
স্কেচ: লেখক।
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। জুলাই মাসের এগারো তারিখ। সব দিনের উদযাপন নানা ভাবে হয়। জন্মদিন কেক কেটে, বিবাহবার্ষিকী গোলাপ দিয়ে, পরিবেশ দিবস বৃক্ষরোপণ করে, নৃত্য-গীত ইত্যাদির দিবস নেচে গেয়ে, শিক্ষক দিবসে স্যারদের পড়িয়ে, পথ-নিরাপত্তা সপ্তাহে রাস্তা পারাপার করে… তাহলে ‘পপুলেশন ডে’র এই পুণ্যলগ্নে জনগণ কী করবে?
এটাই পাড়ার চা দোকানে প্যালা আর হাবলা আলোচনা করছিল। আমি এইমাত্র শুনে এলাম। সত্যিই, কী করা যায়? মানে, এই যে পাড়ার স্পোর্টস থেকে অলিম্পিকে যেমন একটা-দুটো ছেলে আর একটা-দুটো দেশ-ই বারবার পোডিয়ামে উঠে মেডেল নেয়, সেরকম এটাতে তো আমরাই একাই ‘শ’ ‘শ কোটি কোটি, মানে ওই ‘জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী’ না কী যেন।
আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৪: আমারে তুমি অশেষ করেছ

ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-১: রাজবাড়ির ইতিকথা—ইতিহাসের অন্তরে ইতিহাস
তবে তো দেশমাতৃকার নাম জগত্সভায় শ্রেষ্ঠ করার জন্য পরাণডা ব্যাকুল হয় বৈকী! কে যেন বলেছিলেন ‘মাতৃভূমি করে আহ্বান, চল রে চল সবে ভারতসন্তান’ তবে কি আমরা সেই ডাকে সাড়া দেব না, পিছিয়ে যাব ভয়ে? নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্যঃ মশাই, না! আপনি যা ভাবলে ভাবুন, ওসব কিছু বলা হচ্ছে না। জনসংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে বলে একটু সচেতন করা হচ্ছে মাত্র। কিন্তু সেভাবেই, যেভাবে ছুটন্ত বাসের পাইলটকে আনাড়ি যাত্রীর দল বকাবকি, অনুরোধ-উপরোধ, বড়জোর নিন্দামন্দ করতে পারে। তাতে তেনার কিস্যুই আসে যায় বুঝি! বরং, যারা সংখ্যা আর পরিসংখ্যান ভালোবাসে, জনসংখ্যা কমলে তারা কী গুনবে? যারা নিত্যনতুন ডিজাইনের স্কাইস্ক্র্যাপার বানাচ্ছে জনসংখ্যা কমলে তাদের সৃষ্টিশীলতা ব্যাহত হতেই পারে।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪: সুন্দরবনের লবণ-বৃত্তান্ত

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪২: আশা-ভরসার ‘শঙ্কর নারায়ণ ব্যাঙ্ক’
তাছাড়া বানাবে কাদের জন্য জনসংখ্যা না বাড়লে? এত এত বাস ট্রেনে ঝুলবে কারা? সবকিছু যখন বাড়ে, বয়স থেকে ওজন, রাস্তা থেকে দাম, সাহস থেকে খিদে, জিডিপি থেকে টি আর পি, তাহলে এটা নয় কেন? ঋগ্বেদের প্রথম সূক্তেই আছে যে অগ্নি ‘বর্দ্ধমানং স্বে দমে’, চারপাশে এতো ট্রু ভ্যালু শপ, আউটলেট, ফ্ল্যাগশিপ স্টোর বাড়ছে কাদের জন্য? ভূতের কোনও ভবিষ্যৎ নেই, মানুষের তো আছে, উজ্জ্বলভাবেই আছে। মাঝে মাঝেই রব ওঠে ‘পৃথিবী এই গেল গেল’, কিন্তু কিছুই যায় না মশাই!!
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-১৩: স্ত্রী-পুত্র-আত্মীয়-বন্ধু সকলের কাছে সব কথা না বললেই শান্তি ও সুস্থিতি বজায় থাকে সংসারে

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৫১: মারীচমায়ায় কি দিগভ্রান্ত সীতা?
কবি এ জন্যই বলে গিয়েছেন, জীবনের ধন কিছুই যায় না ফেলা! সুতরাং, এত মানবসম্পদ বৃথা হবে না। বিজ্ঞান তার তত্ত্বকে রিভাইজ করে, অচিরেই পৃথিবীও তার এই ভুলকে সংশোধন করে নেবে বৈকী। খালি কলসিতে আওয়াজ বেশি হয়, লোকজন বেশি থাকলে সুবিধাই বেশি। দশের লাঠি একের বোঝা হয় সে কে না জানে, আর আমরা বরাবর পথ দেখিয়ে এসেছি! শ্রেষ্ঠ আসন পাতাই আছে। গিয়ে বসে পড়লেই হল।
* ক্যাবলাদের ছোটবেলা (kyablader-chotobela): লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।