‘ভূত বাংলা' ছবির একটি দৃশ্যে মেহমুদ ও রাহুল।
পথ চলা শুরু হয় বাবার সহকারী হিসেবে। ১৯৫৮ সালে ‘সলভা সাল’ ছবির মধ্যে দিয়ে। এই ছবির ‘হ্যায় আপনা দিল তো আওয়ারা’ গানটিতে মাউথ অর্গান বাজিয়ে রীতিমত সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন পঞ্চম। গানটির অনুচ্ছেদের মাঝে যে মাউথ অর্গান আপনারা শুনতে পান, যাকে ‘ইন্টারলিউড মিউজিক’ বলা হয়ে থাকে, তার উৎপত্তি পঞ্চমের মাউথ অর্গান থেকেই। এরপর আরও দুটি ছবিতে বাবার সুযোগ্য সহকারী হিসেবে কাজ করেন আর ডি। সেগুলি হল, ১৯৫৮ তে ‘চলতি কা নাম গাড়ি’ এবং ১৯৫৯ এ ‘কাগজ কে ফুল’।
এরই মধ্যে একদিন মেহমুদ আসেন শচীনকর্তার কাছে একটি আর্জি নিয়ে। মেহমুদ তাঁকে অনুরোধ করেন তাঁর পরের ছবি ‘ছোটে নওয়াব’ এর সংগীত পরিচালনার ভার নিতে। কিন্তু শচীনকর্তা তখন এতটাই ব্যস্ত যে, এই অতিরিক্ত দায়িত্ব নেওয়ার মতো সময় তখন তাঁর ছিল না। মেহমুদকে শচীনকর্তা বুঝিয়েও বলেন সেই কথা। তখন মেহমুদ দেখতে পান যেসেই ঘরের এক কোণে বসে একটি ছেলে আপন মনে তবলা বাজিয়ে চলেছে। শচীনকর্তা মেহমুদকে ছেলেটির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন “ও রাহুল, আমার একমাত্র পুত্র। আমার সহকারী। ওকে দিয়ে চলবে?” কেন যেন মেহমুদ কোনও কিছু না ভেবেই এককথায় রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। সেটিই ছিল পঞ্চমের স্বাধীন ভাবে কাজ করার প্রথম এবং দুর্লভ একটি সুযোগ।
১৯৬১ সালে মুক্তি পায় ‘ছোটে নওয়াব’। জনপ্রিয়তা পায় পঞ্চমের সুরারোপিত ‘ঘর আজা ঘির আয়’, ‘মাতওয়ালি আখোয়ালে’, ‘জিনেওয়ালে মুসকুরাকে জি’, ‘আজ হুয়া মেরা দিল মতওয়ালা’ প্রভৃতি গানগুলি। চলচ্চিত্র জগতে এই প্রথম পঞ্চম আবির্ভূত হন একজন স্বতন্ত্র সুরকার হিসেবে। বলা বাহুল্য, বাবা শচীন দেব বর্মণ মনে মনে যথেষ্টই খুশি হয়েছিলেন। আর মেহমুদও বেশ বুঝতে পেরেছিলেন যে, পঞ্চমকে সুযোগ দিয়ে তিনি কোনও ভুল করেননি। পঞ্চমের সঙ্গে তাঁর একটি সুগভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হতে থাকে।
এরই মধ্যে একদিন মেহমুদ আসেন শচীনকর্তার কাছে একটি আর্জি নিয়ে। মেহমুদ তাঁকে অনুরোধ করেন তাঁর পরের ছবি ‘ছোটে নওয়াব’ এর সংগীত পরিচালনার ভার নিতে। কিন্তু শচীনকর্তা তখন এতটাই ব্যস্ত যে, এই অতিরিক্ত দায়িত্ব নেওয়ার মতো সময় তখন তাঁর ছিল না। মেহমুদকে শচীনকর্তা বুঝিয়েও বলেন সেই কথা। তখন মেহমুদ দেখতে পান যেসেই ঘরের এক কোণে বসে একটি ছেলে আপন মনে তবলা বাজিয়ে চলেছে। শচীনকর্তা মেহমুদকে ছেলেটির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন “ও রাহুল, আমার একমাত্র পুত্র। আমার সহকারী। ওকে দিয়ে চলবে?” কেন যেন মেহমুদ কোনও কিছু না ভেবেই এককথায় রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। সেটিই ছিল পঞ্চমের স্বাধীন ভাবে কাজ করার প্রথম এবং দুর্লভ একটি সুযোগ।
১৯৬১ সালে মুক্তি পায় ‘ছোটে নওয়াব’। জনপ্রিয়তা পায় পঞ্চমের সুরারোপিত ‘ঘর আজা ঘির আয়’, ‘মাতওয়ালি আখোয়ালে’, ‘জিনেওয়ালে মুসকুরাকে জি’, ‘আজ হুয়া মেরা দিল মতওয়ালা’ প্রভৃতি গানগুলি। চলচ্চিত্র জগতে এই প্রথম পঞ্চম আবির্ভূত হন একজন স্বতন্ত্র সুরকার হিসেবে। বলা বাহুল্য, বাবা শচীন দেব বর্মণ মনে মনে যথেষ্টই খুশি হয়েছিলেন। আর মেহমুদও বেশ বুঝতে পেরেছিলেন যে, পঞ্চমকে সুযোগ দিয়ে তিনি কোনও ভুল করেননি। পঞ্চমের সঙ্গে তাঁর একটি সুগভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হতে থাকে।
