ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
মিত্রভেদ
কুরুবীর গঙ্গাপুত্র ভীষ্মের মতো পুণ্যশ্লোক মানুষকেও চোরের অপবাদ সহ্য করতে হয়েছিল, কারণ তিনি দুর্যোধনের মতো অসৎ মানুষের সঙ্গ নিয়েছিলেন। এই কারণেই সজ্জন লোকের উচিত নীচ লোকেদের সংসর্গ এড়িয়ে চলা। চতুর দমনক এই পরিস্থিতিতে নতুন একটি গল্পের ভূমিকা করে বললেন—
মত্কুণস্য চ দোষেণ হতা মন্দবিসর্পিণী॥ (মিত্রভেদ, ২৭৫)
অর্থাৎ, অচেনা-অজানা ব্যক্তিকে নিজের কাছে আশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। কারণ ঠিক এই কারণেই এক মত্কুণ অর্থাৎ একটি ছারপোকাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য মন্দবিসর্পিণী নামক জোঁককে মরতে হয়েছিল। সিংহ পিঙ্গলক বেশ আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “কথমেতৎ”—ব্যাপারটা ঠিক কি রকম?
দমনক তখন সে কাহিনি বলতে শুরু করলো—
০৯: জোঁক-মন্দবিসর্পিনী এবং এক ছারপোকা গল্প
কোনও এক নাম না জানা দেশের নাম না জানা রাজার এক অতি মনোরম বিছানা ছিল। রাজন্তঃপুরের কঞ্চুকীরা অতি যত্নে সে বিছানায় উজ্জ্বল সাদা চাদর পেতে রাজার জন্য প্রতিদিনের শয্যা রচনা করতেন আর প্রতিদিনের নিত্য সভাকার্য সেরে মহারাজ সেই বিছানায় রাত্রে আসতেন বিশ্রাম নিতে। সেই বিছানাটিতেই দুটো চাদরের ফাঁকে কোনও এক জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে মন্দবিসর্পিণী নামক একটি সাদা জোঁক বাস করতো। রাজার বিছানার সাদা কাপড়ের মধ্যে সে মিশে থাকতো, তাকে কেউ আলাদা করে লক্ষ্য করতো না। প্রতিদিন রাত্রে রাজা সেখানে শুতে এলে সেই মন্দবিসর্পিণী সকলের অজান্তে মন ভরে রাজা-রক্তের স্বাদ নিয়ে সুখেই দিন যাপন করতো। এরপর একদিন কোথা থেকে এদিক-সেদিক ঘুরতে ঘুরতে অগ্নিমুখ নামের এক ছারপোকা সেখানে এসে উপস্থিত হল সেখানে। তাকে দেখে বিষণ্ণ মনে সেই মন্দবিসর্পিণী জোঁকটি বললে, ওহে অগ্নিমুখ! তুমি ভায়া কোথা থেকে এই অনুচিত স্থানে এসে উপস্থিত হলে। রাজার এই পরিচ্ছন্ন বিছানা তোমার উপযুক্ত স্থান নয়—তোমার স্থান অপরিচ্ছন্ন শয্যায়। তাই সাদা চাদরের মধ্যে পাছে তোমাকে কেউ দেখে ফেলে তার আগেই তুমি অন্য কোথাও পালাও।
সেই ছারপোকা কি আর এতো সহজে মানবার পাত্র? তার উপর সে আবার অগ্নিমুখ,বাক্যবাণ প্রয়োগেও সে কম পারদর্শী নয়। সে বললে, “ভগবতি গৃহাগতস্যাসাধোরপি নেতদ্ যুজ্যতে বক্তুম্” —হে মন্দবিসর্পিণি! গৃহে কোনও অসাধু ব্যক্তি এসে উপস্থিত হলেও তাকে কিন্তু এমন কথা বলাটা মোটেও সঙ্গত নয়। পণ্ডিতদের নীতি শ্লোক স্মরণ করুন, গৃহে যদি কোন দুর্জন অতিথিও এসে উপস্থিত হন তাহলেও সজ্জন লোকের উচিত তাকে মধুর বাক্যে সম্মাননা জানানো; তাঁকে আহ্বান করে বলা উচিত, আসুন আসুন! বিশ্রাম করুন! এই আসনে উপবেশন