রাহুল কিশরের সঙ্গে এক ফ্রেমে লতা। ছবি: সংগৃহীত।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর হয়তো আমাদের শুধু জন্মই দেন না। জীবনে চলার পথে তিনি আমাদের এমন কিছু মানুষের সঙ্গে এক সুতোয় বেধে দেন যাঁদের সঙ্গে আমরা নিজের অজান্তেই মিলেমিশে একাকার হয়ে যাই। সে আমাদের ব্যাক্তিগত জীবনেই হোক বা কর্মজীবনে। আমাদের জীবনে সেই সব মানুষের উপস্থিতি যেন পরমেশ্বরের নির্দেশেই ঘটে থাকে।
পঞ্চমের জীবনে সেরকমই একজন মানুষ ছিলেন কিশোরকুমার গঙ্গোপাধ্যায়। এই দু’জনকে ভগবান কর্মসূত্রে একে অপরের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছিলেন খানিকটা বাধ্য হয়েই। তিনিও হয়তো এই দুই ক্ষণজন্মাকে আলাদা করে রাখতে চাননি। তাই দুজনকে কর্মের মাধ্যমে খুব কাছাকাছি নিয়ে এসেছিলেন। কিশোরকুমার পৃথিবীতে আসার দশ বছর পর পঞ্চম এই পৃথিবীর আলো দেখেছিলেন ঠিকই, কিন্তু কোথাও যেন ঈশ্বরের সেই ইচ্ছেই কাজ করেছিল। যে ইচ্ছের বলে কিশোর-পঞ্চমের যাত্রা শুরু হয়।
সাল ১৯৫৫। কারদার স্টুডিয়োতে পুরোদমে ‘বাপ রে বাপ’ ছবির শুটিং চলছে। ছবিতে কিশোর অভিনয় করছেন। পঞ্চমের তখন নেহাতই অল্প বয়স। শচীনকর্তা সেখানে একদিন পঞ্চমকে নিয়ে যান শুটিং দেখাতে। স্টুডিয়োতে ঢুকেই পঞ্চম লক্ষ্য করেন, এক ব্যাক্তি স্টুডিয়োর পাঁচিলে বসে আছেন এবং নিজের হাঁটুর উপর দুহাত দিয়ে আপন মনে তবলা বাজিয়ে চলেছেন। এবং সেই যুগের তাবড় তাবড় অভিনেতাদের একের পর এক নকল করে চলেছেন। তাঁকে ঘিরে থাকা প্রায় জনা তিরিশেক লোক হেসে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছেন। সব কিছু দেখে পঞ্চম তো অবাক!
পঞ্চমের জীবনে সেরকমই একজন মানুষ ছিলেন কিশোরকুমার গঙ্গোপাধ্যায়। এই দু’জনকে ভগবান কর্মসূত্রে একে অপরের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছিলেন খানিকটা বাধ্য হয়েই। তিনিও হয়তো এই দুই ক্ষণজন্মাকে আলাদা করে রাখতে চাননি। তাই দুজনকে কর্মের মাধ্যমে খুব কাছাকাছি নিয়ে এসেছিলেন। কিশোরকুমার পৃথিবীতে আসার দশ বছর পর পঞ্চম এই পৃথিবীর আলো দেখেছিলেন ঠিকই, কিন্তু কোথাও যেন ঈশ্বরের সেই ইচ্ছেই কাজ করেছিল। যে ইচ্ছের বলে কিশোর-পঞ্চমের যাত্রা শুরু হয়।
সাল ১৯৫৫। কারদার স্টুডিয়োতে পুরোদমে ‘বাপ রে বাপ’ ছবির শুটিং চলছে। ছবিতে কিশোর অভিনয় করছেন। পঞ্চমের তখন নেহাতই অল্প বয়স। শচীনকর্তা সেখানে একদিন পঞ্চমকে নিয়ে যান শুটিং দেখাতে। স্টুডিয়োতে ঢুকেই পঞ্চম লক্ষ্য করেন, এক ব্যাক্তি স্টুডিয়োর পাঁচিলে বসে আছেন এবং নিজের হাঁটুর উপর দুহাত দিয়ে আপন মনে তবলা বাজিয়ে চলেছেন। এবং সেই যুগের তাবড় তাবড় অভিনেতাদের একের পর এক নকল করে চলেছেন। তাঁকে ঘিরে থাকা প্রায় জনা তিরিশেক লোক হেসে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছেন। সব কিছু দেখে পঞ্চম তো অবাক!
