দ্বন্দ্ব। ছবি সৌজন্য সত্রাগ্নি।
এ বাড়ির যার যার নামের ইন্সিওরেন্সের রেকর্ড গ্রুপ কোম্পানির ক্লেম ডিপার্টমেন্টে থাকে। প্রিমিয়াম গ্রুপ থেকেই ভরা হয়। যেমন সুরঙ্গমার ক্ষেত্রে এখন ইনকাম ট্যাক্স নেই, কিন্তু শান্তিলতার আছে। ১৯২২ থেকে ১৯৬১ একই নিয়মে ইনকাম ট্যাক্স নেওয়া হতো। ১৯৬২ পয়লা এপ্রিল থেকে নতুন নিয়ম এসে গেল। তাই ব্যবসাতে যুক্ত সকলের ইনকাম ট্যাক্সের দায়দায়িত্ব ইন্সুরেন্স করানো এসব কোম্পানির নির্দিষ্ট ডিপার্টমেন্ট দেখাশোনা করে। যখন যা সইসাবুদের দরকার অফিসের লোকজন এসে করিয়ে নিয়ে যায়। তন্ময়কান্তি বিয়ের পরে হয়তো ইন্সুরেন্সের নমিনি করেছিল ঋতুকে। চিঠিতে একটা মোটা অংকের টাকা এসেছে ঋতুর নামে।
তন্ময়কান্তির অস্তিত্ব একটু হলেও ঋতুর কাছে বোধ হয় ফিকে হয়ে গিয়েছিল। মুহূর্তের শারীরিক দুর্বলতা মনের আগলকে ভেঙে দিয়েছিল। আজ ইন্সুরেন্সের চিঠি সমেত এই বিপুল টাকা ঋতুকে অনুশোচনার আগুনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে। বিনয়কান্তির সঙ্গে কথা বলে সুরঙ্গমা ব্যাংকে গিয়ে নাবালক শিশুপুত্র ঋতমের নামে সেই টাকা ফিক্সড ডিপোসিট করে দিলেন। নাবালক পুত্রের হয়ে সই করলেন তার মা।
তন্ময়কান্তির অস্তিত্ব একটু হলেও ঋতুর কাছে বোধ হয় ফিকে হয়ে গিয়েছিল। মুহূর্তের শারীরিক দুর্বলতা মনের আগলকে ভেঙে দিয়েছিল। আজ ইন্সুরেন্সের চিঠি সমেত এই বিপুল টাকা ঋতুকে অনুশোচনার আগুনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে। বিনয়কান্তির সঙ্গে কথা বলে সুরঙ্গমা ব্যাংকে গিয়ে নাবালক শিশুপুত্র ঋতমের নামে সেই টাকা ফিক্সড ডিপোসিট করে দিলেন। নাবালক পুত্রের হয়ে সই করলেন তার মা।
প্রণয়ের ফাইলে সই না করে সে ফাইল ড্রয়ারে চাবি বন্ধ করে রেখে দেওয়া সত্বেও যতীন ঘোষালের পেসমেকার বসানো আটকানো গেল না। প্রণয়ের সই ছাড়া ফাইল না দেখেই গৌরব ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্ট থেকে স্পেশাল অর্ডার করে টাকা রিলিজ করে দিল। ব্যাস, এতেই আগুনে ঘি পড়ল। রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে প্রণয় গৌরবের ঘরে ঢুকলো এবং ফাইলটা টেবিলের উপর আছড়ে ফেলে বলে উঠল—
—হোয়াট ইজ দিস?
প্রণয়কে ওইভাবে ঘরে ঢুকতে দেখেই গৌরবের বোঝা হয়ে গিয়েছিল ঘটনাটা কী ঘটতে যাচ্ছে। তাই এতটুকু উত্তেজিত না হয়ে সামনে বসে থাকা সেক্রেটারি মিসেস চ্যাটার্জিকে ইশারায় বাইরে যেতে বলে প্রণয়ের দিকে জলের গ্লাসটা বাড়িয়ে দিয়ে শান্তভাবে বলল—
—কুল ডাউন প্রণয়। জল খা। একটু কফি বলি।
—হোয়াট ইজ দিস?
