বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী। সংগৃহীত।

 

মিত্রভেদ

অতিভক্তি যে চোরের লক্ষণ সে কথাটা শিশুকাল থেকেই আমরা শুনে আসছি। কিন্তু আষাঢ়ভূতির ভক্তিগুণে দেবশর্মা এতোটাই প্রসন্ন হয়েছিলেন যে শিশুকালের সে শিক্ষা তিনি ভুলে গেলেন। আষাঢ়ভূতির কপট ভক্তি এবং উপলব্ধি দেখে দেবশর্মা বিমোহিত হয়ে বললেন, বত্স্য! তুমি ধন্য। জীবনের প্রথম ভাগে এতো অল্প বয়সে জগৎ-সংসারের প্রতি এমন বিরক্তি ক্বচিৎকদাচিৎ-ই কারও কারও মধ্যে দেখা যায়। পণ্ডিতেরা বলেন—

পূর্বে বয়সি য শান্তঃ স শান্ত ইতি মে মতিঃ।
ধাতুষু ক্ষীযমানেষু শমঃ কস্য ন জাযতে।। (মিত্রভেদ, ১৭৩)


জীবনের প্রারম্ভকালে অর্থাৎ কৈশোর কিংবা ভরা যৌবনে যিনি শান্ত, যিনি জাগতিক ভোগ-বিলাসে বীতরাগ, তিনিই প্রকৃত শমগুণ সম্পন্ন। প্রকৃত বৈরাগ্যভাব তাঁর মধ্যেই প্রকাশ পায়। তিনিই প্রকৃত সন্ন্যাসের অধিকারী। না হলে জীবনের অন্তিম সময়ে, যখন ইন্দ্রিয়সকলের ভোগক্ষমতা বিনষ্ট হয়ে যায়, তখন অনেকের মধ্যেই শমগুণ প্রকাশিত হয়; সকলেই তখন প্রাকৃতিক নিয়মেই বৈরাগী হয়ে যায়। তাই শাস্ত্রে বলে—

আদৌ চিত্তে ততঃ কাযে সতাং সম্পদ্যতে জরা।
অসতাং তু পুনঃ কাযে নৈব চিত্তে কদাচন।। (ঐ, ১৭৪)


সজ্জন মানুষদের জরা প্রথমে আসে চিত্তে; বিষয়ের ভোগের প্রতি বিতৃষ্ণা তাঁদের মন থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায় অল্প বয়সেই। এই জগৎ-সংসারের অসারতা তাঁরা জেনে যান তখন থেকেই। তাই চিত্তের জড়তা আসে তাঁদের যৌবনকালেই। কিন্তু শারীরিক জড়তা আসেতাঁদের বার্ধ্যকে—প্রথমে মনে, পরে শরীরে। কিন্তু অসৎ মানুষদের জড়তা প্রথম আসে তাঁদের শরীরে, বৃদ্ধাবস্থায়; কিন্তুচিত্তের ভোগতৃষ্ণা কখনই তাঁদের মেটে না—“তৃষ্ণৈকা তরুণাযতে”—শরীর তাঁদের বৃদ্ধ হতে থাকলেও শারীরিক ভোগতৃষ্ণা তাঁদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও তরুণ, আরও নবীন হতে থাকে।

দেবশর্মা অত্যন্ত প্রসন্ন হয়ে তাঁকে বললেন, হে বত্স্য! আমার কাছে সংসার-সাগর পার করবার যে উপায় তুমি অনুসন্ধান করছো এবার তা বলছি মনোযোগ দিয়ে শোনো—মানুষ শূদ্র বা চণ্ডাল কিংবা জটাধারী সন্ন্যাসী। যাই হোন না কেন শিবমন্ত্রে যদি দীক্ষিত হন হবে স্বয়ং সে ভস্মধারী শিবতনু লাভ করেন।

