বুধবার ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

‘সেবাধর্ম’ জিনিসটাকে আজকের দিনের প্রেক্ষিতে আমরা চাকরি ক্ষেত্রের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। চাকরি ক্ষেত্রে উন্নতি করতে গেলেও এই ‘সেবাধর্ম’ সম্পর্কে একটা সুনির্দিষ্ট ধারণা থাকাটা দরকার। হাজার হাজার বছর আগের প্রাচীন ভারতের কূটনৈতিক আচার্যরা এই ‘সেবাধর্ম’ সম্পর্কে যা যা বলেছেন, আজকের দিনেও সে কথাগুলো ভীষণভাবেই প্রাসঙ্গিক। দমনকের কথার মধ্যে দিয়ে পঞ্চতন্ত্রকার ‘সেবাধর্ম’ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত যে আলোচনা করেছেন, যেটা একই সঙ্গে প্রভু এবং তাঁর অধীনে থাকা কর্মচারী — দুজনের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক ‘সেবাধর্ম’ যিনি জানেন তিনিও যে সোনায় মোড়া এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ফলটি অন্যান্য শূরবীর এবং বিদ্বান ব্যক্তির মতো সমানভাবেই ভোগ করতে পারেন সেকথা প্রথমেই করটকের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে দমনক। কিন্তু সেক্ষেত্রে সেবা করার যোগ্য যথার্থ একজন প্রভু যেমন প্রয়োজন তেমনই যথার্থ একজন সেবকও প্রয়োজন।

তাই প্রভু কিংবা তাঁর সেবক — কোনও একজন যদি যথাযথ না হন তবে সেই মণিকাঞ্চন যোগটাও যেমন ঘটে না, তেমনই দুজনের মধ্যে কেউই তখন সোনায় ঢাকা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ফলটা ভোগও করতে পারে না। তাই শুধু ‘সেবাধর্ম’টুকুই জানাটাই যথেষ্ট নয়, জানতে হবে কী রকম প্রভুকে সেবা করতে পারলে তবে ‘সেবাধর্ম’ সফল হয়। তাই সেই যথার্থ প্রভুর লক্ষণটি কেমন সে কথাই প্রথমে বলতে শুরু করে দমনক। করটককে বলে—

যো ন বেত্তি গুণান্‌ যস্য ন তং সেবেত পণ্ডিতঃ।
ন হি তস্মাৎ ফলং কিঞ্চিৎ সুকৃষ্টাদূষরা ইব।।


অর্থাৎ যে মানুষের মধ্যে সামান্য হলেও কিছু বুদ্ধি-সুদ্ধি আছে তার উচিত এমন প্রভুর অধীনেই সেবাবৃত্তি গ্রহণ করা যিনি তাঁর সেবকদের গুণগুলো সম্পর্কে খবর রাখেন। দমনকের মতে প্রভু তাঁর সেবকের গুণগ্রাহী না হলে কখনই তাঁর অধীনে কারো কাজ করা উচিত নয়। বন্ধ্যা ভূমিতে বহু পরিশ্রম করে চাষ করলেও যেমন শস্য-ফল ভালো পাওয়া যায় না, তেমনই স্বামী তাঁর অধীনস্ত কর্মচারীদের সেবাবৃত্তির গুণগ্রাহী না হলে, সেবকেরা জান-প্রাণ দিয়ে পরিশ্রম করলেও সে স্বামীর কাছ থেকে কোনও রকম সুফল বা উন্নতি কিছুই লাভ করে না। সেবকরাও তখন সেই প্রভুর অধীনে কাজ করবার উত্সাহ হারিয়ে ফেলে। বরঞ্চ কোনও উদ্যোগপতি, কপাল দোষে সমায়িকভাবে তিনি যদি ধনসম্পদহীনও হয়ে যান, তাঁর পরিবারবর্গ যদি তাঁকে ছেড়েও চলে যান, তবুও তাঁর মধ্যে যদি সেবা করার মতো গুণগুলি থাকে তবে অবশ্যই তাঁকে সেবা করা উচিত। কারণ এইরকম প্রভুর কাছ থেকে তত্ক্ষণাৎ সেবাবৃত্তির ফল পাওয়া না গেলেও, পরে তাঁর অবস্থা যেদিন ভালো হবে সেদিন থেকে আজীবন তিনি তাঁর সেবকদের সে ফল প্রদান করে থাকেন।
তাই একজন যথার্থ প্রভু হতে গেলে তাঁর অধীনের কর্মচারীদের প্রতি তাঁর দয়া-দাক্ষিণ্য, উদারতা, দানশীলতা প্রভৃতি গুণগুলো থাকাও ভীষণভাবে প্রয়োজন। যথার্থ রাজা হওয়ার লক্ষণও তাই। একজন প্রশাসক নিজের উন্নতিটুকু চাইলেও তাঁর অধস্তন কর্মচারীদের প্রতি দয়া-দাক্ষিণ্য প্রভৃতি গুণগুলিকেও প্রকাশ করতে হয়। দেখা যায় প্রশাসক তাঁর কর্মচারীদের প্রতি সামান্যতম সহানুভূতিশীল হলেই তাঁর কর্মচারীরা সেবাবৃত্তির মাধ্যমে তাঁর সেই প্রভু বা সেই প্রশাসকে একশো গুণ ফিরিয়ে দেন।

