এদের ঠোঁটটি দুই চোখের মাঝখানে থাকে।
আমার সুন্দরবন অ্যাডভেঞ্চার শুরু হল যখন আমার বন্ধু আর বার্ড ফটোগ্রাফার (সৌরভ কুলশ্রেষ্ঠ) বলল, চল সুন্দেরবন যাই। সাত রকম কিংফিশার পাওয়া যেতে পারে। ব্যাস আর কি, বললাম বুক কর। এটা হল ২০১৯ সালের নভেম্বরের এর কথা।
পরিকল্পনা হল যে, ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে ১৭ জানুয়ারি আমরা সুন্দরবনে থাকব। ঠিকানা সুন্দরবন টাইগার ক্যাম্পের ওয়াইল্ডলাইফ রিসর্টে। এটা একটা ওয়াক্সপোল হোটেল চেন। সকাল ৭টায় কলকাতা দেশপ্রিয় পার্কের প্রিয়া সিনেমার পাশ থেকে আমাদের বাসে তুলে নিয়ে গেল ক্যানিং হয়ে গোসাবা ঘাট। সেখানে থেকে যাওয়ার জন্য লঞ্চে উঠলাম। তারপর দু’ঘণ্টা ধরে লঞ্চে করে আমাদের ওই রিসর্টে নিয়ে আসা হল।
রিসোর্টটা বেশ ভালো, খাওয়া দাওয়া অসাধারণ। খাওয়া-দাওয়ার জায়গাটা একটা ছোট হাইডের মতো বানানো হয়েছে। সেখানে পাখিদেরও ফল, ব্রেড ইত্যাদি দেওয়া হয়েছে। লাঞ্চ করতে করতে ফটো তুলছিলাম পাখিদের। সেখানে অরেঞ্জ-হেডেড থ্রাশ বা চেস্টনাট-টেলড স্টার্লিং এবং রেড-হুইসকার্ড বল্বুল-সহ বেশ কিছু পাখি আমরা পেলাম।
পরিকল্পনা হল যে, ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে ১৭ জানুয়ারি আমরা সুন্দরবনে থাকব। ঠিকানা সুন্দরবন টাইগার ক্যাম্পের ওয়াইল্ডলাইফ রিসর্টে। এটা একটা ওয়াক্সপোল হোটেল চেন। সকাল ৭টায় কলকাতা দেশপ্রিয় পার্কের প্রিয়া সিনেমার পাশ থেকে আমাদের বাসে তুলে নিয়ে গেল ক্যানিং হয়ে গোসাবা ঘাট। সেখানে থেকে যাওয়ার জন্য লঞ্চে উঠলাম। তারপর দু’ঘণ্টা ধরে লঞ্চে করে আমাদের ওই রিসর্টে নিয়ে আসা হল।
রিসোর্টটা বেশ ভালো, খাওয়া দাওয়া অসাধারণ। খাওয়া-দাওয়ার জায়গাটা একটা ছোট হাইডের মতো বানানো হয়েছে। সেখানে পাখিদেরও ফল, ব্রেড ইত্যাদি দেওয়া হয়েছে। লাঞ্চ করতে করতে ফটো তুলছিলাম পাখিদের। সেখানে অরেঞ্জ-হেডেড থ্রাশ বা চেস্টনাট-টেলড স্টার্লিং এবং রেড-হুইসকার্ড বল্বুল-সহ বেশ কিছু পাখি আমরা পেলাম।
লঞ্চে করে পৌনে দুটোর সময় আমরা আবার লঞ্চ নিয়ে বেরোলাম। আর যেহেতু এটা উইক ডে ছিল সেই জন্য লঞ্চে খুব কম লোক ছিল। আমি, সৌরভ আর এক নববিবাহিত দম্পতি। সেদিনটা মোটামুটি কাটল। কিছু পাখি পেলাম। আরও কিছু নতুন স্পিসিস পেলাম। শীতকাল ছিল, তাই সূর্য ডুবে যাওয়ার পর দু’ ঘণ্টা পরে আমরা ফিরে আসলাম রিসর্টে।
পরের দিন সকাল সকাল সাড়ে ছয়টায় বেরিয়ে গেলাম আবার লঞ্চে করে। সেই আমরা চারজন। সৌরভ আমি আর সেই নিউলি ম্যারেড কাপল। সেই নিউলি ম্যারেড কাপলের মধ্যে মেয়ে বাঙালি, ছেলেটি ইংরেজ। লন্ডনের। ওরা কলকাতায় একটা বাঙালি বিয়ের অনুষ্ঠানে এসেছিল। মাঝে একটু সময় পেয়ে সুন্দরবন বেড়াতে এসেছে।
