শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


মিত্র বাড়ির বলদেব ও রেবতীরানির বিগ্রহ (ছবি; সংগৃহীত)

।।শুঁড়ার রাসবাড়ি।।

রাজা বাহাদুর পীতাম্বর মিত্র প্রতিষ্ঠিত বেলেঘাটার বিখ্যাত মিত্র বাড়ি। এই বাড়িতেই জন্মেছেন তাঁর পৌত্র জন্মেজয় মিত্রের সুপুত্র রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র, পাণ্ডিত্যের জন্য তিনি আলাদা করে ‘রাজা’ উপাধি পেয়েছিলেন। তিনি ভারততত্ত্ববিদ, পুরাতাত্ত্বিক, প্রাবন্ধিক, প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং ভারতে বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাসচর্চার পুরোধা, এশিয়াটিক সোসাইটির কর্ণধার এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সমসাময়িক। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ‘জীবনস্মৃতি’-তে রাজেন্দ্রলাল বিষয়ে লিখেছেন—
‘রাজেন্দ্রলাল সব্যসাচী ছিলেন। তিনি একাই একটি সভা। এই উপলক্ষে তাঁহার সহিত পরিচিত হইয়া আমি ধন্য হইয়াছিলাম। এপর্যন্ত বাংলা দেশে অনেক বড় বড় সাহিত্যিকের সঙ্গে আমার আলাপ হইয়াছে, কিন্তু রাজেন্দ্রলালের স্মৃতি আমার মনে যেমন উজ্জ্বল হইয়া বিরাজ করিতেছে এমন আর কাহারও নহে।’

আর প্রতিষ্ঠাতা পুরুষ পীতাম্বর মিত্র ছিলেন দিল্লি দরবারে অযোধ্যা নবাবের উকিল। দিল্লির বাদশাহ তাঁকে ৩০০০ অশ্বারোহী সৈন্যের মনসবদারি, দোয়াবের অন্তর্গত কোড়া প্রদেশ জায়গির ও রাজাবাহাদুর খেতাব দেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে কাশীর চৈত সিংহের বিদ্রোহের সময় পীতাম্বর মিত্র সৈন্যসামন্ত নিয়ে ইংরেজের পক্ষে লড়াই করে চৈত সিংহকে হারিয়ে রামনগর দুর্গ জয় করলেন। দুর্গ থেকে পাওয়া গেল চারটে সিন্দুক বোঝাই ফারসি ও সংস্কৃত পুঁথি। সেই মহামূল্যবান পুঁথি ও অযোধ্যার নবাবের কাছে পাওনা ৯ লক্ষ টাকা নিয়ে ১৭৮৭ সালে কলকাতায় ফিরে এলেন রাজা পীতাম্বর মিত্র। তারপর রাজমুকুট ত্যাগ করে সমস্ত সম্পত্তি দেবতার পায়ে সমর্পণ করে বৈষ্ণবধর্ম গ্রহণ করলেন এবং নিরিবিলিতে ধর্মচর্চা করার জন্য শুঁড়া মানে বেলেঘাটার বাগানবাড়িতে বসবাস করতে থাকেন।

একসময় বৃন্দাবনে থাকাকালীন তিনি স্বপ্নে দেখলেন ভেসে আসা নিমকাঠ। তারপর সেইরূপ নিমকাঠ দিয়েই শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীরাধার যুগলবিগ্রহ বানাবেন স্থির করলেন। কিন্তু যতবার ওই বিগ্রহ বানাতে যান ততবারই বলরাম এবং রেবতীরানির দারুবিগ্রহ তৈরি হয়ে যায়। তাই তিনি স্থির করেন যে তিনি বলদেব এবং রেবতীরানির বিগ্রহই প্রতিষ্ঠা করবেন। সেই বিগ্রহ নিয়ে পীতাম্বর মিত্র বৃন্দাবনেই প্রথম রাসযাত্রা পালন করেন। তারপর সেই দারুবিগ্রহ নিয়ে এসে কলকাতার ঠাকুরবাড়িতে প্রতিষ্ঠা হল এবং তখন থেকেই এই বিগ্রহের সেবা হচ্ছে মিত্রবাড়িতে। এই সাবেকি বাড়ির চারদিক পাঁচিল দিয়ে ঘেরা, যার কেন্দ্রে রয়েছে বলদেব ও রেবতীরানির ঠাকুরবাড়ি।

