রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


শ্রীরামকৃষ্ণ।

বালক যেমন খুঁটি ধরে বন বন করে ঘুরলেও পড়ে যায় না। সেই রকম ভগবানকে ধরে যা ইচ্ছা করো, তোমার কাছে কোনও বিপদ আসবে না। “সংসারে ঈশ্বরকে ধরে সকল কাজ করো, নিরাপদে থাকবে।” শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ কথামৃতের প্রায় জায়গাতে শ্রীরামকৃষ্ণ, মনুষ্য জীবনের উদ্দেশ্য ঈশ্বর লাভ— এ কথা অনেকবার বলেছেন। এতবার এতজনকে বলেছেন যে, ভাগ্নে হৃদয় একবার শ্রীশ্রী ঠাকুরকে বলছেন, “মামা তুমি এক কথা সকলকে কতবার বলবে?” শ্রীশ্রী ঠাকুর উত্তরে বলছেন, “শালা তোর কি তাতে? আমার কথা আমি যত বার ইচ্ছা বলবো।”
শ্রীরামকৃষ্ণ নিরন্তর মানুষের কল্যাণে, তাদের জীবনের মার্গ দর্শনে চেষ্টা করতেন। মাঠের জল কেউ ব্যবহার না করলেও রৌদ্রের তাপে তা এমনিতেই শুকিয়ে যায়। শ্রী রামকৃষ্ণ বলছেন, “পাপী মানুষ ঈশ্বরের উপর নির্ভর করে পড়ে থাকলে, তাঁর দয়া গুণে আপনা আপনিই পবিত্র হয়ে যায়।” এক চোর রাজার বাড়ি চুরি করতে গিয়ে শুনলে যে, রাজা রানিকে বলছেন, কাল সকালে যে সকল সাধুরা গঙ্গার তীরে এসেছেন তাদের মধ্যে একজনকে ডেকে এনে রাজকন্যার সঙ্গে বিবাহ দেবেন। রাজার কথা শুনে চোর ভাবলে যে, তাহলে সেখানে আমি সাধু সেজে যাই! তাহলে আমি রাজকন্যাকে বিবাহ করতে পারব। সে তাই করল।
আরও পড়ুন:

অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-৫: ভক্তের আন্তরিকতা ও প্রার্থনা, ভগবানকে রেশম সুতোয় বেঁধে রাখে

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫০: লুকোনো বই পড়ার জন্য রবীন্দ্রনাথ বাক্সের চাবি চুরি করেছিলেন

পরদিন রাজার লোক গিয়ে সাধুদের আহ্বান করতে লাগলো। কিন্তু বিবাহের কথা শুনে সাধুরা কেউ রাজি হলেন না। তারপর রাজার লোকেরা সাধু বেশধারী চোরকে আহ্বান করলেন। চোর একেবারে সম্মত না হয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। রাজার লোকেরা রাজার নিকট এসে বললেন, এক যুবা সাধু আছেন তিনি রাজি হলেও হতে পারেন। কিন্তু আর কোন সাধুই সম্মত নয়।
আরও পড়ুন:

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-৫: জনজাতি ও জনসত্ত্বা

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৩: মোর সাধের বাসরে ঘটল ‘গৃহ প্রবেশ’

রাজা নিজে পরের দিনে এলেন এবং বিভিন্ন রকমে তাকে সাধ্য সাধনা করিতে লাগলেন। রাজাকে এমন দেখে কিন্তু চোরের মন বদলে গেল। সে ভাবলে আমি কেবল সাধুর বেশ করেছি তাতেই আমার নিকট রাজা এসে সাধ্য সাধনা করছেন, না জানি আমি প্রকৃত সাধু হলে আমার কি দশা হবে। এইরকম ভাবতে ভাবতে তার মন একেবারে বদলে গেল। বিবাহ না করে এবং যাতে প্রকৃত সাধু হওয়া যায় তার জন্য সে যত্নবান হল।

তারপর আর তার বিবাহ করা হল না। মুহূর্তে সাধুর বেশ ধরে সাধুর নিকট বসে চোরের মন এমনিই বদলে গেল। সৎসঙ্গের মহিমা কত তাহা বলা যায় না। কথায় আছে— সাধুসঙ্গে স্বর্গ বাস। সাধু সঙ্গ, সদ অসদ বিচার, ভজন কীর্তন এই উপায়ে ভগবান লাভ করা যায়।
আরও পড়ুন:

ত্বকের পরিচর্যায়: ত্বক শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে? যত্নে কী কী করবেন? জেনে নিন ত্বক বিশেষজ্ঞের জরুরি পরামর্শ

হেলদি ডায়েট: গাল জুড়ে এক রাশ ব্রণ? সমাধান লুকিয়ে আছে এ সবের মধ্যে, কী ভাবে কাজে লাগাবেন ঘরোয়া টোটকা?

স্বামী বিশ্বেশ্বরানন্দ একদিন জয়রামবাটিতে শ্রীশ্রী মাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “মা, কি করে ভগবান লাভ হয়? পূজা, জপ, ধ্যান, এসবে কি হয়?” শ্রীশ্রীমা বললেন— “কিছুতেই না।” স্বামী বিশ্বেশ্বরানন্দ— “কিছুতেই না?” শ্রীশ্রীমা—“কিছুতেই না।” স্বামী বিশ্বেশ্বরানন্দ— “তবে কিসে হয় মা?” শ্রীশ্রীমা— “শুধু তার কৃপাতে হয়, তবে ধ্যান জপ করতেই হয়। তাতে মনের ময়লা কেটে যায়। পূজা, জপ, ধ্যান এসব করতে হয়। যেমন ফুল নাড়তে চড়তে ঘ্রাণ বের হয়, চন্দন ঘষতে ঘষতে গন্ধ বের হয়। ভগবত তত্ত্ব আলোচনা করতে করতে তত্ত্ব জ্ঞানের উদয় হয়। নির্বাসনা যদি হতে পারো তো এক্ষুনি হয়।” যে কোনও অবস্থায় ঈশ্বরের প্রতি টান অনুভব করতে চায় মন। যে কোনও ভাবে নিজেকে উৎসর্গ করাই ঈশ্বর লাভের উপায়।
আরও পড়ুন:

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৪১: মৎস্যজীবীদের মীন সংগ্রহে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিলে প্রচুর অপচয় কমবে, রক্ষা পাবে মাছের জীব বৈচিত্র্যও

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৩৩: শোকস্তব্ধ অযোধ্যানগরী কি আপন করে নিল ভরতকে?

স্বামী শিবানন্দ বলছেন, “শ্রী রামকৃষ্ণ বলতেন, যতক্ষণ ছেলে চুষিকাঠি নিয়ে মাকে ভুলে থাকে ততক্ষণ মা আসে না। কিন্তু যখন ছেলে চুষি কাঠি ফেলে মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য কাঁদে তখনই মা সমস্ত কাজ ফেলে ছেলেকে কোলে নেয়।” ঐকান্তিকতা আর শরণাগতি ঈশ্বরের ভীষণ প্রিয়।
* অনন্ত এক পথ পরিক্রমা (Ananta Ek Patha Parikrama) : স্বামী তত্ত্বাতীতানন্দ (Swami Tattwatitananda), সহ-সচিব, রামকৃষ্ণ মিশন, ন্যন্দি (Nadi), সাউথ প্যাসিফিক (South Pacific), ফিজি (Fiji)।

Skip to content