বুধবার ৩ জুলাই, ২০২৪


হঠাৎ মামুদ বললেন—''স্যার, শিগগির আসুন। ছবি তুলুন। ওই তো ল্যাপউইং।''

প্রথম লেখা ‘সবুজ সুন্দরীরা’, যেটা আমি মাউন্ট আবু ও গ্রিন মুনিয়া নিয়ে লিখেছিলাম, এই লেখা তার পরের দিনের আমার অভিজ্ঞতা নিয়ে। সে-দিন রাত পৌনে বারোটায় আবু রোড থেকে সূর্য নাগরী এক্সপ্রেস ধরে ভোর ৩.৪৫ নাগাদ আমদাবাদে পৌঁছলাম। সেখানে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল একটা মারুতি ইকো। এ বার আমার গন্তব্য ‘নাল সরোবর’। আমদাবাদ থেকে ‘নাল সরোবর’ দেড় ঘণ্টার পথ। তাই একটু গাড়িতেই ঝিমিয়ে নিলাম।
সকাল ৬.১৫ নাগাদ ‘ওম স্যাংচুয়ারি প্যালেস রিসোর্ট পৌঁছলাম। একটু ফ্রেশ হয়ে সকাল ৭টা নাগাদ বেরিয়ে পড়লাম। ‘নাল সরোবর’ এবং তার আশেপাশে অনেক ধরণের পরিযায়ী পাখি আসে। মূলত শীতকালেই বেশি আসে। এর মধ্যে আমার লক্ষ্য ছিল, সোশালেবল ল্যাপউইং (Sociable Lapwing), নামাকুয়া ডাভ (Namaqua Dove) এবং রেড-ব্রেস্টেড গিজ (Red-breasted Geese)—এই তিনটি পাখি।
আরও পড়ুন:

পাখি সব করে রব, পর্ব-১: সবুজ সুন্দরী মুনিয়া

বর্ণময় ইংল্যান্ড: লন্ডনের অন্যতম আকর্ষণ বাকিংহাম প্রাসাদের রক্ষী বদল অনুষ্ঠান

এই গল্পটা সোশালেবল ল্যাপউইংকে নিয়ে। বাকি দুটো প্রজাতি নিয়ে পরে লিখবো। সোশালেবল ল্যাপউইং ‘সোশালেবল প্লোভার’ (Sociable Plover) এবং ‘ব্ল্যাক-বেলিড ল্যাপউইং’ (Black-bellied Lapwing) নামেও বহুল পরিচিত।

সোশালবলে ল্যাপউইং এখন একটি লুপ্তপ্রায় (Critically Endangered) প্রজাতির পাখি। সে-কারণে আইইউসিএন ৩.১-এর (IUCN 3.1) লাল তালিকায় এর স্থান হয়েছে। গণণা অনুযায়ী, সোশালবলে ল্যাপউইং এখন সারা বিশ্বে প্রায় ৩০ হাজারের মতো আছে। যদিও একশো বছর আগে সংখ্যাটি ছিল প্রায় ৩ লক্ষ। এদের বাস মূলত কাজাকিস্তান অঞ্চলে। তবে শীতকালে কাতার, সৌদি আরবে, ইরান, উত্তর আফ্রিকা এবং ভারতে উড়ে আসে। এরা গ্রাসল্যান্ড বা চাষ জমিতে (cultivated fields) থাকতে পছন্দ করে।
আরও পড়ুন:

কলকাতার পথ-হেঁশেল: যাদবপুর—যদুকুল ও চপস্টিকস

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯: সুন্দরবনের লুপ্ত নদী আদিগঙ্গা

মামুদ আমার নাল সরোবরের গাইড। তিনি জানালেন, ‘‘স্যার, আপনি ৭ কিলোমিটার পথ হাঁটতে পারবেন? তাহলেই সোশালেবল ল্যাপউইং-এর সাইটিং পেয়ে যাবেন নিশ্চিত ভাবে।” সেই ৭ কিলোমিটার চাষ জমি দিয়ে হাঁটতে হবে। আবার ৭ কিলোমিটার ফিরতেও হবে। আমি একজন আইটি প্রফেশনাল। শরীর ঠিকঠাক রাখতে মাঝে মধ্যেই একটু হাঁটাহাঁটি করি। তবে সে আর কত হবে, খুব বেশি হলে ২-৩ কিলোমিটার। তবে সোশালেবল ল্যাপউইং-এর ছবি তোলার জন্য আমি রাজি হলাম, ওই যাওয়া-আসা মিলে ১৪ কিলোমিটার হাঁটতে।
আরও পড়ুন:

অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-৩: অভিনয় নয়, কিশোর মনে-প্রাণে একজন গায়ক হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করতে চেয়েছিলেন

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭১: ইংরেজের চোখে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন ‘দাগী আসামী’

গাড়ি করে কিছুক্ষণ আসার পরে এবড়ো-খেবড়ো চাষ জমি দিয়ে হাঁটা শুরু। সকাল ৭.৩০ থেকে এক ঘণ্টারও একটু বেশি লাগলো। মাঝে সারস ক্রেন (Sarus Crane)-এর ট্রাম্পেটিং (Trumpet) দেখলাম, ছবিও তুললাম।

হঠাৎ মামুদ বললেন—‘‘স্যার, শিগগির আসুন। ছবি তুলুন। ওই তো সোশালেবল ল্যাপউইং।” গায়ের রং-টা একদম জমির সঙ্গে মিশে আছে। শুধু পাখি দুটো সূর্যের আলোতে ঝলমল করছে বলে আমার নজরে পড়ল। ছবি তুলতে তুলতে ভাবছিলাম, এই সুন্দর দুর্লভ পাখি লুপ্তপ্রায় হয়ে যাচ্ছে শুধু আমাদের লোভ আর চাহিদার জন্য।

ফেরার সময় আবার সারস ক্রেনের ‘ফ্লাইং শট’ পেলাম কিছু। ভারতে ৭টি প্রজাতির ল্যাপউইং পাওয়া যায়। সে সব নিয়ে অন্য কখনও লিখবো। তারপর আবার এক ঘণ্টা হাঁটে গাড়িতে ফিরে আবার অন্য পাখি’র খোঁজে চললাম।

লেখকের ইনস্টাগ্রাম লিঙ্ক: https://www.instagram.com/shuva.wildlifephotographer/
* শুভদীপ সোম (Shuvadip Som), আইটি ডিরেক্টর, পুণের একটি বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত। নেশা ফটোগ্রাফি।

আপনার রায়

ইসরোর চন্দ্রযান-৩ কি তৃতীয় বারের এই অভিযানে সাফল্যের স্বাদ পাবে?

Skip to content