বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


স্কেচ: লেখক।

ফড়িঙের ক’টা ঠ্যাং, আরশুলা কী কী খায়? আঙুলেতে আঠা দিলে লাগে কেন চট্‌চট্‌? কাতুকুতু দিলে কেন গরু করে ছট্‌ফট্‌? ঝোলাগুড় কিসে দেয়, সাবান না পট্‌কা? পেট কেন কাম্‌ড়ায়? ঝাঁজ কেন জোয়ানের আরকে? তেজপাতে তেজ কেন? ঝাল কেন লঙ্কায়? নাক কেন ডাকে আর পিলে কেন চমকায়? কার নাম দুন্দুভি? কাকে বলে অরণি? জানতে চান? মেজদাকে খোঁচানোর দরকার নেই। ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ আছে।

এই ডব্লিউ এক আশ্চর্য বর্ণ, যাকে লেটার বলে। দুটো ভি (V) জুড়ে অথবা একটা আস্ত এম (M) উল্টে ওই ডব্লিউ পাওয়া যেতেই পারে। তো এই ডব্লিউ শেষের দিক থেকে চার নম্বরে। সামনের দিক থেকে তেইশ নম্বরের। দরকার মতো তার ডাক পড়ে। এক্স ওয়াই জেডের ত্রিকোণ রসায়নে সে নেই। বড়জোর চতুর্ভুজের একটা কোণে তাকে দেখা যেতেও পারে। তিনটে ডব্লিউ পাশাপাশি বসলে সত্যিই যেন ঢেউ খেলে যায়, মনে, মগজে আর ভাবনা-কল্পনায়।
ডব্লিউ দিয়ে শুরু হতে পারে এমন কিছু অমোঘ শব্দের সাহেবি ভাষায় আছে। যেমন উড, যেমন ওয়ান্ডার, যেমন ওয়াটার, ওয়ার্ল্ড, উইন্ড, ওয়েদার। যতোই এক্স-ওয়াই-জেড মিলে কমফর্ট কর্ণার বানিয়ে তুলুক, ডব্লিউ না থাকলে পৃথিবী বা জল যেমন ধন্য হতো না, যুদ্ধটাও মাঠে মারা যেত। হ্যাঁ, ওয়ার মানে যুদ্ধ। যে পাশ্চাত্য নিয়ে আমাদের এতো অহঙ্কার সেই ওয়েস্টকে পেতাম কী করে? ওয়েস্ট (কোমর) ভেঙে যেত না? পাশ্চাত্যের হাওয়া আসতো কোন্ উইন্ডোপথে? আরে, ওয়ার্ড শব্দটাই তো ডব্লিউ দিয়েই। অপেক্ষা করিয়ে নিজের ওজন বাড়ান, ভিজুন; সেই ডব্লিউ। ওয়েট। অথবা ঘুরে বেড়ান। ওয়ান্ডার। উষ্ণতা বিলোন। ওয়ার্ম। আরো অনেক আছে, রাশি রাশি। কিন্তু ডব্লিউ-ই কেন?

কারণ, আন্তর্জাতিক ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব দিবস হল পয়লা আগস্ট। তিনটি ডব্লিউয়ের তরঙ্গভঙ্গের সমানুপাত বিশ্বনাচের দোলায় দোলায় বাঁধন পরায়, বাঁধন খোলায়…
এই যে তিনটি ডব্লিউয়ের ক্রমিক অবস্থান তা আদতে আমাদের শান্তিমন্ত্রের মতো। ‘শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ’ বলে যেমন আমাদের পা ফেলা, তেমনই আজ জগতের মহাযজ্ঞের মূলে উব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ। জন্ম থেকে মৃত্যুর রেজিস্ট্রেশন, রাষ্ট্র থেকে স্বামী-স্ত্রীর গাঁটছড়া, পড়াশুনা থেকে শুনে শুনে পড়ার জন্য মজুত আছে নানা ওয়েবসাইট। ঢুকবেন? ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ…
আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৭: বিপৎকালে দেখতে পাই, রাখাল ছাড়া বন্ধু নাই…

ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-৪: রাজ পরিবারের সঙ্গে বিবাহ সম্পর্ক ও ব্রাহ্মবাদ

বাবর থেকে গব্বর, প্রেমচন্দ থেকে হেমচন্দ্র, শিবাজি থেকে নেতাজি, চন্দ্রগুপ্ত থেকে ইন্দ্রলুপ্ত, আয়েসক্রিম থেকে ঘোড়ার ডিম, কেজি থেকে পিজি, মালদা থেকে মাদাগাস্কার, ওকলাহামা থেকে সূয্যিমামা,রাউরকেল্লা থেকে সোনার কেল্লা, মালদার থেকে নিলামদার, পিএম থেকে এমপি, সিএম থেকে এমসি, ডিএম থেকে এমডি… কী চাই আপনার? কীভাবে পুঁইশাকের লাউঘন্ট রাঁধবেন? বাড়িতে বসেই এরোপ্লেন চালাবেন? গুণে গুণে ভাগে ভাগে যোগ বিয়োগ করবেন? কীভাবে ঘুম আসবে? বেশি ঘুমোচ্ছেন? নিজের রোগ নিজে সারাবেন? সময় কাটছে না? হাঁচি থামছে না? মায়া সভ্যতার ক্যালেন্ডার সামনের পয়লা বোশেখে নামাবেন? ঢুকে পড়ুন ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউয়ের পিছন পিছন।

