ত্রয়ী: অমিত কুমার, আশা ভোঁসলে ও আরডি।
বিগত বছরগুলির তুলনায় ১৯৮৬ সালে ছবির কাজ কিছুটা কমে যায়। কিন্তু তাতে কী? যাঁর ধমনীতে দিবারাত্র বয়ে চলেছে সুরের স্রোত, তিনি কি আর নিজেকে উজাড় না করে দিয়ে থাকতে পারেন? ‘অনোখা রিস্তা’ ছবিতে আশাকে দিয়ে পঞ্চম গাওয়ান ‘চল সহেলি ঝুমকে’ গানটি। গানটির সুর কিছুটা তাঁরই সুরারোপিত বাংলা গান ‘দার্জিলিং যাত্রা’ থেকে নিয়ে এই হিন্দি গানটিতে ব্যবহার করেন তিনি।
ছবির এক দৃশ্যে এক কিশোরীকে গানটিতে লিপ দিতে দেখা যায়। কৈশোরের উচ্ছ্বলতা তার শরীরীভাষায় সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায়। সে তার বান্ধবীদের সঙ্গে নিয়ে একটি মুক্তাঞ্চলে গানটি গাইছে। অথচ আশা ভোঁসলের কণ্ঠ কি অসাধারণ ভাবেই না সেই কিশোরীর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে খাপ খেয়ে যায়! তাকে লিপ দিচ্ছেন প্রাপ্তবয়স্কা আশা। কিন্তু কিচ্ছুটি বোঝার উপায় নেই! মনে হয় যেন ওই কিশোরী নিজেই গাইছে গানটি। এই না হলে আশা ভোঁসলে? আশার এই পারদর্শিতা সম্পর্কে পঞ্চম অবগত ছিলেন। সহধর্মিণীর উপর তাঁর অসীম আস্থা ছিল। তাই এই গানটির ক্ষেত্রে আশা ব্যতীত অন্য কোনও গায়িকার নাম তাঁর মাথায় আসেনি।
ছবির এক দৃশ্যে এক কিশোরীকে গানটিতে লিপ দিতে দেখা যায়। কৈশোরের উচ্ছ্বলতা তার শরীরীভাষায় সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায়। সে তার বান্ধবীদের সঙ্গে নিয়ে একটি মুক্তাঞ্চলে গানটি গাইছে। অথচ আশা ভোঁসলের কণ্ঠ কি অসাধারণ ভাবেই না সেই কিশোরীর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে খাপ খেয়ে যায়! তাকে লিপ দিচ্ছেন প্রাপ্তবয়স্কা আশা। কিন্তু কিচ্ছুটি বোঝার উপায় নেই! মনে হয় যেন ওই কিশোরী নিজেই গাইছে গানটি। এই না হলে আশা ভোঁসলে? আশার এই পারদর্শিতা সম্পর্কে পঞ্চম অবগত ছিলেন। সহধর্মিণীর উপর তাঁর অসীম আস্থা ছিল। তাই এই গানটির ক্ষেত্রে আশা ব্যতীত অন্য কোনও গায়িকার নাম তাঁর মাথায় আসেনি।
শুধু ‘চল সহেলি ঝুমকে’ কেন, ‘আজ কা দিন না জানে কিউ আচ্ছা লাগতা হ্যায়’ গানটিও অনবদ্য সৃষ্টি। মিষ্টি সুর, সঙ্গে উপযোগী ছন্দের সংমিশ্রণ। যে ছন্দ গানটির মধ্যে বদলেছে বারকয়েক। সেটি ঘটানো হয়েছে কিঞ্চিৎ বৈচিত্র নিয়ে আসার জন্য। আর সর্বোপরি আশা কণ্ঠ। এতগুলি উপাদান একত্র করে যে গানের সৃষ্টি, সেটি যে আমাদের মধ্যে প্রবল ভালোলাগার একটি অনুভূতি সঞ্চার করবে, তাতে আশ্চর্য কী?
