ছোটবেলায় রাহুল। ছবি সংগৃহীত।
সুর এমনই একটি মাধ্যম যার মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পায় আমাদের সব কটি অনুভূতি। এর অর্থ উপলব্ধি করতেও দোভাষীর প্রয়োজন হয় না। আর সেই সুরের আকাশে যাঁর সুর অজেয়, অমর, চির নবীন, আসমুদ্রহিমাচল বিস্তৃত, যাঁর সুর নিজ গুণে বয়ে চলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম— তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন সুরের জাদুকর রাহুল দেব বর্মণ। রাহুল বাগদেবীর আশীর্বাদধন্য এমন একজন ক্ষণজন্মা, যাঁর সুর প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য দুয়ের কাছেই এক মহাবিস্ময়। তিনি এমন একজন সুরস্রষ্ঠা, যিনি তাঁর রেখে যাওয়া সুরের মূর্ছনায় আজও আচ্ছন্ন করে রেখেছেন প্রতিটি সংগীতপ্রেমীকে জাতি, ধর্ম, বর্ণ এবং বয়স নির্বিশেষে।
১৯৩৯-র ২৭ জুন। দিকপাল সুরকার শচীন দেব বর্মণ (ত্রিপুরার মানিক্য বংশভূত) এবং মীরা দেব বর্মনের (দাশগুপ্ত) ঘর আলো করে এলেন এক ‘দেব শিশু’। মা-বাবার আদরের টুবলু। শোনা যায়, নামটি টুবলুরদিদিমার দেওয়া। সেদিন দক্ষিণ কলকাতার ৩৬/১ সাউথ এন্ড পার্কের বাড়িটি ভেসে গিয়েছিল আনন্দের বন্যায়। সেই সময় এই বাড়িটি ‘শচীন দেব বর্মণের বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত ছিল সবার কাছে। টুবলুর বেড়ে ওঠা এই বাড়িতেই।
১৯৩৯-র ২৭ জুন। দিকপাল সুরকার শচীন দেব বর্মণ (ত্রিপুরার মানিক্য বংশভূত) এবং মীরা দেব বর্মনের (দাশগুপ্ত) ঘর আলো করে এলেন এক ‘দেব শিশু’। মা-বাবার আদরের টুবলু। শোনা যায়, নামটি টুবলুরদিদিমার দেওয়া। সেদিন দক্ষিণ কলকাতার ৩৬/১ সাউথ এন্ড পার্কের বাড়িটি ভেসে গিয়েছিল আনন্দের বন্যায়। সেই সময় এই বাড়িটি ‘শচীন দেব বর্মণের বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত ছিল সবার কাছে। টুবলুর বেড়ে ওঠা এই বাড়িতেই।
এখান থেকেই টুবলুর পড়াশুনো এবং সংগীত শিক্ষার হাতে খড়ি। তবলার তালিম নিয়েছিলেন স্বর্গীয় ব্রজেন বিশ্বাস ও পণ্ডিত সামতাপ্রসাদের কাছে। পরবর্তীকালে তিনি সরোদের প্রশিক্ষণ নেন ওস্তাদ আলি আকবর খান ও পণ্ডিত আশিস খানের কাছ থেকে।
স্কুলের দিনগুলি কেটেছে তীর্থপতি ইনস্টিটিউশন এবং বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুলে। শৈশব থেকেই সংগীতাবহের মধ্যে টুবলুর বেড়ে ওঠা। বাবা-মায়ের গুণগুলিও তিনি আস্তে আস্তেরপ্ত করে ফেলছিলেন। তার সঙ্গে টুবলুর ভগবান প্রদত্ত প্রতিভাও মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতে থাকে। বলাই বাহুল্য, টুবলুর নিজস্বতা এই সবের সঙ্গে মিলে পরবর্তীকালে তাঁকে ‘পঞ্চম’ বা ‘আরডি বর্মণ’ হয়ে উঠতে সাহায্য করে।
স্কুলের দিনগুলি কেটেছে তীর্থপতি ইনস্টিটিউশন এবং বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুলে। শৈশব থেকেই সংগীতাবহের মধ্যে টুবলুর বেড়ে ওঠা। বাবা-মায়ের গুণগুলিও তিনি আস্তে আস্তেরপ্ত করে ফেলছিলেন। তার সঙ্গে টুবলুর ভগবান প্রদত্ত প্রতিভাও মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতে থাকে। বলাই বাহুল্য, টুবলুর নিজস্বতা এই সবের সঙ্গে মিলে পরবর্তীকালে তাঁকে ‘পঞ্চম’ বা ‘আরডি বর্মণ’ হয়ে উঠতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৫: আঁধার ভূবনে আবার কে তুমি জ্বেলেছ ‘সাঁঝের প্রদীপ’ খানি
পর্দার আড়ালে, পর্ব-২৭: উত্তমের প্রশ্নে মজাদার জবাব ভানুর, হাসির বন্যা বয়ে গেল নিউ থিয়েটার্স স্টুডিয়ো ফ্লোরে
চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-৯: মন্দির হয়ে বৌদ্ধবিহার
