![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/02/Panchatantra_EP37.jpg)
ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
মিত্রভেদ
সাপ বিষ উদ্গার করে। কিন্তু সাপের বিষের মজাটা হল যার উপর সে বিষ-প্রয়োগ করে মৃত্যু শুধু তারই হয়। কিন্তু দুষ্ট ব্যক্তি বিষ প্রয়োগ করেন একজনের কানে কিন্তু পতন ঘটান অন্যজনের—এইটুকুই শুধু ব্যতিক্রম একজন সাপ আর একজন দুষ্টলোকের বিষপ্রয়োগের ক্ষেত্রে।
সঞ্জীবক গভীরভাবে চিন্তা করে অত্যন্ত বিষণ্ণ হয়ে গেল। চতুর দমনককে সে জিজ্ঞাসা করল, ওহে মিত্র! আপনার কি মনে হয়; এই পরিস্থিতিতে আমার ঠিক কী করা উচিত? তুমি আমার মিত্র! সেই জন্যই তোমার কাছে এই প্রশ্ন রাখলাম।
দমনক বললে, আমার তো মনে হয় এই পরিস্থিতিতে এই জায়গা ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাওয়াটাই হয়তো তোমার উচিত হবে। শাস্ত্রে বলে, কুপথগামী উদ্ধত স্বভাবের লোক, যিনি কোনটা কর্তব্য আর কোনটা নয় তার মধ্যে তফাৎ টুকুও করেন না। তিনি গুরুজন হলেও তাকে পরিত্যাগ করাটাই উচিত। কারণ, এইরকম মানুষের সঙ্গে সহাবস্থানটা খুব একটা সুবিধাজনক হয় না। যার উপর এনারা ক্রুদ্ধ হন তাদের অনায়াসে তারা বিপদের মুখে ফেলে দেয়। তাই দুষ্টস্বামীর সেবা করাটা কখনই উচিত হবে না তোমার।
সঞ্জীবক বলল, স্বামী পিঙ্গলক এখন আমার উপর ক্রুদ্ধ। তাই কোথাও পালিয়ে গিয়েও আমার এখন আর রক্ষা নেই। আসলে বলবান তথা বুদ্ধিমানের প্রতি যদি কোন অপরাধ হয়ে যায় তাহলে তার থেকে দূরে সরে গিয়েও আশ্বস্ত হওয়ার উপায় নেই। কারণ, বুদ্ধিমানের হাত খুব লম্বা হয়। এইরকম লোকেরা নিজের থেকে বহুদূরে থাকা শত্রুকেও হত্যা করতে সমর্থ হয়।
শাস্ত্রকারেরা বলেছেন সম্মুখযুদ্ধে আঘাতপ্রাপ্ত বীরপুরুষের মাথা থেকে যে রক্ত প্রবাহিত হয়ে তার মুখে প্রবেশ করে, সে রক্তপান করাটা সোমযাগে বিধিপূর্বক সোমরস পান করার মতোই পুণ্যজনক। শুধু কি এইটুকুই? শাস্ত্রকারেরা আরও বলেছেন, নিয়ম মেনে যাগযজ্ঞ, দান-ধ্যান, বিদ্বান্ ব্রাহ্মণদের পূজা, সর্বদক্ষিণ প্রভৃতি প্রভূত ব্যয়সাধ্য যজ্ঞ, আশ্রমে নিবাস বা হোম কিংবা চান্দ্রায়ণাদি ব্রত পালন করেও সেই ফল পাওয়া যায় না, যেটা সম্মুখ সমরে নিহত একজন বীরপুরুষ তৎক্ষণাৎ লাভ করেন— “তত্ফলমাহবে বিনিহতৈঃ সম্প্রাপ্যতে তৎক্ষণাৎ”।
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/02/Panchatantra-EP-36.jpg)
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৩৬: শুদ্ধ স্বভাবের রাজাও পরিত্যাজ্য যদি তাঁর পার্শ্বচরেরা শকুনের মতো কুটিল হন
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/02/Sundarban-1.jpg)
এই দেশ এই মাটি, পর্ব-৩৫: সুন্দরবনের নদীবাঁধের অতীত
বলবদ্ভিশ্চ কর্তব্যা শরচ্চন্দ্রপ্রকাশতা॥ (মিত্রভেদ, ৩৩৬)
অর্থাৎ শত্রু যদি নিজের থেকে বলবান হয় তবে তার উচিত নিজেকে শত্রুর থেকে লুকিয়ে ফেলা। বলবান শত্রুর সঙ্গে বিবাদ করার চেয়ে দুর্বলের তার সঙ্গে সন্ধি করে নেওয়াটাই শ্রেয়। অন্যদিকে বলবানের কর্তব্য হল শরত্কালীন চন্দ্রমার মতো দুর্বলের কাছে নিজের পৌরুষকে প্রতিষ্ঠা করা। সোজা কথায় রাজনীতিতে অন্যের কাছে নিজের ক্ষমতা দেখানোটার প্রয়োজন আছে, তাহলে অনেক ক্ষুদ্র শত্রুর অকারণ ঝামেলা এড়িয়ে চলা যায়। আসলে যুদ্ধ করার থেকে যুদ্ধকে এড়িয়ে যাওয়াটাও রণনীতিরই একটা অঙ্গ।
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/10/dental-2.jpg)
দাঁত তোলার পর আবার দাঁত সেট করছেন? সমস্যা ডেকে আনছেন না তো?