শুধুমাত্র তবলার সাহায্যে ছন্দ বিস্তার করে তৈরি করা একটি গান ‘তুনে ইয়ে জানা এক কাঁটা লগনে সে’ আমাদের মন কেড়ে নেয় নিমেষে। ছন্দটি ভিন্ন। পঞ্চমের ট্রেন্ডের থেকে একটু আলাদা। তবু সেটি আমাদের নেশাতুর করে তোলে। আশার গাওয়া এই গানটি শুরু হলে সেটি শেষ না হওয়া অবধি কোনওমতেই তাকে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। ঠিক তেমনি ভাবেই, ‘এক ম্যায় আউর এক তু’ ছবিতে আশার গাওয়া ‘ঝর ঝর বহেতা হ্যায়’ গানটি আপনাকে সেই একই অনুভূতি দিয়ে যাবে। যেমন মেলোডি, তেমন মডুলেশন। আর গায়িকার গায়কী নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই।
শুধুমাত্র তবলার সাহায্যে ছন্দ বিস্তার করে তৈরি করা একটি গান ‘তুনে ইয়ে জানা এক কাঁটা লগনে সে’ আমাদের মন কেড়ে নেয় নিমেষে। ছন্দটি ভিন্ন। পঞ্চমের ট্রেন্ডের থেকে একটু আলাদা। তবু সেটি আমাদের নেশাতুর করে তোলে। আশার গাওয়া এই গানটি শুরু হলে সেটি শেষ না হওয়া অবধি কোনওমতেই তাকে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। ঠিক তেমনি ভাবেই, ‘এক ম্যায় আউর এক তু’ ছবিতে আশার গাওয়া ‘ঝর ঝর বহেতা হ্যায়’ গানটি আপনাকে সেই একই অনুভূতি দিয়ে যাবে। যেমন মেলোডি, তেমন মডুলেশন। আর গায়িকার গায়কী নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই।
আরও পড়ুন:
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৫২: সাগর কিনারে, দিল ইয়ে পুকারে…
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩৮: সুন্দরবনের ব্যাঘ্র-পরিচয়
আসে ‘জিভা’ ছবিটি। ছবির গীতিকার গুলজার। সুর করেছেন আডি। বুঝতেই পারছেন কি হতে পারে। স্বাভাবিক ভাবেই জন্ম নিল ‘রোজ রোজ আঁখো তলে’র মতো একটি গান। আশা এবং অমিত কুমার উজাড় করে গাইলেন গানটি। মেলোডির মাধ্যমে প্রবাহিত হওয়া আবেগের অবিরাম স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে চলল আমাদের। যে স্রোতে গা ভাসাতে মন হয়ে ওঠে ব্যাকুল। একবার নয়। বারবার। মেলোডির ধাঁচটিই যেন আলাদা। চূড়ান্তভাবে আলাদা। এই মেলোডির জন্ম দিতে পারেন পঞ্চমই!
