মিত্রভেদ
মহারানির মুখে রাজকন্যার কাছে স্বয়ং ভগবান নারায়ণের আগমনের কথা শুনে রাজা তো রীতিমতো পুলকিত। রাতের জন্য অপেক্ষা করতে করতে রাজা ক্লান্ত হয়ে গেলেন। সেই একটি দিন যেন রাজার কাছে একশো বছরের মতো লম্বা মনে হতে লাগলো—সময় যেন আর কাটে না। গভীর রাত্রে সেদিন মহারানির সঙ্গে সপ্ততল রাজপ্রাসাদের বাতায়নে লুকিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন রাজা। যথা সময়ে মধ্যরাত্রে আবার সেই তাঁতিটি উপস্থিত হল নারায়ণ সেজে গরুড় যানে চেপে রাজকন্যার কাছে। রাজা আর রানি সপ্ততল প্রাসাদের বাতায়ন থেকে লুকিয়ে শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মহস্ত গরুড়বাহন স্বয়ং ভগবান নারায়ণকে দেখলেন আকাশপথে এসে রাজকন্যার বাতায়নে অবতরণ করতে।
এ দৃশ্য দেখে রাজা যেন নিজেকে স্বয়ং অমৃতধারায় প্লাবিত মনে বলে করলেন। পাশে থাকা মহারাণীকে বললেন, প্রিয়ে! এ জগতের আমার থেকে ধন্যতর আর কেউ নেই, যার কন্যাকে স্বয়ং ভগবান নারায়ণ ভজনা করেন। আমার সব কামনাই যেন আজ সিদ্ধি হতে চলেছে। “অধুনা জামাতৃপ্রভাবেণ সকলামপি বসুমতীং বশ্যা করিষ্যামি”—এখন জামাইয়ের প্রভাবে সমস্ত পৃথিবীকে আমি আমার বশে করে নেবো।
পাঠক-পাঠিকাদেরকে বলবো ব্যাপারটা খেয়াল করবেন। আজকের দিনে পরিবারের কেউ নেতা-মন্ত্রী হলেসুবিধাবাদী আত্মীয়-বন্ধুরা যেমন তার নাম ভাঙিয়ে সমাজের সর্বস্তরে তাদের নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায়—এখানেও ব্যাপারটা তাই। জামাতা নারায়ণ বলে রাজাও সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত রকম অনিয়ম শুরু করলেন। নিশ্চিন্ত মনে সকল পার্শ্ববর্তী রাজাদের সঙ্গে সীমাচুক্তি লঙ্ঘন করতে শুরু করলেন আর সেই সমস্ত রাজারাও রেগে গিয়ে তার সঙ্গে যুদ্ধ-বিগ্রহ শুরু করে দিলেন।
এখানে মূল সংস্কৃততে “বিগ্রহ” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলা ভাষায় আমরা “যুদ্ধ-বিগ্রহ” কথাটাকে অনায়াসে একসঙ্গে ব্যবহার করলেও বিষয়টি কিন্তু এক নয়। এ প্রসঙ্গে এখানেই দু-একটা কথা বলে নিতে ইচ্ছে করছে। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে মূলত পররাষ্ট্র-নীতি মানে শত্রু বা মিত্র রাজার ক্ষেত্রে বিজিগীষু রাজার আচরণকিরকম হবে সেই “ডিপ্লোমেসি” বা কূটনৈতিক সম্বন্ধ-বিস্তারের প্রসঙ্গেই এই “বিগ্রহ” সংক্রান্ত কথা এসেছে।