পরবর্তীকালেও অবশ্য বাবার সহকারী হিসেবে পঞ্চম কাজ করে গিয়েছেন বেশ কিছু ছবিতে। যেমন ১৯৬৩ তে ‘তেরে ঘর কে সামনে’, এবং ‘বন্দিনী’, ১৯৬৪ তে ‘জিদ্দি’, ১৯৬৫ তে ‘গাইড’ এবং ‘তিন দেভিয়া’….এগুলিযেন ছিল এক একটি আগুনের ফুলকির মতো, যা পঞ্চমের মধ্যে জ্বালিয়েছিল এক অপরিসীম আত্মবিশ্বাসের আগুন। নিজের প্রতিভা হয়তো নিজের কাছে ধরা দিয়েছিল ততদিনে। হয়তো নিজের মতো করে কিছু করার স্বপ্নও দেখতে শুরু করেছিলেন আর ডি।
১৯৬৫ সালে আবার পঞ্চমের স্মরণাপন্ন হলেন মেহমুদ। তার আরেকটি জনপ্রিয় ছবি ‘ভূত বাংলা’র জন্য। ততদিনে দু’জনের বন্ধুত্ব গভীরতর হয়ে উঠেছে। পঞ্চম সানন্দে রাজি হয়ে যান। বন্ধুর অনুরোধ বলে কথা! সেই মতো কাজও শুরু করে দেন পুরোদমে। কিন্তু এবার একটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। মেহমুদ এই ছবিতে পঞ্চমকে কয়েকটি দৃশ্যে অভিনয়ও করার প্রস্তাব দেন। তার মধ্যে একটি দৃশ্য মূলত এরকম: এক বর্ষার রাত। চারিদিকে শুধু অন্ধকার। অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে, ঘন ঘন বজ্রপাত হয়ে চলেছে—এই অবস্থায় মেহমুদ এবং পঞ্চম দু’জনে একটি ভুত বাংলোতে প্রবেশ করবেন এক রহস্যভেদের উদ্দেশ্যে। যদিও পঞ্চম এই প্রস্তাব পত্রপাঠ নাকচ করে দেন। তিনি মেহমুদকে বলেন যে, অভিনয় তার দ্বারা কোনওমতেই হবে না এবং এটা কখনওই সম্ভব নয়। কিন্তু মেহমুদও হাল ছাড়ার পাত্র নন। শুরু হয় রাজি করানোর পালা।
১৯৬৫ সালে আবার পঞ্চমের স্মরণাপন্ন হলেন মেহমুদ। তার আরেকটি জনপ্রিয় ছবি ‘ভূত বাংলা’র জন্য। ততদিনে দু’জনের বন্ধুত্ব গভীরতর হয়ে উঠেছে। পঞ্চম সানন্দে রাজি হয়ে যান। বন্ধুর অনুরোধ বলে কথা! সেই মতো কাজও শুরু করে দেন পুরোদমে। কিন্তু এবার একটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। মেহমুদ এই ছবিতে পঞ্চমকে কয়েকটি দৃশ্যে অভিনয়ও করার প্রস্তাব দেন। তার মধ্যে একটি দৃশ্য মূলত এরকম: এক বর্ষার রাত। চারিদিকে শুধু অন্ধকার। অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে, ঘন ঘন বজ্রপাত হয়ে চলেছে—এই অবস্থায় মেহমুদ এবং পঞ্চম দু’জনে একটি ভুত বাংলোতে প্রবেশ করবেন এক রহস্যভেদের উদ্দেশ্যে। যদিও পঞ্চম এই প্রস্তাব পত্রপাঠ নাকচ করে দেন। তিনি মেহমুদকে বলেন যে, অভিনয় তার দ্বারা কোনওমতেই হবে না এবং এটা কখনওই সম্ভব নয়। কিন্তু মেহমুদও হাল ছাড়ার পাত্র নন। শুরু হয় রাজি করানোর পালা।
আরও পড়ুন:
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১: শচীন ও মীরা দেব বর্মনের ঘর আলো করে এল এক ‘দেব শিশু’
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৪৬: প্রাণী জগতের অন্যতম দায়িত্বশীল বাবা হল ড্রাগন ফিশ
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৬: যিনি নিরূপমা তিনিই ‘অনুপমা’
