আরডি ও লতা।
‘আওয়াজ’ ছবিতে কিশোরের গাওয়া ‘আ জানেমন’ গানটি আপনাকে দেবে একটি মিষ্টি অনুভূতি। অতি সাধারণ একটি সুর। সেটিকে কাজে লাগিয়ে গানটি সুরারোপিত হয়েছে। আনন্দ বকশির লেখা এই গানে সুর দিতে গিয়ে কোনও ধরনের জটিলতার আশ্রয় নেননি পঞ্চম। একদম সোজা সাপটা একটি সুর। সঙ্গে অতি সাধারণ কিছু প্রেলুড এবং ইন্টারলুড। কিশোর নিজেও খুব সাধারণ ভাবে উপস্থাপিত করেছেন এই প্রেমের গানটি। তবু গানের আকর্ষণ আমরা উপেক্ষা কেনও করতে পারি না জানেন? কারণ, গান তথা সুরের ‘সিম্পলিসিটি’। কোনও অপ্রচলিত কর্ড নেই, বাদ্যযন্ত্রের নেই কোনও আধিক্য। তাই গানটি আট থেকে আশি, সবারই একইরকম পছন্দের।
খানিকটা বলরুম ড্যান্সের ছন্দের তালে তৈরি হয় ‘হাম দোনো’ ছবির একটি গান। কিশোর-আশার গাওয়া সেই গানটি হল ‘শুনলে জমিন আসমান’। এই ক্ষেত্রেও লেখক আনন্দ বকশি। আর তাই তাঁর লেখনীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পঞ্চমের এই সৃষ্টি।
খানিকটা বলরুম ড্যান্সের ছন্দের তালে তৈরি হয় ‘হাম দোনো’ ছবির একটি গান। কিশোর-আশার গাওয়া সেই গানটি হল ‘শুনলে জমিন আসমান’। এই ক্ষেত্রেও লেখক আনন্দ বকশি। আর তাই তাঁর লেখনীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পঞ্চমের এই সৃষ্টি।
একটি ব্যাপার বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। খেয়াল করেছেন কি? গীতিকার অনুযায়ী পঞ্চমের সুরের ধাঁচে বদল ঘটে? এটিও আরডি বর্মণের আরও একটি দিক। গুলজার যখন লিখছেন, পঞ্চম তখন অতি সাবধানী। কথার গভীরতাকে আরও বেশি করে আলোকিত করতে পঞ্চম এক ধরনের কৌশল ব্যবহার করছেন। যখন মানুষটি গুলশান বাওড়া, তখন আমরা পাচ্ছি ভিন্ন পঞ্চমকে।
একই ভাবে আনন্দ বকশি, আনজান, মোজরু সুলতানপুরী, যোগেশ, সাহির লুধিয়ানভি, কতিল শিফাই, জাভেদ আখতার প্রত্যেকের ক্ষেত্রে পঞ্চমের এক একটি নির্দিষ্ট ‘প্যাটার্ন’ আমাদের কানে ধরা পড়ে। খুব সূক্ষ্মভাবে শুনলে আপনারা এটি ঠিকই বুঝতে পারবেন, আমি নিশ্চিত। এর মূল কারণ, লেখার ধরন, যা লেখক বিশেষে ভিন্ন হতে বাধ্য। লেখা এবং সুর রাজযোটক হলে তবেই না তাদের বিবাহ সুসম্পন্ন হবে! তবেই না সেই গান যুগান্তকারী হয়ে উঠবে! তাই সেই দিকে বিশেষভাবে নজর রাখতেন পঞ্চম। এই সব কারণেই দিকপাল গীতিকারদের অসম্ভব প্রিয় ছিলেন তিনি। এঁদের সবার সঙ্গে পঞ্চমের সম্পর্ক পেশাগত গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছেছিল এক অন্য স্তরে।
একই ভাবে আনন্দ বকশি, আনজান, মোজরু সুলতানপুরী, যোগেশ, সাহির লুধিয়ানভি, কতিল শিফাই, জাভেদ আখতার প্রত্যেকের ক্ষেত্রে পঞ্চমের এক একটি নির্দিষ্ট ‘প্যাটার্ন’ আমাদের কানে ধরা পড়ে। খুব সূক্ষ্মভাবে শুনলে আপনারা এটি ঠিকই বুঝতে পারবেন, আমি নিশ্চিত। এর মূল কারণ, লেখার ধরন, যা লেখক বিশেষে ভিন্ন হতে বাধ্য। লেখা এবং সুর রাজযোটক হলে তবেই না তাদের বিবাহ সুসম্পন্ন হবে! তবেই না সেই গান যুগান্তকারী হয়ে উঠবে! তাই সেই দিকে বিশেষভাবে নজর রাখতেন পঞ্চম। এই সব কারণেই দিকপাল গীতিকারদের অসম্ভব প্রিয় ছিলেন তিনি। এঁদের সবার সঙ্গে পঞ্চমের সম্পর্ক পেশাগত গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছেছিল এক অন্য স্তরে।
আরও পড়ুন:
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৫০: আরডি শুধু সঙ্গীত পরিচালক নন, ভারতীয় সঙ্গীত ও চলচ্চিত্র জগতের এক অসামান্য ব্যক্তিত্ব