আবার এই একই ছবির ‘দিল পুকারে জিভা রে আরে’ গানটি শুনলে খুঁজে পাবেন নতুন পঞ্চমকে। কেন? কারণ, ধীরে ধীরে পঞ্চম অনুধাবন করতে শুরু করেছিলেন একটি সহজ সত্য। সেটি হল, যুগের পরিবর্তন। এটিও বুঝতে পারছিলেন যে, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে মানুষের কান। মানুষের রুচিবোধ। তাই খেয়াল করে দেখবেন, এই গানটিতে মেলোডিকে আগাগোড়া নিজের মতো করে বজায় রেখে ছন্দ এবং বাদ্যযন্ত্রগুলিকে খুব সন্তর্পণে যুগপোযোগী রাখার প্রচেষ্টা করে গিয়েছেন তিনি। হয়তো তৎকালীন প্রজন্মকে ছুঁতে চেয়েছেন। হয়তো বা গুলজার সাহেবের সম্মতিও আদায় করে নিয়েছিলেন। ঠিক জানা নেই।
আবার এই একই ছবির ‘দিল পুকারে জিভা রে আরে’ গানটি শুনলে খুঁজে পাবেন নতুন পঞ্চমকে। কেন? কারণ, ধীরে ধীরে পঞ্চম অনুধাবন করতে শুরু করেছিলেন একটি সহজ সত্য। সেটি হল, যুগের পরিবর্তন। এটিও বুঝতে পারছিলেন যে, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে মানুষের কান। মানুষের রুচিবোধ। তাই খেয়াল করে দেখবেন, এই গানটিতে মেলোডিকে আগাগোড়া নিজের মতো করে বজায় রেখে ছন্দ এবং বাদ্যযন্ত্রগুলিকে খুব সন্তর্পণে যুগপোযোগী রাখার প্রচেষ্টা করে গিয়েছেন তিনি। হয়তো তৎকালীন প্রজন্মকে ছুঁতে চেয়েছেন। হয়তো বা গুলজার সাহেবের সম্মতিও আদায় করে নিয়েছিলেন। ঠিক জানা নেই।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৯: হারিয়ে যাওয়ার ‘জীবন তৃষ্ণা’
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৪৯: শ্রদ্ধাঞ্জলি— প্রযোজক-গায়িকা অসীমা মুখোপাধ্যায়, অভিনেত্রী অঞ্জনা ভৌমিক ও গীতিকার মিল্টু ঘোষ
উপরোক্ত যুক্তির আবারও প্রমাণ পাবেন, ‘শত্রু’ ছবির ‘ইসকি টপি উসকে সর’ গানটিতে। কিশোর তাঁর স্বভাবসিদ্ধ কণ্ঠাভিনয়কে কাজে লাগিয়ে গানটি গেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু ছন্দের ধাঁচই বলে দেবে এ এক অন্য পঞ্চম। কারণ, এই গানে পঞ্চমের সেই চেনা ট্রেন্ডের ছোঁয়া নেই। সেই গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে এসে এই গানেও তিনি ছুঁতে চেয়েছেন আম জনতাকে।
‘পেয়ার কো হুঁ ম্যায় দিওয়ানা’ গানটিও সেই একই বাস্তবতার সাক্ষ্য বহন করে। গানটি ‘জিন্দেগানি’ ছবির। কিশোর কুমার এবং আনেট পিন্টোর গাওয়া এই গানটিতেও পঞ্চম নবপ্রজন্মকে কাছে টানার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। মেলোডি, রিদম প্যাটার্ন, ইনস্ট্রুমেন্ট-এর ব্যবহার—সব কিছুই সেই যুগের পছন্দের সঙ্গে যথাসম্ভব খাপ খাইয়ে তৈরি করা।
‘সমুন্দর’ ছবির ‘রঙ্গে মেহেফিল বদল রাহা হ্যায়’ গানটিই দেখুন। সেই একই ভাবনার প্রতিফলন। সেই একই প্রচেষ্টা। আশাকে দিয়ে গাইয়েছেন ঠিকই, কিন্তু এই পঞ্চম ১৯৮৬ সালের পঞ্চম। জনসাধারণের, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ‘পালস্’ ধীরে ধীরে ঠিক বুঝতে পারছিলেন তিনি। তাই তাঁর এহেন সুরসৃষ্টি।