অবশেষে পঞ্চমকে তিনি রাজি করাতে সক্ষম হন। মেহমুদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কমেডি অভিনয় করে যাওয়া খুব একটা সহজ কাজ ছিল না। একই ছবির ‘ম্যায় ভুখা’ গানটির সঙ্গে পঞ্চমের অভিনয়ও দর্শকদের নজর কেড়েছে। ছবিতে তার সুর দেওয়া গানগুলিও যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়। আরডি ‘লেটস টুইস্ট এগেন’ গানটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘আও টুইস্ট করে’-র মতো গানের সুর রচনা করেছিলেন মেহমুদের মতো প্রাণোচ্ছ্বল অভিনেতার কথা মাথায় রেখে। যুগোপযোগী না হওয়া সত্ত্বেও গানটি সেই যুগে যথেষ্টই প্রসংশা কুড়িয়েছিল। যদিও শচীনকর্তা বেশ চটে গিয়েছিলেন রাহুলের উপর। তিনি সরাসরি বলেও দিয়েছিলেন যে, এই সুর ভারতীয় সংস্কৃতির পরিপন্থী। এও শোনা যায় যে, এর পরিপ্রক্ষিতে পঞ্চমের সঙ্গে তাঁর বাক্যালাপও নাকি বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল।
আরও পড়ুন:
পর্দার আড়ালে, পর্ব-২৮: সপ্তপদী: মূল কাহিনিতে দুই ভিন্ন ধর্মাবলম্বী পুরুষ ও নারীর ভালোবাসার মধ্যে মিলন রাখেননি তারাশঙ্কর
চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১০: স্থাপত্য ছাড়িয়ে অভয়ারণ্য
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৫: কালাদেওর কিস্সা,
‘ভূত বাংলা’ ছবির আরও একটি গানের কথা উল্লেখ করতেই হয়। সেটি হল, ‘জাগো সনেওয়ালো সুনো মেরি কাহানি’। পঞ্চমের হৃদয়বিদারক সুর আর তার সঙ্গে কিশোর কুমারের বলিষ্ঠ কণ্ঠ এককথায় অনবদ্য। তবে পরবর্তীকালে একটি সাক্ষাৎকারে পঞ্চম জানিয়েছিলেন, রেকর্ডিংয়ের আগে এই গানটি প্রথমবার শোনার পর কিশোর কুমার তাঁকে সুরের কিছু পরিবর্তন ঘটাতে বলেন। পঞ্চম তাঁর কথা রেখেওছিলেন। উল্লেখ্য, সেই সময় কিন্তু কিশোর-পঞ্চম রসায়ন তৈরি হয়নি। এতো গেল ‘ভুত বাংলা’র বৃত্তান্ত।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১: আর্ষ মহাকাব্যের স্রষ্টাদ্বয়ের কথা
ডায়েট ফটাফট: ওজন কমাতে ব্রেকফাস্ট-লাঞ্চ-ডিনারের মাঝে ‘হেলদি স্ন্যাকস’ খাচ্ছেন তো?
স্বাদে-আহ্লাদে: বিকেল হলেই জমিয়ে প্রেম বা আড্ডা, সঙ্গে যদি থাকে ভেজিটেবিল চপ
১৯৬৮ সালে মেহমুদ প্রযোজিত আরও একটি কমেডি ছবি ‘পড়োসন’ এ ‘ভোলার’ ভূমিকায় তিনি পেতে চেয়েছিলেন পঞ্চমকে। কিন্তু এ বার আর পঞ্চম রাজি হননি। তিনি মেহমুদকে বোঝান যে, তিনি অভিনয়ে মন দিলে সুরকার হিসেবে কোনওদিনই কাজে মনোনিবেশ করতে পারবেন না। তাই পঞ্চমের পরিবর্তে মেহমুদ সাহেব সুনীল দত্তকে সেই দায়িত্ব দেন। আর পঞ্চম মনোযোগ দেন ‘পড়োসন’ ছবির সুর রচনায়। ‘মেরে সামনে ওয়ালি খিড়কি মে’, ‘এক চাতুর নার বাড়ি হুশিয়ার’ আজও লোকের মুখে মুখে ফেরে।
পঞ্চমের অভিনয় সত্তা আমরা আরও একটি ছবিতে দেখতে পাই। সেটি হল ১৯৬৯ সালে নাসির হোসাইন পরিচালিত একটি রোম্যান্টিক কমেডি ছবি ‘পেয়ার কা মৌসম’। যেখানে তিনি অভিনয় করেছিলেন নকল ‘ঝটপট সিং’ চরিত্রের নকল আপ্তসহায়ক হিসেবে। আর নকল ‘ঝটপট সিং’ এর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন কৌতুকাভিনেতা রাজেন্দ্রনাথ।—চলবে
পঞ্চমের অভিনয় সত্তা আমরা আরও একটি ছবিতে দেখতে পাই। সেটি হল ১৯৬৯ সালে নাসির হোসাইন পরিচালিত একটি রোম্যান্টিক কমেডি ছবি ‘পেয়ার কা মৌসম’। যেখানে তিনি অভিনয় করেছিলেন নকল ‘ঝটপট সিং’ চরিত্রের নকল আপ্তসহায়ক হিসেবে। আর নকল ‘ঝটপট সিং’ এর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন কৌতুকাভিনেতা রাজেন্দ্রনাথ।—চলবে
* পঞ্চমে মেলোডি (R D Burman): সৌম্য ভৌমিক, (Shoummo Bhoumik) সঙ্গীত শিল্পী।