
সবুজ মুনিয়াকে ক্যামেরা বন্দি করেছেন লেখক।
হ্যালো, প্রদীপজির সঙ্গে কথা বলছি কি?
হ্যাঁ, বলছি। গ্রিন মুনিয়া চাই?
ঠিক আছে, মাউন্ট আবুতে আসছি।
এ ভাবেই সবুজ মুনিয়া বা সবুজ অ্যাভাডাভাটের খোঁজ শুরু হয়েছিল। সবুজ অ্যাভাডাভাট শব্দটি আহমেদাবাদ শহরের নাম থেকে এসেছে। পূর্বে আহমেদাবাদ এই ‘বন্দি পাখি’র মূল কেন্দ্র ছিল। পাখিগুলো তখন আহমেদাবাদ থেকে ভারতের অন্যান্য শহরে সরবরাহ করা হতো। সেই সময়ে লাল মুনিয়া এবং সবুজ মুনিয়া সবচেয়ে একই ধরনের বন্দি পাখি ছিল, যাদের আহমেদাবাদের বাইরে বিক্রি করা হতো। এ ভাবে পাখিগুলোর নাম বদলে ‘গ্রিন অ্যাভাডাভাট’ এবং ‘রেড অ্যাভাডাভাট’ হয়ে গিয়েছিল। তাই মুনিয়াগুলো, বিশেষত সবুজ মুনিয়া এখন একটি বিরল প্রজাতি হিসাবে আইইউসিএন ৩.১-এর (IUCN 3.1) লাল তালিকায় রয়েছে।
আমি ২০২৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধের আজমের এক্সপ্রেসে চড়ে মাউন্ট আবু স্টেশনে যাচ্ছিলাম। যতক্ষণে ট্রেনটি মাউন্ট আবু পৌঁছয়, আমি বরং আমার পরিচয়টা সেরে নিই। আমি একজন আইটি পেশাদার। পুণেতে একটি বহুজাতিক সংস্থায় আইটি ডিরেক্টর পদে কর্মরত। স্ত্রী এবং দুই ছেলে নিয়ে আমি পুণেতে থাকি।
হ্যাঁ, বলছি। গ্রিন মুনিয়া চাই?
ঠিক আছে, মাউন্ট আবুতে আসছি।
এ ভাবেই সবুজ মুনিয়া বা সবুজ অ্যাভাডাভাটের খোঁজ শুরু হয়েছিল। সবুজ অ্যাভাডাভাট শব্দটি আহমেদাবাদ শহরের নাম থেকে এসেছে। পূর্বে আহমেদাবাদ এই ‘বন্দি পাখি’র মূল কেন্দ্র ছিল। পাখিগুলো তখন আহমেদাবাদ থেকে ভারতের অন্যান্য শহরে সরবরাহ করা হতো। সেই সময়ে লাল মুনিয়া এবং সবুজ মুনিয়া সবচেয়ে একই ধরনের বন্দি পাখি ছিল, যাদের আহমেদাবাদের বাইরে বিক্রি করা হতো। এ ভাবে পাখিগুলোর নাম বদলে ‘গ্রিন অ্যাভাডাভাট’ এবং ‘রেড অ্যাভাডাভাট’ হয়ে গিয়েছিল। তাই মুনিয়াগুলো, বিশেষত সবুজ মুনিয়া এখন একটি বিরল প্রজাতি হিসাবে আইইউসিএন ৩.১-এর (IUCN 3.1) লাল তালিকায় রয়েছে।
আমি ২০২৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধের আজমের এক্সপ্রেসে চড়ে মাউন্ট আবু স্টেশনে যাচ্ছিলাম। যতক্ষণে ট্রেনটি মাউন্ট আবু পৌঁছয়, আমি বরং আমার পরিচয়টা সেরে নিই। আমি একজন আইটি পেশাদার। পুণেতে একটি বহুজাতিক সংস্থায় আইটি ডিরেক্টর পদে কর্মরত। স্ত্রী এবং দুই ছেলে নিয়ে আমি পুণেতে থাকি।