প্রসঙ্গত, টুবলুর ‘পঞ্চম’ নামকরণের দুটি গল্প প্রচলিত আছে। শোনা যায়, ছোটবেলায় যখন তিনি কাঁদতেন, সেই শব্দ নাকি স্বরগ্রামের পঞ্চম স্বরের (‘পা’ এর মতো) মতো শোনাতো। সেই থেকে তাঁর নাম হয়ে যায় ‘পঞ্চম’। আরেকটি গল্প অনুসারে, ছোটবেলায় একদিন নাকি টুবলু খেলার ছলে মুখ দিয়ে কেবল “পা পা পা পা পা” শব্দ উচ্চারণ করছিলেন। অশোক কুমার সেই সময়ে শচীনকর্তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। সেই “পা পা পা পা পা” শব্দ কানে পৌঁছতেই অশোক কুমার টুবলুর নাম মজা করে ‘পঞ্চম’ রাখেন।
শচীনকর্তা তখন মধ্য গগনে। একের পর এক সুর রচনা করে মাতিয়ে রেখেছেন বলিউড-সহ গোটা দেশকে। স্ত্রী মীরা দেব বর্মণের কলম থেকে বেরিয়ে এসেছে “বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে”, “শোন গো দখিন হাওয়া”, “বিরহ বড় ভালো লাগে” প্রভৃতি লেখাগুলি। যেগুলি শচীন দেব বর্মণের সুরে মিশে গিয়ে ততদিনে কালজয়ী গান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
শচীনকর্তা তখন মধ্য গগনে। একের পর এক সুর রচনা করে মাতিয়ে রেখেছেন বলিউড-সহ গোটা দেশকে। স্ত্রী মীরা দেব বর্মণের কলম থেকে বেরিয়ে এসেছে “বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে”, “শোন গো দখিন হাওয়া”, “বিরহ বড় ভালো লাগে” প্রভৃতি লেখাগুলি। যেগুলি শচীন দেব বর্মণের সুরে মিশে গিয়ে ততদিনে কালজয়ী গান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আরও পড়ুন:
নাম রেখেছি বনলতা…/১
স্বাদে-আহ্লাদে: ম্যাগি ভালোবাসেন? এই রেসিপি ট্রাই করে দেখেছেন?
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৩: রবীন্দ্রনাথের পোশাকআশাক
অনেকেরই হয়তো জানা নেই, ফুটবলপ্রেমী বাবা শচীনকর্তা টুবলুকে নাকি ফুটবলার হতে অনুপ্রাণিত করতেন। একবার ভেবে দেখুন, টুবলু ফুটবলার হলে আমাদের কর্ণেন্দ্রিয় কতখানি বঞ্চিত হতো! কিন্তু বাবার চোখে কোনও এক সময় ঠিক ধরা পড়েছিল ছেলের অগাধ প্রতিভা এবং এক সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ। তাই হয়তো টুবলুকে খুব কম বয়সেই তিনি বম্বে নিয়ে যান। আরব সাগরের পাড়ে শুরু হয় টুবলুর সেই পথ চলা, যা ছিল তাঁর ‘পঞ্চম’ হয়ে ওঠার পথে প্রথম পদক্ষেপ।
বম্বেতে বাবার উদ্যোগেই আবার শুরু হয় টুবলুর প্রশিক্ষণ পর্ব। সংগীতের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল জন্মগত আর তাই শিখতেনও অসম্ভব মনোযোগ দিয়ে। বাকি সময় কাটতো বাবার সঙ্গে সঙ্গীতের আড্ডায়। যেখানে শচীনকর্তা ছাড়াও উপস্থিত থাকতেন তৎকালীন স্বনামধন্য সঙ্গীতজ্ঞ এবং সুরকার-গীতিকারেরা। সেই আড্ডায় দিকপালদের সৃজনশীল আলোচনা টুবলুকে দিনের পর দিন একটু একটু করে সমৃদ্ধ করেছিল।
বম্বেতে বাবার উদ্যোগেই আবার শুরু হয় টুবলুর প্রশিক্ষণ পর্ব। সংগীতের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল জন্মগত আর তাই শিখতেনও অসম্ভব মনোযোগ দিয়ে। বাকি সময় কাটতো বাবার সঙ্গে সঙ্গীতের আড্ডায়। যেখানে শচীনকর্তা ছাড়াও উপস্থিত থাকতেন তৎকালীন স্বনামধন্য সঙ্গীতজ্ঞ এবং সুরকার-গীতিকারেরা। সেই আড্ডায় দিকপালদের সৃজনশীল আলোচনা টুবলুকে দিনের পর দিন একটু একটু করে সমৃদ্ধ করেছিল।
আরও পড়ুন:
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৪৫: সুন্দরবনের মাছ বৈচিত্র্যের ক্ষতিকারক প্রজাতি হল ক্রোকোডাইল ফিশ
হেলদি ডায়েট: সর্দি-কাশিতে ভুগছেন? জেনে নিন কোন ঘরোয়া টোটকায় মিলবে আরাম
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৯: দাঁতে পোকা! সত্যি, নাকি নিছক ধোঁকা?
মাত্র নয় বছর বয়সে গোপনে সৃষ্টি করা রাহুলের একটি সুর একদিন বাবার কানে আসে। শচীনকর্তা ১৯৫৬ সালে দেবানন্দ অভিনীত ‘ফান্টুশ’ ছবিতে, “ইয়ে মেরি টোপি পালাট কে আ” গানটিতে সেই সুরটি ব্যবহার করেন। এমনকি, ১৯৫৭ সালে ‘প্যায়াসা’ ছবির সেই বিখ্যাত গান “সার যো তেরা চকরায়”-এর সুর রচনাও প্রাথমিক ভাবে পঞ্চমই করেছিলেন। পরে শচীন কর্তা কিছুটা পরিবর্তন করে তা ফাইনাল রেকর্ডিং করেন। সেই শুরু পথ চলা।—চলবে
* পঞ্চমে মেলোডি (R D Burman): সৌম্য ভৌমিক, (Shoummo Bhoumik) সঙ্গীত শিল্পী।