দ্বাপর যুগের শেষে বলরামের জন্ম হয় রোহিণীর গর্ভে। রোহিণী হলেন শ্রীকৃষ্ণের পিতা বসুদেবের আরেক পত্নী ও নন্দের ভগিনী। সত্যযুগে মহারাজা রেবত যজ্ঞ করে এক গুণবতী সুলক্ষণা কন্যা রেবতীকে লাভ করেন। ব্রহ্মার পরামর্শে তিনি বলরামের সহিত রেবতীর বিবাহ দেন। বলরাম অত্যন্ত পত্নীনিষ্ঠ। স্ত্রী রেবতী তার চাইতে ঢের বড়, একেবারে সত্য যুগের নারী। বলা হয় বলরাম পূর্বজন্মে ছিলেন রামের ভ্রাতা লক্ষ্মণ। তিনি ভগবান নারায়ণের কাছে অনুরোধ করেন তাকে যেন তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হিসেবে একজন্ম কাটাতে দেওয়া হয়। তাই তিনি দ্বাপরে কৃষ্ণের জেষ্ঠ্যভ্রাতা হয়ে জন্ম নেন।

পীতাম্বর মিত্র প্রতিষ্ঠিত ঠাকুরবাড়িতে রয়েছে গোপাল ও জগ্ননাথদেবের বিগ্রহ। এ ছাড়াও বিরাট মাঠ, খিড়কি পুকুর, রাসমঞ্চ আর বাগানও রয়েছে। প্রসঙ্গত, এই ঠাকুরবাড়ির মন্দিরের কোনো চূড়া নেই। কারণ সেইসময় কালাপাহাড় হিন্দুমন্দির ধ্বংস করছিলেন। তাই তিনি যাতে এই মন্দিরের খোঁজ না পান সেই কারণেই এই মন্দিরে চূড়া তৈরি করা হয়নি। শুঁড়া কলকাতার পূবে, এখানেই রয়েছে রাসবাগান। যেখানে শ্রীকৃষ্ণের নয়, বলদেবের তিনদিনের রাসোৎসব হয়ে আসছে ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। রাসবাগানের পুকুর ঘিরে সপ্তাহব্যাপী মেলা বসে। রাসমেলার তিনদিন ঠাকুরবাড়ি থেকে শোভাযাত্রা করে বিগ্রহ রাসমঞ্চে স্থাপনা করা হয়। এখন এই রাসবাগান মিত্রবাড়ি যে রাস্তায় সেই রাস্তা রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র রোড নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন:

ধারাবাহিক উপন্যাস, পর্ব-৪৭: বসুন্ধরা এবং…

সোনার বাংলার চিঠি, পর্ব-৬: মুক্তিযুদ্ধের বিজয়— বীর বাঙালির অহংকার

ছোটদের যত্নে: সন্তান কম মনোযোগী কিন্তু অতি সক্রিয়? সহজ উপায়ে বাড়িতেই এর চিকিৎসা সম্ভব

মিত্র বাড়ির মেয়ে আরতি পূজা পার্বণের জোগাড় আলপনা দেওয়া এসবই ছিল বিশেষ পটু। বসুন্ধরার ঠাকুরঘরকে যত্ন করে গুছিয়ে রাখত বড় জেঠিমা আরতি। দেবী প্রতিমার মতো তাঁর চেহারা। পীতাম্বর মিত্র বা রাজেন্দ্রলাল মিত্রের বংশধর কিন্তু ব্যবহারে অত্যন্ত অমায়িক।

