
মন আর মুখ এক হলে প্রকৃত সাধনা সম্ভব। নতুবা মুখে বলছি তুমি আমার সর্বস্ব, কিন্তু মন বিষয়কেই সর্বস্ব জেনে বসে রয়েছে— এইরূপ লোকের সাধনা বিফল। শ্রীরামকৃষ্ণ এক গল্প বলেছিলেন, এক বৃদ্ধ মৃত্যুসজ্জায় শুয়ে আছেন। প্রদীপের আলো তার সামনে জ্বলছে। আত্মীয়েরা সকলে বসে ছিলেন। তিনি প্রদীপের আলো বেশি দেখে বলে উঠলেন, প্রদীপের বাতি কমিয়ে দে। বিষয় আসক্ত মন, মৃত্যুকালেও বিষয় ত্যাগ করতে পারে না।
পরমহংসদেব বলেছেন “শুদ্ধ জ্ঞান, শুদ্ধ ভক্তি এক”। ছেলে পয়সার জন্য আবদার করে, কখনও কাঁদে, কখনও মারে। ”সেই রূপ ঈশ্বরকে আপনার জানিয়া তাহাকে দেখিবার জন্য যিনি সরল শিশুর ন্যায় ব্যাকুল অন্তরে ক্রন্দন করেন, তাহাকে ভগবান দেখা না দিয়া থাকতে পারে না।” সাধক ভগবানের কাছে জোর করে। যে আপনার হয় তার কাছে থেকে কেড়ে নেওয়া য়ায়। একবার “ডাক দেখি মন ডাকার মতো কেমন শ্যামা থাকতে পারে”। বিষয় আমাদের মনকে রঞ্জিত করে রাখে। যখন যে বিষয় পায়, সে বিষয়ের আকার ধারণ করে। বিষয়ের প্রতি আসক্তি বাড়ে। তখন তার থেকে আর সরে আসতে পারে না।
পরমহংসদেব বলেছেন “শুদ্ধ জ্ঞান, শুদ্ধ ভক্তি এক”। ছেলে পয়সার জন্য আবদার করে, কখনও কাঁদে, কখনও মারে। ”সেই রূপ ঈশ্বরকে আপনার জানিয়া তাহাকে দেখিবার জন্য যিনি সরল শিশুর ন্যায় ব্যাকুল অন্তরে ক্রন্দন করেন, তাহাকে ভগবান দেখা না দিয়া থাকতে পারে না।” সাধক ভগবানের কাছে জোর করে। যে আপনার হয় তার কাছে থেকে কেড়ে নেওয়া য়ায়। একবার “ডাক দেখি মন ডাকার মতো কেমন শ্যামা থাকতে পারে”। বিষয় আমাদের মনকে রঞ্জিত করে রাখে। যখন যে বিষয় পায়, সে বিষয়ের আকার ধারণ করে। বিষয়ের প্রতি আসক্তি বাড়ে। তখন তার থেকে আর সরে আসতে পারে না।
শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, “জলে নৌকা থাকে ক্ষতি নাই। কিন্তু নৌকায় যেন জল না থাকে। সাধক সংসারে থাকুক ক্ষতি নাই, কিন্তু সাধকের ভিতর সংসার যেন না থাকে।” সংসার অর্থে গৃহে থাকা নয়। সংসারিকতাকে সরিয়ে রেখে যিনি গৃহে থাকেন, তার কোনও ভয় থাকে না। হিংসা, দ্বেষ, নিষ্ঠুরতা ইত্যাদি আমাদেরকে সংসারী করে দেয়। যে সরষে দিয়ে ভূত ছাড়াবে তারই মধ্যে ভূত প্রবিষ্ট হয়েছে। তাহলে ভূত ছাড়াবে কেমন করে। “যে মন দিয়ে সাধনা করবে তাহাই যদি বিষয়ে আসক্ত হয়ে পড়ে তাহা হইলে সাধনা অসম্ভব।”
আরও পড়ুন:

অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-৯: জলে হরি, স্থলে হরি, হরিময় এ জগৎ

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১: শচীন ও মীরা দেব বর্মনের ঘর আলো করে এল এক ‘দেব শিশু’

