
শ্রীরামকৃষ্ণদেব। ছবি: সংগৃহীত।
ঈশ্বর যদি সর্বব্যাপী হয়ে থাকেন, তিনি সকলের মধ্যে যদি অবস্থান করেন, তিনি যদি সব বস্তুর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকেন, তবে ঈশ্বরকে ডাকার কী প্রয়োজন অথবা ঈশ্বরের সান্নিধ্য ইচ্ছে করার কী প্রয়োজন? প্রশ্ন হল ঈশ্বরকে ডাকবো কেন? আমরা যদি ঈশ্বর হয়ে থাকি, তবে ঈশ্বরকে ডাকার প্রয়োজন নেই। তিনি তো আমাদের মধ্যে রয়েছেন। হ্যাঁ, ঠিক কথা। যদি ঈশ্বর আমাদের মধ্যে থাকেন তাহলে আমাদের আর তাঁকে ডাকার প্রয়োজনীয়তা নেই। কিন্তু প্রয়োজনের কারণ, এটি অনুভব করে তদ্গত হওয়া যে, তিনি আমার থেকে অপৃথক। অথবা, আমি তার থেকে কখনওই পৃথক নই এটি অনুভব করার জন্য সাধন ভজন করা।
এই সাধন ভজন করা, প্রার্থনা করা শুধু তাঁর সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য। তাঁকে অনুভব করার জন্য মনের শুদ্ধিকরণ করা। আমাদের মনে যে অহংকার, কাম, ক্রোধাদি সকল মলিনতা রয়েছে, সেটি সাধন ভজন দ্বারা, স্মরণ, মনন ও নিধিদ্ধ্যাসন দ্বারা অথবা সাধুসঙ্গ, নামগুণ কীর্তন, সৎগ্রন্থ পাঠ-এর দ্বারা আমাদের মনের শুদ্ধিকরণ হয়। তখন শুদ্ধ মনে শুদ্ধ ঈশ্বর প্রতিভাত হন। তিনি তো দূরে কোথাও নেই, তিনি সর্বত্রই রয়েছেন। তাঁর আসার প্রয়োজনীয়তা নেই, যাওয়ারও প্রয়োজনীয়তা নেই।
আরও পড়ুন:

অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-৩১: সরল শুদ্ধ মনে সোজা পথে ডাক, নিশ্চয়ই তাঁকে পাবি…

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৯: তা বলে কি প্রেম দেব না!
আমরা শুধু ভগবানের অস্তিত্ব অনুভব করতে পারি যে, তিনি শুদ্ধ রয়েছেন। তিনি আমাদের অন্তরে, আমাদের বাহিরে রয়েছেন। এই জন্যই সাধনের দরকার। মনকে একমুখী করে তার সান্নিধ্য লাভ করা। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, যিনি মাত্র আমাতেই মনকে সংলগ্ন করেন, তিনি আমাকেই প্রাপ্ত হন। সেই কারণেই অন্তরের অন্তস্থলে শুদ্ধিকরণ দরকার। ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, “কালীর ভক্ত জীবন মুক্ত নিত্যানন্দময়। ঈশ্বরীয় কথার ইতি করা যায় না তারে বাড়া তারে বাড়া আছে।”
তিনি সমান ভাবে বিদ্যমান, তাই তাঁকে সমরসও শাস্ত্রে বলেছে। শ্রীশ্রীঠাকুর বলছেন, “তার কৃপা, একজনের উপর বেশি আর একজনের উপর কম, সে কি! ঘোড়াটাও তার আর সোরাটাও তার। বিভুরূপে তিনি সকল কার ভিতর সমান আছেন। আমার ভিতর যেমন পিঁপড়েটার ভিতরে তেমনি। কিন্তু শক্তিরূপে প্রভেদ। এমন লোক আছে যে, একলা একশত লোককে হারাতে পারে। লোকে কেশব সেনকে এত মান্য করত কেন!”
তিনি সমান ভাবে বিদ্যমান, তাই তাঁকে সমরসও শাস্ত্রে বলেছে। শ্রীশ্রীঠাকুর বলছেন, “তার কৃপা, একজনের উপর বেশি আর একজনের উপর কম, সে কি! ঘোড়াটাও তার আর সোরাটাও তার। বিভুরূপে তিনি সকল কার ভিতর সমান আছেন। আমার ভিতর যেমন পিঁপড়েটার ভিতরে তেমনি। কিন্তু শক্তিরূপে প্রভেদ। এমন লোক আছে যে, একলা একশত লোককে হারাতে পারে। লোকে কেশব সেনকে এত মান্য করত কেন!”
আরও পড়ুন:

ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-৫: রাজবাড়ি এবং অভিনব বিবাহপর্ব

