সোমবার ৮ জুলাই, ২০২৪


শ্রীরামকৃষ্ণ।

সাধক জীবনে অনেক প্রতিকূলতা আসে। যিনি ঈশ্বরের শরণাপন্ন থাকেন, তাঁর ভয় থাকে না। অহংকার শূন্যতা সাধকের আরেক গুণ। যে যতটা পূর্ণত্বের দিকে এগিয়ে গিয়েছেন, তাঁর অহংকারের মাত্রা ও ততোধিক কমে গিয়ে শরণ্যের প্রকাশ হয়েছে। শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, “কলসি পূর্ণ হলে, কলসির জল পুকুরের জল এক হলে আর শব্দ থাকে না, যতক্ষণ না কলসি পূর্ণ হয় ততক্ষণ শব্দ। যে ভগবানকে পায়নি সেই ভগবান সম্বন্ধে নানা গোল করে। আর যে তার দর্শন পেয়েছে সে স্থির হয়ে ঈশ্বর আনন্দ উপভোগ করে।”

বস্তুত তাই। যে যা দেখেননি তা নিয়ে যখন কোনও কিছু বলতে বা মন্তব্য করতে যান তখন ভুল হয়। “মৌমাছি যতক্ষণ ফুলের চারিদিকে গুনগুন করে ততক্ষণ সে মধু পায় নাই। মধু যে পেয়েছে সে আর গুনগুন করে না। চুপ করে মধু পান করে। মানুষ যতক্ষণ ধর্ম নিয়ে গোল করে ততক্ষণ সে ধর্মের আস্বাদ পাই নাই। পেলে চুপ করে যায়।”
যিনি মনকে ঈশ্বরে আরোপ করেছেন তাঁর জাগতিক ব্যাপার সকলই আলুনি বোধ হয়। যদি মনটি ঈশ্বরের উপর রাখেন, তখন আর কাজ জ্ঞান করে না। তখন আর বিচার হয় না। জাহাজের কম্পাসের কাঁটা উত্তর দিকে থাকে, তাই জাহাজের দিক ভুল হয় না। ঠাকুর বলছেন, “মানুষের মন যদি ঈশ্বরের দিকে থাকে তাহলে কোনও ভয় থাকে না।” তাঁর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন হয়ে যায়। তিনি বাঁধা পড়ে যান মানুষের সঙ্গে। বস্তুত অভিন্ন সত্তা হয়ে উঠেন। বাঁদরের ছানা আপনার মাকে জড়িয়ে থাকে কিন্তু বিড়ালের ছানা পড়ে পড়ে ম্যাও ম্যাও করে ডাকে। বাঁদরের ছানা যদি হাত ছেড়ে দেয়, তাহলে পড়ে যায়। কারণ, সে মাকে ধরে আছে। বিড়ালের ছানাকে মা মুখে করে ধরে থাকে, তাই তার পড়বার ভয় নেই।
আরও পড়ুন:

অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-১: অমৃতের সন্ধানে…

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১: স্নানের আগে রোজ সর্ষের তেল মাখেন?

প্রথমটি পুরুষকার আর শেষটি নির্ভরশীলতা। শ্রীরামকৃষ্ণ নরেনকে পুরুষকার আর নির্ভরশীলতা নিয়ে একটি সুন্দর উপমা দিয়ে গল্প বলেছেন যাতে এই দুই দ্বন্দ্ব চলে যায়। “একটি গরু ততটা দূরের ঘাস খায়, যতটা তার গলার দড়ি লম্বা। তার বাইরে সে খেতে পারে না। খেতে হলে রাখালকে ডাকতে হয়। সে যদি গলার দড়ি খুলে দেয়, তবে ঘাস খেতে পারে।” নরেন গয়া বা কাশীর দিকে যেতে যেতে দু’ দিন না খেয়ে এক গাছ তলায় পড়েছিলেন। খানিক পরে দেখেন, কেউ তাঁকে ডাকছেন, দেখে একটি লোক খানকতেক লুচি, তরকারি, মিষ্টি আর একঘটি ঠান্ডা জল সামনে ধরে বললে রামজির প্রসাদ এনেছি গ্রহণ করুন।
আরও পড়ুন:

বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-১: চায়ের দোকান থেকে বিশ্বজয়

মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা সহজে শিখে নাও Transformation of Sentences by changing the DEGREES of Adjectives

নরেন বললেন, “আমার সঙ্গে তো তোমার কোনও পরিচয় নাই তুমি ভুল করছ। অন্য কাউকে দিতে বলেছেন।” লোকটি মিনতি করে বললেন, “না মহারাজজি আপনার জন্যই এই সব এনেছি। দুপুরে আমি ঘুমিয়েছি, দেখি স্বপ্নে একজন বলছেন, শিগগির ওঠ, অমুক গাছ তলায় যে সাধু আছেন, তাঁকে খাবার দিয়ে আয়। স্বপ্ন ভেবে আমি তাতেও না উঠে পাশ ফিরে শুলুম। তখন আমার গায়ে ধাক্কা দিয়ে তিনি বললেন আমি উঠতে বলছি আর তুই ঘুমাচ্ছিস। তখন মনে হল, মিথ্যা স্বপ্ন নয় রামজি হুকুম করেছেন। তাই সব নিয়ে ছুটে আসছি।”
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৭: পুরীতে বাড়ি— রবীন্দ্রনাথের, গগনেন্দ্রনাথ-অবনীন্দ্রনাথের

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৩০: শেষ পর্যন্ত ভগ্নদূত সুমন্ত্র কী বার্তা এনে দিলেন?

শ্রীশ্রীমা ঘটনাটি এ ভাবে বললেন। বোঝাচ্ছেন তাঁর শরণাগতির প্রতি মমত্ববোধ। তিনি কখনও পরিত্যাগ করে যান না। আমাদের শুধু বিড়াল ছানার মতো তাঁর প্রতি নির্ভর হয়ে থাকলেই হবে। তিনি জানেন কোথায় রাখতে হবে, আর কোথায় আমাদের মঙ্গল। অনন্তের সন্ধান আর সেই দরজার তালা চাবি তো তাঁর কাছেই রাখা আছে।
* অনন্ত এক পথ পরিক্রমা (Ananta Ek Patha Parikrama) : স্বামী তত্ত্বাতীতানন্দ (Swami Tattwatitananda), সহ-সচিব, রামকৃষ্ণ মিশন, ন্যন্দি (Nadi), সাউথ প্যাসিফিক (South Pacific), ফিজি (Fiji)।

Skip to content