রবিবার ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


শ্রীরামকৃষ্ণ অবসর পেলেই শ্রীশ্রী মাতা ঠাকুরানিকে মানব জীবনের উদ্দেশ্য ও কর্তব্য সম্বন্ধে সর্বপ্রকার শিক্ষা প্রদান করতেন। তিনি বলেছিলেন, “চাঁদমামা যেমন সকল শিশুর মামা তেমনি ঈশ্বর সকলেরই আপনার ।তাহাকে ডাকিবার সকলেরই অধিকার আছে যে ডাকিবে তিনি তাহাকেই দর্শন দানে কৃতার্থ করিবেন। তুমিও ডাকিলে তুমিও তাহার দেখা পাইবে।”

ঈশ্বরের মতো কাছের আর কেউ নেই। আবার যে ঈশ্বর বিমুখ তার কছে তিনি অনেক দূরে। যে যেমন ভাবে গ্রহণ করে। যে ভাবে আমি জীব সে জীব আরযে ভাবে আমি শিব সে শিব। পরমহংসদেব বলেছেন, “মনে কখনও হতাশ পাওয়াতে দেবে না। হতাশ হলে সে আর ধর্ম পথে অগ্রসর হতে পারবে না। যার যেমন ভাব তার তেমনই লাভ।”
একজন জমিদার ঋণের দায়ে পাওনাদারের ফাঁকি দেওয়ার জন্য পাগল সেজেছিলেন। ডাক্তার কবিরাজরা কেহ তাহাকে ভালো করতে পারছিলেন না। শেষে একদিন দক্ষ চিকিৎসক তাহাকে দেখেই বললেন, মহাশয়! করছেন কী?

নকল করতে করতে শেষে আসল হয়ে যাবে। এর মধ্যেই তো দেখছি অনেকটা ছিটটিট হয়েছে। এই কথা শুনে তার চৈতন্য হল এবং তিনি পাগলামি ছেড়ে দিলেন। সর্বদা কোনও রূপ ভান করিলে মনও ক্রমে ক্রমে তদ্রূপ ভাবপ্রাপ্ত হয়। শ্রীরামকৃষ্ণ ভরত রাজার কথা বলছেন, “ভরত রাজা হরিণ হরিণ করে দেহত্যাগ করেছিলেন তাই হরিণ জন্ম হল।ঈশ্বর চিন্তা করে দেহত্যাগ করলে ঈশ্বর লাভ হয়। আর সংসারে আসতে হয় না।”
আরও পড়ুন:

অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-২০: আসক্তি ত্যাগের মধ্যেই আমরা সেই চরম স্থান পেতে পারি, যা অনন্ত মুক্তির ও চির আনন্দময়

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৬: টাকা-পয়সা খরচ করে পরিদর্শনের লোক রাখলেও, নিজে পর্যবেক্ষণ না করলে সবকিছুই বিনষ্ট হয়

কথায় আছে সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস।

“বায়ুতে সুগন্ধ দুর্গন্ধ সব রকমই থাকে কিন্তু বায়ু নির্লিপ্ত। তার সৃষ্টিই এইরকম ভালো-মন্দ সব আছে। যেমন গাছের মধ্যে কোনটা আম গাছ কোনটা কাঁঠাল গাছ কোনটা আমড়া গাছ। তাই বলি সংসারে দুষ্ট লোকের প্রয়োজন আছে।”

“পুকুরের পানার ভেতর মাছ যেমন কিলবিল করে সচ্চিদানন্দ ঈশ্বর সেই রকম প্রত্যেক মানুষের ভেতর লীলা করছেন।” অহংকারের কারণেই জীব ঈশ্বর থেকে আলাদা। মানুষ তার নিজস্ব গণ্ডিতে জগত তৈরি করে নেয়। ঈশ্বরের থেকে পৃথক হয়ে পড়ে। সূর্য জগতকে উত্তাপ দিয়ে জুড়াতে পারে, কিন্তু মেঘ সূর্যকে ঢাকলে সূর্য কিছুই করতে পারে না। সেই রূপ অন্তরে আমি থাকলে ঈশ্বর কিছুই করতে পারেন না।
আরও পড়ুন:

