![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/04/RD-Burman-2.jpg)
আরডি বর্মণ।
১৯৮৪ সালে পঞ্চম মধ্যগগনে। একের পর এক ঈর্ষণীয় সব কাজ করে চলেছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রযোজক এবং নির্দেশকদের কাছে প্রথম পছন্দ পঞ্চমই। একসঙ্গে একাধিক ছবিতে সংগীত পরিচালক হিসেবে ডাক পাচ্ছেন। ফলে সে সময় তাঁর দিনের ২৪ ঘণ্টা সময়ও কম মনে হত। সেই সময় তিনি একটানা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একাধিক ছবিতে করে চলেছেন। ব্যস্ততার পরিমাণ তখন এতটাই ছিল। কী ভাবছেন? তাড়াহুড়ো করে একসঙ্গে এত সুরের জন্ম দিতে গিয়ে গানের মানের সঙ্গে আপস করেছেন আরডি? মোটেও নয়, যিনি দিন রাত এক করে এক একটি সুরকে সন্তানস্নেহে গড়ে তুলেছেন, তিনি কীভাবে সেগুলির প্রতি উদাসীন হবেন? প্রশ্নই ওঠে না!
আসে ‘ঝুঠা সচ’ ছবিটি। এই ছবির ‘যাহা বিন হাওয়াকে পর্দা হিলে’ গানটি নিশ্চই শুনেছেন আপনারা। গানটির দৃশ্যায়ন এমনই ছিল যে, সেই যুগের পড়ুয়ারাও অভিভাবকদের চোখের আড়ালে গিয়ে সেটি দেখেছেন। এর কারণ মূলত দুটি। প্রথম কারণ, নিঃসন্দেহে নায়িকার আবেদন। অরুণা ইরানির সেই মাদকতাময় অভিনয়। কিন্তু সেই অভিনয়কে আরও আলোকিত করে তুলেছে পঞ্চমের দৃশ্য উপযোগী সুর। সেটিই হল দ্বিতীয় কারণ। গানটি গেয়েছেন কে? গেয়েছেন পঞ্চম ঘরণী আশা। তাহলেই বুঝুন, সেই সময়ের উঠতি বয়েসের ছেলেমেয়েরা এই গানের দৃশ্যটি যে লুকিয়ে দেখতেই বেশি পছন্দ করবে, তাতে আর আশ্চর্যের কি?
এই পঞ্চম যখন ‘ইয়ে দেশ’ ছবির ‘আজ কি রাত’ গানটিতে সুর দেন, সেটি আবার ভিন্ন এক আবহের সৃষ্টি করে। ছন্দের একাধিক ধরন এবং আশা ভোঁসলের কণ্ঠে ক্রমাগত হয়ে চলা মডিউলেশন—দুইয়ে মিলে এক অবর্ণনীয় তৃপ্তি প্রদান করে আমাদের কর্ণযুগলকে। এই ছবির আরও একটি গান ‘মেরি উমর কা এক লেড়কা’ গানটির তাৎপর্য খুজে পাবেন ছন্দের বৈচিত্র এবং গানটিতে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারের মধ্যে। বেশিরভাগই দেশীয় বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে এবং সুরের চলনটিও একেবারে দেশজ।
এই পঞ্চম যখন ‘ইয়ে দেশ’ ছবির ‘আজ কি রাত’ গানটিতে সুর দেন, সেটি আবার ভিন্ন এক আবহের সৃষ্টি করে। ছন্দের একাধিক ধরন এবং আশা ভোঁসলের কণ্ঠে ক্রমাগত হয়ে চলা মডিউলেশন—দুইয়ে মিলে এক অবর্ণনীয় তৃপ্তি প্রদান করে আমাদের কর্ণযুগলকে। এই ছবির আরও একটি গান ‘মেরি উমর কা এক লেড়কা’ গানটির তাৎপর্য খুজে পাবেন ছন্দের বৈচিত্র এবং গানটিতে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারের মধ্যে। বেশিরভাগই দেশীয় বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে এবং সুরের চলনটিও একেবারে দেশজ।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/01/RD-Burman-2.jpg)
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৪৮: আরডি-র কণ্ঠে ‘ইয়ে জিন্দেগি কুছ ভি সহি’ গানটি মনে পড়ে?