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি সকালে প্রায় ৯টায় আবু রোডে পৌঁছলাম। আশিস আমাকে মাউন্ট আবুতে নিয়ে যেতে এসেছিলেন। আবু রোড আর মাউন্ট আবুর মধ্যে দূরত্ব প্রায় ২৮ কিলোমিটার। প্রদীপজি আগে থেকেই একটি হোটেলে আমার জন্য রুম বুক করে রেখেছিলেন। ইনি এখানকার সবচেয়ে পুরোনো গাইড। প্রদীপজি আমার জন্য ক্যাব ড্রাইভার হিসেবে আশিসবাবুকে ঠিক করে দিয়েছিলেন। ইনি আমার দেখা সেরা গাইডদের মধ্যে একজন। বয়স ৬৮ হলেও খুবই কর্মঠ আর প্রাণোচ্ছল।
এখানে বলে রাখি, পাখির ছবি তোলা হয় সাধারণত সকাল বা বিকেল বেলার দিকে। সকালের দিকে ৬টা থেকে ৯টা, আবার বিকেল সাড়ে ৩টে থেকে সন্ধে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সময়ই হল ছবি তোলার জন্য আদর্শ। সকালে এই সময়টাতে ওরা পোকামাকড় আর শস্যদানা খুঁজতে বেরোয়। বিকেলেও তাই, খাবার জোগাড় করে, স্নান করে আর সন্ধে হওয়ার আগে বাসায় ফিরে যায়। তাছাড়া, ওই সময় সূর্যের আলো নরম থাকে, যা কিনা ফটোগ্রাফির জন্য আদর্শ।
যেহেতু সেদিন প্রায় ১১টা বেজে গিয়েছিল, তাই সকালে ছবি তোলার জন্য অনেক বেলা হয়ে যায়। তাই আমরা ঠিক করলাম দিলওয়াড়া টেম্পল দেখতে যাবো। অবিশ্বাস্য, খুবই সুন্দর এই মন্দির। পরে অন্য কোনও লেখায় এই মন্দির সম্বন্ধে বলবো। তবে মাউন্ট আবু গেলে অবশ্যই দিলওয়াড়া টেম্পল যাবেন।
এখানে বলে রাখি, পাখির ছবি তোলা হয় সাধারণত সকাল বা বিকেল বেলার দিকে। সকালের দিকে ৬টা থেকে ৯টা, আবার বিকেল সাড়ে ৩টে থেকে সন্ধে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সময়ই হল ছবি তোলার জন্য আদর্শ। সকালে এই সময়টাতে ওরা পোকামাকড় আর শস্যদানা খুঁজতে বেরোয়। বিকেলেও তাই, খাবার জোগাড় করে, স্নান করে আর সন্ধে হওয়ার আগে বাসায় ফিরে যায়। তাছাড়া, ওই সময় সূর্যের আলো নরম থাকে, যা কিনা ফটোগ্রাফির জন্য আদর্শ।
যেহেতু সেদিন প্রায় ১১টা বেজে গিয়েছিল, তাই সকালে ছবি তোলার জন্য অনেক বেলা হয়ে যায়। তাই আমরা ঠিক করলাম দিলওয়াড়া টেম্পল দেখতে যাবো। অবিশ্বাস্য, খুবই সুন্দর এই মন্দির। পরে অন্য কোনও লেখায় এই মন্দির সম্বন্ধে বলবো। তবে মাউন্ট আবু গেলে অবশ্যই দিলওয়াড়া টেম্পল যাবেন।
আরও পড়ুন:

প্রিয় পোষ্য: বিড়াল ঘাঁটলেই কি ডিপথেরিয়া হতে পারে?

অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-১: একটু শুরুর কথা হলে ক্ষতি কী…
প্রদীপজির সঙ্গে হোটেলে দেখা হল। আমি ওঁর থেকে জানতে পারলাম মাউন্ট আবুর পৌরাণিক নাম ‘মাউন্ট আর্বুদ’। লাঞ্চ করার পর আমরা গেলাম টাইগার পার্ক। না, না—কোনও বাঘের দেখা পাইনি। তবে এখানে আছে ‘রিচ’ বা শ্লথ বেয়ার। সুতরাং, আমাদের খুব সাবধান থাকতে হচ্ছিল। কারণ আমরা পায়ে হেঁটে পার্কের মধ্যে ঘুরছিলাম। ওখানে গাড়ি নিয়ে ঢোকা বারণ। প্রদীপজি ভেবেছিলেন এখানেই আমরা গ্রিন মুনিয়ার দেখা পাবো। একটু পরেই আমরা হিমালয়ান ব্ল্যাক লোর্ড টিট, ক্রেস্টেড বান্টিং বা কিছু সানবার্ডের দেখা পেলেও গ্রিন মুনিয়ার কিন্তু দেখা পেলাম না।
পার্কের মধ্যে আমরা ঘুরতে থাকলাম। প্রায় পাঁচটার সময় যখন সূর্যাস্ত হয় হয়, আলো বেশ কমে এসেছে, তখন একঝাঁক গ্রিন মুনিয়া দেখলাম। পুরুষ আর মাদা মিলিয়ে প্রায় ১০টি পাখি ছিল। একটি গাছের নিচে বসে আছে। ওই গাছ থেকেই ঝরে পড়া শস্যদানা খাচ্ছিল ওরা।
আমি এদের বেশ কিছু ছবি তুললাম। কিন্তু ছবি তোলার সময় ওরা হয় মাটিতে ছিল অথবা একটা কালভার্টের ওপর বসে ছিল। আলোও অনেক কমে এসেছিল। সুতরাং, খুব ভালো ছবি উঠলো না। একজন ফটোগ্রাফার হিসেবে আমি খুশি হলাম না। যদিও একজন পাখি বিশারদ হিসেবে আমি অবশ্যই খুশি হয়েছিলাম। কারণ, সে-দিন আমি আমার ৩৮৩তম পাখির দর্শন পেয়েছিলাম।
পার্কের মধ্যে আমরা ঘুরতে থাকলাম। প্রায় পাঁচটার সময় যখন সূর্যাস্ত হয় হয়, আলো বেশ কমে এসেছে, তখন একঝাঁক গ্রিন মুনিয়া দেখলাম। পুরুষ আর মাদা মিলিয়ে প্রায় ১০টি পাখি ছিল। একটি গাছের নিচে বসে আছে। ওই গাছ থেকেই ঝরে পড়া শস্যদানা খাচ্ছিল ওরা।
আমি এদের বেশ কিছু ছবি তুললাম। কিন্তু ছবি তোলার সময় ওরা হয় মাটিতে ছিল অথবা একটা কালভার্টের ওপর বসে ছিল। আলোও অনেক কমে এসেছিল। সুতরাং, খুব ভালো ছবি উঠলো না। একজন ফটোগ্রাফার হিসেবে আমি খুশি হলাম না। যদিও একজন পাখি বিশারদ হিসেবে আমি অবশ্যই খুশি হয়েছিলাম। কারণ, সে-দিন আমি আমার ৩৮৩তম পাখির দর্শন পেয়েছিলাম।
আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৮: হৃদয়ে আমার দিয়েছে ঢেউ, ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬৯: গাধা পিটিয়ে ঘোড়া
এরপর আমরা হোটেলে ফিরে এলাম। কারণ রাত হয়ে আসছিল। হালকা হালকা ঠান্ডা হাওয়া বইছিল। জ্যাকেট গায়ে চড়িয়ে নিয়ে হেঁটে হেঁটে নাক্কি লেক ধরে গেলাম। তবে সন্ধে হয়ে যাওয়ায় সরাসরি হোটেলেই ফিরে এলাম। রাতে চিকেন কাবাব আর রুটি খেয়ে ডিনার সারলাম। এ ভাবেই প্রথম দিনটি কাটল।
পরের দিন সকাল ৭টায় তৈরি হয়ে আমরা ওড়িয়াগাঁও নাম একটি জায়গায় গেলাম। সেখানে পৌঁছনোর ১০ মিনিটের মধ্যে ঝাঁকে ঝাঁকে গ্রিন মুনিয়াদের দেখা পাওয়া গেল। ওরা এমনভাবে শস্যদানা খাচ্ছিল যে, দেখে মনে হচ্ছিল আজই সব খেয়ে শেষ করতে হবে। আমি ক্রমাগত ওদের ছবি তুলতে লাগলাম। প্রায় ৭০০টি ছবি তুলেছি। বেশিরভাগই মাটির ওপর ছিল। বেশ কিছু ভালো ছবিও পেয়েছিলাম। সেগুলোরই মধ্যে থেকে একটি ছবি এই প্রতিবেদনের সঙ্গে দিয়েছি। এছাড়াও সানবার্ড, ক্রেস্টেড বান্টিং-সহ আরও অনেক পাখির ছবিও পেয়েছিলাম। মাউন্ট আবুতে আসার উদ্দেশ্য আমার পূরণ হয়ে গিয়েছিল। যদিও আমি ভাবেছিলাম আরও বেশ কিছু পাখির ছবি তুলব।
