রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


অলঙ্করণ: লেখক।

পাঁচুই ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মাটি দিবস। মহাপুরুষ মাত্রেই বলেন ও জানেন যে, “টাকা মাটি মাটি টাকা”… ভারতীয় দর্শন মাটির তৈরি গোটা কিংবা আধখানা ঘট নিয়েই প্রায় পরমাণু, পরমাত্মা, বিভু কিংবা নিত্য-অনিত্যের সকল তথ্য বলতে চায়। দুরূহ লাগলে পণ্ডিতরা বলেন “ঘটে কিছু নেই”…
সে যাই হোক, ঝড় তুফানে জলে পড়ে সাঁতার না জানলে জীবন মাটি। আবার, দর্শনের ওই অনিত্য জগতে কারণ-কার্যের হিসেবে মাটিই একমাত্র সত্য, কারণ সে-ই, বিনাশেও সে-ই আশ্রয়। এদিকে গুপ্তধন পুঁতে রাখার জন্য-ই হোক, কিংবা সোনার ফসল ফলাতে সেই সোনার মাটিই ভরসা। মাটিতে পা দিয়ে চলতে না পারলে মুশকিল, ওদিকে তোমার কথা না শুনলে সব মাটি হওয়ার উপক্রম। বিনা যুদ্ধে সূচ্যগ্র মেদিনী না দেওয়ার দুর্নিবার প্রতিজ্ঞা, ভূমির দখল থেকে তালগাছের “মা যে হয় মাটি তার” ভেবে নিশ্চিন্ত হতে পারা কিংবা অপমানে-লজ্জায় মাটিতে মিশে যাওয়া…
আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-২৩: চল্ রে চল্ সবে…

চলো যাই ঘুরে আসি, অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্পের পথে, পর্ব-৩: অবশেষে অভাবনীয় প্রাপ্তি ও স্বপ্নপূরণ

মাটি লাল-কালো-বাদামি ইত্যাদি হলেও তার গভীরে রামধনুর দ্যুতি। অপমানে ধরিত্রীও দ্বিধা হয়, কখনও শুষ্কতায়। মাটি, মৃত্তিকায় আমাদের শিকড় গভীর থেকে গভীরতর লোকে যায়, আমরা মাটিকে শ্রদ্ধা করি, ভালোবাসি, আবার তাকে পেতে ভয় করি, আবার ভালোবাসি, একটু আশ্রয় বা মাটির জন্য আকুতি থেকে মাটির গান, মাটির মানুষ, দেশের মাটি, মাটির টান, অথবা শিকড় থেকে বিচ্ছিন্নতার তত্ত্ব… সব আমাদের ব্যালকনির টব থেকে কৃষি-অকৃষিজমির উর্বরতায়, সম্ভাবনায়, বাগান থেকে ফুলে ঢাকা বনতলের সকল উত্পত্তি, বিপন্নতায়, আঁকড়ে ধরার বাসনা থেকে অক্ষমতার ভাঙনে জমে উঠতে থাকে।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৪: সে যেন অন্য এক ‘পূনর্মিলন’

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৮: সকালবেলাই হাঁটতে হবে?

মাটি জমে জমে পাহাড়, এ কূল থেকে ও কূল, ও পারের মুখরতায় আর এ পাড়ের ভাঙনে মৃন্ময় ও চিন্ময়ের ব্যবধান ঠিক ততটাও দুস্তর মনে হয় না।

মাটি নিয়ে এসব আলাপ ও বিলাপে তাকে কামড়ে থেকে নিজেরটা বুঝে নেওয়ার কথাটাও বাদ দেওয়া যায় না। মাটি, জমি, ভূমি যখন অবলম্বন তখন তার গভীর ও বাইরের সকল সৌন্দর্য ডালি-ভরে ধরিত্রীর ভাণ্ডারকে ভরে তোলে, মাটির জন্য একটা দিন সেজন্যই বেছে রাখা। তবে এটা একটা ফিল গুড আইডিয়া বৈ আর কী! মাটির দাম কি সত্যিই আমাদের উপলব্ধি কিংবা অনুভূতিতে কোনও প্রভাব ফেলে?
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২২: ঠাকুর ও মা সারদার সংসার

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৪২: বাস কোথা যে পথিক — এবার কি গন্তব্য সুতীক্ষ্ণমুনির আশ্রম?

মাটির পুতুল থেকে দেশ ভেঙে ভেঙেই সব মাটি হয়। তৈরি হয়-ই তারা জলে মিশবে বলে। লাভ-লোকসানের অর্থনীতি কিংবা সমাজনীতির আবর্তে পাক খেতে খেতে মাটি করাই যাদের রক্তে বহমান, তাদের জন্য কী দিন কী রাত, কিছু আসে যায় না… উঠতে-বসতে কিংবা কাজে-অকাজে বারবার, সেই সারসত্য মনে করানোই কাজ তাদের, সব মাটি করে, ভণ্ডুল, যাত্রাভঙ্গ, পণ্ড কিংবা কেঁচেগণ্ডূষ করে করেই তারা মাটি ছাড়িয়ে ওঠে, মাটি-ও তাদের ছাড়িয়ে জমতে থাকে ওপারে, কিংবা নতুন বর্ষার জলে ভিজে সোঁদা গন্ধ বইয়ে দেয়, জীবনের হিসেবখাতার পাতাগুলো সেই বাতাসে খানিক ছটফট করতে থাকে…
* হুঁকোমুখোর চিত্রকলা : লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।

Skip to content