এজন্মেই মঙ্গলময় শিবলোক লাভ করেন। তিনি যদি “ওঁং নমঃ শিবায”—এই ছয় অক্ষরের মন্ত্র জপ করে একটি ফুলও শিবলিঙ্গের উপরে স্থাপন করেন। তবে তাঁর আর পুনর্জন্ম হয় না— সংসারচক্রের সুখদুঃখের বাইরে সে চলে যায়। ভারতীয় সকল আস্তিক দর্শন সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যও তাই, ভবচক্রের পরিক্রমণ থেকে নিস্তার পাওয়া, যাতে এই পৃথিবীতে পুনরায় জন্মগ্রহণ করতে না হয়। পুনর্জন্ম মানেই দুঃখসাগরে পুনরায় নিমগ্ন হওয়া।

দেবশর্মার কথা শুনে আষাঢ়ভূতি তাঁর দু’ পায়ে পড়ে প্রশয়ের সুরে বললেন, হে ভগবন! তাহলে আমাকে কৃপা করে দীক্ষা দিয়ে অনুগ্রহ করুন। দেবশর্মা বললেন, হে বত্স্য! অনুগ্রহ তোমাকে আমি অবশ্যই করবো। কিন্তু রাত্রে এই মঠের মধ্যে তুমি প্রবেশ করতে পারবে না। কারণ সন্ন্যাসীদের জন্য নিঃসঙ্গতাই শাস্ত্রে বিহিত হয়েছে। একান্তেই সাধন-ভজন করতে হয়। পণ্ডিতেরা বলেন, কুমন্ত্রণার কারণে যেমন রাজা বিনষ্ট হয়, তেমনই “নশ্যতি যতিঃ সঙ্গাৎ”—সন্ন্যাসীও সঙ্গদোষে নষ্ট হন। দু’জন সন্ন্যাসী এক জায়গায় হলেই সাধন-ভজন ভুলে তাঁরা জগৎ-সংসারের কথায় মগ্ন হয়ে যান। সন্ন্যাসী সম্প্রদায়ের নিজস্ব রাজনীতি-কূটনীতি বা তাঁদের কেচ্ছা-কেলেঙ্কারি এই সব নিয়েই আলোচনা চলতে থাকে তাঁদের মধ্যে প্রকৃত সাধনভজন লাটে ওঠে।

তাই “নিঃসঙ্গতা যতীনাং প্রশস্যতে”—সন্ন্যাসীদের জন্য নিঃসঙ্গ থাকাটাই প্রশংসার্হ। পঞ্চতন্ত্রকার আরও কয়েকটি উদাহরণ দিয়েছেন এ-প্রসঙ্গে। বেশি লালন-পালনে যেমন পুত্র নষ্ট হয়, স্বাধ্যায়ে ফাঁকি পড়লে যেমন ব্রাহ্মণ নষ্ট হয়, কুপুত্রের জন্য বংশ গরিমা বা দুষ্টলোকের সেবায় সুস্বভাব নষ্ট হয়, তেমনই দুই সন্ন্যাসী এক জায়গায় হলে ঈশ্বর চিন্তায় বিঘ্ন ঘটে। স্নেহ না থাকলে যেমন আত্মীয়তা নষ্ট হয়, যথাযথ নীতির অভাবের যেমন ধনসম্পত্তি নষ্ট হয় তেমনই দূর দেশে থাকলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার প্রেমও বিনষ্ট হয়ে যায়। নিজে দেখা শোনা না করলে যেমন কৃষিকাজ নষ্ট হয়, অপাত্রে বেশী দান করলে বা অসাবধানতায় যেমন ধনসম্পদ নষ্ট হয়, তেমনই অহংকারের কারণে মানুষের স্বাভাবিক সৌন্দর্যও বিনষ্ট হয়; অহংকার বা আত্মগরিমার ছাপ স্পষ্ট হয় সেই সব দাম্ভিক মানুষের চোখে-মুখে। মুখশ্রী হয়ে ওঠে তাঁদের অসুন্দর।আবার সেই দম্ভ ও দর্পকে রক্ষা করতে গেলে সম্পদও ক্ষয় হয়—লক্ষ্মীশ্রী’রও হানি হয়।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-১৯: উন্নতি করতে গেলে অপেক্ষায় বসে থাকলে চলবে না, তৈরি করে নিতে হয় সুযোগ

