বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী। সংগৃহীত।

 

মিত্রভেদ

রাজবাড়ির “সম্মার্জন কর্তা” সেই ঝাড়ুদার গোরম্ভের কথা শুনে রাজার রাগ সবটা গিয়ে আগে পড়ল মহারানির উপর। আসলে এই “সন্দেহ” নামক জিনিসটা এমনই বিচিত্র যে, সেটা বীজ আকারে মনের মধ্যে একবার ঢুকে গেলে সন্দেহকারী ব্যক্তি নিজেই তাকে জল-হাওয়া দিয়ে পুষ্ট করে সুবিশাল মহীরুহে পরিণত করে। দু’জন অভিন্নহৃদয় বন্ধু কিংবা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে মধ্যে কোথাও কোনও ভাবে যদি এই “সন্দেহ” জিনিসটা একবার এসে দানা বাঁধে, তবে প্রমাণ ছাড়াও দু’জনের মুখ দেখাদেখি বন্ধ হওয়া বা সম্পর্ক বিচ্ছেদ হওয়া সম্ভব। তাই কূটনীতিজ্ঞরা বলেন, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে দু’জন ব্যক্তির সুসম্পর্ক নষ্ট করে দিতে চাইলে একে অপরের মনের মধ্যে সন্দেহের বীজ বপন করে দিতে হবে; দু’জনের মধ্যে সেই সুসম্পর্কে শেষ করে দেওয়ার জন্য বা একজনকে অন্যের চোখে ছোট প্রমাণ করবার জন্য তাদের মনের মধ্যে “সন্দেহ-বীজ” বপন করাটাই হল একমাত্র অস্ত্র।

গোরম্ভের উদ্দেশ্য ছিল এইটাই। রাজার মনে সে দন্তিল সম্পর্কে সামান্য একটা সন্দেহের বীজ বপন করে দিলে মাত্র আর তাতেই রাজা চটলেন প্রথমে মহারানির উপর। কারণটা একটাই, নারীর বহু মর্যাদা থাকলেও সে হল অবলা আর ইতিহাস সাক্ষী যে পুরুষশাসিত সমাজে সর্বত্র নারীকেই লাঞ্ছনা ভোগ করতে হয়েছে যুগ যুগ ধরে। গোরম্ভের কথাটি কিন্তু রাজা বিশ্বাস করলেন। করলেন কারণ, পণ্ডিতদের মতে মানুষের মনের মধ্যে যা কিছু ভালো-মন্দ বা পাপকর্ম, যা কিছু সঞ্চিত থাকে, সেটা ঘুমের মধ্যে কিংবা মদ্যপান করে মাতাল অবস্থায় অন্তরঙ্গ মহলে সে বলে ফেলে। আর স্ত্রীদের নিয়ে তো কিছু বলবারই নেই, তাদের মতো খারাপ আর দ্বিতীয়টি হয় না—

জল্পন্তি সার্ধমন্যেন পশ্যন্ত্যন্যং সবিভ্রমাঃ।
হৃদ্‌গতং চিন্তযন্ত্যন্যং প্রিযঃ কো নাম যোষিতাম্‌।। (মিত্রভেদ, ১৪৬)


