শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫


বিয়েবাড়ির সাজ।

।।শান্তিলতা।।

পাত্র ম্যাকিনন-ম্যাকেঞ্জি কোম্পানিতে অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্ট-এর জুনিয়র এক্সিকিউটিভ। মাইনে-কড়ি ভালো। সচ্ছল জীবনযাপন করতে পারবে। কোম্পানির শিপিং ছাড়াও নানান ব্যবসা। স্ট্র্যান্ড রোডে বিরাট ম্যাকিনন-ম্যাকেঞ্জি বিল্ডিং। বিনয় জানতেন ১৮৪৭ সালে কলকাতার এই কোম্পানির শুরু। স্কটল্যান্ডের উইলিয়াম ম্যাকিনন-এর এই কলকাতাতেই পরিচয় হল স্বদেশেরই উইলিয়াম ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে। তাঁরাই তৈরি করলেন ম্যাকিনন-ম্যাকেঞ্জি। হালে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া স্টিম ন্যাভিগেশনের সঙ্গে কাজ করে এরা।

১৯৫৫ সালে ধুমধাম করে বিয়ে হল শান্তিলতার। বছর ঘুরতেই শান্তিলতার কোল আলো করে এল বিনয়-স্বর্ণময়ীর প্রথম নাতি। বসুন্ধরার পুতি সৌরভ। তবে সৌরভের জন্মের পর থেকেই বিনয়কান্তি বুঝতে পারত মানুষ চিনতে তার হয়ত একটু ভুল হয়ে গিয়েছে। প্রবোধ ছেলে হিসেবে ভালো। সৎ। কিন্তু সে উদ্যমী নয়। নিজের অবস্থার উন্নতির জন্য সে পরিশ্রম করতে রাজি নয়। সে রোজগারের অনেকটা টাকাই শেয়ার কেনাবেচায় খরচ করে। সংসারের টাকা শেয়ারে চলে যায়। বিনয় এসব নিয়ে স্বর্ণ বা বসুন্ধরা কারও সঙ্গে কথা বলতে পারে না। তারা দুজনেই শান্তিলতার পাত্র পছন্দের ব্যাপারে মৃদু আপত্তি জানিয়েছিল। কিন্তু বিনয়ের সিদ্ধান্ত অটুট ছিল। এখন মাঝে মধ্যে মনে হয় হয়তো একটু অপেক্ষা করলে হতো। উপযুক্ত পাত্র হয়তো পাওয়া যেত। বিনয়কান্তির এতদিনকার অভিজ্ঞ চোখে এখন যেন ধরা পড়ে বসুন্ধরা ভিলার ঐশ্বর্য-বৈভব দেখেই তার একমাত্র জামাই প্রবোধ হীনমন্যতায় ভোগে। মেয়ের সঙ্গে জামাইয়ের সম্পর্ক যে ভালো নেই — সেটা বুঝতে অসুবিধে হয় না। বিনয়ের মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে একা প্রবোধ ঘরে ডেকে বলে ‘এই ঐশ্বর্য এই সম্পত্তি এই সম্মান কোনওকিছুই একদিনে হয়নি। এই প্রত্যেকটা জিনিসের পেছনে জমে আছে অনেক কান্না ঘাম অনেক অনেক অপমান। অনেক যন্ত্রণা অনেক ঝুঁকি। অনেক অনেক বিনিদ্র রজনী।’ কিন্তু বলা হয় না। নিজের কথা এভাবে কাউকে বলা যায় না। লড়াইটা একেকজনের একেকরকম।

সকলের অজান্তে বিনয় কয়েকবার ভেবেছে প্রবোধকে কিছু টাকা দিয়ে কোনও একটা ব্যবসা শুরু করতে বলবে। ব্যবসাটা সে, সেই মূলধন দিয়েই শুরু করুক। তার ভাইয়েরা ব্যবসায় পরিশ্রম করুক। ব্যবসা দাঁড়িয়ে গেলে সকলেই সুবিধা পাবে। কিন্তু সে ব্যাপারে না স্বর্ণ’র সঙ্গে আলোচনা করতে পারছে, না মায়ের সঙ্গে। অনেক ভেবেচিন্তে বিনয়কান্তি তারক নিয়োগীর কাছে দিকনির্দেশ চাইলেন। বসুন্ধরা ভিলার কালপুরুষ বা অরিয়ন জানালেন — ‘এ পথ সঠিক নয়। ভুল!’ বাবু জানালেন—এতে বিনয়কান্তির মেয়ে শান্তিলতা অপমানিত বোধ করতে পারে। মনে করিয়ে দিলেন উইলিয়াম পিটারসন বিকেডিকে বলেছিলেন ‘নিজের সহায়-সম্বল জড়িয়ে না থাকলে ব্যবসার মর্যাদা দেওয়া যায় না’। তাই স্ত্রী ও মায়ের গয়না বিক্রি করে যথাসর্বস্ব পিটারসনকে দিতে হয়েছিল।