গভর্নর সেক্রেটারিয়েটের ডেপুটি সেক্রেটারি ছিলেন পিনাকী দাশগুপ্ত। লেবুতলা পার্কে পৈতৃক বাড়ি। পূর্বপুরুষের বাড়ি খুলনার নড়াইল জেলায়। পিনাকী দাশগুপ্তের বড়মেয়ে ছন্দা। ছন্দা মেট্রিকুলেশন খুব ভালো রেজাল্ট করেছিল। ১৯৬০ সালে তারই সঙ্গে বিয়ে হল বিকাশকান্তির।

আজকের প্রজন্ম লেবুতলা পার্ক হয়তো চিনতে পারবে না সুবর্ণ লিখল সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার। আমরা সকলেই জানি মধ্য কলকাতার সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে জাঁকজমক করে দুর্গাপুজো হয়। কিন্তু সন্তোষ মিত্র কে ছিলেন? সে খবর ক’জন রাখেন?

সন্তোষকুমার মিত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের অমর শহীদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ, এলএলবি— যুগান্তর দলের সক্রিয় সদস্য। আইনজ্ঞ যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের জন্য শাখাঁরিটোলা হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করে ইংরেজ সরকার আটঘাট বেঁধেও সাজা দিতে পারেনি। কিন্তু বেঙ্গল ক্রিমিনাল ল’য়ে সংশোধনী এনে অনেকের সঙ্গে সন্তোষ মিত্রকে অনির্দিষ্ট কালের জন্যে বন্দি করা হল। হিজলি ডিটেনশন ক্যাম্প বা বন্দিশিবিরে তাঁকে ও আরও একজন সহবন্দি তারকেশ্বর সেনগুপ্তকে ব্রিটিশ পুলিশের এলোপাথাড়ি গুলির মুখে প্রাণ দিতে হয়েছিল ষোলই সেপ্টেম্বর ১৯৩১। মৃত্যুর সময় সন্তোষকুমার মিত্রের বয়স মাত্র ৩১ বছর। আশ্চর্যজনকভাবে সন্তোষ মিত্রের জন্ম ১৫ আগস্ট ১৯০০ সালে। কী কারণে সেদিন ইংরেজ সরকার অধীনস্থ ভারতীয় পুলিশ নিরস্ত্র বন্দিদের উপর ২৯ রাউন্ড গুলি চালিয়েছিল তার কোনও ব্যাখ্যা ইতিহাসে নেই।
আরও পড়ুন:

নিয়মিত জিম করেন? তাহলে ঘাম ঝরানোর আগে যে খাবারগুলো খেতেই হবে

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১৫: যখন ‘ওরা থাকে ওধারে’

ট্রেনের টিকিট ‘কনফার্ম’ না হলে একেবারে বিনামূল্যে বিমানের টিকিট পাবেন যাত্রীরা! কোন অ্যাপে, কীভাবে পাবেন?

ষাটের দশকের গোড়ার দিকে লন্ডন থেকে ছয় মাসের শিক্ষানবিশি শেষ করে বিকাশকান্তি দেশে ফিরে এসেছে। বসুন্ধরার ইচ্ছে অনুযায়ী বসুন্ধরা ভিলা আত্মীয়কুটুম্ব নতুন নতুন সদস্যে ভরে উঠতে লাগল। দেশভাগের পর খুলনার নড়াইলে দাশগুপ্ত পরিবারের এখন আর কেউ থাকেন না। তাঁরা সপরিবারে এখন কলকাতায়।