অর্থশাস্ত্র বলছে, রাজা যদি শক্তিমান হন তা হলে, তিনি ধর্মযুদ্ধে পরাক্রম প্রকাশ করবেন। এই ধর্মযুদ্ধকেই অর্থশাস্ত্রে বলা হয়েছে “প্রকাশযুদ্ধ”। এতে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করে, নির্দিষ্ট দিনে যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে দিনের বেলায় যুদ্ধ হয়। আর এর ঠিক বিপরীতটাই হল “কূটযুদ্ধ”। একপক্ষকে ভয় দেখানো, আর এক পক্ষকে প্রহার, শত্রুর ব্যসন-প্রমাদ বুঝে তার সৈন্যবল ধ্বংস করা, একদল সৈন্যকে ঘুষ বা উৎকোচ দিয়ে অন্য দলকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া—এ সবই “কূটযুদ্ধ”। তৃতীয় প্রকারের যুদ্ধ হল—“তুষ্ণীংযুদ্ধ”, যেখানে এই সবটাই হয়। কিন্তু হয় সব চুপচাপ, সকলের চোখের আড়ালে। অপসর্প বা চর মানে ইংরেজিতে যাকে আমরা “স্পাই” বলি তারাই হয় তখন এই তুষ্ণীংযুদ্ধের প্রকৃত সেনাবাহিনী। নানা কৌশলে, লোকচক্ষুর অন্তরালে, শত্রুপক্ষের সেনামুখ্যদের যদি যুদ্ধ থেকে নিবৃত্ত করা যায়, তবে সেটা হল “তুষ্ণীংযুদ্ধ”—
প্রকাশযুদ্ধং নির্দিষ্টে দেশে কালে চ বিক্রমঃ।
বিভীষণমবস্কন্দঃ প্রমাদব্যসনার্দনম্।।
একত্র ত্যাগঘাতৌ চ কূটযুদ্ধস্য মাতৃকা।
যোগগূঢোপজাপার্থং তূষ্ণীংযুদ্ধস্য লক্ষণম্।। (অর্থশাস্ত্র, ৭/৬/৪০-১)
কৌটিল্য অর্থশাস্ত্রের দ্বাদশ অধ্যায়ের ২-৩ প্রকরণে কৌটিল্য বিস্তৃত ভাবে কূটযুদ্ধের বিবরণ দিয়েছেন। সেখানে গুপ্তচর এবং বশংবদ দুষ্ট পুরুষদের একটা বিরাট ভূমিকা ছিল। নানা রকম বেশ ধারণ করে শত্রুরাজ্যে প্রবেশ করা থেকে শুরু করে, সেখানে শত্রুরাজা এবং তার হাতি-ঘোড়ার খাবারে বিষ মিশিয়ে হত্যা করার কথাও বলা হয়েছে।
এখানে বিস্তৃতভাবে এতো সব কথা বলে পঞ্চতন্ত্রের কাহিনীধারাকে আর ভারাক্রান্ত করছি না। এখানে শুধু পাঠক-পাঠিকাদের একটা ধারণা অন্তত দেওয়ার চেষ্টা করা গেলো যে “বিগ্রহ” মানে সাধারণ অর্থে আমরা যুদ্ধকে বুঝলেও সে যুদ্ধ কতো রকমের ছিল। যাইহোক, আমরা আবার গল্পে ফিরে আসি।
জামাতা যদি কারও ত্রিভূবণের পালনকর্তা স্বয়ং ভগবান নারায়াণ হন, তবে সে মানুষ তো স্বাভাবিকভাবেই নিজেকে সর্বশক্তিমান মনে করবেনই, আর তিনি যদি একজন বিজিগীষু রাজা হন তবে তার কথা তো বাদই দিলাম। দৈবের উপর ভরসা করেই তিনি পার্শ্ববর্তী রাজাদের সঙ্গে বিরোধীতা বাড়াতে লাগলেন আর স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য সীমান্তবর্তী রাজারাও তো আর চুপ করে বসে থাকবেন না। তাই তারাও কখনও স্থানভেদে প্রকাশযুদ্ধ, কখনও কূটযুদ্ধ আবার কখনও বা তুষ্ণীংযুদ্ধ শুরু করলেন।
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-২৪: যন্ত্রশক্তিকে অবলম্বন করে যে আকাশে ওড়া যেতে পারে, এই চিন্তা অন্তত সেই যুগেও মানুষ করেছিল
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৯: অনেক যতনে ‘বড়দিদি’-র পর্ব রাখিনু সেথা