‘পেয়ার কো হুঁ ম্যায় দিওয়ানা’ গানটিও সেই একই বাস্তবতার সাক্ষ্য বহন করে। গানটি ‘জিন্দেগানি’ ছবির। কিশোর কুমার এবং আনেট পিন্টোর গাওয়া এই গানটিতেও পঞ্চম নবপ্রজন্মকে কাছে টানার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। মেলোডি, রিদম প্যাটার্ন, ইনস্ট্রুমেন্ট-এর ব্যবহার—সব কিছুই সেই যুগের পছন্দের সঙ্গে যথাসম্ভব খাপ খাইয়ে তৈরি করা।
‘সমুন্দর’ ছবির ‘রঙ্গে মেহেফিল বদল রাহা হ্যায়’ গানটিই দেখুন। সেই একই ভাবনার প্রতিফলন। সেই একই প্রচেষ্টা। আশাকে দিয়ে গাইয়েছেন ঠিকই, কিন্তু এই পঞ্চম ১৯৮৬ সালের পঞ্চম। জনসাধারণের, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ‘পালস্’ ধীরে ধীরে ঠিক বুঝতে পারছিলেন তিনি। তাই তাঁর এহেন সুরসৃষ্টি।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮১: কবির ‘গানের ভাণ্ডারী’ দিনেন্দ্রনাথ বৈষয়িক-কারণে শান্তিনিকেতন ত্যাগ করেছিলেন
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩৫: মা সারদার ভ্রাতৃবিয়োগ
ভেবে দেখুন, এই ছবির ‘উস দিন মুঝ কো ভুল না জানা’ গানটি শুনলেই বুঝে যাবেন, এর সুরকার পঞ্চম ব্যতীত আর কেউ নন। আবেগ, সুরের গঠন, মডুলেশন এই সবকিছুই আপনাকে সেই ব্যাপারে নিশ্চিত করবে। তাই এই কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, যুগের সঙ্গে পা মেলাতে গিয়ে এই মানুষটি কখনওই নিজের নিজস্বতাকে বিসর্জন দেননি। কখনওই মানের সঙ্গে আপস করেননি।
‘পালে খান’ ছবিতে আশার গাওয়া ‘কাবুল সে আয়া হ্যায় মেরা দিলদার’ গানটি এক কথায় অপূর্ব। এই ক্ষেত্রে যেমন পঞ্চমের নিজস্বতার পরিচয় পাওয়া যায়, তেমনই একটি সংক্ষিপ্ত অংশে আমরা তাঁকে রন গুডউইনের দ্বারা অনুপ্রাণিত হতে দেখতে পাই। দৃশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কোথাও যেন আরব্য রজনীর স্বাদ নিয়ে আশার একটি প্রচেষ্টা করেছেন পঞ্চম। বলা বাহুল্য, সেই প্রচেষ্টায় তিনি শতভাগ সফল।
এই ছবির ‘মেরে সনম তেরা খত মিলা’ গানটিতে আবার পাওয়া যায় সেই পঞ্চমকে। যে পঞ্চম তৎকালীন নবপ্রজন্মকেও প্রাধান্য দিতে বদ্ধপরিকর। অ্যারেঞ্জমেন্টটি যদি মন দিয়ে শোনেন, তাহলে খুব সহজেই আপনারা বুঝে যাবেন বিষয়টি।—চলবে।
‘পালে খান’ ছবিতে আশার গাওয়া ‘কাবুল সে আয়া হ্যায় মেরা দিলদার’ গানটি এক কথায় অপূর্ব। এই ক্ষেত্রে যেমন পঞ্চমের নিজস্বতার পরিচয় পাওয়া যায়, তেমনই একটি সংক্ষিপ্ত অংশে আমরা তাঁকে রন গুডউইনের দ্বারা অনুপ্রাণিত হতে দেখতে পাই। দৃশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কোথাও যেন আরব্য রজনীর স্বাদ নিয়ে আশার একটি প্রচেষ্টা করেছেন পঞ্চম। বলা বাহুল্য, সেই প্রচেষ্টায় তিনি শতভাগ সফল।
এই ছবির ‘মেরে সনম তেরা খত মিলা’ গানটিতে আবার পাওয়া যায় সেই পঞ্চমকে। যে পঞ্চম তৎকালীন নবপ্রজন্মকেও প্রাধান্য দিতে বদ্ধপরিকর। অ্যারেঞ্জমেন্টটি যদি মন দিয়ে শোনেন, তাহলে খুব সহজেই আপনারা বুঝে যাবেন বিষয়টি।—চলবে।
* পঞ্চমে মেলোডি (R D Burman): সৌম্য ভৌমিক, (Shoummo Bhoumik) সঙ্গীত শিল্পী।