রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


নাসির হুসেন পরিচালিত ‘জমানে কো দিখানা হ্যায়’ ছবিতে যথারীতি ডাক পান পঞ্চম। নাসিরের ছবিতে তিনি কি হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেন? নিজেকে যে সব রকম ভাবে মেলে ধরতেই হবে! তাই ‘দিল লেনা খেল হ্যায় দিলদার কা’ গানটি গাওয়ার ভার তিনি নিজের কাঁধেই তুলে নেন। ঋষি কাপুরের লিপে এই গানে আর কেউ নন, গাইলেন পঞ্চম স্বয়ং। আজও যদি কোথাও গানটি বেজে ওঠে, আমাদের হাত দুটি নিজেদের অজান্তেই তাল ঠুকতে শুরু করে। পঞ্চমের কণ্ঠ যে কোনও দিক দিয়েই হিরো-সুলভ নয়, তা তিনি নিজেও খুব ভালো করে জানতেন। খুব ছোটবেলায় টনসিল অপারেশন হওয়ার কারণে তাঁর কণ্ঠস্বর অনেকটাই বদলে যায়। এই কথাটি তিনি তাঁর বহু সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন। তাও এই গানটিতে নায়ক ঋষি কাপুরের কণ্ঠ হিসেবে তাঁর কণ্ঠকে কোথাও বেমানান মনে হয়নি।
‘শোলে’ ছবির ‘মেহবুবা মেহবুবা’ গানটিও পঞ্চমই গেয়েছিলেন। কিন্তু সেই ক্ষেত্রে তিনি একজন পার্শ্বচরিত্রকে কণ্ঠদান করেছিলেন। কিন্তু এই ক্ষেত্রে তিনি কণ্ঠদান করেছেন ছবির নায়ক ঋষিকে। এ ক্ষেত্রে তাঁর দায়িত্ব ‘শোলের’ তুলনায় অনেকাংশে বেশি। দিনের শেষে তিনি চূড়ান্ত সফল। তাই, কোনও সুরকারের এই সাহস এবং আত্মবিশ্বাসকে মুক্তকণ্ঠে কুর্নিশ জানাতে হয় বইকি!

মিষ্টি মাদলের ছন্দে ছন্দে এগিয়ে চলা একটি পাহাড়ি ধুনকে আশ্রয় করে জন্ম নেওয়া ‘হোগা তুম সে পেয়ারা কৌন’ গানটির জন্য ডেকে পাঠানো হয় গায়ক শৈলেন্দ্র সিং-কে। গানটির দৃশ্যে নায়ক ঋষিকে একটি চলন্ত ট্রেনের ছাদে দাঁড়িয়ে ট্রেনের ছাদেই বসে থাকা নায়িকা পদ্মিনী কলাপুরির মান ভঞ্জন করতে দেখা যায়। সেই মান ভঞ্জনের পালা চলে এই গানটির মাধ্যমে। ট্রেনের শব্দটিকে জন্ম দেওয়া হয় দুটি শিরীষ কাগজের মাধ্যমে, একটি অপরটির সঙ্গে আস্তে আস্তে ঘর্ষণের দ্বারা। যেমন দৃশ্যায়ন, তেমন অ্যারেঞ্জমেন্ট।
আরও পড়ুন:

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৩০: আ দেখে জারা কিসমে কিতনা হ্যায় দম… এই গানে পঞ্চমের বাজি ছিলেন কিশোর ও আশা

অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-৯: যত সুর সবই তোমার…

‘বলো বলো কুছ তো বলো’ গানটি একটি পার্টির দৃশ্যে গাওয়া হলেও সেটির গতি যেন অনেকটাই কম। আশার উপস্থাপনা আবারও সেই চোখে পড়ার মতো। সেই সঙ্গে আবহ সঙ্গীত গানটিকে খানিকটা রহস্যাবৃত করে রাখে। কিন্তু গানটি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খানিকটা মেডলের আকারে শুরু হওয়া পরের গান ‘পুছো না ইয়ার কেয়া হুয়া’ গানটি যখন শুরু হয়, আমাদের মুড হঠাৎ করে বদলে যেতে চায়। যেটির মূল কারণ আগের গানটি মাইনরে চলতে চলতে পরের গানটির মেজরে বদলে যাওয়া।এবং তার সঙ্গে মুহাম্মদ রফির আবির্ভাব। আশা এবং রফির মিলে কি অসাধারণ একটি গান উপহার দিলেন আমাদের। কোরাসের সঙ্গে বেস গিটার, পারকাসান, বঙ্গ এবং ড্রামের ব্যবহার গানটিকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়।