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/01/Uttam-Kumar-2-1.jpg)
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬১: ‘বন্ধু’ তোমার পথের সাথী
উপরোক্ত তিনটি গানের উদাহরণ কেন তুলে ধরলাম জানেন? পঞ্চমের রেঞ্জ ঠিক কতখানি বিস্তৃত সেটি বোঝাতেই এর অবতারণা। প্রথম গানটি যারপরনাই পাশ্চাত্য ঘেঁষা। নায়ককে নায়িকা সবরকম ভাবে আকর্ষণ করতে বদ্ধপরিকর। তাই এহেন সুর যেন বিশেষ ভাবে প্রয়োজন। দ্বিতীয় গানটির সুর দেশীয় হলেও বাদ্যযন্ত্রের বেশির ভাগই দেশের বাইরের। অর্থাৎ কোথাও যেন প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের মিলন ঘটানো হয়েছে নিপুণভাবে। আর তৃতীয় গানটি সবদিক থেকেই দেশীয়। অর্থাৎ দেশীয় সুর এবং বাদ্যযন্ত্রের এক মহামিলন। একেই হয়তো ‘ভারসেটাইলিটি’ বলে। আর পঞ্চমের ক্ষেত্রে সেটি চরম আকারে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর প্রতিটি সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে। যেমন ধরুন ‘অন্দর বাহার’ ছবির ‘ক্যায়সে ক্যায়সে হ্যায় মেরে’ গানটি। আধুনিক বাদ্যযন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই এই গানের মাধ্যমে আমাদের মন জয় করে নিয়েছেন পঞ্চম। আর হবে নাই বা কেন। গায়িকা কে সেটাও তো দেখতে হবে! আশা বরাবরের মতো এ বারও অসাধারণ। পুরো গানটি জুড়ে নেপথ্যে বেজে চলা টনি ভাজের বাস গিটার গানটিকে করে তুলেছে অনন্য।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/01/Leela-Majumdar-2024.jpg)
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১০: লীলা মজুমদার— নতুন রূপকথার হলদে পাখি
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/02/Samay-Updates_Sundarban-4.jpg)
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩৪: সুন্দরবনের মৃত ও মৃতপ্রায় নদী
যদি ‘মাটি মাঙ্গে খুন’ ছবির ‘ম্যায় ঘুনঘট না খলুঙ্গি’ গানটির কথায় আসা যায়, কী অসাধারণ একটি গান। গানের ধরনের কথা মাথায় রেখে লতা দিদিকে দিয়েই গানটি গাওয়ান পঞ্চম। এককথায়, গানটি অনবদ্য। সেমি ক্লাসিক্যাল এই গানের আনাচে-কানাচে শুধু মেলোডি আর মেলোডি। আর লতা তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ঢংয়ে গানটিকে যেভাবে উপস্থাপিত করেছেন, তাতে গানটি সার্বিকভাবে একটি অন্য মাত্রায় পৌঁছেছে।
সুনীল কৌশিকের সেই অভিনব গিটার স্ট্রামিং দিয়ে শুরু হওয়া ‘গাহেরে হালকে হালকে গাহেরে’ গানটির কথা মনে পড়ে? ‘দুনিয়া’ ছবির এই গানটি লিখেছিলেন জাভেদ আখতার। আর পঞ্চমের সুরে নিজেদের কণ্ঠের দ্বারা ছবি এঁকেছিলেন কিশোর-লতা জুটি। একান্তে বসে শোনার সময় গানটির মধ্যে লুকিয়ে থাকা অনুভূতি যেন প্রতি মুহূর্তে স্পর্শ করে চলে আমাদের।
অতি সাধারণ মেলোডি। কিন্তু শুনতে লাগছে অসাধারণ। কোন গানের কথা বলছি? গানটি হল ‘দুনিয়া’ ছবিতে কিশোরের গাওয়া ‘তু চাঁদ নগর কি সহেজাদি’। শুনলে বুঝবেন কেন বলছি এ কথা। ছন্দের বৈচিত্র না হয় বাদই দিলাম। শুধু গানটির মেলোডিই শ্রোতাদের সম্মোহিত করার জন্য যথেষ্ট।
