শুক্রবার ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫


ইচ্ছা, এই ভক্তি রসে স্নান করে অমৃত পান করি। ইচ্ছা হয় আদি অন্তহীন আনন্দলাভ করে অজর বিকারহীন সন্তোষের মধ্যে নিজেকে ধন্য করি। যে তৃষ্ণা মিটেছে সে তৃষ্ণা আর যেন না আসে হৃদয়ে। অপলক নয়ন যেন শুধু ঈশ্বরের রূপ দর্শন করতে করতে সার্থক হয়, আর সব ইন্দ্রিয় যেন তার মধুর নাম শ্রবণে কীর্তনে মুখরিত থাকে। বৈষ্ণব শাস্ত্রে আছে, ভক্তের আর্তি এই চোখ দিয়ে যেন প্রভুরই রূপ দেখি। এই কান দিয়ে যেন তাঁরই নাম শুনি। এই জিভ দিয়ে যেন তাঁরই গুনগান করি। এই হাত দিয়ে যেন প্রভুরই সেবা করি। আর এই পা যেন তার স্থানে স্থানেই যায়।
অদ্ভুত মননশীলতা, যা কিছু সব প্রভুর প্রতি উৎসর্গকৃত। কোনও এক সময় শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছিলেন, “সচ্চিদানন্দ সাগরে আমি যেন মীন হয়ে রয়েছি।” মাছ যেমন বাধাহীন ভাবে নির্ভয়ে যাতায়াত করে, যেমন আনন্দের শেষ থাকে না। তেমন সে আনন্দ একবার লাভ করে শেষ হয় না। শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে একজন ভক্ত প্রেম ভক্তি কীরূপে স্থায়ী হয় জিজ্ঞাসা করেছিলেন। “কলসিতে জল ভরে সিকেয় তুলে রাখলে দিনকতেক পরে জল শুকিয়ে যায়। কিন্তু গঙ্গার জলে ডুবিয়ে রাখলে কোনও কালেই শুকায় না। সেই রকম ঈশ্বরের নিকট যে নিত্য ডুবে থাকে, তার প্রেম ভক্তি শুকায় না। কিন্তু দু-একদিনের প্রেম ভক্তিতে যে নিশ্চিন্তে থাক্‌ তোলা জলের মতো তার প্রেম ভক্তি দু’ দিন পরে শুকিয়ে যায়।”
আরও পড়ুন:

অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-৮: হৃদয়মন্দিরে মন শুদ্ধ করে দেবতা প্রতিষ্ঠা করলে তবেই তো দেবতার পুজো হবে

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৩: রবীন্দ্রনাথের পোশাকআশাক

নিয়মিত জপ, নাম, গুণগান আর সৎসঙ্গ ঈশ্বরের প্রেমে ডুবিয়ে রাখে। যেমন আচারের মতো, যেমন ভেতর বাহির সবেতেই রসে ভর্তি। ভক্তের ভগবানকে আস্বাদন করা বিভিন্ন ভাবেই হয়ে থাকে। আর ভক্তিশাস্ত্রে ভক্তি রস আস্বাদনের জন্য চার প্রকার ভাবের কথাও আছে। যাই হোক ভক্তি দিয়ে ভগবানের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করা। জপের কার্যকারিতা সম্বন্ধে শ্রীশ্রী মাতা ঠাকুরানি একদিন জনৈক ভক্তকে বলেছিলেন, “জপটপ কী জানো, ওর দ্বারা ইন্দ্রিয়গুলোর প্রভাব কেটে যায়।”
আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৭: একটার পর একটা রেস্তরাঁয় ফোন করে জানতে পারলাম ৫ মাইল দূরে একটি খোলা আছে

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৫: আঁধার ভূবনে আবার কে তুমি জ্বেলেছ ‘সাঁঝের প্রদীপ’ খানি

ঠাকুরানি আরেকদিন বলেন, “জপ, ধ্যান যথা সময়ে আলস্য ত্যাগ করে করতে হয়। রোজ ১৫-২০ হাজার জপ করতে পারো তাহলে হয়।” “…কাজ-কর্ম করবে বৈকি? কাজ করলে মন ভালো থাকে। তবে জপ, ধ্যান, প্রার্থনাও বিশেষ দরকার। অন্তত সকাল সন্ধ্যায় একবার বসতেই হয়, ওটি হল যেন নৌকার হাল। সন্ধ্যাকালে একটু বসলে সমস্ত দিন ভালো মন্দ কী করলাম, না করলাম তার বিচার আসে। তারপর গতকালের মনের অবস্থা সঙ্গে আজকের অবস্থার তুলনা করতে হয়। পরে জপ করতে করতে ইষ্টচিন্তা করতে হয়। কাজের সঙ্গে সকাল সন্ধ্যা জপ, ধ্যান না করলে কী করছো, না করছো বুঝবে কী করে? নিয়মিত সময় রাখা খুব দরকার।”
আরও পড়ুন:

হেলদি ডায়েট: অ্যাডিনোভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে শিশুদের মধ্যে! ভাইরাস এড়াতে খুদের পাতে কী কী রাখবেন?

হোমিওপ্যাথি: খেয়ালি ঋতুর ফাঁদে সর্দি-কাশি-জ্বর? সুস্থ থাকতে এগুলি মেনে চলুন

১৮১৯ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে শ্রীমা যখন কোয়ালপাড়ায় ছিলেন, একজন ভক্ত দীক্ষার পর মাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘মা উপায় কী?’ ঘরের কুলুঙ্গিতে ছোট্ট একটা ঘড়ি ছিল। মা উহা দেখিয়ে বললেন, “ওই ঘড়ি যেমন টিক টিক করছে, ঠিক তেমনই নাম করে যাও, তাতেই সব হবে। আর কিছু করতে হবে না। তন্ত্র মন্ত্র কিছু নয় মা।” ভক্তির শাস্ত্রের এক আকর গ্রন্থ নারদীয় ভক্তিসূত্রে ভক্তিকে অমৃতের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যা লাভ করলে সিদ্ধি লাভ হয়। “জপ, তপের দ্বারা কর্মপাশ কেটে যায় কিন্তু ভগবানকে প্রেম ভক্তি ছাড়া পাওয়া যায় না।” এমনটাই শ্রীশ্রীমা বলছেন।

নিষ্কাম ভক্তিই প্রেম ভক্তি। শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ একেই প্রেমা ভক্তি বলেছেন। শ্রীসীতাদেবী যেমন শ্রীরামচন্দ্রের কথা চিন্তা করতে করতে রামময় হয়ে গিয়েছিলেন, ভক্তও তেমনি ভগবৎময় হয়ে যান। সর্বত্র ভগবানকে দেখে ভক্ত আপ্লুত হয়ে যায়। জলে হরি, স্থলে হরি, হরিময় এ জগৎ।
* অনন্ত এক পথ পরিক্রমা (Ananta Ek Patha Parikrama) : স্বামী তত্ত্বাতীতানন্দ (Swami Tattwatitananda), সহ-সচিব, রামকৃষ্ণ মিশন, ন্যন্দি (Nadi), সাউথ প্যাসিফিক (South Pacific), ফিজি (Fiji)।

Skip to content