অলঙ্করণ: লেখক।
নভেম্বর শেষ। বছরটাও প্রায় তাই। কিন্তু শেষ হয় না অনেককিছুই। তাই “চরৈবেতি”… নভেম্বর মাসের দশ তারিখ বিশ্ব গণপরিবহন দিবস। পৃথিবীটা ছুটছে, দূরকে নিকটবন্ধু করে। পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে অনেক কিছুই হয়ে গিয়েছে। পায়ের নিচে সর্ষে আর গাড়ির নিচে চাকা এই হল আধুনিক চলার মূলমন্ত্র। আর গণপরিবহন না থাকলে কী হতে পারে অতিমারি এলে দেখা যায়।
অতয়েব, সাইকেল রিকশো থেকে অটো কী টোটো, পালকি কিংবা গোশকট, স্লেজ অথবা ঘোড়ার গাড়ি, রথ কিংবা নৌকো, জাহাজ অথবা রোপ-ওয়ে, ঠেলাগাড়ি কিংবা লিফট, বাস কিংবা লরি, ট্রাম কিংবা ট্রেন, মেট্রো, প্লেন কিংবা রকেট অতীত থেকে বর্তমানে যে যার কালে ভীষণরকম দরকারি হয়ে সুদূর ভবিষ্যতেও গণপরিবহনের ধারণা বলবত্ রাখবে, নিশ্চয়ই। না হলে এগারো নং কিংবা “চরণবাবুর ট্যাক্সি”জাতীয় ঠাট্টাতামাশা কিন্তু শেষ আশ্রয় তো থাকবেই।
অতয়েব, সাইকেল রিকশো থেকে অটো কী টোটো, পালকি কিংবা গোশকট, স্লেজ অথবা ঘোড়ার গাড়ি, রথ কিংবা নৌকো, জাহাজ অথবা রোপ-ওয়ে, ঠেলাগাড়ি কিংবা লিফট, বাস কিংবা লরি, ট্রাম কিংবা ট্রেন, মেট্রো, প্লেন কিংবা রকেট অতীত থেকে বর্তমানে যে যার কালে ভীষণরকম দরকারি হয়ে সুদূর ভবিষ্যতেও গণপরিবহনের ধারণা বলবত্ রাখবে, নিশ্চয়ই। না হলে এগারো নং কিংবা “চরণবাবুর ট্যাক্সি”জাতীয় ঠাট্টাতামাশা কিন্তু শেষ আশ্রয় তো থাকবেই।
গণপরিবহন “আম”দের জন্য, বা বলা যেতে পারে আমাদের জন্য। এর কাজটা মৃতসঞ্জীবনীর মতোই। কিন্তু তেতো ওষুধের মতোই একে গিলতে হয়। শেষ ট্রেন, লাস্ট বাস ইত্যাদি ভৌতিক গল্পের পরম নির্ভরতার আশ্রয়। আবার কোন্ গাড়ি যে কখন “বনগ্রাম লোকাল” হয়ে উঠবে, কে যে কখন গরুর গাড়ির তকমা পেয়ে যাবে কে বলতে পারে!!
গণপরিবহনে কীভাবে যেতে হয়? সবরকমভাবেই তাকে অবলম্বন করতে হয়। বসে, দাঁড়িয়ে, শুয়ে, জগিং করে করে, শীর্ষাসনে, পরজীবী হয়ে কিংবা ঝুলে অথবা স্থবির হয়ে। যাত্রীরা সাবধান!! দুস্তর পারাবার যে!!
গণপরিবহনে কীভাবে যেতে হয়? সবরকমভাবেই তাকে অবলম্বন করতে হয়। বসে, দাঁড়িয়ে, শুয়ে, জগিং করে করে, শীর্ষাসনে, পরজীবী হয়ে কিংবা ঝুলে অথবা স্থবির হয়ে। যাত্রীরা সাবধান!! দুস্তর পারাবার যে!!
আরও পড়ুন:
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-২২: ওরে মোর শিশু ভোলানাথ!