সুনীল কৌশিকের সেই অভিনব গিটার স্ট্রামিং দিয়ে শুরু হওয়া ‘গাহেরে হালকে হালকে গাহেরে’ গানটির কথা মনে পড়ে? ‘দুনিয়া’ ছবির এই গানটি লিখেছিলেন জাভেদ আখতার। আর পঞ্চমের সুরে নিজেদের কণ্ঠের দ্বারা ছবি এঁকেছিলেন কিশোর-লতা জুটি। একান্তে বসে শোনার সময় গানটির মধ্যে লুকিয়ে থাকা অনুভূতি যেন প্রতি মুহূর্তে স্পর্শ করে চলে আমাদের।
অতি সাধারণ মেলোডি। কিন্তু শুনতে লাগছে অসাধারণ। কোন গানের কথা বলছি? গানটি হল ‘দুনিয়া’ ছবিতে কিশোরের গাওয়া ‘তু চাঁদ নগর কি সহেজাদি’। শুনলে বুঝবেন কেন বলছি এ কথা। ছন্দের বৈচিত্র না হয় বাদই দিলাম। শুধু গানটির মেলোডিই শ্রোতাদের সম্মোহিত করার জন্য যথেষ্ট।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/01/Ramachandra-1.jpg)
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৪৮: রামায়ণে বনবাসযাপন সিদ্ধান্তে অনমনীয়া সীতার কণ্ঠে কী আধুনিকতার সুর?
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/09/Ramakrishna.jpg)
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩১: শ্রীমার পঞ্চতপা ব্রতানুষ্ঠান
একই কথা প্রযোজ্য ‘ফিরতে হ্যায় কাবসে দর্বদর’ গানটির ক্ষেত্রে। অত্যন্ত সাধারণ একটি মেলোডি। কিন্তু তাকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে, খুব দূরে কোথাও গানটি বাজলেও আমাদের মন ঠিক পৌঁছে যায় সেই গানের ঠিকানায়। লতার গাওয়া ‘তেরি মেরি জিন্দেগি’ গানটি শুনলে মন যেন এক নিমেষে কোথাও হারিয়ে যেতে চায়। এই ক্ষেত্রেও শুনতে পাওয়া যায় খুব সাধারণ একটি সুর, কিন্তু তার মিষ্টত্ব অসীম! গানের শুরু থেকে শেষ—শুধু মেলোডির মাদকতা। এই আকর্ষণ উপেক্ষা করা যে অসম্ভব!
পঞ্চমের সুরসৃষ্টির পারদর্শিতা অনেকাংশে এমনই একজন রাধুনীর রন্ধন কৌশলের সঙ্গে তুলনীয়, যিনি যে কোনও পদ, তা সে চাইনিজ হোক অথবা কন্টিনেন্টাল, এপার বাংলার হোক বা ওপার বাংলা, পাড়া গাঁয়ের কোনও প্রচলিত পদ হোক বা শহুরে আধুনিক খাবার—সর্বত্র তাঁর জয়জয়কার। প্রয়োজনীয় সমস্ত উপকরণ যদি হাতের কাছে নাও থাকে, তবুও সেই খাদ্যবস্তুটি সেই রাঁধুনির স্বতন্ত্র রন্ধনপ্রণালীকে আশ্রয় করে হয়ে ওঠে সুস্বাদু এবং সহজপাচ্য।—চলবে।
পঞ্চমের সুরসৃষ্টির পারদর্শিতা অনেকাংশে এমনই একজন রাধুনীর রন্ধন কৌশলের সঙ্গে তুলনীয়, যিনি যে কোনও পদ, তা সে চাইনিজ হোক অথবা কন্টিনেন্টাল, এপার বাংলার হোক বা ওপার বাংলা, পাড়া গাঁয়ের কোনও প্রচলিত পদ হোক বা শহুরে আধুনিক খাবার—সর্বত্র তাঁর জয়জয়কার। প্রয়োজনীয় সমস্ত উপকরণ যদি হাতের কাছে নাও থাকে, তবুও সেই খাদ্যবস্তুটি সেই রাঁধুনির স্বতন্ত্র রন্ধনপ্রণালীকে আশ্রয় করে হয়ে ওঠে সুস্বাদু এবং সহজপাচ্য।—চলবে।
* পঞ্চমে মেলোডি (R D Burman): সৌম্য ভৌমিক, (Shoummo Bhoumik) সঙ্গীত শিল্পী।