পঞ্চম কৌতূহল চাপতে না পেরে এবার বাবা শচীনকর্তাকে কানে কানে জিজ্ঞেস করেই ফেলেন সেই মজার মানুষটি সম্পর্কে। শচীনকর্তা হেসে ওঠেন আর পঞ্চমকে বলেন, তিনিই ‘কিশোরকুমার গাঙ্গুলি’। প্রখ্যাত অভিনেতা অশোক কুমারের ভাই। এই বিষয়েও পঞ্চমকে অবগত করেন যে ‘কিশোর’ হল তাঁর পোশাকি নাম। ওঁর প্রকৃত নাম ‘আভাসকুমার গাঙ্গুলি’। যিনি একাধারে অভিনেতা ও গায়ক এবং অন্যদিকে নানা গুণে গুণান্বিত একটি মানুষ। তারপর শচীনকর্তা কিশোরের সঙ্গে পঞ্চমের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই শুরু। এরপর শচীন দেব বর্মনের সঙ্গে কিশোরের কাজের সুত্রে বহুবার সাক্ষাৎ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই সেখানে পঞ্চম উপস্থিত থেকেছেন কিশোরের গান শোনার উদ্দেশ্যে। কিশোরের কণ্ঠ এবং গায়কী দুটোই যেন পঞ্চমকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করতো।
প্রসঙ্গত, শচীনকর্তার সঙ্গে কিশোরের পরিচয় ছিল বহু আগে থেকে। শচীনকর্তা কিশোরকুমারকে নিজের পুত্রের ন্যায় স্নেহ করতেন। কিশোরেরও খুব সঙ্গত কারণেই শচীনদেবের প্রতি ছিল অগাধ এবং অকৃত্রিম শ্রদ্ধা।
এমত অবস্থায় পঞ্চম এক নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। কিশোরকুমারকে তিনি তাঁর সুরে কণ্ঠদান করাবেনই। কবে আসবে সেই সুযোগ। ‘ভুত বাংলা’ ছবিটির কথা আগেই উল্লেখ করেছি। পরমেশ্বরের আশীর্বাদ হয়ে এই ছবিটি এল আরডি-র জীবনে। মেহমুদ পরিচালিত এই ছবিতে কিশোরকুমারের সঙ্গে প্রথমবার কাজ করার সুযোগ পেলেন পঞ্চম। তাঁর এতদিনের স্বপ্ন সত্যি হল। ‘এক শাওয়াল হ্যায় তুমসে’ গানটি কিশোর পঞ্চমের সুরে গেয়ে দিলেন ঠিকই, কিন্তু ‘জাগো সোনেওয়ালো’ গানটির ক্ষেত্রে কিশোর পঞ্চমকে একটি আর্জি জানালেন। তিনি বললেন, পঞ্চমের সঙ্গে বসে এই গানটিকে একটু পরিবর্তন করে খানিকটা অন্যরকম ভাবে উপস্থাপনা করবেন। নতুন কিছু শেখার আগ্রহ ছেলেবেলা থেকেই পঞ্চমের মধ্যে বিদ্যমান। আর অহংকার? সেটি আবার কি বস্তু! তাই কিশোরের প্রস্তাবে এক কথায় রাজি হয়ে যান তিনি। অথবা বলা যায় যে, প্রস্তাবটি তিনি যেন লুফে নেন। কিশোর গানটির কয়েকটি অংশে কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে পঞ্চমকে শুনিয়ে পঞ্চমের মতামত জানতে চান। পঞ্চম এতটাই অভিভূত হয়ে পড়েন গানটি শুনে যে, কিশোরকে আনন্দে জড়িয়ে ধরেন। যেন নতুন কিছু শিখলেন কিশোরের কাছ থেকে।
প্রসঙ্গত, শচীনকর্তার সঙ্গে কিশোরের পরিচয় ছিল বহু আগে থেকে। শচীনকর্তা কিশোরকুমারকে নিজের পুত্রের ন্যায় স্নেহ করতেন। কিশোরেরও খুব সঙ্গত কারণেই শচীনদেবের প্রতি ছিল অগাধ এবং অকৃত্রিম শ্রদ্ধা।
