‘দৌলত’ ছবির ‘মতি হো তো বাঁধকে রাখ দু’ গানটিতে আবার ধরা পড়ে পঞ্চমের সুরের অভিনবত্ব। এই সুর কিশোরের জন্যই জন্ম দেন তিনি। নিজের আবেগঘন কণ্ঠকে সম্পূর্ণ ভাবে উজাড় করে দিয়ে গানটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন কিশোরকুমার গাঙ্গুলি। আর আবহ সঙ্গীতের কথা কিই বা বলি। পঞ্চমের অবলিগেটো ব্যবহার করা প্রবণতাটি অনেকদিনের। কেন জানেন? কারণ, তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন, তাঁর সুরের যে মাধুর্য, মেলোডির যে মাদকতা, সেগুলিকে বহুগুণ বাড়িয়ে তোলার ক্ষমতা রাখে এই অবলিগেটো।
সেই শচীন কর্তার আমল থেকে বাসু চক্রবর্তী পর্যন্ত অবলিগেটো শুনে শুনে তাঁর কান দুটি এতটাই তৈরি হয়ে গিয়েছিল, যে কোনও গানের কোন অংশে কতখানি অবলিগেটো ব্যবহার করলে গানটির আবেদন অনেকাংশে বেড়ে যাবে, সে বিষয়টি তাঁর নখদর্পণে চলে এসেছিল। তাই সুযোগ পেলেই সেটি কাজে লাগাতেন পঞ্চম। তাঁর সতীর্থরাও ঢের বুঝতে পারতেন বিষয়টি।
‘ম্যায় তো হুঁ শোলা বদন’-এর মতো একটি গানে শুনতে পাওয়া যায় পঞ্চম-সুলভ একটি সুরের সঙ্গে আশার মাতোয়ারা কণ্ঠ। এরকম একটি পার্টি সং-এ আশা আসর জমাবেন না তা কী করে হয়? তাই অর্ধাঙ্গিনীর জন্য রাহুলের এহেন সুরসৃষ্টি। বিনোদ খান্না এবং জিনাত আমনের লিপে কিশোর-আশার অনবদ্য সেই গান—‘খুবসুরত হো’। নায়ক নায়িকা গানের দৃশ্যে কিছুটা হলেও চঞ্চল এবং উচ্ছল। তাই কিশোর-আশা দু’জনেই এই ক্ষেত্রে যে তাল মিলিয়ে গাইবেন সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। আর সবার নেপথ্যে সেই পঞ্চম জাদু।
‘ম্যায় তো হুঁ শোলা বদন’-এর মতো একটি গানে শুনতে পাওয়া যায় পঞ্চম-সুলভ একটি সুরের সঙ্গে আশার মাতোয়ারা কণ্ঠ। এরকম একটি পার্টি সং-এ আশা আসর জমাবেন না তা কী করে হয়? তাই অর্ধাঙ্গিনীর জন্য রাহুলের এহেন সুরসৃষ্টি। বিনোদ খান্না এবং জিনাত আমনের লিপে কিশোর-আশার অনবদ্য সেই গান—‘খুবসুরত হো’। নায়ক নায়িকা গানের দৃশ্যে কিছুটা হলেও চঞ্চল এবং উচ্ছল। তাই কিশোর-আশা দু’জনেই এই ক্ষেত্রে যে তাল মিলিয়ে গাইবেন সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। আর সবার নেপথ্যে সেই পঞ্চম জাদু।
আরও পড়ুন:
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৩১: দিল লেনা খেল হ্যায় দিলদার কা…
অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-১০: কী উপহার সাজিয়ে দিলে…
এই ছবির ‘জিন্দেগি ইয়ে জিন্দেগি’ গানটির ক্ষেত্রে আশা নন, পঞ্চমের পছন্দ কিন্তু তাঁর লতা দিদি। আর তাঁর দিদির জন্য কি মিষ্টি সুরই না রচনা করেন পঞ্চম। তিনি বেশ বুঝতে পেরেছিলেন যে, গানটি লতার কণ্ঠে সব থেকে ভালো মানাবে। তাই তাঁর এই পছন্দ। লতা যথারীতি গিয়েছেনও তেমনি। নায়িকা সেই জিনাত আমন এবং একটি পার্টির আবহে গানটি দৃশ্যায়িত হয়েছে। কিন্তু তাতে কী? এই ক্ষেত্রে নায়িকা এবং গায়িকা যেন একে ওপরের পরিপূরক।
আসলে, পঞ্চম যখনই কোনও ছবির কাজ হাতে পেতেন, কতগুলি বিষয় নিয়ে বিশেষভাবে চর্চা করে নিতেন। যেমন ছবির ধরন, পরিচালক কে, নায়ক-নায়িকা কারা, গানগুলিকে কে লিখবেন, চিত্রনাট্যের প্রবাহ কেমন, এমনকি পার্শ্বচরিত্রে কারা কারা অভিনয় করছেন সবকিছু মাথায় রেখে পঞ্চম সুর রচনা করতেন।
আসলে, পঞ্চম যখনই কোনও ছবির কাজ হাতে পেতেন, কতগুলি বিষয় নিয়ে বিশেষভাবে চর্চা করে নিতেন। যেমন ছবির ধরন, পরিচালক কে, নায়ক-নায়িকা কারা, গানগুলিকে কে লিখবেন, চিত্রনাট্যের প্রবাহ কেমন, এমনকি পার্শ্বচরিত্রে কারা কারা অভিনয় করছেন সবকিছু মাথায় রেখে পঞ্চম সুর রচনা করতেন।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১৭: সুন্দরবনের শিশুরক্ষক পাঁচুঠাকুর
প্রথম আলো, পর্ব-৮: বিশ্বের প্রথম চলচ্চিত্র কোনটি?