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৬: যিনি নিরূপমা তিনিই ‘অনুপমা’
এক ব্রাহ্মণের একটি বাগান ছিল। সে দিন-রাত তার পেছনে লেগে থাকত। একদিন একটা গরু এসে তাঁর বাগানের অনেক যত্নের গাছ খাচ্ছিল। ব্রাহ্মণ তাই দেখে রাগে অন্ধ হয়ে গরুটাকে বেদম মারলে, গরুটা মরে গেল। সকলেই গো হত্যার জন্য ব্রাহ্মণকে দোষ দিতে লাগলো। ব্রাহ্মণ কিন্তু আপন দোষ স্বীকার করে না। সে বলে আমার দোষ কী? আমি তো গোহত্যা করিনি। আমার হাত মেরেছে। তা হাতের দেবতা ইন্দ্রই এ কাজ করেছেন। অতএব গোহত্যার জন্য যদি কারও পাপ হয়ে থাকে, তবে সে পাপের ইন্দ্রের হয়েছে। এদিকে পাপপুরুষ ইন্দ্রকে ধরতে এলে, ইন্দ্র দেখলেন এ তো মহাবিপদ। অতএব তিনি ব্রাহ্মণকে আপন দোষ বোঝাবার জন্য এক ব্রাহ্মণবেশ ধরে সেই বাগানে গিয়ে ব্রাহ্মণকে বললেন, ”এ বাগানটি কার মহাশয়? ব্রাহ্মণ বললে, আমার। ইন্দ্র বললেন, বেশ বাগান আপনার। মালিটিও বেশ ভালো। দেখুন দেখি কেমন সাজিয়ে গাছগুলি পুঁতেছে। ব্রাহ্মণ, আজ্ঞে, ওসব আমি নিজের হাতে পুঁতেছি। ইন্দ্র, তা বটে। তা আপনার বাগানের রাস্তাটিও বেশ হয়েছে। এগুলি কার করেছে? ব্রাহ্মণ, আজ্ঞে, ওসব আমারই করা। ইন্দ্র, বটে বটে। সবই আপনার করা। তবে খালি গরুটা মারবার বেলায় বুঝি ইন্দ্র এসেছিল। পাপ পুরুষ তখন ব্রাহ্মণকে ধরল।”
আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৮: যেখানে বাঘের ভয় সন্ধে ঠিক সেখানেই হয়, আমারও ঠিক তাই হল

হেলদি ডায়েট: সর্দি-কাশিতে ভুগছেন? জেনে নিন কোন ঘরোয়া টোটকায় মিলবে আরাম

দশভুজা, এগারো রকমের ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স তাঁর ঝুলিতে, একাত্তরেও তিনি গেয়ে চলেছেন জীবনের জয়গান
কথা, কর্মে ও ভাবনার মধ্যে বৈপরীত্য সাধারণভাবে আমাদের মনকে চঞ্চল করে। যে সাধনার দ্বারা মন ও মুখকে এক করার কথা বলছেন শ্রীরামকৃষ্ণ। মন যদি বিষয়ভাবনায় ডুবে থাকে, বিষয়কে আকাঙ্ক্ষা করে, তবে তা মনকে শান্ত হতে দেবে না। প্রত্যাশার পূরণ করতে করতে আমরা এগিয়ে যাই, যা নতুন প্রত্যাশার জন্ম দেয়। আমাদেরকে নতুন জালে জড়িয়ে দেয়।
“ভিজে দেশলাই হাজার ঘষলেও জ্বলে না। কেবল ধোঁয়া ওঠে কিন্তু শুকনো দেশলাই একবার ঘষলেই ধপ করে জ্বলে ওঠে। তেমনি হরির প্রসঙ্গ হইবা মাত্র তার প্রাণে জ্বলে ওঠে।” বিষয় আসক্ত মানুষের প্রাণ ভিজে দেশলাইয়ের মতো হাজার হরির কথায় উত্তপ্ত হয় না। তোতাপুরী বলতো ঘটি রোজ না মাজলে কলঙ্ক পরে অর্থাৎ রোজ রোজ ধ্যান না করলে চিত্ত অশুদ্ধ হয়। পরমহংসদেব উত্তরে বলিলেন, ”যদি সোনার ঘটি হয় তাহলে আর কলঙ্ক পড়ে না অর্থাৎ ঈশ্বর লাভ করলে আর সাধনার দরকার হয় না।”
“ভিজে দেশলাই হাজার ঘষলেও জ্বলে না। কেবল ধোঁয়া ওঠে কিন্তু শুকনো দেশলাই একবার ঘষলেই ধপ করে জ্বলে ওঠে। তেমনি হরির প্রসঙ্গ হইবা মাত্র তার প্রাণে জ্বলে ওঠে।” বিষয় আসক্ত মানুষের প্রাণ ভিজে দেশলাইয়ের মতো হাজার হরির কথায় উত্তপ্ত হয় না। তোতাপুরী বলতো ঘটি রোজ না মাজলে কলঙ্ক পরে অর্থাৎ রোজ রোজ ধ্যান না করলে চিত্ত অশুদ্ধ হয়। পরমহংসদেব উত্তরে বলিলেন, ”যদি সোনার ঘটি হয় তাহলে আর কলঙ্ক পড়ে না অর্থাৎ ঈশ্বর লাভ করলে আর সাধনার দরকার হয় না।”
আরও পড়ুন:

