![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/06/Ramakrishna-1.jpg)
শ্রীরামকৃষ্ণকে একজন ভক্ত জিজ্ঞেস করছেন, “সংসারে থেকে কি ধর্ম সম্ভব?” শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন, “সংসারে আছ, থাকলেই বা, কিন্তু কর্মফল সমস্ত ঈশ্বরকে সমর্পণ কর। নিজে কোনও ফলের কামনা করো না। নির্লিপ্তভাবে সংসারযাত্রা নির্বাহ করা কর্তব্য। অনাশক্ত হয়ে সংসারের থেকে কর্ম করলে, আর তা মিথ্যা জেনে, জ্ঞানের পর সংসার করলে কোনও ভয় নেই। তুমিই আমার একমাত্র। এসব ঘরবাড়ি, পুত্র, পরিবার, বন্ধু, যা কিছু সবই তোমার জেনে সংসার করো, তাকে লাভ করবেই করবে।”
ধর্ম ও সাধনা সনাতন শাস্ত্র অনুযায়ী বিজ্ঞান। প্রকৃত ভক্ত ধর্ম লাভ করতে চাইলে কিছু বিশেষ পদ্ধতির মধ্য দিয়ে গিয়ে সর্বোচ্চ অবস্থা লাভ করতে পারে। মনের পরিবর্তন করার সঙ্গে সঙ্গেই সে সকল বন্ধন ছিন্ন করতে পারে। ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা। শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, “যে ধুলোপড়া জানে, সে সাতটা সাপ গলায় জড়িয়ে রাখতে পারে। ঈশ্বর ভক্তিরূপ ধুলোপড়া শিখে সংসারে নিরাপদে থাকতে পারা যায়। যদি সাপ কামড়ায় আর যদি মনের সঙ্গে জোর কর ‘বিষ নাই’ একথা বলতে পারো, তবে বিষ ছেড়ে যায়। তেমনি আমি বদ্ধ নই, আমি মুক্ত। এটি বলতে বলতে ক্রমে জীবমুক্ত হয়ে যায়।”
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/06/Ramkrishna.jpg)
পর্ব-২৫: ধর্ম লাভ হলে পাথরের মূর্তিও প্রাণবন্ত হয়, প্রতিটি জীবে ঈশ্বরের উপস্থিতি অনুভূত হয়
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/06/Gauhar-jaan5.jpg)
বিচিত্রের বৈচিত্র: মাই নেম ইজ গওহর জান—ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে অঘোষিত বিপ্লব এনেছিলেন এই শিল্পী
সংসারে থেকে সাধনা করাকে শ্রীরামকৃষ্ণদেব কেল্লার ভিতর থেকে লড়াই করার সঙ্গে তুলনা করতেন। কেল্লার ভিতর থেকে লড়াই করলে রসদ পাওয়া যায় ও শীঘ্র বলক্ষয় হয় না। সংসারে থেকে সাধনা করলে সেই রূপ অনেক সুবিধে হয়। জুতো পরে থাকলে কাঁটার উপর দিয়ে অনায়াসে চলে যাওয়া যায়। ঈশ্বর লাভ করে সংসারে থাকলে কোনও ক্ষতি হয় না। শ্রীরামকৃষ্ণকে একজন জিজ্ঞেস করছেন, “সংসারের লোকেরা সব ছেড়েছুড়ে ভগবানের কাছে যায় না কেন?” শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, “সং সেজে আসরে নেমে কি সঙ্গে সঙ্গেই ত্যাগ করতে পারে? খানিকক্ষণ খেলা করুক, তারপর আপনি সাত ছেড়ে ফেলবে।”
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/06/haricharan-bandyopadhyay.jpg)
অজানার সন্ধানে: ‘বঙ্গীয় বিশ্বকোষ’ প্রণেতা হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন রবীন্দ্রনাথের প্রিয়পাত্র
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/06/Rabindranatha-5.jpg)
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬৬: কবির অসুখ-বিসুখ
এখন বৈদিক সনাতন ধর্ম, বলা ভালো সার্বিক ধর্ম দর্শনের পথ কার একার জন্য নই। সীমাবদ্ধতাও নেই। সকল বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার মানুষ যারা ঋষি, যেন একসঙ্গে সমন্বিত করা, যুগ যুগ ধরে ঋষিদের আবিষ্কৃত সত্য তথ্যগুলি যেন রক্ষিত করা। বহির্বিজ্ঞান মনের সঙ্গে বাইরের বিষয়গুলিকে সংযুক্ত করে জানতে চায় গভীর তথ্য দিয়ে। জানতে চায় তার প্রকৃতি। তেমন অন্তঃবিজ্ঞান সনাতন ধর্মের আচারি ঋষিরা মনের সঙ্গে অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের প্রকৃতিকে জানতে চায়। জানতে চায় আনন্দের উৎস কোথায়? বিষয় না ইন্দ্রিয় না মন? কোথায়? না আরও কোনও গভীরে রয়েছে সে উৎস। যে আরও সুক্ষ্ম, যেখানে মন বা ইন্দ্রিয় সকল পৌঁছতে পারে না।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/06/Uttam-Kumar4.jpg)
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪০: সে এক স্বর্গপুরীর ‘চিরকুমার সভা’
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/06/hair-care.jpg)
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৫: আমাদের নাকি রোজই চুল পড়ে!
