শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


‘রোমান্স’ ছবির ‘ইয়ে জিন্দেগি কুছ ভি সহি’ গানটি মনে পড়ে? আনন্দ বকশির লেখা এই গানটি আর কারও জন্য না রেখে নিজেই গেয়ে ফেলেন। কিশোর কুমারের গাওয়া বাংলা গান ‘সে তো এলো না, এলো না, কেন এলো না জানি না’র সুরের ছাঁচে ঢেলে এই হিন্দি গানটির সুর রচনা করেন পঞ্চম। কিন্তু শুনে দেখবেন, বাংলা গানটিতে কিশোরের কণ্ঠে আমরা যে প্যাথস শুনতে পাই, সেই একই প্যাথস আমরা পেয়েছি আরডি-র বেদনাতুর কণ্ঠে। এমনকি, কুমার গৌরব যখন এই গানে পঞ্চমকে লিপ দিচ্ছেন, তখন গায়ক এবং নায়ক জুটিকে একই মানুষ বলে মনে হচ্ছে।
‘মজদুর’ ছবির ‘তুমহে ভুল জানে কা হক হ্যায় আগর’ গানটিতে পাবেন এক ভিন্ন আশাকে। এই আশা সংযত, এই আশা ধিরস্থির। সেটি অবশ্যই দৃশ্যের দাবি মেনে। কিন্তু সুর এবং ছন্দের কথা যদি ধরেন, দেখবেন ১৯৮৩ সালের প্রেক্ষিতে দুটিকেই ইতিহাস থেকে তুলে আনা হয়েছে বলে মনে হবে। কারণ, ততদিনে সুরের ধরন বদলে গিয়েছে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলে গিয়েছে শ্রোতাদের কান। কেন? ততদিনে পঞ্চম নিজের ‘ট্রেন্ড’ তৈরি করে নিয়েছেন। মানুষও সেটিকে অত্যুৎসাহী হয়ে আপন করে নিয়েছেন।
আরও পড়ুন:

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৪৭: কাঁহি না জা আজ কাঁহি মত জা…

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩৩: সুন্দরবনের এক অনন্য প্রাণীসম্পদ গাড়োল

এহেন পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে সেই সময়ের থেকে অন্তত বছর ২০ আগে ফিরে যাওয়া এবং সেই যুগের সুরের কাঠামো ব্যবহার করে একটি বাণিজ্যিক ছবির গানের সুর রচনা করা। এই দুঃসাহস দেখানোর ক্ষমতা বোধ হয় পঞ্চম এরই ছিল। তাও কোন ছবিতে? যে ছবির প্রযোজক বিআর চোপড়ার মতো কেউ! এমনই ছিল সুরকারের আত্মবিশ্বাস। প্রযোজকও জানতেন, তিনি বাজি হারবেন না। কারণ, সেই সুরকার আর কেউ নন, তিনি হলেন শচীনপুত্তর রাহুল দেব বর্মণ।
আরও পড়ুন:

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৯: নিরুপমা দেবী— তাঁকে নিয়েই গল্প হোক!

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৪৭: পলায়নপর পঞ্চপাণ্ডব-ভীমসেনের গতিময়তায় কোন মহাভারতীয় দিগদর্শন?

আবার দেখুন, একই ছবির আশার গাওয়া ‘বাত অধুরি কিউ হ্যায়’ গানটি কিন্তু সময় উপযোগী একটি সুরে সাজিয়েছেন পঞ্চম। মাঝে ছন্দের বৈচিত্র অবশ্যই কানে ধরা দেয়। তবু সার্বিকভাবে গানটিতে পঞ্চম এর তৎকালীন ট্রেন্ডই বিদ্যমান।
‘ফরিস্তা’ ছবির কিশোরের গাওয়া ‘জামানে মে কই হামারা নেহি’ গানটি শুনলে মনে একটি সুগভীর আক্ষেপ জন্ম নেয়। আক্ষেপটি এটিই, যে কেন পঞ্চম কিশোর জুটি আমাদের মধ্যে আরও অন্তত তিরিশটি বছর থেকে গেলেন না। সত্যিই, শিশুর মতো এই প্রশ্নটি আমরা নিজেদেরকেই করে ফেলি কখনও কখনও।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩০: গিরীশচন্দ্রের মা সারদা

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৩: এক্সপায়ারি ডেটের ওষুধ খাবেন?

আরও কত কত সুর, আরও কত কত গানের অমৃতরস পান করা থেকে যে আমরা বঞ্চিত থেকে গেলাম। সেই আক্ষেপ কীভাবে মিটবে? কীভাবে পূর্ণ হবে পঞ্চম কিশোরের তৈরি করে যাওয়া দুই মহাশূন্য? উত্তর আজও অজানা। তাই যখন কোনও পড়ন্ত বিকেলে নিভৃতে বসে থাকা অবস্থায় দূর থেকে পঞ্চমের সুরে গাওয়া কিশোরের কোনও গান হঠাৎ ভেসে আসে, নিজেকে ধনী বলে মনে হয় বইকি! কারণ, এই এক একটি গান উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত রত্নসম্ভারের থেকেও যে মহামূল্যবান! যে রত্নসম্ভার লুট হওয়ার ভয় নেই। যে রত্মসম্ভার আপনার, আমার, এবং সবার। যে রত্মসম্ভার আমাদের সমৃদ্ধ করে রাখবে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ।—চলবে।
* পঞ্চমে মেলোডি (R D Burman): সৌম্য ভৌমিক, (Shoummo Bhoumik) সঙ্গীত শিল্পী।

Skip to content