এনহেদুয়ান্না।
প্রায় ৪২৭৪ বছর আগের কথা। যিশু খ্রিস্টের জন্মেরও ২২৫৮ বছর আগে ২২৮৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আক্কাদিয়ান সাম্রাজ্যে ভূমিষ্ঠ হয় এক কন্যা। নাম এনহেদুয়ান্না। পিতা সারগন ও মাতা তাশলুলতুম। এনহেদুয়ান্না যত বড় হতে থাকে তার প্রতিভার সকলের নজরে কাড়ে। মাত্র ২৭ বছর বয়সে তিনি এক প্রার্থনা সভার নেতৃত্ব দেন।
এনহেদুয়ান্না শব্দের অর্থ ‘অন্তরীক্ষের দেবী’। অসুর লুগাল এনের হাত থেকে রাজা সারগনের সাম্রাজ্যকে রক্ষা করার জন্য চন্দ্রদেবী সুয়েনের মন্দিরে প্রার্থনায় রত হয়েছিলেন তিনি। অসম্ভব মেধাবী এই নারী ৪২টি স্তব গান রচনা করেছিলেন। তাঁর পিতা তাঁকে রাজ্যের প্রধান পুরোহিতের পদে অভিষিক্ত করেন। এই পদটি তৎকালীন যুগে রাজ্যের সবচেয়ে সম্মানীয় পদ হিসাবে গণ্য করা হত।
আরও পড়ুন:
প্রথম আলো, পর্ব-২: পৃথিবীর কোথায় প্রথম হাসপাতাল গড়ে উঠেছিল?
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-১২: আমাকে আমার মতো থাকতে দাও
সম্রাট সারগনের মৃত্যুর পরে তাঁর পুত্র রামিস সম্রাট হলেও এনহেদুয়ান্না তাঁর স্বপদে বহাল থাকেন। এনহেদুয়ান্নার রচিত স্তবগানগুলি পরবর্তীকালে ৩৭টি প্রস্তরখণ্ড থেকে উদ্ধার করা হয়। দেবী ইনানার স্তুতিমূলক আরো বেশ কিছু শ্লোকও তিনি রচনা করেছিলেন। এই শ্লোকগুলোই প্রার্থনাসভা সংগীতের ভিত্তি নির্মাণ করে। এনহেদুয়ান্নার মাধ্যমেই সারগন সুমেরীয় দেবদেবীর স্থলে আক্কাদিয়ান দেব-দেবীগণের আধিপত্যকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৬: বহু জনমের মায়া, ধরিল যে কায়া, ওগো ‘শিল্পী’ সে তো শুধু তোমারই ছায়া
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৪: গলায় মাছের কাঁটা ফুটলে ওষুধ খেলে গলে যায়?
এনহেদুয়ান্নার এই কাব্যপ্রতিভা তৎকালীন নারী সমাজের গৌরব। তাঁর এই প্রতিভা মেসোপটেমিয়ার নারীদের শিক্ষা গ্রহণে অনুপ্রাণিত করে, উদ্বুদ্ধ করে কাব্য রচনায়। এনহেদুয়ান্না সম্পর্কে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ পল ক্রিওয়াসজেক বলেন, ‘তাঁর কম্পোজিশন, যদিও এই আধুনিককালেই কেবল পুনরুদ্ধার করা হল, কিন্তু এগুলি সর্বকালের অনুনয়মূলক প্রার্থনার মডেল। ব্যাবিলনীয়দের মাধ্যমে এর প্রভাব হিব্রু বাইবেলে এবং প্রাচীন গ্রিক প্রার্থনাসংগীতেও এসে পড়েছে। ইতিহাসের প্রথম কবি এনহেদুয়ান্নার শ্লোকগুলোর প্রভাব প্রথম দিকের খ্রিস্টান চার্চেও শোনা যেত।’
প্রার্থনা এক বিশ্বাস, এক মানবতাবোধ। এনহেদুয়ান্নার প্রার্থনাশ্লোক তৎকালীন মানবসভ্যতার জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিল। মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করেছিল এক স্বর্গীয় অনুভূতি। পৃথিবীর প্রথম কবি এনহেদুয়ান্না বিয়ে করেননি, সংসার ধর্মও গ্রহণ করেননি। মাত্র ৩৫ বছর বয়সে ২২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তিনি পরলোকগমন করেন।
প্রার্থনা এক বিশ্বাস, এক মানবতাবোধ। এনহেদুয়ান্নার প্রার্থনাশ্লোক তৎকালীন মানবসভ্যতার জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিল। মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করেছিল এক স্বর্গীয় অনুভূতি। পৃথিবীর প্রথম কবি এনহেদুয়ান্না বিয়ে করেননি, সংসার ধর্মও গ্রহণ করেননি। মাত্র ৩৫ বছর বয়সে ২২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তিনি পরলোকগমন করেন।
* প্রথম আলো: সোমা চক্রবর্তী (Soma Chakrabarti), শিক্ষিকা, নিমতা জীবনতোষ ঘোষ মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুল (উচ্চ মাধ্যমিক)।