করুন। এতোদিন পরে আজ আমাকে মনে পড়লো? খবরাখবর কী? খুব দুর্বল লাগছে আপনাকে। শরীর-টরির সব ঠিক-ঠাক তো? এতদিন পরে আপনাকে দেখে খুব ভালো লাগছে। এইরকম অনেক সুমধুর কথাবার্তায় দুর্জন অতিথিকেও তুষ্ট করবার কথা ধর্মশাস্ত্রকারেরা বলেছেন। তাঁদের মতে এইটাই গৃহস্থ ধর্ম। তাই হে মন্দবিসর্পিণি! এইভাবে আমাকে এখান থেকে চলে যেতে বলাটা তোমার হয়তো উচিত হচ্ছে না।
সেই ছারপোকা কি আর এতো সহজে মানবার পাত্র? তার উপর সে আবার অগ্নিমুখ,বাক্যবাণ প্রয়োগেও সে কম পারদর্শী নয়। সে বললে, “ভগবতি গৃহাগতস্যাসাধোরপি নেতদ্ যুজ্যতে বক্তুম্” —হে মন্দবিসর্পিণি! গৃহে কোনও অসাধু ব্যক্তি এসে উপস্থিত হলেও তাকে কিন্তু এমন কথা বলাটা মোটেও সঙ্গত নয়। পণ্ডিতদের নীতি শ্লোক স্মরণ করুন, গৃহে যদি কোন দুর্জন অতিথিও এসে উপস্থিত হন তাহলেও সজ্জন লোকের উচিত তাকে মধুর বাক্যে সম্মাননা জানানো; তাঁকে আহ্বান করে বলা উচিত, আসুন আসুন! বিশ্রাম করুন! এই আসনে উপবেশন করুন। এতোদিন পরে আজ আমাকে মনে পড়লো? খবরাখবর কী? খুব দুর্বল লাগছে আপনাকে। শরীর-টরির সব ঠিক-ঠাক তো? এতদিন পরে আপনাকে দেখে খুব ভালো লাগছে। এইরকম অনেক সুমধুর কথাবার্তায় দুর্জন অতিথিকেও তুষ্ট করবার কথা ধর্মশাস্ত্রকারেরা বলেছেন। তাঁদের মতে এইটাই গৃহস্থ ধর্ম। তাই হে মন্দবিসর্পিণি! এইভাবে আমাকে এখান থেকে চলে যেতে বলাটা তোমার হয়তো উচিত হচ্ছে না।
আরও পড়ুন:
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৩০: পছন্দের মানুষের মধ্যে অনেক দোষ থাকলেও, তার খারাপটা কখনোই চোখে পড়ে না
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৫: সুর হারানো হারানো সুর
রক্তমুখ আরও বলতে লাগলো, এছাড়াও এই ক্ষুদ্র জীবনে কম মানুষের রক্ত তো খাইনি; তাদের খাওয়া-দাওয়ার দোষের জন্য কারও রক্ত কড়া (কটু), কারও আবার তেঁতো (তিক্ত), কারও কারও কষা (কষায়), আবার কারও টক (অম্ল)। কিন্তু মধুর-মিষ্টি রক্তের আস্বাদন করবার সুযোগ হয়নি আজ পর্যন্ত। তাই হে মন্দবিসর্পিণি! আপনি যদি আমার প্রতি একটু কৃপা প্রদান করেন তাহলে এই রাজরক্ত এইজন্মে একটু পান করবার সুযোগ পাই। আমার বিশ্বাস এই রাজরক্ত খুবই সুমিষ্ট হবে। নানারকমের শাক-সব্জী আর তার সঙ্গে বিভিন্ন প্রকারের চোষ্য আর লেহ্য খাদ্যের সমাহারে অন্নগ্রহণ করায় রাজরক্ত সুমিষ্টই হয়। আপনি কৃপা করলে সেই সুমিষ্ট রাজরক্ত আস্বাদন করে স্বাদেন্দ্রিয়ের সেবা করতে পারি। জানেন তো—
রঙ্কস্য নৃপতের্বাপি জিহ্বাসৌখ্যং সমং স্মৃতম্।
তন্মাত্রং চ স্মৃতং সারং যদর্থং যততে জনঃ॥ (ঐ, ২৭৭)