এমত অবস্থায় পঞ্চম এক নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। কিশোরকুমারকে তিনি তাঁর সুরে কণ্ঠদান করাবেনই। কবে আসবে সেই সুযোগ। ‘ভুত বাংলা’ ছবিটির কথা আগেই উল্লেখ করেছি। পরমেশ্বরের আশীর্বাদ হয়ে এই ছবিটি এল আরডি-র জীবনে। মেহমুদ পরিচালিত এই ছবিতে কিশোরকুমারের সঙ্গে প্রথমবার কাজ করার সুযোগ পেলেন পঞ্চম। তাঁর এতদিনের স্বপ্ন সত্যি হল। ‘এক শাওয়াল হ্যায় তুমসে’ গানটি কিশোর পঞ্চমের সুরে গেয়ে দিলেন ঠিকই, কিন্তু ‘জাগো সোনেওয়ালো’ গানটির ক্ষেত্রে কিশোর পঞ্চমকে একটি আর্জি জানালেন। তিনি বললেন, পঞ্চমের সঙ্গে বসে এই গানটিকে একটু পরিবর্তন করে খানিকটা অন্যরকম ভাবে উপস্থাপনা করবেন। নতুন কিছু শেখার আগ্রহ ছেলেবেলা থেকেই পঞ্চমের মধ্যে বিদ্যমান। আর অহংকার? সেটি আবার কি বস্তু! তাই কিশোরের প্রস্তাবে এক কথায় রাজি হয়ে যান তিনি। অথবা বলা যায় যে, প্রস্তাবটি তিনি যেন লুফে নেন। কিশোর গানটির কয়েকটি অংশে কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে পঞ্চমকে শুনিয়ে পঞ্চমের মতামত জানতে চান। পঞ্চম এতটাই অভিভূত হয়ে পড়েন গানটি শুনে যে, কিশোরকে আনন্দে জড়িয়ে ধরেন। যেন নতুন কিছু শিখলেন কিশোরের কাছ থেকে।
আরও পড়ুন:
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৯: ‘মেরা কুছ সামান…’ গানে সুর দেওয়ার প্রস্তাবে গুলজারকে পত্রপাঠ বিদায় জানান পঞ্চম
মিথ্যার সঙ্গে আপোষ না করে ছাড়েন চাকরি, দিন কাটে অনাহারে, কে এই ভারতের ফেভিকল ম্যান?
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৩: যার কাছে টাকা-পয়সা থাকে এ জগতে সেই হল পণ্ডিত
কিশোরকুমারও হয়তো সেদিন একটি সহজ সত্য অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সেটি হল পঞ্চমের প্রতিভার আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক শিশুসুলভ সারল্য। এও হয়তো বুঝে গিয়েছিলেন, পঞ্চমের সঙ্গে তাঁর পথচলা দীর্ঘতর হতে চলেছে। রেকর্ডিং শেষ হয় গানটির। শুনলে অবাক হবেন, এই গানটির অ্যারেঞ্জর ছিলেন লক্ষ্মীকান্ত-পেয়ারেলাল জুটির পেয়ারেলাল শর্মা। দিকে দিকে সাড়া ফেলে দেয় ‘জাগো সোনেওয়ালো’ গানটি। লোকের মুখে মুখে ফিরতে থাকে। সৃষ্টি হয় এক নতুন রসায়নের। স্বয়ং মেহমুদ ও হয়তো এতটা আশা করেননি। গানটি এর আগে আপনারা সবাই শুনেছেন ঠিকই। তৎসত্ত্বেও আরও একবার শোনার অনুরোধ রইল। কিশোর কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে আসা আবেগ, তাঁর বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর, স্পষ্ট উচ্চারণ এবং তার সঙ্গে পঞ্চমের সৃষ্টি করা মন ছুঁয়ে যাওয়া সুর। সব মিলিয়ে গানটি আজকের দিনেও যেন শ্রোতাদের হৃদয় মাতিয়ে রাখে। সম্মোহিত করে রাখে আপামর সঙ্গীতপ্রেমীকে।
কথায় বলে ‘’মর্নিং শোজ দ্য ডে’’। একই ভাবে এই গানটি হয়তো কিশোর-পঞ্চম জুটির ভবিষ্যৎ-সাফল্যের বার্তা বহন করেছিল। এই গানটির সাফল্যই হয়তো অনেকটা ইঙ্গিত দিয়েছিল আগামী দিনে কী ঘটতে চলেছে। এই ছবি থেকেই স্বাভাবিক কারণেই দু’জনে দু’জনের খুব কাছে চলে আসেন। পরবর্তীতে দুজনে অভিন্নহৃদয় বন্ধুও হয়ে ওঠেন। পেশাগত ক্ষেত্রে তো বটেই, ব্যাক্তিগত ক্ষেত্রেও।