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৬: বহু জনমের মায়া, ধরিল যে কায়া, ওগো ‘শিল্পী’ সে তো শুধু তোমারই ছায়া

তাই দেবশর্মা বললেন, হে বত্স্য! ব্রতগ্রহণের পর তাই এই মঠের কাছেই ছোট একটি তৃণকুটীর নির্মাণ করে রাত্রে তোমাকে সেখানেই শুতে হবে—এইটাই আমার শর্ত।

আসলে দেবশর্মা বগলদাবা করেযে টাকার পুটুলিটাকে রেখেছিলেন, সেটাকে রক্ষা করবার জন্যই এইসব ব্যবস্থা। যাইহোক, সবটুকু শুনে নিয়ে আষাঢ়ভূতি আবার আগের মতনই কপট বৈরাগ্য দেখিয়ে বললেন, ভগবন্‌! আপনার আদেশই শিরোধার্য।আমার উদ্দেশ্য কেবল পরলোকের মঙ্গলসাধন। তাই আপনি যেখানে রাত্রিবাসের আদেশ দেবেন আমি সেখানেই রাত্রি যাপন করবো।
আষাঢ়ভূতির মধুর বাক্যে সন্তুষ্ট হয়ে দেবশর্মা শাস্ত্রবিধি মেনে তাঁকে দীক্ষিত করে শিষ্যত্বে বরণ করলেন আর সেই কপট সন্ন্যাসী আষাঢ়ভূতিও তখন তার গুরুদেবের হাত-পা টিপে নানা ভাবে তাঁর পরিচর্যা করে তাঁকে প্রাণপণে পরিতুষ্ট করতে লাগলেন। কিন্তু তত্সত্ত্বেও সেই ব্রাহ্মণ দেবশর্মা সেই টাকার পুটুলিটা একবারের জন্যেও হাত ছাড়া করলেন না।

এ ভাবে বেশ কিছুকাল কাটলো। কিন্তু পরিস্থিতির কোনও রকম উন্নতি না দেখে আষাঢ়ভূতি একদিন চিন্তা করলো, এ ব্রাহ্মণের তো কিছুতেই বিশ্বাসভাজন হওয়া যাচ্ছে না। প্রতিদিন দু’বেলা এর সেবা করেও এঁকে সন্তুষ্ট করে কার সাধ্যি। রাতে তো মঠে থাকবার অনুমতিও নেই। তবে কি দিনের বেলাতেই কোনও একটা শস্ত্র দিয়ে মেরে তার টাকাটা ছিনিয়ে নিতে হবে? নাকি তাঁর খাবারের মধ্যেবিষ প্রয়োগ করেই মারা ভালো। কিন্তু এ মঠের মধ্যে অস্ত্র-শস্ত্র বা বিষ কিছুই তো নেই। তবে কি পশুরা যেমন করে আঁচড়ে কামড়ে হত্যা করে সেভাবেই একে মারা ভালো?

আষাঢ়ভূতির মনের মধ্যে যখন এইসব চিন্তা ঘুরছে তখন একদিন দেবশর্মার কোনও এক শিষ্যের পুত্র গ্রামান্তরথেকে তাঁর গৃহে পবিত্রারোপণ বা পৈতে অনুষ্ঠানে তাঁকে নিমন্ত্রণ জানাতে এলেন। ব্রাহ্মণ দেবশর্মাও শিষ্য আষাঢ়ভূতিকে নিয়ে মনের আনন্দে চললেন সেই পবিত্রারোপণের নিমন্ত্রণে। সে নিমন্ত্রণ বাড়ি যাওয়ার সময়ে পথে একটি নদী পড়লো। সে নদী দেখে দেবশর্মা বগলদাবা করে রাখা সেই টাকার পুটুলিটি নিজের শোয়ার কাঁথার মধ্যে লুকিয়ে রেখে নদীতে স্নান করতে গেলেন। স্নান সেরে উঠে সে শিষ্য আষাঢ়ভূতিকে বলল, ওহে আষাঢ়ভূতে! যতক্ষণ না আমি প্রাতঃকৃত্য শেষ ফিরছি ততক্ষণ যোগেশ্বর মহাদেবের কাঁথা মনে করে এটিকে অতি সাবধানতার সঙ্গে পাহারা দেবে।
আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-১১: মশ্যা রে তুঁহু মম শ্যাম-সমান

