রবিবার ১০ নভেম্বর, ২০২৪


পঞ্চম সুরারোপিত এবং লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া ‘আমার মালতীলতা ওগো কি আবেশে দোলে’ গানটি নিশ্চই শুনেছেন। সেই একই সুর পঞ্চম ব্যবহার করেন ‘হামারে তুমারে ছবিতে’। গানটি হল ‘হাম আউর তুম থে সাথী’। গানটি গেয়েছেন কিশোর কুমার। সুর দুটি ক্ষেত্রেই হুবহু এক। কিন্তু একই সুরে দুটি ভিন্ন মুড তৈরি করার ক্ষমতা বোধহয় পঞ্চমরই ছিল। কেন বলছি? জানতে হলে লতার গাওয়া বাংলা গান এবং কিশোরের গাওয়া হিন্দি গান, দুটিই শুনতে হবে।

বাংলা গানটির মধ্যে আমরা খুঁজে পাই এক প্রেমিকার মনের আবেগ যেটি সে গানের মাধ্যমে স্বগতোক্তির (সলিলোকি) আকারে প্রকাশ করছে। শুনে দেখুন, একই সুর। তবু হিন্দি গানটিতে এক প্রেমিকের করুন বিরহ প্রকাশ পাচ্ছে কিশোর কণ্ঠে। এর মূল কারণটি লুকিয়ে আছে গান দুটির অ্যারেঞ্জমেন্টের মধ্যে। ভাবা যায়? সুরের ওপর একজনের কতটা দখল থাকলে এহেন সৃষ্টি সম্ভব। একই সুরের একটি গান আমাদের দেয় আনন্দের অনুভূতি এবং আরেকটি দেয় কষ্টের অনুভূতি।
এই ছবির আরও একটি মিষ্টি গান ‘কুছ তুম কাহো কুছ হাম কাহে’। একটি মিষ্টি মেলোডির ছোঁয়ায় গানটি হয়ে উঠেছে যারপরনাই শ্রুতিমধুর। কিশোর-লতার যৌথ উপস্থাপনার কথা নতুন করে সত্যিই কিছু বলার থাকে না। শুনবেন কখনও। কিশোর পুত্র অমিত কুমারের গাওয়া ‘তু মেরি মেহবুবা হ্যায়’ গানটি পঞ্চমের আরও একটি অনবদ্য সৃষ্টি। গানটির গঠন, অ্যারেঞ্জমেন্ট, রিদম এবং উপযোগী ইনস্ট্রুমেন্টের ব্যাবহার এবং পাশাপাশি অমিতকণ্ঠ গানটির আকর্ষণ অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়।

ঋষিকেশ মুখোপাধ্যায় নির্দেশিত ‘গোলমাল’ ছবির গানগুলি মনে পড়ে? ‘গোলমাল হ্যায় ভাই সব গোলমাল হ্যায়’ (টাইটেল সং) গানটি আজও অনেককে আপন মনে গুনগুন করতে শোনা যায়। গুলজার সাহেব যেমন মজা করে গানটি লিখছেন, তেমনি একটি মজার সুর গানটিতে ব্যবহার করেছেন পঞ্চম। স্বয়ং পঞ্চমের কণ্ঠও শুনতে পাই আমরা এই গানটি। স্বপন চক্রবর্তীর সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে তাঁর এই উপস্থাপনা আজও একইরকম আকর্ষণীয়। শুরু থেকে শেষ অবধি।
আরও পড়ুন:

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-২৩: দো লাফজো কি হ্যায়… অমিতাভ-জিনাতের লিপ, পঞ্চমের সুর আর আশার কণ্ঠ, মনে পড়ছে?

অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-২: কাজের আশায়, তারকা অশোককুমারের গাড়িতে নয়, লোকাল ট্রেনে-বাসে ঘুরে বেড়াতেন কিশোর

কিশোরের গাওয়া এই ছবির ‘আনে ওয়ালা পাল জানে ওয়ালা হ্যায়’ গানটি বোধহয় আরডি, কিশোর, গুলজামের কালজয়ী সৃষ্টিগুলির মধ্যে একটি। তিনজনই নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে বোধহয় গানটির জন্ম দিয়েছেন। টিম ওয়ার্কের সঠিক উদাহরণ। গানের কথা, উপযোগী সুর এবং গায়ে কাঁটা দেওয়া কিশোর কণ্ঠ। কেউ যেনও কারো কাছে হারতে নারাজ। বিশেষ করে গানের দ্বিতীয় ইন্টারলুডটি ভালো করে শুনে দেখবেন। প্রথমে ১২ স্ট্রিং গিটার, তারপর ভায়োলিন। ভায়োলিন ঠিক যে নোটে শেষ হচ্ছে, ঠিক সেই নোট থেকে ট্রাম্পেট ধরে নিচ্ছে সুরটিকে। এক কথায় তুলনাহীন।