ছাত্র চাই ছাত্রী চাই? পাত্র চাই পাত্রী চাই? পড়তে ইচ্ছা করছে অথবা করছে না? অন্যকে টাইট দেওয়ার দশটি তরিকা চাই? কীভাবে সহজে টাকা খরচ করবেন? অথবা জমাবেন? আজকের দিনে মহাত্মা কী কী খেয়েছিলেন অথবা মোকামা জংশনে এইমাত্র কোন ট্রেন এল? জানতে পারবেন, ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ ডট।
আরও পড়ুন:

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-২২: পঞ্চমের সুরে কিশোর-আশার গাওয়া ‘জীবন কে হার মোড় পে’ গানটির কথা মনে পড়ে?

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪: শুভ পরিণয়বেলা

ব্রেকফাস্ট থেকে ব্রেকড্যান্স, বিগব্যাং থেকে কোলাব্যাঙ, ব্রুস লি থেকে ব্রেট লি, চাঁদের বুড়ি থেকে বুড়িমা, আশা-লতা থেকে বনলতা, আলিবাবা থেকে ভোলেবাবা, হরিয়ানা থেকে মিহিদানা, কিন্ডারগার্ডেন থেকে কিচেন গার্ডেন, মোকদ্দমা থেকে মেলোড্রামা, স্মল স্কেল থেকে মেট্রোরেল, নারকেল থেকে গারগেল, হেভেন থেকে হেল, চিকেনস হেড থেকে চিকেন পক্স, গজা থেকে গজাল, ভেজা থেকে ভেজাল, রাঁচি থেকে করাচি, নাগপুর থেকে নাকতলা, কানপুর থেকে ক্যানিং স্ট্রিট, লেডিকেনি থেকে লর্ড চমচম, সিরাজ থেকে শিরাজি, রেয়াজি থেকে পেঁয়াজি, চুরি থেকে কচুরি, কচুরিপানা থেকে বেলের পানা, চিকেন কষা থেকে ওনলি শশা, মম থেকে মোমো, জলপানি থেকে বিরিয়ানি, কেঁচো থেকে কেউটে, কেয়ার, ফেয়ার, প্রেয়ার, চেয়ার, শেয়ার, ওল, ঢোল, মামার খোল কী চাই আপনার? সব পাবেন। ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ আছে।

কবি বলেছিলেন, ভুবন জোড়া ফাঁদ পাতা আছে। কে কোথায় কখন ধরা পড়বে তিনি জানেন না। আপনি জানতে পারেন। ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ আছে। সকলেই সেই আন্তর্জালে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ধরা পড়ছে।
আরও পড়ুন:

ক্লাসরুম: জেইই-তে ভালো র‍্যাঙ্কের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন পরিশ্রমই সাফল্যের চাবিকাঠি

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৬৬: ঈল মাছের এই রহস্য নিশ্চয়ই একদিন উদঘাটন হবে

ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ কাতুকুতু বুড়ো নয় যে যাওয়া যাবে না। তবে আদ্যানাথের মেসোর বাড়ির মতো খানিক গোলোকধাঁধায় ঘুরতে হতে পারে, ঠিকানা খুঁজতে বেরোতে পারে কানাগলি। তার জন্য ধীরে চলুন, জিরিয়ে নিন। তাই পরে একটা ডট আছে। বিরতিবিন্দু। দরজা দিয়ে ঢুকে লিঙ্ক কখনও থাকবে, কখনও থাকবে না। কখনও চাকা ঘুরে, কখনও ঘুরবে না। কখনও নেটপ্যাক আছে, কখনও ওয়াইফাই। কখনও ভার্চুয়াল, কখনও একচুয়াল, কখনও ইঞ্জিনে চড়ে ক্রমে ক্রমে আসা যাওয়া। কিন্তু কিছুই পারপেচুয়াল নয়। কিন্তু ওই ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ আছে সিংদুয়ারের মতো। তার ঢেউ আছড়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে ছোট, বড়, মেজ, সেজ, ন, ফুল সব ডিভাইসে…তা ফুলে ফুলে বান ডাকাবে নাকি একেবারে ফুল-বোকা বানিয়ে ফুল অফ মিস্ট্রি অথবা মিরাকল ঘটাবে তার ভাগ্য আপনার হাতে আর আঙুলে।
* ক্যাবলাদের ছোটবেলা (kyablader-chotobela): লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।

Skip to content