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭০: অন্য বাইশে শ্রাবণ
শ্রীমতি রাধা যখন সহস্রধারা কলসি নিয়ে গেলেন তখন একবিন্দুও জল পড়ে নাই দেখে সকলে ‘এমন সতী আর হবে না’ বলে প্রশংসা করতে লাগলো তখন শ্রীমতি রাধা বললেন, তোমরা আমার জয় কেন বল বল শ্রীকৃষ্ণের জয়, জয় শ্রীকৃষ্ণের জয়।
অহল্যা বলেছিলেন, ”হে রাম ! যদি শুকর যোনিতেও জন্ম হয় সেও শিকার। কিন্তু যেন তোমার শ্রীপাদপদ্মে শুদ্ধা ভক্তি থাকে আর আমি কিছুই চাই না।”
ঈশ্বরের কাছে কিছু চাইতে নেই। শুধু তাঁকে কি করে ভালোবাসা যায় তার জন্য চেষ্টা করতো হয়। রাজবাড়িতে ভিক্ষা করতে গিয়ে যে লাউ, কুমড়ো তুচ্ছ বস্তু প্রার্থনা করে সে অতি নির্বোধ। রাজাধিরাজ ভগবানের দ্বারস্থ হয়ে জ্ঞানভক্তি ইত্যাদি রত্ন প্রার্থনা না করে অষ্টসিদ্ধায় প্রভৃতি তুচ্ছ বস্তুর নিমিত যে প্রার্থনা করে সে কত বড় নির্বোধ। যেমন ডাকাতেরা ডাকাতি করার পূর্বে কালীপূজা করে জয় কালী বলে হুংকার করে।
অহল্যা বলেছিলেন, ”হে রাম ! যদি শুকর যোনিতেও জন্ম হয় সেও শিকার। কিন্তু যেন তোমার শ্রীপাদপদ্মে শুদ্ধা ভক্তি থাকে আর আমি কিছুই চাই না।”
ঈশ্বরের কাছে কিছু চাইতে নেই। শুধু তাঁকে কি করে ভালোবাসা যায় তার জন্য চেষ্টা করতো হয়। রাজবাড়িতে ভিক্ষা করতে গিয়ে যে লাউ, কুমড়ো তুচ্ছ বস্তু প্রার্থনা করে সে অতি নির্বোধ। রাজাধিরাজ ভগবানের দ্বারস্থ হয়ে জ্ঞানভক্তি ইত্যাদি রত্ন প্রার্থনা না করে অষ্টসিদ্ধায় প্রভৃতি তুচ্ছ বস্তুর নিমিত যে প্রার্থনা করে সে কত বড় নির্বোধ। যেমন ডাকাতেরা ডাকাতি করার পূর্বে কালীপূজা করে জয় কালী বলে হুংকার করে।
আরও পড়ুন:

অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-১: একটু শুরুর কথা হলে ক্ষতি কী…

মন্দিরময় উত্তরবঙ্গ, পর্ব-১: ভিতরকুঠি টেরাকোটা শিবমন্দির এক অনন্যসাধারণ কোচ স্থাপত্যশৈলীর উদাহরণ
বাবুর কাছে আসে কিছু চায় না কেবল ভালোবাসে বলে বাবুকে দেখতে আসে। তাহলে বাবুরও ভালোবাসা তার উপর পড়ে। যেমন প্রহ্লাদের ঈশ্বরের প্রতি শুদ্ধ নিষ্কাম ভালোবাসা। শ্রীশ্রী ঠাকুর বলছেন, “শ্রীমতি যখন শ্রীকৃষ্ণের নিকট অগ্রসর হচ্ছেন, ততই কৃষ্ণের দেহের গন্ধ পাচ্ছেন। ঈশ্বরের নিকট যতই যাওয়া যায় ততই তাহার ভাব ভক্তি হয়। সাগরের নিকট নদী যত যায় ততই জোয়ার ভাটা দেখা যায়, ততই তাহাতে মতি হয়।”
সংসারে থেকে ঈশ্বর লাভ হবে না কেন! তাঁকে ডাকার কি প্রয়োজন। তিনি শুধু অন্তরে নয়, অন্তরে-বাহিরে। এটি সাক্ষাৎকার করার জন্যই তাকে ডাকা। তিনি সব জানেন কিন্তু তিনি এও চান যে, আমরা তাঁকে ডাকি, যতক্ষণ না আমাদের আমি আর তাঁর আমি এক হয়ে যায়। সাধন ভজন তার নাম গুণকীর্তন এটার জন্যই তাঁকে ভক্তি করা।
সংসারে থেকে ঈশ্বর লাভ হবে না কেন! তাঁকে ডাকার কি প্রয়োজন। তিনি শুধু অন্তরে নয়, অন্তরে-বাহিরে। এটি সাক্ষাৎকার করার জন্যই তাকে ডাকা। তিনি সব জানেন কিন্তু তিনি এও চান যে, আমরা তাঁকে ডাকি, যতক্ষণ না আমাদের আমি আর তাঁর আমি এক হয়ে যায়। সাধন ভজন তার নাম গুণকীর্তন এটার জন্যই তাঁকে ভক্তি করা।
* অনন্ত এক পথ পরিক্রমা (Ananta Ek Patha Parikrama) : স্বামী তত্ত্বাতীতানন্দ (Swami Tattwatitananda), সম্পাদক, রামকৃষ্ণ মিশন, ফিজি (Fiji)।