অলঙ্করণ: লেখক।
নভেম্বর মাসের তিন তারিখ বিশ্ব স্যান্ডউইচ দিবস। দুটি পাঁউরুটির মাঝে প্রচলিত ও অপ্রচলিত যা কিছু খাওয়ার মতো, রেখে খাওয়ার ব্যবস্থাই হল এর লক্ষ্য। ছোটবেলার ইস্কুল থেকে শুরু করে বড় হয়ে মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত, অথবা যারা এই দুয়ের মাঝে স্যাণ্ডুইচ হয়ে উচ্চমধ্য হয়ে থাকে, তাদের টিফিনব্রেকের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে এই যুগলরূপের সাহেবি আহার্যটি থাকতে পারে। একে আমরা আমাদের মতো করে নিয়েছি।
গৃহকোণের পাকশালার দেওয়াল সাক্ষী, যেমন মিন্টপার্ক আমাদের আদরের মিন্টুপার্ক, যেমন চাওমিন মিনমিন করেও তার জন্মভূমির নাম বলতে লজ্জা পায়, যেমন মোমো এখন খাস কলকাত্তাইয়া, তেমন স্যান্ডুইচ আমাদের ঘরের লোক। সাহেবদের থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি, স্যান্ডুইচের এই যুগলরূপ অবশ্য কালিদাস জানতেন, বাগর্থের মতো সম্পৃক্ত পার্বতী-পরমেশ্বরের যৌথযাপন তাঁকে আনত করেছিল।
আরও পড়ুন:
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-২০: আমার চোখে তো সকলই শোভন
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২১: সুন্দরবনের সর্পদেবী মনসা
তবে স্যান্ডুইচের যুগ্মতার মাঝেও কিছু একটা থেকে যায়, সেটাই এই খাদ্যের মূল কথা। তাই যৌথ অবস্থানেই এর বার্তা শেষ হয় না, মধ্যের নিষ্পিষ্ট অথবা নিষ্পেষিত রহস্যঘন সহনশীলতাই এর প্রকৃত তত্ত্ব। সাহেবরা স্যান্ডুইচের মধ্যিখানে কী কী দেয় বা দিতো সেটা বড় কথা নয়, আমরা কী কী দিতে পারি, সেটাই বড় কথা। শশা-কলা-রসগোল্লা কিংবা সন্দেশ, পায়স, আলু-ভাজা, ডিমভাজা সব আমাদের স্যান্ডুইচে দিব্যি এঁটে যায়।
এছাড়াও ট্রেনে বাসে অটোতে ‘একটু চেপে বসুন’ বলে, বসতে না পারলে দাঁড়িয়ে ‘স্যান্ডুইচ’ হয়ে থাকা জনগনের নিত্যকর্ম। সংসারে, উৎসবে, ব্যসনে, রাষ্ট্রবিপ্লবে, রাজদ্বারে, লাইনে, পরীক্ষার আগে, বইয়ের তাকে, ভয়ে ভয়ে, স্বপ্নে, সম্পর্কে, সমাজে, গৃহকোণে, মেট্রোপলিটন আকাঙ্ক্ষার ভিড়ে, দুই ছাদের মাঝের আকাশে, পরিস্থিতির চাপে, সম্পদে, বিপদে, তেঁতুলপাতায়, ধর্মে, অর্থে, কামে কিংবা মোক্ষে মোক্ষম ‘স্যাণ্ডুইচ’ হয়ে পরিবেশিত হওয়া আমাদের নিত্যধর্ম।
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৪: পানমশলা খেলে ক্যানসার হয়?
কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-১৩: উইলসন-এ-কথা
শেষমেশ, স্যান্ডুইচের ‘স্যান্ডু’ কিংবা ‘উইচ’ নাকি ‘উই’… কোনটা যে আমাদের ‘উইশ’, কোনটা ‘উইকনেস’, কোনটাই বা ‘উইন’ করার ‘উইন্ডো’ দেখায়… তা কে বলতে পারে! —চলবে।
* হুঁকোমুখোর চিত্রকলা : লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।