একবিন্দু শিশিরকণা যেমন সূর্যকে বুকে ধরে তাকে প্রতিফলিত করে, তেমনই শিশিরবিন্দুর সাহসিকতা এত যে বিরাট সূর্যকে নিজের করে নেয় তা সে নিজেও জানে না। যে সূর্য শিশিরবিন্দুকে মুক্ত করে তোলে, চারু স্পর্শে তার অল্পত্বকে মিটিয়ে দেয়, চির অক্ষয় করে তোলে। শিশিরবিন্দু ভুলে যায় সে যে ঘাসের আগায় ক্ষণিকের জন্য বিকশিত। কিন্তু ক্ষণিকের জীবন, জীবনের সমস্ত তৃষ্ণাকে মিটিয়ে দেয়। যে বিন্দুতে বিরাট সূর্য প্রতিবিম্বিত হয় সে অসাধারণ।
তেমন ভক্তের হৃদয়ে সেই ভগবান বিরাটকে প্রতিবিম্বিত করে। শুদ্ধ মনে তিনি প্রতিবিম্বিত হন। শ্রী রামকৃষ্ণ বলেছেন, “শুদ্ধ মন শুদ্ধ আত্মা একই”। “যেমন আরশিতে ময়লা পড়লে মুখ দেখা যায় না, তেমনি হৃদয়ে ময়লা পড়লে ঈশ্বরের ছবি পড়ে না। ময়লা মুছে ফেললে যেমন আরশিতে মুখ দেখা যায়, তেমনি হৃদয় নির্মল হলে ঈশ্বর প্রকাশিত হন।” ভক্তির সাধনায় অন্তঃশুদ্ধি এবং বহিঃশুদ্ধির করার কথাও আছে। শুদ্ধিকরণ মানে শুচিবাই নয়। শুচিবাইয়ের সমাধানকল্পেও শ্রীমা এই অন্তর্দৃষ্টির সাহায্য নিতেন। নলিনী দিদি ভেজা কাপড়ে এসে বললেন, (৩০ আষাঢ়, ১৩২০) “কাক তাহার কাপড়ে প্রস্রাব করিয়াছে, তাই আবার স্নান করিয়া আসিয়াছেন”।
আরও পড়ুন:
অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-৭: ঈশ্বরের ভালোবাসার সমুদ্রে ডুব দিলে তবেই ভক্তিরূপ মুক্তো খুঁজে পাওয়া সম্ভব
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫২: বইয়ের সব কপি কবির নির্দেশে বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল
শ্রীমা বললেন, “বুড়ো হতে চললুম কাকে প্রস্রাব করে কখনও শুনিনি। বহু পাপ, মহাপাপ না হলে কি মন অশুদ্ধ হয়। শুচিবাই! মন আর কিছুতেই শুদ্ধ হচ্ছে না। আর শুচিবাই যত বাড়াবে, এ সব তত বাড়বে।” একবার তিনি নলিনী দিদিকে বলেছিলেন, “আমি তো দেশে যাওয়ার সময় শুকনো বিষ্ঠা মাড়িয়ে চলেছি। দু’বার গোবিন্দ গোবিন্দ বলল, ব্যাস। সব শুদ্ধ হয়ে গেল। মনেতেই সব। মনেতেই শুদ্ধ, মনেই অশুদ্ধ।”
কামনা বাসনা আমাদের মনকে মলিন করে। যেমন এক ফোঁটা নীলবড়ি সমস্ত বালতির জলকে নীল করে দেয়। তেমন কামনা বাসনা আমাদের মনকে অশুদ্ধি করে দেয়। যার গভীরে শুদ্ধ আত্মার প্রকাশ রয়েছে তাকে জানতে দেয় না। যেমন কোন আলোকে লোহার চাদর দিয়ে ঢেকে দেওয়া হলে বোঝা যায় না যে তার ভেতর আলোর প্রকাশ আছে। শ্রীমা বলছেন, “যদি মা আনন্দময়ীকে তোমরা একবার দেখতে পাও, তাহলে তোমাদের ধন মান যশ ভালো লাগবে না। সব ফেলে তার কাছে দৌড়ে যাবে।”
কামনা বাসনা আমাদের মনকে মলিন করে। যেমন এক ফোঁটা নীলবড়ি সমস্ত বালতির জলকে নীল করে দেয়। তেমন কামনা বাসনা আমাদের মনকে অশুদ্ধি করে দেয়। যার গভীরে শুদ্ধ আত্মার প্রকাশ রয়েছে তাকে জানতে দেয় না। যেমন কোন আলোকে লোহার চাদর দিয়ে ঢেকে দেওয়া হলে বোঝা যায় না যে তার ভেতর আলোর প্রকাশ আছে। শ্রীমা বলছেন, “যদি মা আনন্দময়ীকে তোমরা একবার দেখতে পাও, তাহলে তোমাদের ধন মান যশ ভালো লাগবে না। সব ফেলে তার কাছে দৌড়ে যাবে।”
আরও পড়ুন:
পর্দার আড়ালে, পর্ব-২৬: উত্তম কাছে এসে বললেন, “তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি সাবু, এ বার আমায় মাফ করে দে”
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৪: মন তোর শক্তিই ‘মন্ত্রশক্তি’
আর অশুদ্ধি আসে না। শ্রীশ্রী মার কথায়, “অনেক সাধন তপস্যা করলে পূর্বজন্মের অনেক তপস্যা থাকলে তবে এ জন্মে মনটি শুদ্ধ হয়।” শ্রীরামকৃষ্ণ একটি সুন্দর গল্প বলেছেন, এক গ্রামে পোদো নামে এক যুবক থাকতো। হঠাৎ সেই গ্রামের লোকেরা অনেক দিনের পোড়া ত্যক্ত একটা মন্দিরের দিক থেকে শাঁখের শব্দ শুনতে পেলে। গ্রামবাসীরা ভাবলে কেউ মনে হয় মন্দির পরিষ্কার সংস্কার করে দেবতার প্রতিষ্ঠিত করেছে।
আরও পড়ুন:
ডায়েট ফটাফট: স্যালাডে স্বাস্থ্যরক্ষা, কী ভাবে তৈরি করবেন সেই সব পুষ্টিকর খাবার? দেখে নিন একঝলকে
স্বাদে-আহ্লাদে: সকালে জলখাবারে থাক নতুনত্ব, বানিয়ে ফেলুন সুস্বাদু পালক পনির পরোটা
তাই সকলের সেখানে জমা হতে লাগলো। তারপর মন্দিরের দরজা ভাঙা দেখে সকলে দেখল সেই গ্রামের যবুক পোদো এককোণে দাঁড়িয়ে ভোঁ ভোঁ করে শাঁখ বাজাচ্ছে। মন্দির সংস্কার হয়নি। মন্দিরে পরিষ্কার হয়নি। শুধু শাঁখ বাজিয়ে হবে কি? দেবতার প্রতিষ্ঠা হয়নি। তাই তাঁরা বললেন: পদো শাঁখ ফুঁকে তুই করলি গোল। মন্দিরে তোর নেইকো মাধব… হৃদয়মন্দিরে মন শুদ্ধ করে দেবতা প্রতিষ্ঠা করলে তবে তো দেবতার পুজো হবে।
* অনন্ত এক পথ পরিক্রমা (Ananta Ek Patha Parikrama) : স্বামী তত্ত্বাতীতানন্দ (Swami Tattwatitananda), সহ-সচিব, রামকৃষ্ণ মিশন, ন্যন্দি (Nadi), সাউথ প্যাসিফিক (South Pacific), ফিজি (Fiji)।