রাজকন্যাও সেদিন রাত্রে সবিনয়ে সেই নারায়ণ ভেকধারী তাঁতিকে এই কথাগুলি বললে, “ভগবন্ ত্বযি জামাতরি স্থিতে মম তাতো যচ্ছত্রুভিঃ পরিভূজ্যতে তন্ন যুক্তম্। তত্প্রসাদং কৃত্বা সর্বাংস্তান্ ব্যাপাদয” – হে ভগবন্! তোমার তুল্য একজন জামাতা থাকতে আমার পিতাকে প্রতিদিন শত্রুদের হাতে পরাজিত হতে হচ্ছে—এটা কি উচিত হচ্ছে? তাই কৃপা করে পিতার সমস্ত শত্রুদের আপনি হত্যা করুন।
তাঁতি বলল, ওহে সুন্দরী, তোমার পিতার কতগুলিই বা শত্রু আছে? আমার প্রতি বিশ্বাস রাখো কন্যে। আমি সুদর্শন চক্র দিয়ে ক্ষণকালের মধ্যেই তাদের তিলের সমান খণ্ড-বিখণ্ড করে দেবো।
এর কিছুদিনের মধ্যেই সমস্ত শত্রুরাজারা সেই বিজিগীষু রাজার সমস্ত রাজ্য ছিনিয়ে নিলো। রাজার অধিকারে রইল কেবল চার দেওয়ালের মধ্যে থাকা দুর্গটুকু মাত্র। তথাপি সেই রাজা প্রতিদিন রাতে তাঁর কন্যার কাছে আসা বাসুদেবরূপী তাঁতিটির আসল পরিচয় না জেনেই তাকে কপুরাদি নানা সুগন্ধিত পদার্থ এবং সেই সঙ্গেবস্ত্র, পুষ্প এবং নানাবিধ খাদ্য ও পানীয় দ্রব্য পাঠিয়ে দিতেন। তার সেবার এতটুকুও ত্রুটি রাখতেন না তিনি। একদিন কন্যাকে দিয়ে তিনি নারায়ণরূপী তাঁতিকে বলালেন, হে দেব! প্রাতঃকালেই দুর্গের পতন অবশ্যম্ভাবী। দুর্গের মধ্যে জমানো যা কিছু ইন্ধন ছিল সব নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে।শত্রুদের প্রহারে সৈন্যরাও জর্জরিত—যুদ্ধ করবার ক্ষমতা তাঁদের আর নেই; বহু সংখ্যায় রাষ্ট্রের জন্য তারা মৃত্যুকেও বরণ করেছেন।
রাজকন্যার মুখে এই কথা শুনে সেইতাঁতিটি এবার চিন্তায় পড়ে গেলেন। কারণ শত্রুসেনার হাতে দুর্গের পতন হলে রাজকন্যার সঙ্গেও তার বিয়োগ নিশ্চিত। তাই স্থির করলেন, গরুড়যানে চেপে বিষ্ণু সেজে অস্ত্র-শস্ত্র হাতে আকাশ পথে নিজেকে নাটকীয়ভাবে প্রকাশ করবেন, এইটাই বোধহয় শ্রেয় হবে। যদি তাকে সত্যি সত্যিই বিষ্ণু ভেবে শত্রু রাজারা ভয়ভীত হন এবং সত্যিই যদি তাকে দেখে বিষ্ণু ভেবে মনোবল ভেঙ্গে যাওয়া সৈন্যদের হত্যা করে দেওয়া যায়। তবে কিছু একটা সুরাহা হলেও হতে পারে। কারণ পণ্ডিতরা বলেন—
নির্বিষেণাপি সর্পেণ কর্তব্যা মহতী ফণা।
বিষং ভবতু মা ভূযাৎ ফণাঽঽটোপো ভযঙ্করঃ।। (মিত্রভেদ, ২২৫)
পরিযায়ী মন, পর্ব-৯: সাসারামের ঝর্ণাধারা
অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-১০: কী উপহার সাজিয়ে দিলে…