শুধু কি তাই? নায়ক-নায়িকার কথা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে গায়ক গায়িকা চয়নের কাজটি করতেন তিনি। আবার প্রযোজক বা পরিচালকদের প্রস্তাব করা নাম যদি পঞ্চমের কোনও কারণ পছন্দ না হতো, তাহলে তিনি তাঁদের ধৈর্য ধরে বোঝাতেন। তাঁর প্রধান লক্ষ্য ছিল, ছবির গানকে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে দেওয়া। যে কোনও বাণিজ্যিক ছবিতে নায়ক-নায়িকার সঙ্গে গায়ক গায়িকার মেলবন্ধনের বিষয়টিকে অপরিসীম গুরুত্ব দিতেন পঞ্চম। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছবির প্রযোজক এবং পরিচালক বিষয়টি পঞ্চমের ওপরেই ছেড়ে রাখতেন। একটি ভরসার জায়গা তৈরি হয়েছিল বইকি।
আবহ সঙ্গীত ছবির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সেদিকেও ছিল পঞ্চমের তীক্ষ্ণ নজর। একটি দৃশ্যের নেপথ্যে ঠিক কি ধরনের আবহ সঙ্গীত ব্যবহার করলে দৃশ্যটির আবেদনকে গগনচুম্বী করে তোলা যায়, সেদিকে রাহুলদেব বর্মণের থাকতো সজাগ দৃষ্টি। প্রযোজক যেন সম্মোহিত হয়ে যান। লুফে নেন তাঁর সৃষ্টি। এটিই ছিল পঞ্চমের একমাত্র লক্ষ্য। তাই নিজেকে অকৃপণ ভাবে নিংড়ে দিতেন সুররচনার মহাযজ্ঞে। নাওয়া খাওয়া ভুলে ডুবে থাকতেন নতুন নতুন সিরসৃষ্টির নেশায়।
আবহ সঙ্গীত ছবির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সেদিকেও ছিল পঞ্চমের তীক্ষ্ণ নজর। একটি দৃশ্যের নেপথ্যে ঠিক কি ধরনের আবহ সঙ্গীত ব্যবহার করলে দৃশ্যটির আবেদনকে গগনচুম্বী করে তোলা যায়, সেদিকে রাহুলদেব বর্মণের থাকতো সজাগ দৃষ্টি। প্রযোজক যেন সম্মোহিত হয়ে যান। লুফে নেন তাঁর সৃষ্টি। এটিই ছিল পঞ্চমের একমাত্র লক্ষ্য। তাই নিজেকে অকৃপণ ভাবে নিংড়ে দিতেন সুররচনার মহাযজ্ঞে। নাওয়া খাওয়া ভুলে ডুবে থাকতেন নতুন নতুন সিরসৃষ্টির নেশায়।
আরও পড়ুন:
ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-১৩: সাগর দীঘির ধারে হিরণ্যগর্ভ শিবমন্দির ও মধুপুর ধাম
কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-৮: পার্ক, ইট, এঞ্জয়
একটি উদাহরণ দিলেই আপনাদের বুঝতে সুবিধা হবে। ‘বার্নিং ট্রেন’ ছবির যে টাইটেল সং, সেটিতে একটি চলন্ত ট্রেনের শব্দকে ব্যবহার করতে হবে। পঞ্চম পাগলের মতো গবেষণা করে চলেন। কীভাবে তৈরি করা যায় সেই শব্দ। কোনও উপায় না পেয়ে তিনি সটান চলে যান মুম্বইয়ের একটি রেল স্টেশনে। সেখান থেকে দুটি শব্দ রেকর্ড করে নিয়ে আসেন। একটি হল স্টেশনে একটি ট্রেন যখন প্রবেশ করছে, অন্যটি সেই ট্রেনটি যখন স্টেশন ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।
খেয়াল করে দেখবেন, দুটি শব্দ কিন্তু সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী। সেই দুটি রেকর্ড করে আনা শব্দ টাইটেল সং-এ কাজে লাগান পঞ্চম। বুঝুন, নিজের কাজে পরিপূর্ণতা আনতে গেলে যে ধরনের পরিশ্রম ও বুদ্ধিমত্তাকে কাজে প্রয়োজন তা করতে বিন্দুমাত্র পিছিয়ে থাকতেন না পঞ্চম। সর্বদা নিজের কাজের প্রতি এক ধরনের খুঁতখুঁতেমি থাকত তাঁর ভিতরে। তাই তো আজকের দিনেও তাঁর সৃষ্টির প্রাসঙ্গিকতা এবং গুরুত্ব একইরকম থেকে গিয়েছে।—চলবে।
খেয়াল করে দেখবেন, দুটি শব্দ কিন্তু সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী। সেই দুটি রেকর্ড করে আনা শব্দ টাইটেল সং-এ কাজে লাগান পঞ্চম। বুঝুন, নিজের কাজে পরিপূর্ণতা আনতে গেলে যে ধরনের পরিশ্রম ও বুদ্ধিমত্তাকে কাজে প্রয়োজন তা করতে বিন্দুমাত্র পিছিয়ে থাকতেন না পঞ্চম। সর্বদা নিজের কাজের প্রতি এক ধরনের খুঁতখুঁতেমি থাকত তাঁর ভিতরে। তাই তো আজকের দিনেও তাঁর সৃষ্টির প্রাসঙ্গিকতা এবং গুরুত্ব একইরকম থেকে গিয়েছে।—চলবে।
* পঞ্চমে মেলোডি (R D Burman): সৌম্য ভৌমিক, (Shoummo Bhoumik) সঙ্গীত শিল্পী।