢেউ টের পাওয়া যায় না। দূরে গেলে তখন তার ঢেউ কাছে এসে পড়ে লাগে। হয়তো পাড়ের খানিকটা ভেঙে পড়ল। অবতার পুরুষদেরও কাজকর্ম দেখে তখন লোকে বুঝতে পারে না। তাঁদের অনেকটা অতি প্রাকৃত মানুষের মতো মনে হয়। তখন বোঝাবার উপায় থাকে না ব্যবহার দেখে। কিন্তু তাঁরা যা কিছু করেন দৃষ্টান্ত স্বরূপ হয়ে থাকে। সকল অবতার পুরুষদের ক্ষেত্রে মোটামুটি একই। যেখানে সরলতা, ন্যায় নিষ্ঠা, সত্যতা, অনন্য ভগবৎ প্রেম প্রভৃতি রয়েছে সেখানেই তাঁর আবির্ভাব। তাদের আসার কারণ অতীতকে ভুল প্রমাণিত করা নয়, বরঞ্চ ভবিষ্যৎকে আরও সুদৃঢ় ও সুঠাম করে তোলা। ত্যাগ ও তপস্যা পরায়ণ জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎকে নতুন রাস্তা প্রদান করা, যাতে সৌহার্দ্য ও শান্তি সমাজ জীবনে এবং একইসঙ্গে সংসারের অনিত্যতা অনুভব করত, মানবজীবন পারমার্থিক উন্নতি সাধনে তৎপর হয়।
প্রতি সাধক-সাধিকা বা অবতার পুরুষ সেই নতুন মাত্রা প্রদান করে থাকেন। সমাজ জীবনে সুখ খুঁজতে, মানুষ ইন্দ্রিয় সুখ ভোগকেই পথ হিসাবে গ্রহণ করে। কিন্তু দুঃখ হাতে নিয়ে ফিরে। তৎকালীন কিছু সুখ অনুভব করে হয়তো কিন্তু চরম শান্তি, আনন্দপ্রাপ্ত করতে পারে না। ভাগবত প্রেম যে আনন্দ দিয়ে থাকে তা বিষয়ে ভোগে হতে পারে না। বিষয়রা বিষয় ভোগে বিতৃষ্ণ হয়ে হয়তো সাধুর কাছে আসে, কিন্তু মনে করে আর বিষয় চিন্তা করবে না। সাধু সঙ্গে লুকিয়ে ফেলে কিন্তু সাধু সঙ্গ চলে গেলে আবার যেমনকে তেমন। পায়রা যেমন নিজের গলাতে খাওয়ার লুকিয়ে রাখে। বিষয়ী বিষয় ছাড়া থাকতে পারে না। সেই কারণে সাধুসঙ্গ এবং গুরুর উপদেশ মেনে চলা উচিত, যার চরম শান্তি আনন্দের দিকে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/02/Ramakrishna-2.jpg)
অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-৪০: সরল না হলে ঈশ্বরকে পাওয়া যায় না
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/10/Uttam-Kumar.jpg)
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫০: স্বপ্নের ‘যাত্রা হলো শুরু’
আজকাল সকলে হাতেনাতে ফল পেতে চাই। কিছু মানুষ আছে যারা অলৌকিকতাকে ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করে। সেই দিকে ছুটে। চরিত্রের পরিবর্তন, তার উন্নতি সাধন, সর্বোপরি দেবত্বের বিকাশ সাধন প্রকৃত ধর্ম আচরণ। কিন্তু অলৌকিক ঘটনা সাময়িক বিষয়-আশয় পাইয়ে দিতে পারে বা আর্থসামাজিক লৌকিক জীবনের সুখ পাইয়ে দিতে পারে। কিন্তু যতক্ষণ না আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন হচ্ছে, যতক্ষণ না আমার আমিত্বের পরিবর্তন হচ্ছে, ততক্ষণ ধর্ম সাধন হয় না। ধর্ম হল বিষয়ের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা নয়, পরন্তু, বিষয় আকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি। ধর্মকে ব্যবহার করা নয় সামাজিক বিষয়ের উন্নতি সাধনে; পরন্তু, অন্তরের পরিবর্তন করে, আত্যন্তিক দুঃখের নিবৃত্তি।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/10/Sundarban-1.jpg)