অর্থাৎ গরিব বলুন বা রাজা দু’জনেরই জিহ্বাসুখ কিন্তু সমান। ভালো খাবার দুজনের মুখেই কিন্তু সমান সুস্বাদু লাগে। এই সংসারে সকল মানুষ সেই সুখ পাওয়ার জন্যই চেষ্টা করে, এইটাই সংসারের প্রকৃত তত্ত্ব। সত্যিই যদি এই জগৎ সংসারে জিহ্বার তৃপ্তির জন্য কাজ করবার আবশ্যকতা না হতো তাহলে এই সংসারে কেউ কারও অধীন হতেন না। মানুষ যে মিথ্যার আশ্রয় নেয় বা অযোগ্য লোকের সেবা করে কিংবা ঘর ছেড়ে ভিন দেশে গিয়ে বাস করে—এ সবই নিজের পেট ভরবার জন্যই।
সে অগ্নিমুখ এরপর রীতিমতো আকুতি করে মন্দবিসর্পিণীকে বলে, ক্ষুধায় পীড়িত হয়েই আমি আপনার কাছে এসেছি; আপনার কাছেই তাই ভোজনের প্রত্যাশা করি আমি, “তন্ন তয্বৈকাকিন্যাস্য ভূপতেঃ রক্তপানং কর্তুং যুজ্যতে”—আপনি একলাই এই রাজার সুমিষ্ট রক্তপান করবেন, এইটা ঠিক নয়।
সব শুনে মন্দবিসর্পিণীর দয়া হল। সে বলল, ওহে মত্কুণ! রাজা যখন ঘুমিয়ে পড়েন তখনই আমি তাঁর রক্তের আস্বাদ নিই; তাঁকে কোনও রকম পীড়া দিই না আমি। যদি সত্যিই আমার সঙ্গে তোমার রাজরক্ত পানের আগ্রহ থাকে তাহলে প্রতীক্ষা করতে হবে। রাজা নিদ্রিত হলে আমার রক্তপান করে নেওয়ার পর তবেই তুমি পান করবে—এ কথাটা যেন মনে থাকে।
তন্মাত্রং চ স্মৃতং সারং যদর্থং যততে জনঃ॥ (ঐ, ২৭৭)
অর্থাৎ গরিব বলুন বা রাজা দু’জনেরই জিহ্বাসুখ কিন্তু সমান। ভালো খাবার দুজনের মুখেই কিন্তু সমান সুস্বাদু লাগে। এই সংসারে সকল মানুষ সেই সুখ পাওয়ার জন্যই চেষ্টা করে, এইটাই সংসারের প্রকৃত তত্ত্ব। সত্যিই যদি এই জগৎ সংসারে জিহ্বার তৃপ্তির জন্য কাজ করবার আবশ্যকতা না হতো তাহলে এই সংসারে কেউ কারও অধীন হতেন না। মানুষ যে মিথ্যার আশ্রয় নেয় বা অযোগ্য লোকের সেবা করে কিংবা ঘর ছেড়ে ভিন দেশে গিয়ে বাস করে—এ সবই নিজের পেট ভরবার জন্যই।
সে অগ্নিমুখ এরপর রীতিমতো আকুতি করে মন্দবিসর্পিণীকে বলে, ক্ষুধায় পীড়িত হয়েই আমি আপনার কাছে এসেছি; আপনার কাছেই তাই ভোজনের প্রত্যাশা করি আমি, “তন্ন তয্বৈকাকিন্যাস্য ভূপতেঃ রক্তপানং কর্তুং যুজ্যতে”—আপনি একলাই এই রাজার সুমিষ্ট রক্তপান করবেন, এইটা ঠিক নয়।
সব শুনে মন্দবিসর্পিণীর দয়া হল। সে বলল, ওহে মত্কুণ! রাজা যখন ঘুমিয়ে পড়েন তখনই আমি তাঁর রক্তের আস্বাদ নিই; তাঁকে কোনও রকম পীড়া দিই না আমি। যদি সত্যিই আমার সঙ্গে তোমার রাজরক্ত পানের আগ্রহ থাকে তাহলে প্রতীক্ষা করতে হবে। রাজা নিদ্রিত হলে আমার রক্তপান করে নেওয়ার পর তবেই তুমি পান করবে—এ কথাটা যেন মনে থাকে।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২৭: হিন্দু-মুসলিম মিশ্র দেবতা সত্যনারায়ণ ও সত্যপীর
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২৬: স্বপ্নে আমার মনে হল