এবার যেই লঞ্চ করে আমরা যেখানে যাচ্ছি সেটার কথা বলি। লঞ্চটা বেশ বড়, ডাবল ডেকার, ২৪ থেকে ২৫ জন ধরতে পারে, কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা চারজন রয়েছি। সঙ্গে একজন গাইড, একজন ড্রাইভার আর একজন হেল্পার। বাস মাত্র সাত জন।
পরের দিন সকাল সকাল সাড়ে ছয়টায় বেরিয়ে গেলাম আবার লঞ্চে করে। সেই আমরা চারজন। সৌরভ আমি আর সেই নিউলি ম্যারেড কাপল। সেই নিউলি ম্যারেড কাপলের মধ্যে মেয়ে বাঙালি, ছেলেটি ইংরেজ। লন্ডনের। ওরা কলকাতায় একটা বাঙালি বিয়ের অনুষ্ঠানে এসেছিল। মাঝে একটু সময় পেয়ে সুন্দরবন বেড়াতে এসেছে।
এবার যেই লঞ্চ করে আমরা যেখানে যাচ্ছি সেটার কথা বলি। লঞ্চটা বেশ বড়, ডাবল ডেকার, ২৪ থেকে ২৫ জন ধরতে পারে, কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা চারজন রয়েছি। সঙ্গে একজন গাইড, একজন ড্রাইভার আর একজন হেল্পার। বাস মাত্র সাত জন।
আরও পড়ুন:
পাখি সব করে রব, পর্ব-২: দুর্লভ পরিযায়ী পাখি ল্যাপউইং
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১২: সুন্দরবনের আর এক ব্যাঘ্রদেবতা বড় খাঁ গাজী
এ বার এই ছোটগল্পের মূল চরিত্র হল বলরাম। সে লঞ্চের ড্রাইভার। ছোট্ট একটা কেবিনের মধ্যে বসে। বলরামের চোখ চিল চোখ। ও সব দেখতে পায়, সব শুনতে পায়। কানটাও ভীষণ ভালো।
দু’ ঘণ্টা ধরে দারুণ ফটো তুললাম। বেশ কয়েকটা রেয়ার পাখি পেলাম। কিছু ভালো ভালো মার্শ ওয়াটার ক্রোকোডাইল এর ফটো পেলাম। এই দু’ ঘণ্টা হয়ে যাওয়ার পরে হঠাৎ বলরাম “বাপি, বাপি ওই যে বাপি।” বলে চিঁচিয়ে উঠলো। আমি তো কিছুই বুঝলাম না। ও কেন ওর বাবা কে ডাকছে এখানে? কোথায় তিনি? ওর মুখে একটা অবিশ্বাস্য লুক ছিল! তারপর আমি পাখিটাকে দেখলাম। ওটাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘বাফি ফিশ আউল’ (Buffy fish owl)। বাফি ফিশ আউল ভারতে বিরল প্রজাতি। সেজন্যই বলরাম এত উত্তেজিত। প্যাঁচাটা বিশ্রাম নিচ্ছিল, তবে চোখ খোলা ছিল। একটু দূরে ছিল, তবে আমরা বেশ কয়েকটা পরিষ্কার ছবি নিতে পারলাম।
দু’ ঘণ্টা ধরে দারুণ ফটো তুললাম। বেশ কয়েকটা রেয়ার পাখি পেলাম। কিছু ভালো ভালো মার্শ ওয়াটার ক্রোকোডাইল এর ফটো পেলাম। এই দু’ ঘণ্টা হয়ে যাওয়ার পরে হঠাৎ বলরাম “বাপি, বাপি ওই যে বাপি।” বলে চিঁচিয়ে উঠলো। আমি তো কিছুই বুঝলাম না। ও কেন ওর বাবা কে ডাকছে এখানে? কোথায় তিনি? ওর মুখে একটা অবিশ্বাস্য লুক ছিল! তারপর আমি পাখিটাকে দেখলাম। ওটাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘বাফি ফিশ আউল’ (Buffy fish owl)। বাফি ফিশ আউল ভারতে বিরল প্রজাতি। সেজন্যই বলরাম এত উত্তেজিত। প্যাঁচাটা বিশ্রাম নিচ্ছিল, তবে চোখ খোলা ছিল। একটু দূরে ছিল, তবে আমরা বেশ কয়েকটা পরিষ্কার ছবি নিতে পারলাম।
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৫: টনিক খাওয়া শরীরের পক্ষে ভালো?