অর্থাৎ স্ত্রী-লোকের একান্ত প্রিয় বলে কেউ হয় না, সে কথা বলে একজনের সঙ্গে তো আড়চোখে বিলাসপূর্ণ দৃষ্টিতে দেখে আরেকজনকে; আর ঠিক সে সময়েই মনে মনে চিন্তা করে আরেকজনের কথা। আগুনে যেমন অনেক কাঠ দিয়ে গেলেও আগুনের তৃপ্তি মেটেনা, সমুদ্রে এসে সব নদী মিশলেও সমুদ্রের যেমন জলপানের তৃষ্ণা মেটে না, যমরাজ যেমন কল্পকাল থেকে প্রাণীর প্রাণ হরণ করেও তুষ্ট হন না—মৃত্যুলীলা তার চলতেই থাকেই, নারীরাও ঠিক তেমনই। এক পুরুষের সঙ্গে সহবাস করে তাদের ক্ষিদে মেটে না—তাদের বহুপুরুষ চাই। কেবল নির্জন-স্থান, সঠিক সময় বা ভোগ করবার লালসাযুক্ত পুরুষ সঠিক সময়ে মেলে না বলেই নারীর সতীত্ব টিকে থাকে। আর তার সঙ্গে সঠিক পরিজনের ভয়টাও। শুধু কি তাই? যে মূর্খ ভাবে যে এই নারী আমাকে পছন্দ করে, এ আমার প্রতি আসক্ত—সে ঘরে পোষা পাখির মতো সেই স্ত্রীলোকের বশীভূত হয়ে যায়। যে লোক সামান্য কিছু হলেও স্ত্রীলোকের কাজ কর্ম করে দেয় বা তার কাছে বসে তার দুটো মনের কথা শোনে স্ত্রীলোক তাকেই মনে মনে চাইতে শুরু করে।

নাসাং কশ্চিদগম্যোঽস্তি নাসাং চ বযসি স্থিতিঃ।
বিরূপং রূপবন্তং বা পুমানিত্যেব ভূঞ্জতে।। (ঐ, ১৫৪)

নারীদের কাছে অগম্য বলে কেউ নেই, তারা কে সুপুরুষ বা কে কুপুরুষ সে-সব কিছুই দেখে না। তাদের একটা পুরুষ পেলেই হল। তাই স্ত্রীদের বিশ্বাস করা যায় না।

আমার উপরের কথাগুলো পড়ে আপনার নিশ্চয় বেশ বিরক্তি লাগছে? আর তার উপরে আপনি যদি একজন পাঠিকা হন, তবে আপনি তো সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছেন এতক্ষণে যে আর এই পঞ্চতন্ত্র নিয়ে লেখাটি আপনি পড়বেন না। এত দিনে পঞ্চতন্ত্রকারের প্রতি যেটুকু শ্রদ্ধা জন্মেছিল সে সবটুকুই চলে গেল। আমি বলব উতলা হবেন না। একটু ধৈর্য্য ধরে আমার কথাগুলো শুনুন, তারপরে সিদ্ধান্ত নেবেন। আপনি ভাবতেই পারেন যে, পঞ্চতন্ত্রকারের হয়ে আমি ওকালতি করবো, আপনাদের বোঝাবার চেষ্টা করবো করবো যে এগুলোর মাধ্যমে সকল নারী জাতির প্রতি নিন্দা করা হয়নি, কেবল যারা দুষ্টস্বভাবের তাদেরকে উদ্দেশ্য করেই এসব কথা বলা হয়েছে। আমি এ সব কিছুই বলব না। প্রথমত, আপনাকে শুধু একবার মনে করিয়ে দেবো যে, সারা পৃথিবীতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ইতিহাসে দেখবেন, অবলা নারীরা পুরুষদের কাছে চিরকাল অপমানিত হয়ে এসেছেন, বঞ্চিত হয়ে এসেছেন। ভারতেও তার অন্যথা হয়নি—এটা সত্য। আবার এটাও সত্য যে, শুধু যে ভারতীয় সমাজে নারীরা অপমানিতই হতেন, তারা সম্মান পেতেন না এমনটাও নয়। সকল সমাজই ভালো-মন্দ মিশিয়ে তৈরি হয়—ভারতীয় সমাজও সেইরকমই ছিল।