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৩: ‘সুরের পরশে’ তুমি-ই যে শুকতারা
পুরনো কলকাতার পালকি বনধ, মাথায় কিংবা ঝোড়ায় চেপে যাতায়াত, ট্রাম এবং জীবনানন্দ নস্টালজিয়াতে প্রবেশ করেছে। কিছু না পারলে মানসভ্রমণ, চাঁদের তরণী… “গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে” “গাড়ি চাপা পড়ে সে”, “দাদা একটু সরে বসুন”, “নিজের গাড়িতে এভাবে যাবেন”, “চাক্কাবনধ”, “পিছনের দিকে এগিয়ে চলুন,”আস্তে করে বাঁয়ে চেপে, “আস্তে লেডিস কোলে বাচ্চা,”টিকিট টিকিট”, গরুর গাড়ির হেডলাইট”, “জুতো মাড়িয়ে দিল রে”, “সামনেই নামব”, “কতদূর যাবেন”, “গাড়ি আর যাবে না”, “পৃথিবীর গাড়িটা থামাও আমি নেমে যাব”, “কতবার টিকিট কাটব”, “হাফটিকিট”, “রংরুট”, “ডেলিপ্যাসেঞ্জারি” ইত্যাদি প্রতি সকাল দুপুর বিকাল সন্ধ্যে রাতের গল্প। শেষ পর্যন্ত জীবনের সকল ধন চড়ে বসে সোনার তরীতে।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২৪: সুন্দরবনের রাজমাতা দেবী নারায়ণী
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব ৪৭: শীতকালে দই খেতে নেই?
কোনও বাস কিংবা মিনিডোর কী ম্যাটাডোরকে দেখলে মনে হয় খুব রেগে আছে। কখনও হাসি হাসি, কখনও বিষাদগম্ভীর তারা। লরিরা সব যেন হেড মাস্টারের মতো অজ্ঞেয়, তারা যে কী চায় কেউ বোঝে না, কখনও তারা পিষে দেয় তো কখনও বাসফেল মানুষকে তুলে নেয় পিঠে।
পরিবহন থাকলে চালক-পরিচালক থাকবে। চালকহীন গাড়ি নেই এমন নয়, তবে সকল চালক-ই পাইলট। সে এক স্বপ্নের সফর…
পরিবহন থাকলে চালক-পরিচালক থাকবে। চালকহীন গাড়ি নেই এমন নয়, তবে সকল চালক-ই পাইলট। সে এক স্বপ্নের সফর…
আরও পড়ুন:
ইতিহাস কথা কও, পর্ব-১৫: দেবদেউল কথা ও গোসানিমারি কামতেশ্বরী মন্দির
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২১: শ্রীমার ঠাকুরের প্রতি যত্ন
অনেক বাস যেন বাসগৃহ, যারা বসে আছে তারা বিনা কারণেই আছে, পুরনো অভ্যাসে। যে বাসটা এখন দরকার সেটা বাদে সকলেই আসবে। সব বাসেই সিটখালি। কিন্তু সেই শূন্যতা আপেক্ষিক কিংবা আণুবীক্ষণিক। সব বাস চলে যাবে, কিন্তু আমার আপনারটাই যাবে না। এ না পোষালে ক্যাব, তাও না পোষালে বাইক…সব আছে। “আপনি যা চান আমি ঠিক তাই”… তাও না পোষালে ঘাড়ে চাপতে কতক্ষণ! মহাভারতের বনপর্বে পাণ্ডবগণ আর কুন্তী ও দ্রোপদী ক্লান্ত হয়ে পড়লে ভীম সকলকে কাঁধে ঘাড়ে পিঠে কাঁখে আর টেনে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন। বিক্রমের পিঠে বেতালের যাওয়া-আসা কে দেখেনি? এগুলো কি গণপরিবহনের আওতায় আনা যাবে?
—চলবে।
—চলবে।
* হুঁকোমুখোর চিত্রকলা : লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।