তবে আরও এক বিখ্যাত ‘দাশগুপ্ত’ নড়াইল-এ জন্মেছিলেন। তিনি পিনাকী দাশগুপ্তের পরিবারের কেউ নন। কিন্তু তিনি বাঙালির সাঙ্গীতিক পরিবারের এক অন্যতম সদস্য প্রথিতযশা সঙ্গীতশিল্পী, প্রসিদ্ধ সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক কমল দাশগুপ্ত। ত্রিশ এবং চল্লিশের দশকে গ্রামোফোন ডিস্কে তার সুরে গাওয়া বহু শিল্পীর বহু গান অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। তিনি প্রায় তিনশো নজরুলগীতির সুর রচয়িতা ছিলেন। কমল দাশগুপ্তের সুরারোপিত গানের ডিস্কের সংখ্যা কমবেশি আট হাজার। ১৯৫৫ সালে ৪৩ বছর বয়সে অন্যতম নজরুল সঙ্গীতব্যক্তিত্ব ফিরোজা বেগমকে বিয়ে করেন কমল দাশগুপ্ত। তখন ফিরোজার বয়স ২৫। শ্রী দাশগুপ্ত ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর তার নাম রাখা হয়েছিল কাজী কামালউদ্দীন।

বিনয়কান্তি ও স্বর্ণময়ীর চতুর্থ সন্তান অমলকান্তি দত্ত ছোটবেলা থেকেই অন্যরকম। গ্রে স্ট্রিটের বাড়িতে অন্যরা যখন খেলাধুলা করত। অমু তখন ছাতের টবে তার গাছগুলোর পরিচর্যা করত। সে পায়রা পুষতো, ঘুড়ি ওড়াতো। একা একা আকাশ দেখত। মেঘের মধ্যে নানা জন্তু-জানোয়ারের চেহারা আবিস্কার করে নিজে নিজেই হাসত। ১৯৫৭-য় যখন বাড়ি বদলের তোড়জোড় চলছে। অমলকান্তি তখন স্কটিশ চার্চ কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিচ্ছে। বসুন্ধরা ভিলায় আসার পর বাংলা অনার্স নিয়ে ভর্তি হল আশুতোষ কলেজে। বাড়ির ব্যবসা নিয়ে তার কোনওদিন বিন্দুমাত্র উৎসাহ ছিল না। সে ভেবেছিল সাহিত্যটা ভালো করে পড়ে অধ্যাপনা করবে। কলেজে পড়তে পড়তেই লেখালেখির মধ্যে একটা অন্য আনন্দ খুঁজে পেল। খুব ভালো করে খুঁটিয়ে বাংলা সাহিত্য পড়া শুরু করল অমলকান্তি।
আরও পড়ুন:

শীতের আমেজে লোভনীয় কিছু খাওয়ার ইচ্ছা? রেস্তরাঁর মতো ঝটপট বানিয়ে ফেলুন সুখা মরিচ মাটন

ঘরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে হোক অন্দরসজ্জা, মাথায় রাখুন এই কয়েকটি টোটকা

বাইরে দূরে: অযোধ্যা: ইতিহাস ও জনশ্রুতি /২

বসুন্ধরা গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রি-র খ্যাতি ঐশ্বর্য বা বসুন্ধরা ভিলার বৈভব কিছুই তাকে স্পর্শ করত না। উল্টে তার লেখক বন্ধুমহলে কলেজে সে কিছুটা কুণ্ঠিত থাকত। সকলের তাদের মতো ঐশ্বর্য বা বৈভব নেই, অতগুলো গাড়ি নেই। “অমলকান্তি সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছে” এই হালকা বিদ্রুপ তাকে কষ্ট দিত। মনে হতো এরই জন্য সে সকলের সঙ্গে মিশে যেতে পারছে না। একটু পৃথক হয়ে থাকছে। বহুলোক যেখানে বৈভবের বহিঃপ্রকাশ করে, সেখানে তারই বিপরীত মুখে চলার কারণ বুঝতে পারত তার মা স্বর্ণময়ী। মা বোঝাতেন—
‘শোন অমু! বাবা বা ঠাম্মি যে কষ্ট করেছেন তা তো তুমি কিছুই জান না, দেখনি। কেউ তোমায় বলেনি। বাবা আর ঠাম্মি অনেক অপমান অবজ্ঞা যন্ত্রণা সহ্য করে, নিজের বুদ্ধি,সততা, আত্মবিশ্বাস আর অধ্যাবসায়ের জোরে এখানে পৌঁছেছেন। জীবনে লড়াই করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা তো অপরাধ নয়। তোমার পরিবারের জন্যে বসুন্ধরা গ্রুপ অফ কোম্পানিজের জন্যে ঠাম্মির মতো একজন মানুষের জন্যে তোমার বাবার জন্যে তোমার গর্বিত হওয়া উচিত অমু। গাড়িবাড়ি ব্যবসা এসব তো মানুষটার অমানুষিক পরিশ্রম আর পাহাড় প্রমাণ সততার পুরস্কার। তোমায় একদিন আমি সময় করে সব বলব। ইতিহাসটা খুব ভাল করে তোমার জানা উচিত। তুমি লেখালেখি কর আমি তোমার লেখা পড়েছি আমার ভাল লেগেছে। আগামীর জন্যে তোমার বাবা তোমার ঠাম্মির কথা তোমার লেখা উচিত।’