তবে এখানে একটা কথা আপনাদের শুধু স্মরণ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি যে, রাজার মুখে এই ধরণের কথাগুলো ঠিক কোন সময়ে বসানো হয়েছে সেটা কিন্তু ভুলে যাবেন না। রাজা তখন ক্রুদ্ধ। যত রাগ তখন তার দন্তিল এবং নিজের স্ত্রীর উপরে। কোনও রকম তদন্ত না করেই দন্তিলকে তিনি রাজানুগ্রহ থেকে বঞ্চিত করলেন এবং মহারানিকেউদ্দেশ্য করে যা নয় তাই চিন্তা করলেন। আজকালকার আমলেও দেখবেন পুত্র বা কন্যা যদি ভালো কিছু করে তখন তার পিতা হয়তো গর্ব করে বলেন, “আমার মেয়ে ভালো তো হবেই”; আর যখনই সে অন্যায় কিছু করে, জীবনে ব্যর্থ হয় ব্যাপারটা উল্টে যায়। দোষটা নারীর উপরে যায়। বাবা তখন বলে, “তোমার মেয়ে তো এমন হবেই ইত্যাদি ইত্যাদি”। তখন সে আর “আমার মেয়ে” থাকে না, সে তখন “তোমার মেয়ে” হয়ে যায়।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-১৬: কাউকে অপদস্ত করতে হলে তাঁকে নারীঘটিত বিষয়ে জড়িয়ে দিতে হয়

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৭: বিপৎকালে দেখতে পাই, রাখাল ছাড়া বন্ধু নাই…

আজকের উত্তরাধুনিক যুগেই দাঁড়িয়ে যেখানে আমরা এই রকম করি তখন সেই প্রাচীন কালের কথা আর কি-ই বা বলবো? এই গ্রন্থ যখন লেখা হয়েছে তখনও বেথলেহেমের যীশু জন্ম নেননি— কেউ কেউ বলেন যে পঞ্চতন্ত্রের কাহিনিগুলি বুদ্ধেরও জন্মের আগে তৈরি। আসলে আমি আপনি যেমন, মনে রাখবেন, আমাদের পূর্বপুরুষও কিন্তু ঠিক এমনই মানসিকতার ছিলেন। তাই নারীদের নিয়ে এইসব কথাবার্তাগুলো যে প্রাচীন গ্রন্থগুলোতে রয়েছে, এটাকে অস্বীকার করে লাভ নেই। তবে এটাও ঠিক যে অনেক ভালো কথাও আছে—কিন্তু সে সব নিয়ে অন্য সময়ে আলোচনা করা যাবে।

এখানে শুধু আরেকটা কথা বলে মূল কাহিনিতে ফিরে যাবো। মনে রাখবেন রাজার ছেলেদের রাজনীতি শিক্ষা দেওয়ার জন্যই কিন্তু এই গ্রন্থের রচনা। রাজা কানপাতলা হলে কি হতে পারে এই কাহিনির মূল উপজীব্য কিন্তু এইটাই। সুতরাং কানপাতলা রাজা ক্রোধের বশে কি করছে সেটা নিশ্চয়ই রাজার ছেলেদের অনুকরণ করতে বিষ্ণুশর্মা বলছেন না। তিনি নিশ্চয়ই বলছেন না যে নেহাত সন্দেহের বশে বা লোকের কথায় রাম-রাজার মতো নস্ত্রীকে অপমান উচিত কাজ হয়েছিল। তাই রাজপুত্রদের সামনে এই দন্তিলের কাহিনির উদাহরণ দিয়ে পঞ্চতন্ত্রকার বলছেন, এইরকম কানপাতলা রাজার মতন ব্যবহার করো না—তাহলে সমাজে নিন্দিত হতে হবে।
আসলে নারীর সম্পর্কে যে কথাগুলি বলা হয়েছে, আমি বলব সে কথাগুলো নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল মানুষের ক্ষেত্রেই খাটতে পারে। ভেবে দেখবেন তো একজন স্ত্রীও কিন্তু নেহাত সন্দেহের বশবর্তী হয়ে তাঁর পতিকে শাপ-শাপান্ত করতে গিয়ে গোটা পুরুষজাতটাকে টেনে এনে এইরকম ভাবে গালিগালাজ করতেই পারেন; কিন্তু সেটাও ঠিক নয়—রাজপুত্রদের এইটাই শেখাবার চেষ্টা করছেন পঞ্চতন্ত্রকার।
আরও পড়ুন:

মন্দিরময় উত্তরবঙ্গ, পর্ব-১: ভিতরকুঠি টেরাকোটা শিবমন্দির এক অনন্যসাধারণ কোচ স্থাপত্যশৈলীর উদাহরণ