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮: নহবতে সহধর্মিণী সারদা

দেবশর্মার “অতি সাবধান বাণী” শুনে আষাঢ়ভূতির বুঝতে বাকি রইলো না যে তার প্রার্থিত টাকার পুটুলিটি সেই “যোগেশ্বর মহাদেবের কাঁথা”র মধ্যেই লুকানো আছে। দেবশর্মাও প্রাতঃকৃত্যের জন্য চোখের আড়ালে গেলেই বিন্দু মাত্র সময় নষ্ট না করেই আষাঢ়ভূতিও সেই পুটুলী নিয়ে চম্পট দিলে।

আর ওদিকে দেবশর্মাও এতদিনে শিষ্যের গুণে প্রসন্ন হয়ে তার উপর সেই ‘যোগেশ্বর মহাদেবের কাঁথা’টির ভার দিয়ে নিশ্চিন্ত মনেযখন মলত্যাগ করতে বসলেন এবং দূরে তাকিয়ে দেখতে পেলেন যে দু’টি ভেড়ার যুদ্ধ লেগেছে। সে এক বিচিত্র যুদ্ধ। সেদু’টিভেড়া শিং বাঁকিয়ে দূর থেকে এসে একে অপরের মাথায় প্রাণপণেএকবার করে আঘাত করছে, তারপর আবার পিছনে ফিরে দূরে চলে গিয়ে ফের শিং বাঁকিয়ে এসে পরস্পরকে আঘাত করছে। এই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়ে চলেছে আর তার ফলে তাদের মাথা ফেটে ততক্ষণে মাটিতেরক্তও ঝরতে শুরু করেছে। যেখানে রক্ত ঝরে মাটিতে পড়ছিল সেখানে কোথা থেকে এক শেয়াল এসে সেই রক্ত চাটতে শুরু করলো। দেবশর্মা মলত্যাগ করতে করতে সেই শেয়ালটাকে দেখে চিন্তা করলো, এর মতো মূর্খ দ্বিতীয়টি নেই। দুই ভেড়ার দ্বন্দ্বযুদ্ধের মাঝে সে রক্তের স্বাদ পেয়ে তা চাটতে বসেছে; একবার যদি দুজনের মাঝে পড়ে যায় তো পরমুহূর্তেই ওর মৃত্যু নিশ্চিত।

হলোও তাই। নির্বোধের মতন সেই শেয়ালটি যখন মাটিতেপড়ে থাকা রক্ত চাটছিলো ঠিক সেই মুহূর্তেই দুই ভেড়ার তীব্র সংঘাতের আঘাতের তত্ক্ষণাৎ সে মারা পড়লো। দেবশর্মাও শৌচাদিকর্ম সেরে সেই মূর্খ শেয়ালের কথাটা ভাবতে ভাবতে কিছুটা বিষণ্ণ মনে যখন আবার সেই টাকার পুটুলিটা নিতে পূর্বের জায়গায় নদীতীরে ফিরে এলো তখন দেখলো আষাঢ়ভূতিও নেই আর “যোগেশ্বরের কাঁথা”টিও সেখানে নেই। বুঝতে বিন্দুমাত্র দেরী হল না যে সমস্ত টাকাপয়সা নিয়ে আষাঢ়ভূতি চম্পট দিয়েছে। দেবশর্মা তখন প্রায় পাগলের মতন হাহাকার করে উঠলো, “হা হা মুষিতোঽস্মি”—আমার সব খোয়া গেলো, সব লুঠ হয়ে গেলো। শোকে দুঃখে একেবারে অজ্ঞান হয়ে গেলেন সেই দেবশর্মা।
আরও পড়ুন:

অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-8: চলতি কা নাম কিশোর

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১১: সুন্দরবনের ব্যাঘ্রদেবতা দক্ষিণ রায়

কিছুক্ষণ পরে জ্ঞান ফিরতেই সে রাগে উন্মাদের মতন চিত্কার করতে শুরু করলো, ওরে আষাঢ়ভূতি! আমাকে ধোকা দিয়ে কোথায় পালাবি তুই? আমার কথার উত্তর দে। এ ভাবে বিলাপ করতে করতে আষাঢ়ভূতির পায়ের ছাপ অনুসরণ করতে করতে সামনে এগোতে শুরু করলো দেবশর্মা। চলতে চলতে সন্ধ্যার সময়ে এক গ্রামে এসে উপস্থিত হলো সে। গ্রামের পথে যেতে যেতে সামনে এক তাঁতির সঙ্গে দেখা হলো তাঁর। সে তাঁতি তখন সস্ত্রীক চলেছে পাশেই, নগরের শুড়িখানায় মদ খেতে। দেবশর্মা তাঁদেরকে দেখে বললেন, হে ভদ্রমহোদয়! সন্ধ্যাকালে অতিথিরূপে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। এই গাঁয়ে কাউকেই আমি চিনি না।

তাই আপনাকেই অতিথি ধর্ম পালন করতে হবে। শাস্ত্রেও বলে, সন্ধ্যাকালে সূর্যাস্তের সময়ে যদি গৃহস্থের ঘরে কোনও অতিথি আসেন, তবে তাঁকে যথাযথভাবে সত্কার করলে সে গৃহস্থেরও স্বর্গপ্রাপ্তি হয়। আর অতিথিকে সেবা করবার জন্য কিছুই লাগে না। লাগে শুধু পরিশুদ্ধ মনটুকু আর লাগে আসন পাতার জন্য সামান্য কিছু কুশঘাস, একটু হাত-পা ছড়াবার মতো জায়গা, পথশ্রম আর তৃষ্ণা নিবারণের জন্য সামান্য জল আর মধুর সম্ভাষণ। যে কোনও সজ্জন গৃহস্থের বাড়িতে এই দ্রব্য কয়েকটির অভাব হয় না মোটেই।

শাস্ত্রে বলে, অতিথিকে মধুর বাক্যে আহ্বান করলে অগ্নি, তাঁকে বসবার কুশাসন দিলে ইন্দ্র, পা-ধুইয়ে দিলে পিতৃগণ এবং অর্ঘ্যদান করলে স্বয়ং ভগবান্‌ শঙ্কর পর্যন্ত প্রসন্ন হন। দেবশর্মা সেই তাঁতিকে বললেন, আমি আপনার আতিথ্য প্রার্থী, আপনি অতিথিধর্ম পালন করুন।
সব শুনে সে তাঁতি তাঁর স্ত্রীকে বলল, ওহে প্রিয়ে! তুমি অতিথিকে ঘরে নিয়ে গিয়ে তাঁকে হাত-পা ধোয়ার জল দাও, খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করে তাঁর জন্য একটি সুন্দর শয্যার ব্যবস্থা করে ঘরেই থাকো; আমি গিয়ে বরং তোমার জন্য অনেক মদ্য নিয়ে আসবো।

এই বলে স্ত্রীর উপরদেবশর্মার অতিথিসত্কারের ভার দিয়েসে শুড়িখানায় চলে গেল।—চলবে।
* পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি (Panchatantra politics diplomacy): ড. অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায় (Anindya Bandyopadhyay) সংস্কৃতের অধ্যাপক, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়।

Skip to content