তাঁতিটি চিন্তা করলো, সত্যি বলতে এই দুর্গের রক্ষা করতে গিয়ে যদি তার মৃত্যুও হয় তাতেও ক্ষতি নেই, সেটা বরং সুন্দরতর। শাস্ত্রে বলে, যে ব্যক্তি গবাদি পশু কিংবা ব্রাহ্মণ বা তার স্বামী অথবা দেশকে রক্ষা করবার জন্য প্রাণত্যাগ করে তার অক্ষয় স্বর্গলাভ হয়। চন্দ্রমণ্ডলে অবস্থিত হলেও অমাবস্যার দিন সূর্যদেবও রাহু-গ্রস্ত হন। তাই শরণাগতকে রক্ষা করতে গিয়ে মহৎ লোকেরাও যদি বিপদে পড়েন তাহলেও তাতে তাঁদের মহত্ব কমে যায় না, বরং তাঁরা আরও প্রশংসনীয় হন।
এইসব নানা রকম চিন্তাভাবনা করে মনে মনে সব রকম পরিস্থিতির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে সেই তাঁতি খুব ভোরে উঠে দন্তধাবন করে রাজকন্যাকে বললেন, ওহে সুভগে! সমস্ত শত্রুদের হত্যা করে তবেই অন্ন-জল গ্রহণ করবো। এর চেয়ে বেশি আর কিই বা বলবো? তোমার সঙ্গে সমাগতও হবো আমি তারপরেই। তুমি তোমার পিতাকে গিয়ে বলো প্রভাতে সমস্ত সৈন্যবল নিয়ে দুর্গের বাইরে গিয়ে শত্রুদের সঙ্গে যেন আপ্রাণ সংগ্রামে লিপ্ত হনতিনি। আমি গরুড়-পক্ষীতে আরোহণ করে আকাশপথে আবির্ভূত হয়ে তাদের নিস্তেজ করবো, যাতে তিনি সম্মুখ সমরে তাদের অনায়াসে হত্যা করতে পারেন। কারণ যদি আমাকে তাদের হত্যা করতে হয় তবে সেই সব পাপীদের সরাসরি স্বর্গপ্রাপ্তি হয়ে যাবে। তাই পিতাকে জানাবে সেই সমস্ত সৈন্যরা যখন ভয়ে যুদ্ধভূমি ছেড়ে পালাবে সেই সময়ে যেন তাদের তিনি হত্যা করেন। তাহলে কোনও ভাবেই তাদের আর স্বর্গপ্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকবে না।
রাজকন্যাও সেই নারায়ণরূপী তাঁতির কথা যথাযথা ভাবে পিতা মহারাজের কাছে নিবেদন করলেন। মহারাজও তাঁর জামাতা নারায়ণের বচনের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল হয়ে সেইন সকাল-সকালই সমস্ত অবশিষ্ট সৈন্যদের একত্রিত করে দুর্গের বাইরে গিয়ে যুদ্ধ করবার জন্য যাত্রা শুরু করলেন আর ওদিকে সেই তাঁতিও নারায়ণ সেজে নিজের নিশ্চিত মৃত্যুকে আসন্ন জেনেও হাতে ধনুর্শর নিয়ে আকাশ পথে যুদ্ধ করবার জন্য প্রস্তুত হলেন।
ওদিকে বৈকুণ্ঠবাসী নারায়ণ, যিনি অতীত-বর্তমান ও অনাগত ভবিষ্যতের সবটুকুই জানেন, তিনি এ বার বিপদে পড়লেন। তিনি বৈকুণ্ঠে তাঁর বাহন গরুড়কে স্মরণ করলেন। স্মরণ করা মাত্র নারায়ণের সম্মুখে আবির্ভূত হলেন বিনতার পুত্র বৈনতেয় গরুড়।নারায়ণ হেসে বললেন, ওহে গরুত্মন্! মর্ত্যলোকে এক তাঁতি আমার রূপ ধারণ করে কাঠের তৈরি গরুড়ে চেপে রাজকন্যার সঙ্গে কামকলায় লিপ্ত হয়েছে।
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১৪: সারদা মায়ের বিশ্বাসে জাগ্রতা হল দেবী সিংহবাহিনী
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪০: ব্রণ হয়েছে? তার মানেই কি লিভার খারাপ?