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/01/Leela-Majumdar-2024.jpg)
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১০: লীলা মজুমদার— নতুন রূপকথার হলদে পাখি
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/01/Cartoon-EP-27.jpg)
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২৮: কে আবার বাজায় বাঁশি
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/02/Sarada-Devi.jpg)
আলোকের ঝর্ণাধারায়, আলোকের ঝর্ণাধারায়
স পরাভবমাপ্নোতি সমুদ্রটিট্টিভাদ্ যথা॥ (ঐ, ৩৩৭)
সঞ্জীবক বললে, ব্যাপারটা ঠিক কী রকম?
দমনক তখন বলতে শুরু করল—
১২: সমুদ্র আর টিট্টিভের কাহিনি
সমুদ্রতীরে এক টিট্টিভ দম্পতি বাস করতো। যথা সময়ে ঋতুকাল উপস্থিত হলে টিট্টিভীটি গর্ভধারণ করলো। ক্রমশ যখন তার প্রবসের সময় কাছে এল তখন তার স্বামী টিট্টিভকে বলল, “ভোঃ কান্ত, মম প্রসবসমযো বর্ততে। তদ্বিচিন্ত্যতাং কিমপি নিরুপদ্রবংস্থানম্” —হে প্রিয়! আমার প্রসব সময় আসন্ন। তাই একটি নির্জন আর নিরুপদ্রব স্থান খোঁজ করতে অনুরোধ করি, যেখানে আমি নিশ্চিন্তে ডিমগুলি পেড়ে তাতে তাপ দিতে পারবো। টিট্টিভটি বলল, হে কল্যাণী! এই সমুদ্রতটটি তো খুবই সুন্দর, রমণীয় এবং নির্জন, এখানেই তুমি অণ্ড প্রসব করো।
টিট্টিভীটি বললে, কিন্তু পূর্ণিমার দিনে এখানে তো সমুদ্রের ঢেউ এসে যায় যে ঢেউয়ের ধাক্কায় মৃত হাতিদেরও সে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তাই আমার মনে হয় এই স্থানটা ডিম পাড়ার জন্য নিরাপদ নয়; দূরে কোনও নির্জনস্থান অনুসন্ধান করা দরকার।
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/02/Samay-Updates_Mahakavya_EP-49.jpg)
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৪৯: মহাকাব্যের রাক্ষস ও মানুষের কাহিনিতে আধুনিক জীবনচিত্রের প্রতিফলন রয়েছে কি?
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/02/Rabindranath-Tagore-1.jpg)
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭৯: কবির ভালোবাসার পশুপাখি
তেন চেত্পুত্রিণী মাত্রা তদ্বন্ধ্যা কেন কথ্যতে?॥ (ঐ, ৩৪২)
অর্থাৎ যে ব্যক্তি পরাজয়ের ভয়ে নিজের স্থান ছেড়ে দেয়, সেইরকম ব্যক্তির জন্মদাত্রী মাতাকে বন্ধ্যা বলবো না তো আর কাকে বলবো?
একটা সামান্য টিট্টিভ-পাখীর ছোট মুখে এইরকম বড় বড় কথা শুনে সমুদ্রের ভারী রাগ হল। একটা পোকা-মাকড়ের মতন তুচ্ছ পাখির এত অভিমান? লোকে আসলে ঠিকই বলে, পাছে আকাশ টিট্টিভ-পাখির উপরে না পড়ে যায় তাই সে পা উপরে করে তাকে ঠেকাবার চেষ্টা করে; এর থেকে এইটাই প্রমাণ হয় যে এই সংসারে লোকে মূর্খ হোক বা পণ্ডিত—সকলেই নিজ নিজ কল্পনা অনুসারেই গর্ব করতে ওস্তাদ। তাই একটু মজা করেই না হয় এর ক্ষমতাটা দেখা যাক। আমি বরং এর ডিমগুলোকে