প্রণয়কে ওইভাবে ঘরে ঢুকতে দেখেই গৌরবের বোঝা হয়ে গিয়েছিল ঘটনাটা কী ঘটতে যাচ্ছে। তাই এতটুকু উত্তেজিত না হয়ে সামনে বসে থাকা সেক্রেটারি মিসেস চ্যাটার্জিকে ইশারায় বাইরে যেতে বলে প্রণয়ের দিকে জলের গ্লাসটা বাড়িয়ে দিয়ে শান্তভাবে বলল—
—কুল ডাউন প্রণয়। জল খা। একটু কফি বলি।
আরও পড়ুন:
দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং..., ৩য় খণ্ড, পর্ব-৩: ঋতু চিঠি নিয়ে ছুটে এল সুরঙ্গমার কাছে
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৫২: অতীতের কয়েক পৃষ্ঠা
প্রণয়ের স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার একটা হাত সামনে রাখা চেয়ারের কুশনটাকে চেপে ধরেছে। দু’ চোখের জ্বলন্ত দৃষ্টিতে সে গৌরবকে দেখছে।
—আমি জানি কাজের প্রেসারে হয়তো এই ফাইলটার কথা তুই খেয়াল করিসনি। না হলে একটা সিরিয়াস পেশেন্টের ফাইল তুই ইচ্ছে করে সই করবি না এটা তো হতে পারে না। আমার হয়তো তোকে একবার ফোন করে নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু ইমারজেন্সি অপারেশন তো তাই তাড়াহুড়োর মধ্যে আর সেটা করা হয়নি। ভেবেছিলাম উইল শর্ট ইট আউট। হ্যাঁ, বড়মামাকে একটু টাচ করেছিলাম।
প্রণয় চিবিয়ে চিবিয়ে প্রশ্ন করল—
হু ইজ বড়মামা। গগনকান্তি দত্তকে তো জিকেডি বলা হয়। মানে বিকেডি আই মিন বিনয়কান্তি দত্ত নির্দেশে বসুন্ধরা গ্রুপ অব কোম্পানিজ-এ এটাই নিয়ম বলে জানতাম। এটা অফিস বসুন্ধরা ভিলার বৈঠকখানা নয়। বাট অবভিয়াসলি দেয়ার আর এক্সেপশনস টু দ্য রুলস, লাইক দ্যাট ফেলো। আমার ডিপার্টমেন্টের নিয়োগী। হোপফুলি অ্যাজ ফাইন্যান্স হেড ইউ মে বি এনাদার এক্সসেপশন।
—আমি জানি কাজের প্রেসারে হয়তো এই ফাইলটার কথা তুই খেয়াল করিসনি। না হলে একটা সিরিয়াস পেশেন্টের ফাইল তুই ইচ্ছে করে সই করবি না এটা তো হতে পারে না। আমার হয়তো তোকে একবার ফোন করে নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু ইমারজেন্সি অপারেশন তো তাই তাড়াহুড়োর মধ্যে আর সেটা করা হয়নি। ভেবেছিলাম উইল শর্ট ইট আউট। হ্যাঁ, বড়মামাকে একটু টাচ করেছিলাম।
প্রণয় চিবিয়ে চিবিয়ে প্রশ্ন করল—
হু ইজ বড়মামা। গগনকান্তি দত্তকে তো জিকেডি বলা হয়। মানে বিকেডি আই মিন বিনয়কান্তি দত্ত নির্দেশে বসুন্ধরা গ্রুপ অব কোম্পানিজ-এ এটাই নিয়ম বলে জানতাম। এটা অফিস বসুন্ধরা ভিলার বৈঠকখানা নয়। বাট অবভিয়াসলি দেয়ার আর এক্সেপশনস টু দ্য রুলস, লাইক দ্যাট ফেলো। আমার ডিপার্টমেন্টের নিয়োগী। হোপফুলি অ্যাজ ফাইন্যান্স হেড ইউ মে বি এনাদার এক্সসেপশন।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬১: ‘বন্ধু’ তোমার পথের সাথী
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২৮: কে আবার বাজায় বাঁশি