‘ঘুংরু কি আওয়াজ’ ছবিটিই বা ভুলি কী করে? আঁখিও কা কাজরা’ গানটি কি মিষ্টি বলুন তো? এই গানটির সুর তিনি বাংলা ছবি ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’ তেও একটি গানে ব্যবহার করেছিলেন। গানটি ছিল ‘আধো আলো ছায়াতে’। দুটি গানের ক্ষেত্রেই আশা কিশোর তাঁদের সর্বস্ব দিয়ে উপস্থাপিত করেছেন। হিন্দি গানটি শুনে দেখতে পারেন।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১৬: সুন্দরবনের লৌকিক দেবতা পঞ্চানন্দ বা বাবাঠাকুর

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৯: খাবারে একদম মশলা নয়?

পঞ্চম কিশোরের একটি ভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডের সাক্ষী হতে চান? তবে শুনে নিন এই ছবির কিশোরের গাওয়া ‘তেরে ঘুংরু কি আওয়াজ’ গানটি। যেমন সুরের প্রবাহ তেমন কিশোরের সেই মাদকতা মাখানো কণ্ঠ। বহু পরিচিত সেই ছন্দের মাঝে দ্বিতীয় ইন্টারলুডে আমাদের নেশাতুর করে তোলে উলহাস বাপাতের সন্তুর, এবং প্রায় পুরো গানটি জুড়েই আমাদের কানে ধরা দেয় ঘুংরুর শব্দ। অসাধারণ।

‘রোতে রোতে নয়না’, যেটিকে বেদনাতুর একটি সেমি ক্লাসিক্যাল গান বলা যেতেই পারে, সেটিকে কি অসাধারণ ভাবেই না ফুটিয়ে তুলেছেন আশা। অসম্ভব ধীর গতির একটি গান, এবং বিজয় আনন্দের লেখায় পঞ্চমের এহেন সুর যেন পদ্ম পাতায় কয়েক ফোঁটা শিশিরবিন্দু।
আরও পড়ুন:

পরিযায়ী মন, পর্ব-৮: চোখিধানির জগৎখানি

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-১৮: ও দয়াল! বিচার করো!

এই ছবির ‘জো ভি তুনে দেখা তেরি’ গানটির মধ্যে দিয়ে আমরা কোথাও যেন শচীনকর্তাকে খুঁজে পাই। পঞ্চমের উপর তাঁর বাবার প্রভাব একটু হলেও ধরা দেয় আমাদের কানে। তবলা, সেতার এবং ভায়োলিন কথা বলে চলে। আর আশার কণ্ঠে গানটির লালিত্য কয়েকশো গুণ বেড়ে যায়। আসলে এই কথা সত্যি যে, পঞ্চম নিজের ট্রেন্ড তৈরি করে ফেলেছিলেন অনেক আগেই, তবু ভিতরে ভিতরে হয়তো বাবাকে খুঁজতেন। হয়তো কোথাও মনে হতো যদি তাঁর বাবা আজ তাঁর পাশে থেকে তাঁর এই একের পর এক সাফল্যের সাক্ষী হতে পারতেন। হয়তো আক্ষেপ হতো। তাই বাবাকে মনে মনে শ্রদ্ধা জানাতেন এই ধরনের সুর রচনার মাধ্যমে।—চলবে।
* পঞ্চমে মেলোডি (R D Burman): সৌম্য ভৌমিক, (Shoummo Bhoumik) সঙ্গীত শিল্পী।

Skip to content