পরের দিন সকাল ৭টায় তৈরি হয়ে আমরা ওড়িয়াগাঁও নাম একটি জায়গায় গেলাম। সেখানে পৌঁছনোর ১০ মিনিটের মধ্যে ঝাঁকে ঝাঁকে গ্রিন মুনিয়াদের দেখা পাওয়া গেল। ওরা এমনভাবে শস্যদানা খাচ্ছিল যে, দেখে মনে হচ্ছিল আজই সব খেয়ে শেষ করতে হবে। আমি ক্রমাগত ওদের ছবি তুলতে লাগলাম। প্রায় ৭০০টি ছবি তুলেছি। বেশিরভাগই মাটির ওপর ছিল। বেশ কিছু ভালো ছবিও পেয়েছিলাম। সেগুলোরই মধ্যে থেকে একটি ছবি এই প্রতিবেদনের সঙ্গে দিয়েছি। এছাড়াও সানবার্ড, ক্রেস্টেড বান্টিং-সহ আরও অনেক পাখির ছবিও পেয়েছিলাম। মাউন্ট আবুতে আসার উদ্দেশ্য আমার পূরণ হয়ে গিয়েছিল। যদিও আমি ভাবেছিলাম আরও বেশ কিছু পাখির ছবি তুলব।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫: চন্দ্রমণির বধূবরণ

চলো যাই ঘুরে আসি, দেখব এবার জগৎটাকে, পর্ব-১০: জলপথে আমাজন অরণ্যের গহনে
এখানে গ্রিন মুনিয়া, গ্রিন অ্যাভাডাভাট বা গ্রিন ফিঞ্চ সন্বন্ধে আরও কিছু তথ্য আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছি। সবুজ অ্যাভাডাভাট, যা সবুজ মুনিয়া বা সবুজ ফিঞ্চ নামেও পরিচিত। আকারে ছোট, উজ্জ্বল, রঙিন পাখি। ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়া-সহ বিভিন্ন অংশে পাওয়া যায়। নাম থেকেই বোঝা যায়, পাখিটি সবুজ রঙের। শরীরের দু’ পাশে ডানা আর বুকের মাঝে কালো দাগ আছে। ঠোঁটটি টুকটুকে লাল। পুরুষ আর মাদা প্রায় একই রকম দেখতে। কিন্তু পুরুষদের সবুজ রং অনেক বেশি গাঢ়, আর কালো দাগগুলিও অনেক স্পষ্ট।
সবুজ অ্যাভাডাভাটকে সাধারণত ঘাসভূমি, নদীর ধার এবং কৃষিজমি এলাকায় বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এই সব জায়গায় তারা বীজ, ঘাস এবং পোকামাকড় খেতে আসে। এদের আকর্ষণীয় রূপ এবং কণ্ঠের জন্যই ‘বন্দি পাখি’ হিসেবে পরিচিত।
তবে প্রাকৃতিক আবাস কমে যাওয়া এবং পাখি ব্যবসার জন্য বহু মানুষ এদের ব্যাপক ভাবে ধরছেন। ফলে ক্রমাগত এদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এই কারণে এরা এখন লুপ্তপ্রায় প্রজাতি (vulnerable to extinction) হতে চলেছে। যদিও, এখন এদের প্রাকৃতিক আবাস সংরক্ষণ এবং অবৈধ ভাবে ধরার বিরুদ্ধে জোরদার প্রচেষ্টা চলছে।—চলবে।
লেখকের ইনস্টাগ্রাম লিঙ্ক: https://www.instagram.com/shuva.wildlifephotographer/
সবুজ অ্যাভাডাভাটকে সাধারণত ঘাসভূমি, নদীর ধার এবং কৃষিজমি এলাকায় বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এই সব জায়গায় তারা বীজ, ঘাস এবং পোকামাকড় খেতে আসে। এদের আকর্ষণীয় রূপ এবং কণ্ঠের জন্যই ‘বন্দি পাখি’ হিসেবে পরিচিত।
তবে প্রাকৃতিক আবাস কমে যাওয়া এবং পাখি ব্যবসার জন্য বহু মানুষ এদের ব্যাপক ভাবে ধরছেন। ফলে ক্রমাগত এদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এই কারণে এরা এখন লুপ্তপ্রায় প্রজাতি (vulnerable to extinction) হতে চলেছে। যদিও, এখন এদের প্রাকৃতিক আবাস সংরক্ষণ এবং অবৈধ ভাবে ধরার বিরুদ্ধে জোরদার প্রচেষ্টা চলছে।—চলবে।
লেখকের ইনস্টাগ্রাম লিঙ্ক: https://www.instagram.com/shuva.wildlifephotographer/
* শুভদীপ সোম (Shuvadip Som), আইটি ডিরেক্টর, পুণের একটি বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত। নেশা ফটোগ্রাফি।