দমনকের মতে, মানুষের যদি কিছুটা হলেও ‘সেবাবৃত্তি’ সম্পর্কে জ্ঞান থাকে, নিজের কর্মক্ষেত্রে উন্নতি করবার আশা থাকে, তাহলে মায়া-দয়াহীন প্রভুর অধীনে কখনই কাজ করা উচিত নয়। প্রভু কিছু আদেশ করলেও সেক্ষেত্রে নিশ্চল বৃক্ষের মতোই অবস্থান করা উচিত। কিন্তু সত্যিই যে প্রভু সেবা করার যোগ্য তাঁকে যথার্থভাবেই সেবা করা উচিত। জগতে আমরা অধিকাংশ সময়েই দেখি যে সেবকরা তাঁর প্রভুর উদ্ধত আচরণের জন্য প্রভু নিন্দা করে থাকেন, পঞ্চতন্ত্রকার বলেন যে, এই নিন্দাটি আসলে সেই সেবকের নিজেরই প্রাপ্য। কারণ তাঁরা নিজেই জানেন না যে কার অধীনে সেবাবৃত্তি বা চাকরি করা উচিত বা কার অধীনে করা উচিত নয়।

রাজনীতিবিদরা বলেন, সেইটাই যথার্থ সেবা, যা করলে প্রভুর ভালো হয়, উন্নতি হয়। কারণ প্রভুর উন্নতির উপর সেবকের উন্নতি নির্ভর করে। যথার্থ সেবককে তাঁর প্রভুর আদেশ থেকেই সঠিক সেবার প্রকৃতিটি অনুমান করে নিতে হয়; আর সেবক যদি যথার্থ গুণসম্পন্ন হন তবে সহৃদয় রাজাই হলেন তার উন্নতির একমাত্র আশ্রয়।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৯: যোগ্য বা অযোগ্য—যে মানুষই রাজার আশেপাশে থাকেন, রাজা তারই কথায় ওঠেন-বসেন