ঋষিরা আবিষ্কার করে সর্বব্যাপী ইন্দ্রিয়াতীত অসম্পৃক্ত আত্মা তত্ত্বকে। যার প্রকৃতি আনন্দ স্বরূপ। যার উপর যত নাম রূপের আবরণ লাগিয়ে লাগিয়ে তৈরি হয়েছে এই শরীর। বেড়ে আকার, আয়তন, সংস্কার তথা আচরণ পরিবর্তিত হয়েছে প্রকৃত মানুষের প্রকৃতি সত্তার। মানুষ যত বড়, যত বুদ্ধি দিয়ে আবিষ্কার করুক না কেন, আনন্দ পাওয়ার জন্য যতই এগিয়ে যাক না কেন, যতই নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রাণী বলুক না কেন— সে আর পাঁচটা জীবের মতোই জীব।
প্রকৃতি যতক্ষণ না সেই ইন্দ্রিয়াতীত হয়ে নিজের জীব প্রকৃতিকে জয় করতে পারছে, যতক্ষণ না সে নিজের শারীরিক প্রাণীর বৃত্তি ত্যাগ করতে পারে, ততক্ষণ বড়াই করার কিছুই নেই। সে চিন্তা করতে পারে, তার মন সূক্ষ্ম হতে পারে, সে মনে রাখতে পারে, সে নিত্য নতুন-ভাবনা করতে পারে। কিন্তু যতক্ষণ না সে সেই ভাবনা সকল ইন্দ্রের বিষয় সকল থেকে বর্জিত হচ্ছে, যতক্ষণ না বাসনা বর্জিত ভাবনা হচ্ছে, যতক্ষণ না মন সুক্ষ্মাতি সূক্ষ্ম বিষয় বর্জিত হচ্ছে, ততক্ষণ সে প্রাণীই থাকছে। যখন সে আত্ম তত্ত্বে প্রতিষ্ঠিত হবে, তখনই অন্য সকল সৃষ্টি থেকে আলাদা, মৃত্যু রহিত, জন্ম রহিত। তখন সকল সময় বর্তমান, আনন্দ স্বরূপ হবে। প্রকৃত ধর্ম লাভে মানুষ বি-জ্ঞানী হয়। অসাম্প্রদায়িক সম্প্রদায় হয়।
প্রকৃতি যতক্ষণ না সেই ইন্দ্রিয়াতীত হয়ে নিজের জীব প্রকৃতিকে জয় করতে পারছে, যতক্ষণ না সে নিজের শারীরিক প্রাণীর বৃত্তি ত্যাগ করতে পারে, ততক্ষণ বড়াই করার কিছুই নেই। সে চিন্তা করতে পারে, তার মন সূক্ষ্ম হতে পারে, সে মনে রাখতে পারে, সে নিত্য নতুন-ভাবনা করতে পারে। কিন্তু যতক্ষণ না সে সেই ভাবনা সকল ইন্দ্রের বিষয় সকল থেকে বর্জিত হচ্ছে, যতক্ষণ না বাসনা বর্জিত ভাবনা হচ্ছে, যতক্ষণ না মন সুক্ষ্মাতি সূক্ষ্ম বিষয় বর্জিত হচ্ছে, ততক্ষণ সে প্রাণীই থাকছে। যখন সে আত্ম তত্ত্বে প্রতিষ্ঠিত হবে, তখনই অন্য সকল সৃষ্টি থেকে আলাদা, মৃত্যু রহিত, জন্ম রহিত। তখন সকল সময় বর্তমান, আনন্দ স্বরূপ হবে। প্রকৃত ধর্ম লাভে মানুষ বি-জ্ঞানী হয়। অসাম্প্রদায়িক সম্প্রদায় হয়।
* অনন্ত এক পথ পরিক্রমা (Ananta Ek Patha Parikrama) : স্বামী তত্ত্বাতীতানন্দ (Swami Tattwatitananda), সম্পাদক, রামকৃষ্ণ মিশন, ফিজি (Fiji)।