মন্দবিসর্পিণীর কাছে শপথ করে সেই অগ্নিমুখ মত্কুণ বললে, হে দেবি! তাই হবে— “এবং করিষ্যামি”। যতক্ষণ না আপনি প্রথমে রাজরক্ত পান করে নিচ্ছেন ততক্ষণ আমি রক্তপান করবো না। দেবতা এবং গুরুর নামে শপথ করে আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি। এইভাবে যখন দু’জনের মধ্যে কথাবার্তা চলছে ঠিক সেই সময়েই রাজা এসে সেই সুন্দর শয্যাটিতে শুলেন আর সেই ছারপোকাটিও লোভ আর জিহ্বার চপলতার কারণে রাজার ঘুমানো পর্যন্ত অপেক্ষা না করেই তাঁকে কামড়ালো। পণ্ডিতেরা একটা কথা ঠিকই বলেন, স্বভাব যায়না মলে। মরলেও মানুষের স্বভাবের কোনও পরিবর্তন হয় না। শাস্ত্রে বলে—
স্বভাবো নোপদেশেন শক্যতে কর্তুমন্যথা।
সুতপ্তমপি পানীযং পুনর্গচ্ছতি শীততাম্।। (ঐ, ২৮০)
অর্থাৎ যেমন জলকে ভালো মতন গরম করলেও ক্ষণকাল পরেই তা আবার ঠান্ডা হয়ে যায় তেমনই শত উপদেশ দিয়েও কোনও ব্যক্তির স্বভাবকে কখনও পরিবর্তন করা যায় না। সত্যি বলতে কি আগুন যদি কখনও তার উষ্ণতাকে ছেড়ে দিয়ে শীতলও হয়ে যায় কিংবা চন্দ্রমাও যদি তার শীতল ধর্মকে ত্যাগ করে বহ্নির মতন দাহ করতে শুরু করে, তবুও এ সংসারে মানুষের স্বভাব যে পরিবর্তন হওয়ার নয় এইটা নিশ্চিত।
দেবতা আর গুরু নামে শপথ করেও সেই অগ্নিমুখ ছারপোকাটি রাজাকে তাঁর ঘুমানোর আগেই কামড়ালো আর রাজা তখনই সূচ ফোটার মতন যন্ত্রণায় বিছানা ছেড়ে লাফিয়ে উঠলেন। অন্তঃপুরের কঞ্চুকীদের ডেকে বললেন, “অহো! জ্ঞাযতামত্র প্রচ্ছাদনপটে মত্কুণো যূকা বা নূনং তিষ্ঠতি, যেনাহং দষ্টঃ”—ওহে! দেখোতো একবার। নিশ্চয়ই আমার বিছানার চাদরে কোনও ছারপোকা কিংবা জোঁক থাকবে। এখনই আমায় কিছু একটা কামড়ালো।
যে কঞ্চুকী সে সময়ে রাজার শয্যার পাশে উপস্থিত ছিল, সে তত্ক্ষণাৎ এসে বিছানার চাদরটি তুলে নিয়ে সূক্ষ্মভাবে সেটিকে পরীক্ষা করতে শুরু করলো। আর এর মাঝেই অগ্নিমুখ দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে খাটের পায়ায় লুকিয়ে পড়লো কিন্তু মন্দবিসর্পিণী জোঁকটি তা পারলো না। সে সার্থকনামা, সে গমন করে খুব ধীরে। তাই কঞ্চুকী সহজেই তাকে আবিষ্কার করে এবং মেরে ফেলে। এতোদিন নিঃশব্দে সে মন্দবিসর্পিণী রাজরক্ত পান করছিল, তখন তাকে কেউ খেয়াল করেনি। কিন্তু যখনই সে অজ্ঞাত সেই অগ্নিমুখ ছারপোকাটিকে আশ্রয় দিলো তখনই তার পতন হল।
সুতপ্তমপি পানীযং পুনর্গচ্ছতি শীততাম্।। (ঐ, ২৮০)
অর্থাৎ যেমন জলকে ভালো মতন গরম করলেও ক্ষণকাল পরেই তা আবার ঠান্ডা হয়ে যায় তেমনই শত উপদেশ দিয়েও কোনও ব্যক্তির স্বভাবকে কখনও পরিবর্তন করা যায় না। সত্যি বলতে কি আগুন যদি কখনও তার উষ্ণতাকে ছেড়ে দিয়ে শীতলও হয়ে যায় কিংবা চন্দ্রমাও যদি তার শীতল ধর্মকে ত্যাগ করে বহ্নির মতন দাহ করতে শুরু করে, তবুও এ সংসারে মানুষের স্বভাব যে পরিবর্তন হওয়ার নয় এইটা নিশ্চিত।