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১২: হঠাৎ স্নানঘর থেকে পঞ্চমের চিৎকার ‘মিল গয়া মিল গয়া’, সৃষ্টি হল সেই জনপ্রিয় গান ‘মুসাফির হুঁ ইয়ারো’

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২০: শোওয়ার বালিশ বিছানা কেমন হবে? শক্ত না নরম?

স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, “বেদান্ত প্রকৃতপক্ষে জগৎকে একেবারে উড়িয়ে দিতে চায় না। বেদান্ত যেমন চূড়ান্ত বৈরাগ্যের উপদেশ দেয় তেমন আর কোথাও নেই। কিন্তু ওই বৈরাগ্যের অর্থ আত্মহত্যা নয়। নিজেকে শুকিয়ে ফেলা নয়। বেদান্তে বৈরাগ্যের অর্থ ‘জগতের ব্রহ্মভাব’—জগতকে আমরা যেভাবে দেখি, তাকে আমরা যেমন জানি, সেটি যেভাবে প্রতিভাত হচ্ছে তা ত্যাগ কর এবং উভয়ের প্রকৃত স্বরূপ অবগত হও। জগতের মধ্যে ব্রহ্মকে দেখ। বস্তুত এটি ব্রহ্ম ছাড়া কিছুই নয়। সেই কারণেই আমরা প্রাচীনতম উপনিষদে বেদান্ত সম্বন্ধে লেখা প্রথম পুস্তকে দেখতে পাই ‘ঈশাবাস্যমিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ।’
জগতে যাহা কিছু আছে তাহা ঈশ্বরের দ্বারা আচ্ছাদিত করতে হবে।”
আরও পড়ুন:

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৪৭: প্রতিশোধের আগুন কি ডেকে আনল মৃত্যুমিছিল?

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১১: কুরুপাণ্ডবদের অস্ত্রগুরু কৃপাচার্য, দ্রোণাচার্য এবং কয়েকটি প্রশ্ন

যিশু বলেছেন স্বর্গরাজ্য তোমার ভিতরে। বেদান্ত বলে, ঈশ্বর তোমার অভ্যন্তরে অবস্থিত। স্বামীজি বলেছেন, “বেদান্ত বলে এমনভাবে কাজ কর সকল বস্তুতে ঈশ্বরবুদ্ধি কর ।সর্বভূতেই তিনি আছেন যেন নিজের জীবনকেও ঈশ্বর অনুপ্রাণিত এমনকি ঈশ্বর স্বরূপ চিন্তা কর। জানো ইহাই আমাদের একমাত্র কর্তব্য। এ আমাদের একমাত্র জিজ্ঞাস্য। কারণ ঈশ্বর সকল বস্তুতেই বিদ্যমান। তাহাকে লাভ করার জন্য আবার কোথায় যাবে? প্রত্যেক চিন্তায় প্রত্যেক ভাবে পূর্ব হতেই অবস্থিত এই রূপ জেনে আমাদেরকে অবশ্য কার্য করে যেতে হবে। ইহাই একমাত্র পথ আর কোন পথ নয়।” সকল কাজে সকল ভাবে তাঁর সান্নিধ্য অনুভব করাই প্রকৃত ভক্তের উদ্দেশ্য। ব্রহ্মময়ম্ জগৎ।
* অনন্ত এক পথ পরিক্রমা (Ananta Ek Patha Parikrama) : স্বামী তত্ত্বাতীতানন্দ (Swami Tattwatitananda), সম্পাদক, রামকৃষ্ণ মিশন, ফিজি (Fiji)।

Skip to content