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫: চন্দ্রমণির বধূবরণ

রাজা এই ভাবে নানা রকম ভাবতে ভাবতে সে-দিন থেকেই দন্তিলকে বিষ নজরে দেখতে শুরু করলেন এবং সমস্ত প্রকার রাজানুগ্রহ থেকে তাকে বঞ্চিত করা শুরু করলেন। রাজদ্বারে প্রবেশেও তার বাধ পড়ল। দন্তিলও একজন বিচক্ষণ মানুষ—কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ করে রাজার স্নেহ নজর থেকে তিনি যে কেন বঞ্চিত হলেন সেইটাই চিন্তা করতে শুরু করলেন। তিনি মনে মনে সব বিশ্লেষণ করে ভাবলেন—এইটাই আসলে জগতের চরিত্র।

ধনসম্পদ পেয়ে গর্বিত হয়নি এমন লোক কি এ জগতে আছে? সামান্য ধনসম্পদ হাতে এলেই লোকের চালচলন বদলে যায়—এটা আমরা নিত্যই জগতে দেখতে পাই। আবার মানুষ বেশ সাবধানী আর বিষয়বুদ্ধি সম্পন্ন হলেও বিপদ-আপদ আসাটা যে চিরকালের মতো শেষ হয়ে যায় এমনটাও নয়। আবার জগতে এমন কোনও বিচক্ষণ ব্যক্তি বা পণ্ডিত মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না যাঁদের মনকে স্ত্রীলোক দিয়ে কামপীড়িত করে তোলা যায় না। সকলেই স্ত্রীসঙ্গ পছন্দ করেন। তেমনই “কো নাম রাজ্ঞান্‌ প্রিযঃ” —রাজার একান্ত প্রিয় বলে কেউ হয় না। রাজা আজ যার উপর স্নেহ বর্ষণ করছেন, আজ তিনি যার উপর প্রসন্ন, কালও যে তার উপরেই প্রসন্ন থাকবেন এমনটা হয় না—রাজার চরিত্রই এমন। পণ্ডিতরা বলেন—

কাকে শৌচং দ্যুতকারে চ সত্যং
সর্পে ক্ষান্তিঃ স্ত্রীষু কামোপশান্তিঃ।
ক্লীবে ধৈর্যং মদ্যপে তত্ত্বচিন্তা
রাজা মিত্রং কেন দৃষ্টং শ্রুতং বা।। (ঐ, ১৫৮)


কাকের মতো প্রাণী, যাদের যাবতীয় নোংরা বা উচ্ছিষ্ট নিয়েই কারবার, তারা খুব পবিত্র এমন ভাবাটা যেমন স্বপ্নাতীত, তেমনই সত্যবাদী জুয়াড়ি বা সাপের সহনশীলতা, স্ত্রীলোকের কামানার উপশান্তি বা ক্লীবের ধৈর্য বা মাতালের ঠিক-বেঠিক বিচারের এগুলোও অসম্ভব। তেমনই রাজা কারো বন্ধু—এই ব্যাপারটাও কেউ দেখেওনি শোনেওনি। রাজা শুধু স্বার্থ বোঝে। যাকে দিয়ে রাজার কার্যসিদ্ধ হয় রাজা শুধু তারই বন্ধু হয়।
দন্তিল চিন্তা করতে শুরু করে, আমি তো রাজা কিংবা রাজার আত্মীয়পরিজন বা তত্সম্বন্ধীয় কোনও ব্যক্তিকে স্বপ্নেও কোনও রকম অনিষ্ট করিনি, তবে মহারাজ আমার প্রতি হঠাৎ রাতারাতি এমন অপ্রসন্ন হয়ে গেলেন কেন?
আরও পড়ুন:

অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-১: একটু শুরুর কথা হলে ক্ষতি কী…

বিধানে বেদ-আয়ুর্বেদ: কৃমির সমস্যায় জেরবার? সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন কী ভাবে? আয়ুর্বেদে রয়েছে প্রতিকার