দেবতা আর গুরু নামে শপথ করেও সেই অগ্নিমুখ ছারপোকাটি রাজাকে তাঁর ঘুমানোর আগেই কামড়ালো আর রাজা তখনই সূচ ফোটার মতন যন্ত্রণায় বিছানা ছেড়ে লাফিয়ে উঠলেন। অন্তঃপুরের কঞ্চুকীদের ডেকে বললেন, “অহো! জ্ঞাযতামত্র প্রচ্ছাদনপটে মত্কুণো যূকা বা নূনং তিষ্ঠতি, যেনাহং দষ্টঃ”—ওহে! দেখোতো একবার। নিশ্চয়ই আমার বিছানার চাদরে কোনও ছারপোকা কিংবা জোঁক থাকবে। এখনই আমায় কিছু একটা কামড়ালো।
যে কঞ্চুকী সে সময়ে রাজার শয্যার পাশে উপস্থিত ছিল, সে তত্ক্ষণাৎ এসে বিছানার চাদরটি তুলে নিয়ে সূক্ষ্মভাবে সেটিকে পরীক্ষা করতে শুরু করলো। আর এর মাঝেই অগ্নিমুখ দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে খাটের পায়ায় লুকিয়ে পড়লো কিন্তু মন্দবিসর্পিণী জোঁকটি তা পারলো না। সে সার্থকনামা, সে গমন করে খুব ধীরে। তাই কঞ্চুকী সহজেই তাকে আবিষ্কার করে এবং মেরে ফেলে। এতোদিন নিঃশব্দে সে মন্দবিসর্পিণী রাজরক্ত পান করছিল, তখন তাকে কেউ খেয়াল করেনি। কিন্তু যখনই সে অজ্ঞাত সেই অগ্নিমুখ ছারপোকাটিকে আশ্রয় দিলো তখনই তার পতন হল।
৯ম কাহিনি সমাপ্ত
আরও পড়ুন:
দশভুজা, শক্তিরূপেন সংস্থিতা, পর্ব-২: একলা চলো রে…
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭৭: আস্তাবলে সহিসদের রাখি পরাতে রবীন্দ্রনাথ ছুটে গিয়েছিলেন
সিংহ-পিঙ্গলককে গোটা গল্পটা শুনিয়ে দমনক বললে, সেই সঞ্জীবক আপনার চেনা-জানা কেউ নয়, অথচ সে আপনার স্থান নিতে চায়, আপনার প্রতি দ্রোহ মনোভাব তার স্পষ্ট। আমার মনে হয়, আপনাকে এখনই তাকে আপনার হত্যা করা উচিত, না হলে একদিন দেখবেন সেই আপনাকে হত্যা করবে। সেই কাহিনীটা কি জানেন না?—
ত্যক্তাশ্চাভ্যন্তরা যেন বাহ্যাশ্চাভ্যন্তরীকৃতাঃ।
স এব মৃত্যুমাপ্নোতি যথা রাজা ককুদ্দ্রুমঃ॥ (ঐ, ২৮২)
অর্থাৎ রাজা ককুদ্দ্রুমের মতন যে মহীপতি নিজের অন্তরঙ্গ ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে বাইরের লোকদেরকে উচ্চপদ প্রদান করে তাদের নিজের অন্তরঙ্গ করে নেয় তার নিশ্চিত মৃত্যু হয়। পিঙ্গলক আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “কথমেতদ্” ব্যাপারটা ঠিক কেমন? দমনক তখন বলতে শুরু করে।—চলবে।
স এব মৃত্যুমাপ্নোতি যথা রাজা ককুদ্দ্রুমঃ॥ (ঐ, ২৮২)
অর্থাৎ রাজা ককুদ্দ্রুমের মতন যে মহীপতি নিজের অন্তরঙ্গ ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে বাইরের লোকদেরকে উচ্চপদ প্রদান করে তাদের নিজের অন্তরঙ্গ করে নেয় তার নিশ্চিত মৃত্যু হয়। পিঙ্গলক আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “কথমেতদ্” ব্যাপারটা ঠিক কেমন? দমনক তখন বলতে শুরু করে।—চলবে।
* পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি (Panchatantra politics diplomacy): ড. অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায় (Anindya Bandyopadhyay) সংস্কৃতের অধ্যাপক, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়।