শ্রীভগবান বললেন, আজ সে তাঁতি মরণে কৃতসঙ্কল্প হয়ে যুদ্ধ করতে বেরিয়ে পড়েছে আর ক্ষত্রিয়শ্রেষ্ঠদের বাণ বর্ষণে সে যে এখনই মারা পড়বে এ আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি। আর সে মারা পড়লেই সকলে এই কথাই বলবে যে “প্রভূতক্ষত্রিয়ৈর্মিলিত্বা বাসুদেবো গরুড়শ্চ নিপাতিতঃ” সকল ক্ষত্রিয়রা মিলে ভগবান বাসুদেব এবং তাঁর বাহন গরুড়কে মেরে মাটিতে ফেলে দিয়েছে। তার ফল কিন্তু হবে মারাত্মক— “ততঃ পরং লোকোঽযমাবযোঃ পূজাং ন করিষ্যতি”। লোকে তাহলে আমাদের আর পুজো দেওয়াটাই বন্ধ করে দেবে আর মানুষ পুজো না দিলে দেবতাদের খাওয়া পরা জোটে না, একথা পৌরাণিকরা বলেন।
তাই শ্রীভগবান বললেন, হে গরুত্মন্! তুমি দ্রুত গিয়ে ওই কাষ্ঠময় গরুড়যানে প্রবেশ করো আর আমিও সেই তাঁতিটির শরীরে প্রবেশ করে সমস্ত শত্রুদের নিঃশেষ করি। তাতে আমাদের মাহত্ম্য বাড়বে বই কমবে না।
ব্যাপারটা অনেকটা এইরকম, কোনও সামান্য ব্যক্তি, যে হয়তো সমাজের প্রভাবশালী বিখ্যাত কোনও ব্যক্তির নাম ভাঙিয়ে দিনের পর দিন কিছু একটা অন্যায় করে চলেছেন আর সেই প্রভাবশালী ব্যক্তি সে কথা জেনেও তাকে কোনও রকম ভাবে নিরস্ত করছেন না, তাহলে তার অন্যায়ের দায়টাও কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই সেই প্রভাবশালী ব্যক্তিটির উপরেই বর্তাবে। কারণ সকলে তখন বিশ্বাস করবে যে সেই সামন্য ব্যক্তিটির কার্যকলাপের পিছনে নিঃসন্দেহে সেই প্রভাবশালীরই হাত আছে। সেই সামান্য লোকটির বিপদের সময়ে, সেই প্রভাবশালী ব্যক্তিটি জেনেশুনেও যদি তার পাশে এসে না দাঁড়ান, তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই, অন্য সাধারণ লোকেও সেই প্রভাবশালী ব্যক্তির প্রভাব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করবেন।
বলা ভালো, প্রভাবশালী ব্যক্তির প্রভাবটিই মাটিতে মিশে, লোকে তখন আর তাকে ভয় পাবে না। ত্রিলোকের সর্ববৃত্তান্তবেত্তা শ্রীভগবানের দশাটি তখন সেই রকমই। সেই তাঁতিটির কপটরূপ, যিনি প্রথম দিনেই প্রকাশ করে দিতে পারতেন, তাকে তিনি উপেক্ষা করেছেন, লোক সমাজে সেই তাঁতিটিই যখন বাসুদেবরূপে আবির্ভূত হচ্ছেন তখন সেই বাসুদেবেরই যদি যুদ্ধক্ষেত্রে পতন হয় তাহলে বদনামটা সেই তাঁতির হয় না, হয় স্বয়ং ভগবান নারায়ণের। ক্ষত্রিয়শ্রেষ্ঠদের বাণের আঘাতে নকল বাসুদেবের মৃত্যু হলেও মহিমা খর্বিত হয় শ্রীভগবানেরই। তাই গরুড়বাহনকে নিয়েই স্বয়ং ভগবান আশ্রয় নিলেন তাঁতি শরীরে শত্রু সংহারে, যাতে স্বমহিমায় রক্ষিত তাঁর নাম মাহাত্ম্য। —চলবে।
ছবি: প্রতীকী। লেখক।