কথায় বলে ‘’মর্নিং শোজ দ্য ডে’’। একই ভাবে এই গানটি হয়তো কিশোর-পঞ্চম জুটির ভবিষ্যৎ-সাফল্যের বার্তা বহন করেছিল। এই গানটির সাফল্যই হয়তো অনেকটা ইঙ্গিত দিয়েছিল আগামী দিনে কী ঘটতে চলেছে। এই ছবি থেকেই স্বাভাবিক কারণেই দু’জনে দু’জনের খুব কাছে চলে আসেন। পরবর্তীতে দুজনে অভিন্নহৃদয় বন্ধুও হয়ে ওঠেন। পেশাগত ক্ষেত্রে তো বটেই, ব্যাক্তিগত ক্ষেত্রেও।
আরও পড়ুন:
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৫৪: মাছের বাজারের দুনিয়ায় আলিপুরের ‘নেট বাজার’ তালিকায় শীর্ষে
বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-১৮: গৃহ-সহায়িকার পাঁচালি এবং আমাদের ভদ্র সমাজ
গা ছমছমে ভৌতিক উপন্যাস: মিস মোহিনীর মায়া, পর্ব-১: জলের তলায় তার শরীরের কোনও অস্তিত্ব নেই!
দ্বিতীয়বারের জন্য আবার দুজনে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান ১৯৬৮ সালে, ‘পড়োশন’ ছবিতে। আর এবারও সেই মেহমুদ সাহেবই উদ্যোগ নেন দু’ জনকে মিলিয়ে দেওয়ার। সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে বেছে নেন পঞ্চমকে এবং কিশোরকুমারকে রাখেন ছবির গায়কদের তালিকায়। যে তালিকায় ছিলেন পরম শ্রদ্ধেয় মান্না দে এবং মেহমুদ স্বয়ং। গায়িকা হিসেবে ছিলেন লতা মঙ্গেশকর। আজও যখন কিশোর কণ্ঠ ‘মেরে সামনে ওয়ালি খিড়কি মে’ গেয়ে ওঠে, আমরা কোথাও যেন ভেসে যাই এক অজানা প্রেমের জোয়ারে। অসম্ভব সহজ সরল একটি সুর। কোথাও কোনও ‘হরকত’ বা সুরের মারপ্যাঁচ নেই। অথচ কি অসাধারণ এক আবেদনে ভরা একটি গান। রেসো-রেসোকে প্রায় পুরো গানটি জুড়েই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ছন্দটিকে ধরে রাখার স্বার্থে। ইন্টারলুডগুলি হালকা একরডিয়ানের ছোঁয়ায় নিদারুণ ভাবে আলোকিত হয়ে উঠেছে। আর কিশোর কুমারের কণ্ঠ? এ বিষয়ে সত্যিই কি কিছু বলার প্রয়োজন আছে? সংক্ষেপে বললে, একটাই কথা বলা চলে—স্বর্গীয় কণ্ঠস্বর, যা শ্রোতাদের বাকরুদ্ধ করে রাখে, গানের শুরু থেকে শেষ অবধি। গানটি শেষ হয়ে গেলেও যেন তার রেশটি থেকে যায় পরবর্তী বেশ কয়েক ঘণ্টা জুড়ে।
পঞ্চমের সুরে কিশোরের গাওয়া এই ছবির আরও একটি গানের কথা আগেই উল্লেখিত হয়েছে। ‘কহেনা হ্যায় কহেনা হ্যায় আজ তুমসে ইয়ে পাহেলি বার’। ভালো করে শুনে দেখবেন, যখন কিশোর গানটি গাইছেন, তখন খুব বেশি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করেননি পঞ্চম। সেটি কিশোর কণ্ঠকে প্রাধান্য দিতেই। সেই অংশগুলিতে ছন্দ ধরে রেখেছে বঙ্গ এবং ভায়োলিনে খুব হালকা করে বেজে চলা অব্লিগেটো। অথচ একই গানের দুটি ইন্টারলুডে যেন বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রগুলিকে উজাড় করে দিয়েছেন পঞ্চম। ঠিক যেন ঢেলে সাজিয়েছেন। কেন যেন মনে হয় কিশোর কণ্ঠের নেপথ্যে খুব বেশি ইনস্ট্রুমেন্ট ব্যাবহার না করতে পারার আক্ষেপটি তিনি মিটিয়ে নিয়েছেন ইন্টারলুড দুটিকে মনের মতো করে সাজিয়ে। অতুলনীয় অর্কেস্ট্রেশন! যেন দুচোখ বন্ধ করে শুধু ইন্টারলুড দুটিই সারাদিন ধরে শোনা যায়। কখনওই একঘেয়ে মনে হয় না।
পঞ্চমের সুরে কিশোরের গাওয়া এই ছবির আরও একটি গানের কথা আগেই উল্লেখিত হয়েছে। ‘কহেনা হ্যায় কহেনা হ্যায় আজ তুমসে ইয়ে পাহেলি বার’। ভালো করে শুনে দেখবেন, যখন কিশোর গানটি গাইছেন, তখন খুব বেশি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করেননি পঞ্চম। সেটি কিশোর কণ্ঠকে প্রাধান্য দিতেই। সেই অংশগুলিতে ছন্দ ধরে রেখেছে বঙ্গ এবং ভায়োলিনে খুব হালকা করে বেজে চলা অব্লিগেটো। অথচ একই গানের দুটি ইন্টারলুডে যেন বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রগুলিকে উজাড় করে দিয়েছেন পঞ্চম। ঠিক যেন ঢেলে সাজিয়েছেন। কেন যেন মনে হয় কিশোর কণ্ঠের নেপথ্যে খুব বেশি ইনস্ট্রুমেন্ট ব্যাবহার না করতে পারার আক্ষেপটি তিনি মিটিয়ে নিয়েছেন ইন্টারলুড দুটিকে মনের মতো করে সাজিয়ে। অতুলনীয় অর্কেস্ট্রেশন! যেন দুচোখ বন্ধ করে শুধু ইন্টারলুড দুটিই সারাদিন ধরে শোনা যায়। কখনওই একঘেয়ে মনে হয় না।
আরও পড়ুন:
দশভুজা: জীবনে যা কিছু করেছি, প্রত্যয়ের সঙ্গে করেছি: কানন দেবী/২
বিধানে বেদ-আয়ুর্বেদ: দীর্ঘদিন অম্লপিত্তের সমস্যায় ভুগছেন? আয়ুর্বেদে রয়েছে সহজ প্রতিকার
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৮: শুঁটকি মাছে কি আদৌ কোনও পুষ্টিগুণ আছে?
আসলে রাহুল দেব বর্মন সুরকার হিসেবে হয়তো একটু আলাদা। বা হয়তো অনেকটাই আলাদা। এর পিছনে অনেকগুলি কারণ লুকিয়ে আছে। প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য সঙ্গীতের উপর শৈশব থেকেই তাঁর একই রকম আগ্রহ ছিল। নিজেকে মাটির কাছাকাছি রেখে সুরসৃষ্টি করার অপরিসীম ক্ষমতা (যে গুণটি হয়তো অনেকটাই পিতৃসূত্রে প্রাপ্ত)। নতুন কিছু শেখার প্রচেষ্টা, নিজের তৈরি সুরটিকে সর্বাঙ্গসুন্দর করে তোলার অদম্য ইচ্ছে, যেটি করতে গিয়ে শুধু গানটির অংশেই নয়, প্রিলুড এবং ইন্টারলুডগুলিকেও সমান গুরুত্ব দিয়ে সাজিয়ে তোলা। মেলোডি আর রিদম দুটোকেই সাবলীলভাবে ব্যাবহার করার জন্মগত ক্ষমতা। নিজের ভিতরে সবসময় কাজ করা খুঁতখুতেমি, নায়ক এবং নায়িকার কথা মাথায় রেখে সুর রচনা করা, ছবির সংলাপ-সহ প্রতিটি দৃশ্য এবং গানের মুহূর্তগুলি মাথায় রেখে উপযোগী সুর-তাল-ছন্দ তৈরি করা, সুর-সঙ্গীত নিয়ে গবেষণায় ডুবে থাকা, এতজন গুণী যন্ত্রীকে স্থায়ী ভাবে নিজের দলে পাওয়া এবং মা সরস্বতীর দুহাত ভরে দেওয়া আশীর্বাদ। আর কি চাই?