কলকাতার পথ-হেঁশেল: অফিসপাড়ার ক্যান্টিন ডেকার্স লেনে কোলাহল
সুন্দরবনের বাফি ফিশ আউলর ছবি বেশিরভাগ ফটোগ্রাফার পায়ে না। একজন মিস্টার নিখিল প্রথমবার ২০১০ সালে পেয়েছিল বা তার কিছু আগে পেয়েছিল। পরে অভিষেক বলে একজন পেয়েছিল। আরও কিছু জন পেয়েছে। তারপর আমরা ২০২০ সালে পেলাম।
এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন জায়গা যেমন গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন এবং জলাভূমিতে সাধারণত বাস করে। এই পাখিকে অনেকটা বিস্তৃত এলাকা জুড়ে দেখা গেলেও সংখ্যায় খুব কম। এটি ২০০৪ সাল থেকে আইইউসিএন ৩.১-এর (IUCN 3.1) লাল তালিকায় এর স্থান হয়েছে। এতটা সংখ্যা কমে যাওয়ার আসল কারণ, এদের বাসযোগ্য এলাকা কমে যাওয়া। (loss of habitat)।
এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন জায়গা যেমন গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন এবং জলাভূমিতে সাধারণত বাস করে। এই পাখিকে অনেকটা বিস্তৃত এলাকা জুড়ে দেখা গেলেও সংখ্যায় খুব কম। এটি ২০০৪ সাল থেকে আইইউসিএন ৩.১-এর (IUCN 3.1) লাল তালিকায় এর স্থান হয়েছে। এতটা সংখ্যা কমে যাওয়ার আসল কারণ, এদের বাসযোগ্য এলাকা কমে যাওয়া। (loss of habitat)।
আরও পড়ুন:
পরিযায়ী মন: বিদেশ ভ্রমণে বিভ্রাট
ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-৮: রাজবাড়িই রাজনগরের নারীর উন্মুক্ত আকাশ
তবে ভারতে শুধু সুন্দরবনে মাঝে মাঝে দেখা দেয়। বাংলাদেশ, মায়ানমার, তাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর থেকে কম্বোডিয়া, লাওস এবং ভিয়েতনাম পাওয়া যায়। এই পেঁচার শরীরের পালক বাফি (হলুদ-বাদামি)। ফ্যাকাশে বাফি রঙের সঙ্গে যথেষ্ট বৈচিত্র আছে। পালকের প্রান্ত ফ্যাকাশে বাদামি। ডানা এবং লেজ বিস্তৃতভাবে ফ্যাকাশে এবং গাঢ় বাদামি। নীচের অংশগুলি হলুদ-বাদামি বা গাঢ় রঙের। কপাল সাদাটে। লম্বা পা অনাবৃত এবং ফ্যাকাশে হলুদ। পিচ্ছিল শিকারকে আঁকড়ে ধরার জন্য তাদের পায়ের আঙ্গুলের নিচের দিকের চামড়া রুক্ষ হয়। অন্যান্য প্যাঁচাদের মতো ফিশ আউলের পালক মসৃণ না হওয়ায় এরা নিঃশব্দে শিকার ধরতে পারে না। ওড়ার সময় এদের ডানায় শব্দ হয়।
এদের ঠোঁটটি দুই চোখের মাঝখানে থাকে, নিচে নয়। সেই জন্য খুব রাগী বা ভয়ঙ্কর দেখতে লাগে। কিন্তু সেই ভয়ঙ্কর রূপের মধ্যে রয়েছে এক সৌন্দর্য। আপনাকে তা খুঁজে পেতে হবে।
আমরা কিন্তু সেবার অনেক ধরনের পাখি দেখতে পেয়েছিলাম। সাত ধরনের কিংফিশার মধ্যে ৬ রকম কিংফিশার পেলাম, কিন্তু বাঘ পেলাম না সে-বার। বাঘ পেলে আর একটা গল্প লিখব, সুন্দেরবন তো আবার যাবই।
লেখকের ইনস্টাগ্রাম লিঙ্ক: https://www.instagram.com/shuva.wildlifephotographer/
এদের ঠোঁটটি দুই চোখের মাঝখানে থাকে, নিচে নয়। সেই জন্য খুব রাগী বা ভয়ঙ্কর দেখতে লাগে। কিন্তু সেই ভয়ঙ্কর রূপের মধ্যে রয়েছে এক সৌন্দর্য। আপনাকে তা খুঁজে পেতে হবে।
আমরা কিন্তু সেবার অনেক ধরনের পাখি দেখতে পেয়েছিলাম। সাত ধরনের কিংফিশার মধ্যে ৬ রকম কিংফিশার পেলাম, কিন্তু বাঘ পেলাম না সে-বার। বাঘ পেলে আর একটা গল্প লিখব, সুন্দেরবন তো আবার যাবই।
লেখকের ইনস্টাগ্রাম লিঙ্ক: https://www.instagram.com/shuva.wildlifephotographer/
* শুভদীপ সোম (Shuvadip Som), আইটি ডিরেক্টর, পুণের একটি বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত। নেশা ফটোগ্রাফি।