তারকবাবু সব রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনের বাইরে। সেটা আমরা সকলেই জানি। আর উনি হিসেবপত্র সবকিছু করে ফাইলে নোট দিয়ে পাঠিয়েছিলেন শুধু তোর সইটুকুই বাকি ছিল। কনসিডারিং এক্সিজেন্সিস এটা করতে হয়েছে। আই বিলিভ তুই সেটা বুঝতে পেরেছিস। রাগের মাথায় তোর হাইয়ারার্কিটা গন্ডগোল হয়ে গিয়েছে। ফাইনান্স হেড বিকেডি, বিকাশকান্তি দত্ত। আমি নই। হ্যাঁ, আমি ডিপার্টমেন্টের অ্যাক্টিভিটি এক্সিকিউট করি।
—উই নো ইউ আর “দ্য গৌরব সেনগুপ্তা”, পদবী দত্ত না হলেও ইউ আর দ্য ব্লু আইড বয় অব বসুন্ধরা গ্রুপ অব কোম্পানিজ। এরপর এসব ফাইনান্সিয়াল স্যাংশনস মানে স্টাফ ওয়েলফেয়ারের ব্যাপারে ওসব আমি আর করব না ওটা তুমি দেখে নিও।
যেভাবে ঝড়ের মতো ঘরে ঢুকে ছিল সেভাবেই ঘর ছেড়ে গেল। গৌরব খানিকক্ষণ চুপ করে বসে রইল। প্রণয়কে এগিয়ে দেওয়া জলের গ্লাসটা তখনও টেবিলের ওপর রয়েছে। অল্প চুমুক দিয়ে একটু জল খেয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে ভাবল, এই সামান্য কাজটুকুই তো করতে দিয়েছে প্রণয়কান্তিকে। সেটুকুও না করলে নিজের স্যালারিটা জাস্টিফাই করবে কী করে? প্রণয়ের উপর হঠাৎ একটু করুণাই হল তার। কিন্তু পরমুহূর্তেই কপালের দু’ পাশের রগের নিচের শিরাগুলো দপ দপ করতে লাগলো। অনেকগুলো কথার মধ্যে একটা মারাত্মক কথা বলে গিয়েছে প্রণয়কান্তি দত্ত।
“উই নো ইউ আর দ্য গৌরব সেনগুপ্তা, পদবী দত্ত না হলেও ইউ আর দ্য ব্লু আইড বয় অব বসুন্ধরা গ্রুপ অব কোম্পানিজ…..পদবী দত্ত না হলেও” …
—উই নো ইউ আর “দ্য গৌরব সেনগুপ্তা”, পদবী দত্ত না হলেও ইউ আর দ্য ব্লু আইড বয় অব বসুন্ধরা গ্রুপ অব কোম্পানিজ। এরপর এসব ফাইনান্সিয়াল স্যাংশনস মানে স্টাফ ওয়েলফেয়ারের ব্যাপারে ওসব আমি আর করব না ওটা তুমি দেখে নিও।
যেভাবে ঝড়ের মতো ঘরে ঢুকে ছিল সেভাবেই ঘর ছেড়ে গেল। গৌরব খানিকক্ষণ চুপ করে বসে রইল। প্রণয়কে এগিয়ে দেওয়া জলের গ্লাসটা তখনও টেবিলের ওপর রয়েছে। অল্প চুমুক দিয়ে একটু জল খেয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে ভাবল, এই সামান্য কাজটুকুই তো করতে দিয়েছে প্রণয়কান্তিকে। সেটুকুও না করলে নিজের স্যালারিটা জাস্টিফাই করবে কী করে? প্রণয়ের উপর হঠাৎ একটু করুণাই হল তার। কিন্তু পরমুহূর্তেই কপালের দু’ পাশের রগের নিচের শিরাগুলো দপ দপ করতে লাগলো। অনেকগুলো কথার মধ্যে একটা মারাত্মক কথা বলে গিয়েছে প্রণয়কান্তি দত্ত।
“উই নো ইউ আর দ্য গৌরব সেনগুপ্তা, পদবী দত্ত না হলেও ইউ আর দ্য ব্লু আইড বয় অব বসুন্ধরা গ্রুপ অব কোম্পানিজ…..পদবী দত্ত না হলেও” …
আরও পড়ুন:
পরিযায়ী মন, পর্ব-১৭: পাপাঙ্গুলের যাত্রা