আসলে আমরা প্রত্যেকেই জন্মগত ভাবে কোনও না কোনও ঈশ্বরপ্রদত্ত প্রতিভা নিয়ে এই পৃথিবীতে আসি। যাঁরা যাঁরা সেই প্রতিভাকে সঠিক পথে চালিত করার সুযোগ এবং সুবিধে পাই, পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধু বান্ধবের সমর্থন পাই, তারাই কিন্তু নিজেদের মেলে ধরতে সক্ষম হই। তারাই পারি স্ব স্ব ক্ষেত্রে নিজেদের একটি জায়গা তৈরি করে নিতে, যা বিশেষ ভাবে মানুষের নজর কাড়ে। মানুষের মনে একটি স্থায়ী জায়গা তৈরি করে নিতে সাহায্য করে। তখনই আমরা উদাহরণ হয়ে উঠি। অনন্য হয়ে উঠি। পঞ্চম এবং কিশোর যেন তেমনি দুটি উদাহরণ।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এই দুই প্রতিভার পেশাগত ভাবে পরস্পরের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাওয়া। আর তাই হয়তো একের পর এক মালা গেঁথে গিয়েছেন দু’জনে মিলে। সুর, সঙ্গীত এবং কণ্ঠের মাধ্যমে। কিশোর কণ্ঠের উপর যেন পঞ্চমের এক অলিখিত দাবি আমাদের চোখে ধরা পড়ে। মানুষটি কিশোর কণ্ঠকে যত ভাবে সম্ভব, তাঁর সুরে ফেলে, এক একটি গানকে চিরস্মরণীয় করে তুলেছেন। একই ভাবে কিশোরকুমারও যেন নিজের কণ্ঠকে সঁপে দিয়েছেন পঞ্চমের সুরের কাছে। এ যেন কোনও এক অলিখিত চুক্তি। কিশোরের কণ্ঠ আর পঞ্চমের সুর যেন একে ওপরের কাছে বিশেষ ভাবে দায়বদ্ধ। এই সত্যের প্রমাণ আমরা পরবর্তীকালে বহুবার পেয়েছি।—চলবে
আসলে আমরা প্রত্যেকেই জন্মগত ভাবে কোনও না কোনও ঈশ্বরপ্রদত্ত প্রতিভা নিয়ে এই পৃথিবীতে আসি। যাঁরা যাঁরা সেই প্রতিভাকে সঠিক পথে চালিত করার সুযোগ এবং সুবিধে পাই, পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধু বান্ধবের সমর্থন পাই, তারাই কিন্তু নিজেদের মেলে ধরতে সক্ষম হই। তারাই পারি স্ব স্ব ক্ষেত্রে নিজেদের একটি জায়গা তৈরি করে নিতে, যা বিশেষ ভাবে মানুষের নজর কাড়ে। মানুষের মনে একটি স্থায়ী জায়গা তৈরি করে নিতে সাহায্য করে। তখনই আমরা উদাহরণ হয়ে উঠি। অনন্য হয়ে উঠি। পঞ্চম এবং কিশোর যেন তেমনি দুটি উদাহরণ।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এই দুই প্রতিভার পেশাগত ভাবে পরস্পরের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাওয়া। আর তাই হয়তো একের পর এক মালা গেঁথে গিয়েছেন দু’জনে মিলে। সুর, সঙ্গীত এবং কণ্ঠের মাধ্যমে। কিশোর কণ্ঠের উপর যেন পঞ্চমের এক অলিখিত দাবি আমাদের চোখে ধরা পড়ে। মানুষটি কিশোর কণ্ঠকে যত ভাবে সম্ভব, তাঁর সুরে ফেলে, এক একটি গানকে চিরস্মরণীয় করে তুলেছেন। একই ভাবে কিশোরকুমারও যেন নিজের কণ্ঠকে সঁপে দিয়েছেন পঞ্চমের সুরের কাছে। এ যেন কোনও এক অলিখিত চুক্তি। কিশোরের কণ্ঠ আর পঞ্চমের সুর যেন একে ওপরের কাছে বিশেষ ভাবে দায়বদ্ধ। এই সত্যের প্রমাণ আমরা পরবর্তীকালে বহুবার পেয়েছি।—চলবে
* পঞ্চমে মেলোডি (R D Burman): সৌম্য ভৌমিক, (Shoummo Bhoumik) সঙ্গীত শিল্পী।