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১: সুন্দরবনের শেকড়ের খোঁজে

আবার এটাও ঠিক যে, প্রভু বা রাজা তাঁর সেবকদের প্রতি সহৃদয় হলেও সেবাবৃত্তিতে নিজের উন্নতি সাধন করতে গেলে সেবককেও বুঝে শুনে যথাযথ ‘সেবাধর্ম’ পালন করতে হয়। পঞ্চতন্ত্রকার বলেন যে, শুধু রাজা বা তাঁর প্রভুই নন, তাঁর মা, তাঁর স্ত্রী-পুত্র এমনকি তাঁর মুখ্যমন্ত্রীরা, পুরোহিত এমনকি প্রভুর বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা দারোয়ান বা সিকিউরিটি গার্ডটির সঙ্গেও প্রভুর মতোই আচরণ করতে হয়। যাতে রাজা বা প্রভুর আশেপাশে যতজন থাকে সকলেই সেই সেবকের প্রতি সদয় মনোভাবাপন্ন থাকেন — তবেই প্রভুর কাছে সেই সেবকের স্থান দৃঢ় হয়।

ভেবে দেখুন তো, সেবক যদি শুধু তাঁর প্রভুর কথাটুকুই শোনেন কিংবা প্রশাসনে থাকা বড়কর্তার কথাটাই শুধু মানেন কিন্তু তাঁর পরিবারের আর কাউকে পাত্তা না দেয়। তবে প্রভুর কাছে ভালো হলেও সেই প্রভুর পরিবার বা প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিকেরা কি তাকে মেনে নেবে? তাই যথার্থ সেবকের কর্তব্য হল তাঁর প্রভু বা রাজা যাঁর যাঁর কথাকে পাত্তা দেন, যাঁকে যাঁকে সম্মান করেন, যাঁকে যাঁকে স্নেহ করেন তাঁদের সকলের সঙ্গে রাজার মতোই আচরণ করা। প্রভু প্রসন্ন হয়ে সেবককে কখনও যদি কোনও উপহার প্রদান করেন এবং সে সেবক যদি সেটুকুই অতি উত্সাহের সঙ্গে গ্রহণ করেন সেই তখন প্রভুর প্রিয় হন।

ধরুন আপনি কাউকে প্রসন্ন হয়ে একটি জামা দিলেন আর সে যদি ভালোবেসে সেটা তত্ক্ষণাৎ আপনার সামনে সেটি পরে উপস্থিত হয় তাহলে আপনার যেমন ভাল লাগে — সে প্রভুরও তেমনই ভালো লাগে। সেই সেবককে সদা সর্বদা সুনজরেই দেখেন তিনি। তবে রাজা বা প্রভুর সুনজরে থাকবার জন্য এইটুকুই কিন্তু যথেষ্ট নয়। পঞ্চতন্ত্রকার বলেন —

অন্তঃপুরচরৈঃ সার্ধং যো ন মন্ত্রং সমাচরেৎ।
ন কলত্রৈর্নরেন্দ্রস্য স ভবেদ্রাজবল্লভঃ।।


অর্থাৎ যে সেবক প্রভু বা রাজার অন্তঃপুরে কর্মরত ব্যক্তিদের সঙ্গে রাজার গোপনীয় বা ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করে না এবং প্রভুর স্ত্রীদের সঙ্গেও বাক্যালাপ করেন না সেই তাঁর প্রভুর প্রিয় হন।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৯: পথের প্রান্তে রয়ে গিয়েছে সে হাজার তারার ‘লক্ষহীরা’

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১৬: ‘ও হানসিনি, মেরি হানসিনি কাঁহা উড় চলি’—কিশোর-পঞ্চম ম্যাজিক চলছেই

প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি যে, সে আমলে ক্ষত্রিয় সমাজে এবং অবস্থাপন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে বহুবিবাহ খুবই প্রচলিত ছিল। যুদ্ধকালে বা বিপদের সময় যে সেবক তাঁর প্রভুকে আড়াল করে নিজে সম্মুখ সমরে সামনে এগিয়ে যায়। কিন্তু বিপদ চলে গেলে নগরে বা গ্রামে প্রভু যেখানে সম্মানিত হন, সেখানে নিজের কৃতিত্ব জাহির না করে বরং নিজে পিছনে থেকে প্রভুকে সামনে এগিয়ে দেন — সেই সেবকেই প্রভু বা রাজা পছন্দ করেন। পঞ্চতন্ত্রকার বলেন, যথার্থ সেবকের ধর্ম এইটাই যিনি এতো কিছু উপকার করেও নিজে বিনীত থেকে সর্বদা প্রভুর প্রাসাদে তাঁর আদেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। রাজা বা প্রভুর শত্রুদের প্রতি যে সেবক নিজের শত্রুর মতো মনোভাব পোষণ করেন আর তাঁর প্রিয়জনদের কী করে ভালো হয় সেই নিয়ে সর্বদা ব্যস্ত থাকেন। তিনিই হন রাজার প্রিয় — রাজবল্লভ।