অমলকান্তি এত অবাক কখনও হয়নি। মা যে সমস্ত লেখা পড়েন বা পড়তে ভালোবাসেন তাঁরা বাংলা সাহিত্যের পুরোধাপুরুষ। লাইব্রেরি ঘরে তাঁদের বই বোঝাই। তাঁদের পাঠক হয়ে অমলকান্তির লেখা মা’র ভাল লেগেছে এটা যেন সে বিশ্বাস করতে পারছে না। ছেলেকে উৎসাহ দিচ্ছেন মা??
আরও পড়ুন:

দশভুজা: আমার উড়ান— এ পৃথিবীজুড়ে থাকে হৃদয়ের ঘর-বসত

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ২৭: পিতৃসত্য রক্ষা, নাকি পিতার অনুনয়ে রাজ্যভার গ্রহণ?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৩: নোবেল-প্রাপ্তির সংবর্ধনা-সভায় রবীন্দ্রনাথ ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন

‘এতো কী ভাবছ অমু? সাহিত্যিক হিসেবেই ভাল লেগেছে, সন্তান বলে নয়।’
মায়েরা যে সন্তানের মনের কথা পড়তে পারে সেটার প্রমাণ পায় অমলকান্তি।
‘আমার লেখা পেলে কোথায় ?’
‘তোমার খাটের তলায়। আমি নই। কমলা তোমার ঘর পরিষ্কার করার সময় পেয়ে আমার হাতে দিল। কখন বিছানা আর দেওয়ালের ফাঁক গলে পড়ে গেছে। তোমরা খেয়াল নেই। পড়ে দেখলাম। ছোটগল্প। কথা বলা পুতুল।’

‘হ্যাঁ হ্যাঁ এক ভেন্ট্রিলোকুইস্ট আর তার কাঠের পুতুলকে নিয়ে লেখা গল্প। একটা ম্যাগাজিনে দেবার জন্যে লিখে আর লেখাটা খুঁজে পাচ্ছি না। তারা রোজ তাগাদা করছে। রোজই আজ দেব কাল দেব বলছি। একবার লেখা জিনিস আবার নতুন করে লিখতে বসলে ঠিক যেন দাঁড়ায় না। এক প্রতিমার ওপর আরেক প্রতিমা গড়ার মতো ব্যাপার। তুমি আমায় বাঁচালে মা!’