এইসব চিন্তা করতে করতে কোনও একদিন অবসর বুঝে দন্তিল রাজদর্শন প্রার্থী হয়ে রাজন্তঃপুরে যেতে চাইলে রাজার দ্বারপাল তাকে আটকে দিলেন। এই দেখে সেই ঝাড়ুদার গোরম্ভ হেসে ব্যঙ্গ করে বলল—ওহে দ্বারপাল! রাজার কৃপায় রাজকার্যের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই দন্তিল নিজেই এখন নিগ্রহ বা অনুগ্রহের কর্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজার ইনি খাস লোক। তাই কাকে সাজা দেবে বা কার উপকার করবে—এইসব এখন আর রাজা নন, ইনিই বিচার করেন। তাই এঁনাকে আটকালে আমার মতন তোমারও কপালে “অর্ধচন্দ্র” মানে ঘাড় ধাক্কাই জুটবে। দন্তিলের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এইসব কিছুর পিছনে গোরম্ভেরই অবদান আছে, “নূনমিদমস্য গোরম্ভস্য চেষ্টিতম্‌”—এ সবই গোরম্ভের কীর্তি।

ক্ষুদ্র লোকেদের মজাটা হল, তাদের নিজেদের কলকাঠি নাড়ার কারণে কোনও কিছু একটা ঘটলে বা কোনও একটা উদ্দেশ্য সিদ্ধ হলে, তারা লোকসমাজে এসে আবার নিজেদের কীর্তিটা জাহির করতে চায়। তারা নিজেদের গোপন করতে পারে না। মানেটা হল, তারা এসে সকলে বলে বেড়ায় যে আমি করলাম বলেই না এই এতসব হল — আমার ক্ষমতা কি কম? রাজার খাস লোকেদের প্যাঁচে ফেলতেও আমার জুড়ি নেই; আমি সব পারি। আমাকে বেশি অবজ্ঞা করবেন না ইত্যাদি ইত্যাদি।

দন্তিল বুদ্ধিমান ব্যক্তি। সে বুঝলো সবটাই। রাজার খাস ঝাড়ুদার গোরম্ভ, রাজার কাছেপিঠে তার যাতায়াত—তাকে অপমান করাটা যে কাঁচা কাজ হয়ে গিয়েছে সেটা বেশ বুঝতে পারলো দন্তিল। কারণ কূটনীতিজ্ঞরা বলেন—

অকুলীনোঽপি মূর্খোঽপি ভূপালং যোঽত্র সেবতে।
অপি সম্মানহীনোঽপি স সর্বত্র প্রপূজ্যতে।। (ঐ, ১৫৯)


কোনও ব্যক্তি,সে নিম্নবংশজাত কিংবা অশিক্ষিত বা মূর্খ যাই হোক না কেন, সে যদি রাজসেবক হয়, তাহলে সে কোথাও আদৌ সম্মান পাওয়ার যোগ্য না হলেও, সব জায়গায় আগে তাকে সম্মান করতে হয়। মজাটা হল সে একটি কাপুরুষ বা ভীরু স্বভাবের হলেও শুধু রাজার সেবক হওয়ার কারণে কেউ তার সঙ্গে লাগতে আসে না; প্রতিপক্ষহীন ভাবে সে সর্বত্র জয় লাভ করে। তাই হতে পারে সে গোরম্ভ রাজার ঝাড়ুদার, কিন্তু সে রাজকর্মচারী; তাই তাকে এভাবে উত্সব গৃহে নিমন্ত্রণ করে সবার সামনে অপমান করাটা যে সঠিক কাজ হয়নি সেটা দন্তিল বুঝতে পেরেছে। কারণ সে গিয়েই যে রাজার কাছে তার বিরুদ্ধে কিছু একটা লাগিয়েছে এ বিষয়ে দন্তিল নিশ্চিত। কীভাবে এখন এই পরিস্থিতি থেকে বেরোনো যায়, দন্তিল সেই চিন্তাই করতে শুরু করলেন।—চলবে।
* পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি (Panchatantra politics diplomacy): ড. অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায় (Anindya Bandyopadhyay) সংস্কৃতের অধ্যাপক, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়।

Skip to content