এমন সেবকের প্রভু নিন্দাও যেমন তাঁর করা উচিত নয়, তেমনই প্রভুর সঙ্গে বিবাদেও যাওয়া উচিত নয় — এমন সেবকই সকল রাজার পছন্দের হয়। আসলে সরকারি বা বেসরকারি যে কোন প্রতিষ্ঠানেই আপনি যদি সেবাবৃত্তি মানে সার্ভিসের সেক্টরে থাকেন তাহলে ঠিক এই রকম যথার্থ সেবকের মনোভাবটা রাখলেই দেখবেন আপনি কতোটা দ্রুত উন্নতি করছেন। আসলে রাজারই খেয়ে, রাজারই পরে যদি রাজারই বিরধিতা করেন তাহলে রাজা যে আপনাকে পছন্দ করবে না এ কথা নিশ্চয় আর বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। তাই এইটুকু বুদ্ধি থাকলেই ‘সেবাবৃত্তি’তে উন্নতি নিশ্চিত।

পাঠকদের এবার একটা ছোট্ট জিনিস একটু নজরে আনতে ইচ্ছে করছে। ভেবে দেখুন এই ‘সেবাবৃত্তি’র উপর লম্বা-চওড়া ভাষণ যেটা দমনক দিল সেটা কিন্তু আসলে পঞ্চতন্ত্রকার শোনালেন অমরশক্তি রাজার দুর্মেধা সেই তিন ছেলেদেরকেই, যাঁদের রাজনীতি-কূটনীতি শেখানোর জন্যই এই গ্রন্থটা তিনি রচনা করেছিলেন। তাই ভবিষ্যতে যাঁরা হিউম্যান রিসোর্স নিয়ে নাড়াচাড়া করবেন, মানে সোজাকথায় লোক চড়িয়ে রাজ্যশাসন করবেন, সেই রাজপুত্রদের একজন ভালো রাজা বা প্রভুর লক্ষণটি কিন্তু বলে দেওয়া হল। কী রকম রাজা হলে তবে সেবক তাঁর কাছে থাকবে সেটা জানানোর পাশাপাশি উন্নতির স্বার্থে সেবকদের নিজস্ব মানসিকতাগুলোও ঠিক কেমন হয় সে সম্পর্কেও একটা ধারণা দিয়ে রাখলেন তিনি। রাজা হতে গেলে তাঁর অধীনে কাজ করা লোকেদের সাইকোলজিটা ঠিক কেমন ধরণের হয় সেটাও এখানে জানিয়ে দেওয়া হল।
আরও পড়ুন:

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৩: গায়ে আমার পুলক লাগে

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৪: মাথায় চোট মানেই কি ইন্টারনাল হেমারেজ?

করটক তখন বলে, সবই তো বুঝলাম ভায়া কিন্তু “ভবাংস্তত্র গত্বা কিং তাবৎ প্রথমং বক্ষ্যতি তত্তাবদুচ্যতাম্‌” — সেখানে হঠাৎ গিয়ে প্রথম কথাটা পাড়বে কীভাবে সেটা আগে বলো?