এই দেশ এই মাটি, পর্ব-৩৬: সুন্দরবনের নদীবাঁধের হাল হকিকত
‘হাম দোনো’ ছবির আরও একটি গান ‘তু লাজাওয়াব বেমিসাল’ গানটি জন্ম নিয়েছে আনন্দ বকশিরই কলম থেকে। তাই গানের কথা, দৃশ্য, নায়ক রাজেশ খান্না এবং নায়িকা হেমা মালিনীর কথা মাথায় রেখে গানে সুরারোপ করেন পঞ্চম। এখানেও শুধুই মেলোডি আর মেলোডি। জায়গা বুঝে পঞ্চমের সেই অতিপ্রিয় অবলিগেটো, ভায়োলিনের মাদকতা, অভিনব রিদম, এই সবকিছুই উপরোক্ত লেখাগুলির সাক্ষ্য বহন করে। অন্ত্যন্ত সাধারণ একটি সুরকে কীভাবে অনিন্দ্যসুন্দর করে তোলা যায় এই গান তারই প্রমাণ। নেপথ্যে রয়েছেন সুরের সেই জাদুকর।
আরও পড়ুন:
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১১: স্বর্ণকুমারী দেবী— ঠাকুরবাড়ির সরস্বতী
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৫০: লক্ষ্মণ—ভ্রাতৃত্বের এক অনন্য দৃষ্টান্ত
‘জমিন আসমান’ ছবির ‘অ্যায়সা সামা না হোতা’ গানটি এক কথায় অনবদ্য। লতা মঙ্গশকরের গাওয়া এই গানটির প্রেলুডে যে কোরাস এর অংশটি রয়েছে, সেটিকে একটু যেন ‘অফবিট’ বলে মনে হয়। মনে হয়, এই বুঝি ‘স্কেল’ থেকে বেরিয়ে গেল! কিন্তু কি অসাধারণ ভাবে সেটিকে মেলানো হয়েছে। আর তারপর যদি গানের মূল অংশে আসা যায়, দেখা যাবে গানের কথার সঙ্গে কি সাবলীল ভাবে সুরের মিলন ঘটানো হয়েছে। ভায়োলিনের থেকে জন্ম নেওয়া অবলিগেটো পুরো গানটি জুড়ে একটি নিদারুণ আবেগকে স্থায়ী করে রাখে। তার সঙ্গে পারকাশন, তবলা এবং মাদল ছন্দটিকে প্রবাহিত হতে সাহায্য করে চলে। আর লতাকণ্ঠের কথা নতুন করে কিছু বলার নেই। এক কথায় অসাধারণ।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩৩: সারদা মায়ের দার্শনিক দৃষ্টি
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭৯: কবির ভালোবাসার পশুপাখি
এই ছবিতেই লতা-কিশোরের গাওয়া ‘ম্যায়নে দিল দিল দিয়া’ গানটি আরও একটি মিষ্টি প্রেমের গান। ভায়োলিন, স্যাক্সোফোন, বঙ্গ, এবং পারকাশনে সুসজ্জিত গানটির মাধুর্য কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে লতা-কিশোরের কণ্ঠের ছোঁয়ায়। সঙ্গে রয়েছে মাইনর এবং মেজরের ব্যবহার। মুখরা মাইনরে এবং অন্তরাগুলি মেজরে। সার্বিকভাবে একটি অসাধারণ সৃষ্টি।
‘ইয়ে ফাসলে ইয়ে দুরিয়া’র মতো বিরহবেদনায় ভরা একটি গান, যেটির সুরকার আরডি বর্মণ আর গায়িকা লতা মঙ্গেশকর। তখন পরিণাম কি হতে পারে সেটি আমাদের কারও কাছে অজানা নয়। সে এক অদ্ভুত অনুভূতি। গানটি শোনার সময় কীভাবে যেন সেই গানের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পড়ি আমরা। কেন যেন মনে হয় যে, গানটি আমারই জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। বিগত দিনের ভুলে থাকতে চাওয়া বেদনাকে যেন উস্কে দেয় গানটি। —চলবে।
‘ইয়ে ফাসলে ইয়ে দুরিয়া’র মতো বিরহবেদনায় ভরা একটি গান, যেটির সুরকার আরডি বর্মণ আর গায়িকা লতা মঙ্গেশকর। তখন পরিণাম কি হতে পারে সেটি আমাদের কারও কাছে অজানা নয়। সে এক অদ্ভুত অনুভূতি। গানটি শোনার সময় কীভাবে যেন সেই গানের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পড়ি আমরা। কেন যেন মনে হয় যে, গানটি আমারই জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। বিগত দিনের ভুলে থাকতে চাওয়া বেদনাকে যেন উস্কে দেয় গানটি। —চলবে।
* পঞ্চমে মেলোডি (R D Burman): সৌম্য ভৌমিক, (Shoummo Bhoumik) সঙ্গীত শিল্পী।