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৩৭: অবশেষে অগ্রজের দেখা মিলল বুঝি…

মহাভারতের আখ্যানমালা, পর্ব-৫৬: বেদজ্ঞান লাভের জন্য কঠোর তপস্যায় ব্রতী হলেন যবক্রীত

ইংলিশ টিংলিশ: তোমরা কি জানো cakewalk বা icing on the cake —এই idiom গুলোর মানে কি?
এক ভক্ত প্রণাম করে শ্রীশ্রী মাকে সাধনা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন, মা বললেন—”সংখ্যা রাখা, কর গণনা এসব শুধু মন আনবার জন্য। মন এদিক-ওদিক যেতে চায়। তবু ওই সবের দ্বারা এ দিকে আকৃষ্ট হয়। যখন জপ করতে করতে ভগবানের রূপ দর্শন হয়, ধ্যান হয় তখন জপ থাকে না। ধ্যান হলে তো সবই হল। ভগবান দর্শন বল, ধ্যান বল— মন স্থির হলে সবই হয়।”
সাধনা হল মন-সহ সমস্ত ইন্দ্রিয়কে সংযত করে নিয়ন্ত্রিত করা। মন অতি সূক্ষ্ম ইন্দ্রিয় এবং সহজেই বিষয়ে অভিমুখে যেতে পারে। বিষয়ের প্রতি আকর্ষণ তখনই কমবে, যখন বিষয়কে বিষতুল্য ত্যাগ করতে পারব। তখন মনে যে ভাবনা আসে তাকে নিয়ন্ত্রিত করতে পারা যায়। অসতের আশ্রয় না নিয়ে সতের আশ্রয় নিলে তখন বহন করতে সুবিধা হবে। সাধনা যে, সত্যের আশ্রয় পাওয়ার তরে।
সাধনা হল মন-সহ সমস্ত ইন্দ্রিয়কে সংযত করে নিয়ন্ত্রিত করা। মন অতি সূক্ষ্ম ইন্দ্রিয় এবং সহজেই বিষয়ে অভিমুখে যেতে পারে। বিষয়ের প্রতি আকর্ষণ তখনই কমবে, যখন বিষয়কে বিষতুল্য ত্যাগ করতে পারব। তখন মনে যে ভাবনা আসে তাকে নিয়ন্ত্রিত করতে পারা যায়। অসতের আশ্রয় না নিয়ে সতের আশ্রয় নিলে তখন বহন করতে সুবিধা হবে। সাধনা যে, সত্যের আশ্রয় পাওয়ার তরে।
* অনন্ত এক পথ পরিক্রমা (Ananta Ek Patha Parikrama) : স্বামী তত্ত্বাতীতানন্দ (Swami Tattwatitananda), সহ-সচিব, রামকৃষ্ণ মিশন, ন্যন্দি (Nadi), সাউথ প্যাসিফিক (South Pacific), ফিজি (Fiji)।