দমনক বলে, অন্যদের কথোপকথনের মাঝে কী করে ঢুকে যেতে হয় সে বিদ্যা আমি জানি। কিছু কিছু লোক আছে যারা প্রসঙ্গ বোঝে না কিন্তু অপ্রসঙ্গে কথা বলে দেয় — তারা মূর্খ ছাড়া আর কিছুই নয়। এছাড়া আরও এক রকমের মূর্খ লোক আছে, যারা সব জেনে-বুঝেও সময় মতন কথা বলতে জানে না; বোবা হয়ে থাকে। কিন্তু সঠিক প্রসঙ্গ বুঝে ঠিক সময়ে যারা অন্যের কথোপকথনের মধ্যে ঢুকে যেতে পারে তাই আসল চতুর। বাক্‌চাতুর্যে অনন্য এইসব লোকেদের কথা অন্যান্য মানুষদের কাছে একেবারে নিজের মনের কথার মতন লাগে; যেন শুকপাখির মধুর কুজন। তাঁদের এক-একটা কথা যেন বাঁধিয়ে রাখার মতো সুন্দর হয়।

তাই করটককে আশ্বস্ত করে দমনক বলে, ভাইরে অপ্রসঙ্গে কথা আমি বলি না। পিতাঠাকুরের কোলে পিঠে থাকার সময় শিশুকালে রাজনীতির অনেক কথা খেলায় খেলায় আমিও কিছু কিছু শুনেছি। শাস্ত্রে বলে, দেবগুরু বৃহস্পতিও যদি অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য করেন, তবে তাঁকেও অপমানিত হতে হয়। তাই অপ্রসঙ্গে কথা বলে নিজেকে অপ্রাসঙ্গিক বা হাস্যাস্পদ করতে রাজি নই মোটেই। তাই কথা কিভাবে শুরু করতে হবে সেটা তুমি আমার উপর ছেড়ে দাও।

করটক তখন বলে, আসলে রাজার আশেপাশে এতো সব দুষ্ট লোক ঘুরে বেড়ায় যে রাজার কাছ পর্যন্ত পৌঁছনোই তো মুশকিল। “দুরারাধ্যা হি রাজানঃ পর্বতা ইব সর্বদা” — হিংস্র জন্তু-জানোয়ারে ভরা উঁচু পাহাড়ে ওঠা যেমন অসম্ভব, তেমনই রাজার আশেপাশে থাকা দুষ্ট ও ক্রুর স্বভাব লোকেদের জন্য রাজার কাছাকাছি পৌঁছে তাঁকে কিছু বলতে পারাটা খুব মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। প্রাচীন রাজনৈতিক আচার্যরা রাজাকে সাপের সঙ্গে তুলনা করে বলেন রাজা হলেন দ্বিজিহ্বা বিশিষ্ট। সাপের জিহ্বার মাঝখানটিতে চেরা থাকে বলে সংস্কৃতভাষায় সাপের আরেকটি সমার্থক শব্দ হল ‘দ্বিজিহ্ব’। রাজা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম কথা বলে থাকেন; আগের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনায়াসে ভুলে যেতে পারেন। এমনকি সকালে একরকম কথা বলে বিকেলেই অন্যরকম কথা বলতে তাঁর এতোটুকুও নৈতিকতায় বাঁধে না — তাই প্রাচীন রাজনীতিশাস্ত্রের পণ্ডিতেরা রাজাকে দুটি জিহ্বা বিশিষ্ট বলতে দ্বিধা করেননি যিনি দুই জিভে দুই রকম কথা বলেন।

রাজা সব সময় অন্যের ছিদ্র বা দোষ অন্বেষণ করে তাকে শাস্তি দিয়ে তাঁর অনিষ্ট সাধন করে। এমনকি রাজার উপকার করলেও রাজা সবসময় তা মনে রাখে না, প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে রাজাও তাঁকে ভুলে যান সহজেই। তাই রাজাকে প্রসন্ন করা খুবই কঠিন।—চলবে
* পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি (Panchatantra politics diplomacy): ড. অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায় (Anindya Bandyopadhyay) সংস্কৃতের অধ্যাপক, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়।

Skip to content