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৫: ঠাকুরবাড়ির দখিনা বাতাস— জ্ঞানদানন্দিনী দেবী
প্রণয় কী বলতে চাইল? গৌরব সেনগুপ্ত আউটসাইডার। বসুন্ধরা ভিলা বা বসুন্ধরা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের উত্তরাধিকার না হয়েও বেনিফিট নিচ্ছে? গৌরবের মাথা কাজ করছে না। এটা একটা বড় দুর্বল জায়গা।
গৌরবের দাদু বিনয়কান্তি দত্ত তার মা শান্তিলতা এবং তাদের দুই ভাইকে বসুন্ধরা ভিলায় আশ্রয় দিয়েছিলেন। মায়ের শাড়ির ব্যবসা দাদুর করে দেওয়া। মা সেই ধারের টাকা শোধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা ইন্টারেস্ট ফ্রি বিজনেস লোন। এটা তো বেনিফিট বটেই। নকশাল আন্দোলনে ধরা পড়ে গেলে দাদা সৌরভের জীবনটা সেখানেই শেষ হয়ে যেত। সৌরভ যে বিশেষ কিছু করতে পেরেছে তা নয় কিন্তু, একটা সুস্থ জীবন তো পেয়েছে। সেটাও তো বিনয়কান্তি দত্তের দয়া।
গৌরব নিজের মেধায় নিজের চেষ্টায় বিদেশ গিয়েছে। এই কারণেই সে প্রথমে বসুন্ধরা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ জয়েন করতে চায়নি। কিন্তু দাদু বড় মামা বা মেজ মামার কথা ফেলতে পারেনি। কিন্তু সেই বসুন্ধরা ভিলার কারও থেকে শুনতে হল… তারা আউটসাইডার। প্রণয় উদ্ধত, তার কথাবার্তা ভালো না, ব্যবহার ভালো না —সব ঠিক আছে! কিন্তু ন’মামা তরুণকান্তি দত্ত প্রণয়কে বঞ্চিত করে তার স্ত্রী বাবলিকে সবকিছুর ওয়ারিশন করলেও টেকনিক্যালি প্রণয়কান্তি দত্ত বসুন্ধরা ভিলার একজন ন্যায্য উত্তরাধিকার।—চলবে।
গৌরবের দাদু বিনয়কান্তি দত্ত তার মা শান্তিলতা এবং তাদের দুই ভাইকে বসুন্ধরা ভিলায় আশ্রয় দিয়েছিলেন। মায়ের শাড়ির ব্যবসা দাদুর করে দেওয়া। মা সেই ধারের টাকা শোধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা ইন্টারেস্ট ফ্রি বিজনেস লোন। এটা তো বেনিফিট বটেই। নকশাল আন্দোলনে ধরা পড়ে গেলে দাদা সৌরভের জীবনটা সেখানেই শেষ হয়ে যেত। সৌরভ যে বিশেষ কিছু করতে পেরেছে তা নয় কিন্তু, একটা সুস্থ জীবন তো পেয়েছে। সেটাও তো বিনয়কান্তি দত্তের দয়া।
গৌরব নিজের মেধায় নিজের চেষ্টায় বিদেশ গিয়েছে। এই কারণেই সে প্রথমে বসুন্ধরা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ জয়েন করতে চায়নি। কিন্তু দাদু বড় মামা বা মেজ মামার কথা ফেলতে পারেনি। কিন্তু সেই বসুন্ধরা ভিলার কারও থেকে শুনতে হল… তারা আউটসাইডার। প্রণয় উদ্ধত, তার কথাবার্তা ভালো না, ব্যবহার ভালো না —সব ঠিক আছে! কিন্তু ন’মামা তরুণকান্তি দত্ত প্রণয়কে বঞ্চিত করে তার স্ত্রী বাবলিকে সবকিছুর ওয়ারিশন করলেও টেকনিক্যালি প্রণয়কান্তি দত্ত বসুন্ধরা ভিলার একজন ন্যায্য উত্তরাধিকার।—চলবে।
অভিযান। চিত্রশিল্প সৌজন্য: প্রচেতা।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।