শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


অলঙ্করণ: লেখক।

এই সেদিন চলে গেল আন্তর্জাতিক জেব্রা দিবস। একত্রিশে জানুয়ারি। জেব্রারা জানে? কে জানে!! এমনিতে জেব্রা নিয়ে আমাদের ভাবনা জেব্রা ক্রসিং পর্যন্ত। সেটাই স্বাভাবিক, বাস্তব। জেব্রারা কী খায় বা কোথায় থাকে, তারা রোজ স্কুল কিংবা আপিসে গেলে সিগন্যাল মানতো কিনা ইত্যাদি গভীর প্রশ্নের থেকেও গভীরতর নানা বিষয় আছে। যেমন, সামনের ট্রাফিক জ্যামটা আর কতক্ষণের জন্য কিংবা তা কৃত্রিম না এমনিতেই পাকিয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিংবা, ওই যে বেড়ালটা গাড়ির সামনে দিয়ে চলে গেল প্রাণ লেজে করে, রাস্তা কণ্ট্রোল করতে ওদের চাকরি দিলে কেমন হয়? অথবা, সিগন্যাল লাল হলে মানুষ হুড়মুড়িয়ে যেখান সেখান দিয়ে আর কুকুর ভালো করে ডান-বামে দেখে জেব্রা ক্রসিং দিয়েই পার হয় কেন?
যাই হোক, জেব্রারা ভালো থাকুক। তাদের মতো নিরীহ জীবের-ও পৃথিবীতে একশোভাগ অধিকার। কিন্তু জেব্রা ও অ্যালজেব্রার মধ্যে কে বেশি নিরীহ কিংবা, জেব্রা ক্রসিং ধরে ধরে যে মানুষ রাস্তার এপার ওপার করে, তার সঙ্গে একটা জেব্রার গুণগত কী মিল আছে বা নেই, তা বুঝে ওঠাও খুব সহজ নাকি!

একটা জেব্রা ছুটছে। পিছনের সিংহটা দূরত্ব কমাচ্ছে ক্রমেই। শেষে দূরত্ব আর থাকল না। দুজনে এক হয়ে গেল। জেব্রাটা থাকল না। সিংহ থাকল।
আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-২৯: খ ব র দা র

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১১: স্বর্ণকুমারী দেবী— ঠাকুরবাড়ির সরস্বতী

মানুষের সমাজে বীরত্ব বলতে পুরুষ সিংহের দৃষ্টান্ত ঘুরে বেড়ায়। আবার ভালো মানুষ হতে চাওয়াটা বিরল নয়। কিন্তু আবার, ভালো মানুষের দিন গেছে, ভালোমানুষী ভালো নয় মোটেই… ঘাড়ের ওপর লাফিয়ে প্রাণপাখিটারে ছিনিয়ে নেওয়াও ভালো বুঝি! সেখানে আবার খাদ্য-খাদকের অচ্ছেদ্য বন্ধন…আসলে এই হত্যা আর হনন নিয়ে সিংহের অনুশোচনা আর জেব্রার যুগে যুগে দলিত হওয়ার থিওরি একান্তই মানুষের। জেব্রা যে শান্ত আর সিংহ যে বীর একথা তারা বোঝে না বোধহয়, নিজের টিকে থাকার জন্য যা করতে হয়, তারা সেটাই করতে থাকে।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬১: ‘বন্ধু’ তোমার পথের সাথী

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩২: সরকারবাড়ির ছেলেদের সঙ্গে শ্রীমার বুড়ি-বুড়ি খেলা

তবে, এই সিংহ ও জেব্রার এই সম্পর্কটা যেভাবে মানুষ বেঁধেছে, সেটার ছবি জেব্রার গায়ের রঙে ফুটে আছে। যত ভালো কিছু, তার জন্য সাদা আর তেমনটা না হলেই, সেই ভালো না হওয়াটা আপেক্ষিকতায় আক্রান্ত হলেও, তা কালোই।

জেব্রা ক্রসিং না মেনে মাঝরাস্তায় গিয়ে আবার ছুট্টে আগের জায়গায় ফিরে আসতে গিয়ে “সিগন্যালটা এই সময়েই সবুজ হতে হল” একথা ভেবে, দিনকাল কী যে পড়ল সেটাই বারবার স্মরণ করিয়ে সিগন্যালের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা কুকুর, কিংবা গভীর রাতে দেখা সেই অমীমাংসিত স্বপ্ন অথবা হাওড়া থেকে খানিক পরেই ছাড়বে এমন বাসের ঘাড়ে দোষটা নিপুণ কায়দায় চাপিয়ে দিচ্ছে যে আমরা-ওরা-তারা আর সিংহের থাবায় ছটফট করতে থাকা আহত জেব্রা, সমান পরিস্থিতিতেই আছে।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭৯: কবির ভালোবাসার পশুপাখি

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৪৯: মহাকাব্যের রাক্ষস ও মানুষের কাহিনিতে আধুনিক জীবনচিত্রের প্রতিফলন রয়েছে কি?

এই জটিল অ্যালজেব্রা মেলাতে চাইছে যে দ্বিপদ থেকে চতুষ্পদের দল, ক্রস করতে চাইছে একে অন্যকে, তাদের সামনের সিগন্যালের আলোটা ঠিকঠিক চোখে পড়ছে তো?
* হুঁকোমুখোর চিত্রকলা : লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।

Skip to content