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১৭: সুন্দরবনের শিশুরক্ষক পাঁচুঠাকুর
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/10/Travel-2.jpg)
পরিযায়ী মন, পর্ব-৯: সাসারামের ঝর্ণাধারা
শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব জীবনে সাধনার দ্বারা সমৃদ্ধ করেন শুধু তাঁর জন্য নয়, দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য। কত সরল হওয়া যায়, কত সত্য পরায়ণ হওয়া যায়, কত গভীর ও গূঢ় হওয়া যায়, একই সঙ্গে ভগবত প্রেমে সদা বিরাজমান ব্যক্তিত্ব তা তিনি দেখিয়ে গিয়েছেন। শাস্ত্র ব্রহ্ম সম্বন্ধে যে ব্যাখ্যা দেয় তাকে সাধারণভাবে বোঝা যায় না। তাকে উপলব্ধি করা সাধারণের পক্ষে মনে হয় যেমন দূর্লভ তেমন অসাধ্য। কি এমন ব্রহ্ম যা সদা বিরাজমান কিন্তু বোধের অগম্য। প্রত্যক্ষ নয়, যা পরোক্ষ নয়, অপরোক্ষ, ইন্দ্রিয়াতীত। তা হলে তাকে অনুভব করব কি করে? অবতার পুরুষরা আসেন সেই ইন্দ্রিয়াতীত একমাত্র সত্যকে প্রত্যক্ষ করানোর জন্য। শরীর ধারণ করে, সেই ব্রহ্মই ঈশ্বর অবতার রূপে আবার জাতীয় জীবনকে পথ দেখান।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/10/Temple.jpg)
ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-১৩: সাগর দীঘির ধারে হিরণ্যগর্ভ শিবমন্দির ও মধুপুর ধাম
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/04/Rabindranath-1-1.jpg)
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৯: প্লেগে কন্যার মৃত্যু, সেই শোক অবনীন্দ্রনাথের ছবিতে পায় ভিন্নতর মাত্রা
ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণ সম্বন্ধে কেশব সেন তৎকালীন ২৮ মার্চ ১৮৭৫ সালে ‘ইন্ডিয়ান মিরর’ পত্রিকায় লিখছেন, “আমরা অল্প দিন হইল দক্ষিণেশ্বরে রামকৃষ্ণ পরমহংসকে বেলঘরের বাগানে দর্শন করিয়াছি। তাহার গভীরতা অন্তর্দৃষ্টি বালকসভা প্রভৃতি দেখিয়া আমরা মুগ্ধ হইয়াছি। তিনি শান্ত স্বভাব, কমল প্রকৃতি। আর দেখলে বোধহয় সর্বদা যোগেতে আছেন। এখন আমাদের বোধ হইতেছে যে হিন্দু ধর্মের গভীরতম প্রদেশ অনুসন্ধান করিলে কত সৌন্দর্য, সত্য ও সাধুতা দেখিতে পাওয়া যায়। তা না হলে পরমহংসের ন্যায় ঈশ্বরীয়ভাবে ভাবিত যোগীপুরুষ কিরূপে দেখা যাইতেছে?”
শ্রীরামকৃষ্ণ, শ্রীমা ও স্বামীজির তিন রূপে এক সত্ত্বা সেই এক অনন্তের। যাদের সহজ সরল জীবন অথচ মহাভাবের ঘনীভূত রূপ। সাধারণের মতো দিন যাপন করছেন অথচ গভীর ভগবত প্রেম সম্পন্ন। রূপ ঢেঁকে অরূপের আবির্ভাব। —চলবে।
শ্রীরামকৃষ্ণ, শ্রীমা ও স্বামীজির তিন রূপে এক সত্ত্বা সেই এক অনন্তের। যাদের সহজ সরল জীবন অথচ মহাভাবের ঘনীভূত রূপ। সাধারণের মতো দিন যাপন করছেন অথচ গভীর ভগবত প্রেম সম্পন্ন। রূপ ঢেঁকে অরূপের আবির্ভাব। —চলবে।
* অনন্ত এক পথ পরিক্রমা (Ananta Ek Patha Parikrama) : স্বামী তত্ত্বাতীতানন্দ (Swami Tattwatitananda), সম্পাদক, রামকৃষ্ণ মিশন, ফিজি (Fiji)।