লতার গাওয়া ‘এক বাত কাহুঁ গার মানো তুম’ গানটিতে সেই আবার আমরা শুনতে পাই একটি চেনা ছন্দ। যেটিকে পঞ্চমের সিগনেচার রিদম বলা যেতে পারে স্বচ্ছন্দে। অনবদ্য।
এই ছবিতে পঞ্চম পিতা-পুত্র কাউকেই ছাড় দেননি। বুঝতে পারলেন না তো? আমি কিশোর কুমার এবং অমিত কুমারের কথা বলছি। ‘একদিন স্বপ্নে মে দেখা স্বপ্না’-র মতো একটি মজার গান পিতা-পুত্র জুটিকে দিয়েই গাইয়েছেন পঞ্চম। যথেষ্ট জনপ্রিয় হয় গানটি।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯: সুন্দরবনের লুপ্ত নদী আদিগঙ্গা

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৯: তা বলে কি প্রেম দেব না!

‘রত্নদীপ’ ছবির ‘কভি কভি স্বপ্না লাগ তা হ্যায়’ গানটির সম্পর্কে কি বলি বলুন তো। আমার একান্ত ইচ্ছে, আপনারা নিজেরাই গানটি শুনে তারপর জানান আপনাদের প্রতিক্রিয়া। গুলজার সাহেবের স্বর্ণাক্ষরে লেখা এই গানকে এক অপার্থিব সৌন্দর্যে সাজালেন পঞ্চম! ভেবে যেন কুল পাওয়া যায় না। আশা-কিশোর যৌথভাবে নিজেদের কণ্ঠ দিয়ে ফুল ফুটিয়েছেন, যে ফুলের সুবাস প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ছড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। কোনও প্রসংশাই পর্যাপ্ত নয়।
এই ছবিতে আশার গাওয়া ‘অ্যায়সা হো তো ক্যায়সা হোগা’ গানটিই বা কোন অংশে কম? শুধু সুরের কাঠামো এবং প্রবাহ লক্ষ্য করুন। তার সঙ্গে অ্যারেঞ্জমেন্ট এবং আশার কণ্ঠের আবেগ। কিছু কি বলার বাকি থাকে?

একই ছবির ‘মন বেহেক রাহা হ্যায়’ গানটি আশা-পঞ্চমের একটি যৌথ কর্মকাণ্ড। সুর এবং কণ্ঠের মিষ্টতা যদি একই মাত্রার হয় এবং এই দুইয়ের মেলবন্ধন ঘটে, তবেই বোধহয় এমন একটি গানের জন্ম হওয়া সম্ভব।
আরও পড়ুন:

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৬৮: উন্নতমানের প্রোটিনের উৎস বলেই মাছ এত জনপ্রিয়

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩২: আটার চেয়ে ময়দা ঢের গুণ ভালো?

‘মঞ্জিল’ ছবির ‘রিমঝিম ঘিরে শাওন’ গানটি দুটি ভিন্ন দৃশ্যে ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে। একটি দৃশ্যে গেয়েছেন লতা। অন্যটিতে কিশোর। সুর দুটি ক্ষেত্রেই এক। তবু গায়ক এবং গায়িকার ভিন্ন ধরনের উপস্থাপনার মধ্যে দিয়ে গানটিকে আমরা দুটি ভিন্ন স্বাদে পেয়ে থাকি। দুটিই সমান মাত্রায় উপভোগ্য।

‘তুম হো মেরি দিল কি ধড়কন’ গানটি পৃথিবীর যে কোনও মানুষকে যদি শোনানো হয়, শুধু ভাষার কারণে তিনি হয়তো গানটিকে উপেক্ষা করবেন না। আমার প্রবল বিশ্বাস, তিনি পুরো গানটিই শুনবেন সুরের এবং গায়কের কণ্ঠের আকর্ষণে। গানটির সম্মোহনীশক্তি হয়তো এতটাই। তাই তো কিশোর-পঞ্চম জুটি সাফল্যের ধ্বজা উড়িয়ে এগিয়ে চলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। যে জুটি সময়, কাল, শতাব্দী সবকিছুর উর্ধ্বে।—চলবে।
* পঞ্চমে মেলোডি (R D Burman): সৌম্য ভৌমিক, (Shoummo Bhoumik) সঙ্গীত শিল্পী।

আপনার রায়

ইসরোর চন্দ্রযান-৩ কি তৃতীয় বারের এই অভিযানে সাফল্যের স্বাদ পাবে?

Skip to content