‘আমি নই, কমলা। বড় লেখকরাও শুনেছি লেখা হারিয়ে ফেলেন। সে গুণটা ধরে গিয়েছে – এবার তাঁদের মত লেখাটা রপ্ত করে ফেল। মনের জানলাটা বড়ো করে বানিয়ো অমু!! মনে যেন সর্বদা রোদ-হাওয়া আসে। খুব ঝড়-বৃষ্টি এলে জানলা বন্ধ রেখো !’
ভাবী লেখককে চমকে দিয়ে সাহিত্যপিপাসু মা চলে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ কি ভেবে থমকে থমকে স্বর্ণময়ী বললেন।
আরও পড়ুন:

মহাভারতের আখ্যানমালা, পর্ব-৪৬: ভৃগুবংশে জন্ম নিলেন পরশুরাম— চরুবদলের ভুলে ক্ষত্রতেজ পেলেন তিনি

নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে, পর্ব-২৫: গিরিশচন্দ্র ঘোষ অভিনীত ও পরিচালিত ‘সীতারাম’ দর্শকদের বেশি আকৃষ্ট করেছিল

কিম্ভূতকাণ্ড, পর্ব-৩: হঠাৎ মেয়েলি খোঁনা গলায় কে যেন খিলখিল করে হেসে বলল—ভঁয় পেঁলে নাঁকি ঠাঁকুর!

‘আর একটা কথা “সোনার চামচ মুখে নিয়ে” এ বাড়িতে কেউ জন্মায়নি অমু। তোমার বড় দুই দাদা বা তুমি নিজে শ্যামপুকুর স্ট্রিটের স্কুলে যেতে হেঁটে। ব্রাহ্ম বালিকাতে দিদি যেত ফিটন চেপে। আর তুমি বড় হয়েছ কলেজে পড়ছ। আরও একটা কথা জানতে পারলে তোমার বাবাকে খানিকটা চিনতে পারবে। দিদির বিয়ে চেতলাতে ঠিক করার ব্যাপারে তোমার ঠাম্মি আর আমার একটু আপত্তি ছিল। মিথ্যে কথা বলব না আমরা দুজনেই চেয়েছিলাম বুড়ির জন্যে একটু সচ্ছল পয়সাওয়ালা ঘর। তোমার বাবার ঘোরতর আপত্তি ছিল। বাবার পয়সায় কাপ্তানি করা ছেলেপুলেকে উনি একদম সহ্য করতে পারেন না। তাই মধ্যবিত্ত ঘরের শিক্ষিত পাত্র প্রবোধকে তাঁর এত পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু প্রবোধ তোমার বাবার পছন্দের মর্যাদা রাখতে পারেনি। তোমার বাবা যেরকম ভেবেছিলেন সেই ভাবে পরিশ্রম করে নিজের উদ্যমে বড় হওয়ার কোনও চেষ্টা প্রবোধের মধ্যে ছিল না। হঠাৎ বড়লোক হওয়ার নেশা থেকে পেয়ে বসেছিল। লোভে পাপ পাপে মৃত্যু!’

এদিনের মায়ের সঙ্গে এই টুকরো কথোপকথন অমলকান্তি সারাজীবন ভোলেনি। মায়ের কথাগুলো শোনার পর ক্রমে পারিবারিক ঐতিহ্যে আত্মস্থ হবার চেষ্টা করে গেছে বাকীজীবন।—চলবে

মনের জানালাকে বড় হতে হবে।

চিত্র সৌজন্য: সত্রাগ্নি
 

পরের পর্ব আগামী রবিবার

‘অগ্নিপরীক্ষা’ থেকেই জনপ্রিয় বাংলা ছবি পেল এক সর্বকালের প্রেমিক জুটিকে। ‘৫৭ সালে মুক্তি পেল পথে হল দেরি। গল্প প্রতিভা বসু, সুর রবীন চট্টোপাধ্যায়। গানে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। “এ শুধু গানের দিন এ লগন গান শোনাবার”— গান শুরুর আগেই মিষ্টি অ্যাকর্ডিয়ানের প্রি-ল্যুড বা “কিছুক্ষণ আরও না হয় রহিতে কাছে” গানের আবেদন চিরকালীন হয়ে থাকল।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন৷ বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন৷ ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না৷ গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে৷ ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com

* বসুন্ধরা এবং (Basundhara Ebong-Novel) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’।

Skip to content