প্রায় আট বছর পর এল গৌরব—শান্তিলতা ও প্রবোধের দ্বিতীয় সন্তান। বাচ্চা ছোট। চেতলার শ্বশুরবাড়িতে বাচ্চার খুঁটিনাটি কাজ করার মতো লোক নেই। একজন স্কুলে, অন্যটি দুধের শিশু। বাচ্চা সামলে সংসারের কাজকর্ম দেখতে গিয়ে শান্তিলতা বারবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। বাধ্য হয়ে কিছুদিন বসুন্ধরা ভিলায় বিশ্রামের জন্য এল। এই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সাংসারিক অশান্তি শুরু হল। একদিন বসুন্ধরা বিনয়কে সব জানাল। বিনয় সমস্যার কথা শুনলেও সমাধান তার হাতে ছিল না। বসুন্ধরা বলল — স্বর্ণও জানাল। প্রবোধ ইদানিং কেমন বদলে গিয়েছে। অকারণে মেজাজ হারিয়ে ফেলে শান্তিলতার উপর চেঁচামেচি করে। বিনয় নিজেও জামাইয়ের এই পরিবর্তনটা খেয়াল করেছে। তারকবাবুকে নিজের এবং পরিবারের সব সমস্যার কথা বলতে পারত বিনয়কান্তি। প্রবোধের এই পরিবর্তনটা নিয়ে বাবুর সঙ্গে আলোচনা করল বিনয়। তারক নিয়োগী নিজস্ব পদ্ধতিতে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারলেন এক ভয়ংকর সত্য। ৩০ নভেম্বর ১৯৬৬ ক্যালকাটা হাইকোর্টের আদেশবলে রেজিস্টার্ড অফিস কলকাতা থেকে বোম্বের ব্যালার্ড এস্টেটে উঠিয়ে নিয়ে যাবে ম্যাকিনন-ম্যাকেঞ্জি। কলকাতায় কাজের পরিধি কমবে। ফলে অনেক কর্মচারীকে কলকাতা ছেড়ে বোম্বেতে গিয়ে চাকরি বাঁচাতে হবে। কয়েকজনের মতো প্রবোধও কলকাতা ছেড়ে বোম্বে যেতে রাজি নয়। যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল— প্রবোধকে হঠাৎ বড়লোক হবার নেশায় পেয়ে বসেছে। তাকে অফিসের থেকে এখন বেশি সময় ল্যায়ন্স রেঞ্জে ক্যালকাটা স্টক-এক্সচেঞ্জের অফিসের সামনে দেখতে পাওয়া যায়। প্রবোধ নিজের মাইনের টাকা থেকে পাগলের মতো শেয়ারে টাকা লগ্নি করে যাচ্ছে। অফিসের চেনা পরিচিত অনেকের কাছেই এমনকি, কাবলিওয়ালার কাছেও টাকা ধার করেছে। এখনই প্রবোধকে থামাতে না পারলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

বিনয়কান্তি সে সর্বনাশ থেকে পরিবারকে রক্ষা করতে পারেননি। শেয়ারে সর্বস্ব খুইয়ে অফিসের ভিতরে বাইরে পাওনাদারের জ্বালায় জর্জরিত শান্তিলতার স্বামী প্রবোধ সেনগুপ্ত অফিস ছুটির পর এক সন্ধ্যেবেলা ম্যাকিনন-ম্যাকেঞ্জি বিল্ডিং-এর চারতলার বড় জানলা খুলে রাস্তায় ঝাঁপিয়ে পড়ল। দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া রক্তাক্ত মাংসের তাল থেকে মাত্র বছর ৩৫-এর প্রবোধকে শনাক্ত করা শক্ত হয়ে পড়েছিল। বিনয়ের নির্দেশ মেনে তারক নিয়োগী কাগজে বসুন্ধরা ভিলার সঙ্গে এই ঘটনার কোনও সংযোগ উল্লেখ করতে দেননি। পুলিশ নিয়মমাফিক ময়নাতদন্ত করে দেহ সৎকারের জন্য দিয়েছিল গগন ও বিকাশকান্তিকে। প্রবোধের ভাইয়েরা ছিল। দেহ চেতলার বাড়ি থেকে কেওড়াতলা শ্মশানে দাহ হয়েছিল বসুন্ধরা ভিলায় আসেনি। সবটা নিখুঁত ভাবে সামলে ছিলেন বাবু। তবে সবটা সামলাতে পারেননি। বারে বারে জ্ঞান হারিয়ে ফেলা শান্তিলতাকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে হয়েছিল। আর ৬১ বছর বয়সে প্রথম কার্ডিয়াক অ্যাটাকে ধরাশায়ী বিনয়কান্তি দত্তকে নিয়ে ক্লাইভ রো থেকে অ্যাম্বুলেন্স ছুটল উডল্যান্ড হসপিট্যালে। ১৯৬৭তে বেলভিউ তৈরি হবার পর অবশ্য বিনয়কান্তি ও বসুন্ধরা ভিলার বাকি সকলের চিকিৎসা সেখানেই হতো।
আরও পড়ুন:

ধারাবাহিক উপন্যাস, পর্ব-৪৫: বসুন্ধরা এবং…

দশভুজা: যে গান যায়নি ভোলা— প্রাক জন্মদিনে তাঁর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য…/১

বাইরে দূরে: অস্ট্রিয়ার ক্রিস্টাল দুনিয়া— সোয়ার্ভস্কি

মেয়ের জীবনে আকস্মিক অঘটন, স্বামীর অসুস্থতা, স্বর্ণময়ীকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দিয়েছিল। তাই দেহ কেওড়াতলা শ্মশানে পৌঁছতে বড়ছেলে গগনকান্তি যখন ফোনে জানতে চাইল— প্রবোধের ছেলেরা মানে তাদের ভাগ্নেরা কি শ্মশানে আসবে? তখন স্বর্ণময়ীর কাছে কোনও উত্তর ছিল না। স্বর্ণ বলেছিল ঠাম্মির সঙ্গে কথা বলে জানাচ্ছি। প্রবোধ শান্তির দুই ছেলে। বড়জন সৌরভের বয়স তখন ১১ আর ছোট ভাই গৌরব মাত্র ৩। বসুন্ধরা শোনামাত্র নাকচ করে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন —
‘প্রবোধের ভাইদের বল দাহকাজ কাজ করতে। ব্যবস্থা যা করার তোমরা কর। বিনুর হাসপাতাল থেকে তারক আসবে শ্মশানে। তাকে আমি বলে দিয়েছি। মাকে এখন কোন ব্যাপারে বিরক্ত কোরো না। শান্তির এই অবস্থা। বিনুর শরীর ভালো নয়। স্বর্ণর মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়। তুমি বাড়ির বড় ছেলে। নিজে বুদ্ধি করে সিদ্ধান্ত নাও। বাবা কেমন করে কাজ করতেন সেটা তুমি কাছ থেকে দেখেছ। অসুবিধে হলে আমার ঘরের নম্বরে ফোন করবে — মাকে নয়।’

চেতলার বাড়িতে শ্রাদ্ধশান্তির কাজ হয়েছিল। গগন আর বিকাশ নিয়ে গিয়েছিল বোনকে। সৌরভ গৌরব বসুন্ধরা ভিলাতে ছিল। বসুন্ধরার কথা মেনে সাহায্য করেছিল প্রবোধের পরের ভাই সুবোধ। শান্তিলতা আগাগোড়া শ্রাদ্ধে উপস্থিত ছিল। তার ও দু-ছেলের ভুজ্জি সে-ই নিবেদন করল। এই ‘ভুজ্জি’ শব্দটা লেখার পর সুবর্ণ মনে হল—আধুনিক প্রজন্মের জন্য একটু বিশদে বলা দরকার। কথাটা শুনে এসেছে। ব্যাপারটা আসলে কী সেটা জানা দরকার। ‘ভুজ্জি’ শব্দটা এসেছে ভোজ্য থেকে। শ্রাদ্ধে পরলোকগত মানুষের উদ্দেশ্যে অন্ন ও ভোজ্যদ্রব্য নিবেদন করাকেই— ভুজ্জি দান বলে।
আরও পড়ুন:

কিম্ভূতকাণ্ড, পর্ব-১: পোড়া গাছের ডাল থেকে নেমে এল সে! ভাটার মতো সবজে চোখ, ধোঁয়াটে শরীর…

খাই খাই: চিতল মাছের তো খেয়েছেন, এবার চিংড়ির মুইঠ্যার স্বাদ নিন, রইল সহজ রেসিপি

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৩১: স্বাদ-বৈচিত্র্যে অতুলনীয় মাছ চাষে উদ্যোগী হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

বিনয়কান্তি হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছে। তবে অফিস জয়েন করতে পারেনি। বাড়িতেই বিশ্রামে আছে। তারক নিয়োগীকে দিয়ে প্রবোধের সহকর্মী এবং বাইরের লোকজনের কাছে সমস্ত ধার শোধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল বিনয়কান্তি।

বিনয় সুস্থ হবার পরে নিজে গিয়েছিল প্রবোধের মা-বাবা ভাইদের সঙ্গে দেখা করতে। তাদের কাছে করজোড়ে অনুরোধ জানিয়েছিল—মেয়ে এবং নাতিদের বিনয়কান্তি নিজের কাছে রাখতে চায়। প্রবোধের মা-বাবা ছেলের হঠকারী সিদ্ধান্তের জন্য যথেষ্ট বিব্রত ছিল। তাঁরা কোনও আপত্তি করলেন না। এরপর শান্তিলতা ও তার ছেলেদের পাকাপাকি ঠিকানা হল বসুন্ধরা ভিলা।

এ জন্যই হয়তো বলে, বৈবাহিক সম্পর্ক সমানে সমানে করা উচিত। তাদের মতো সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে উদ্যোগপতি বিনয়কান্তি দত্ত যখন মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে এসেছিলেন তখন প্রবোধের মা-বাবা যথেষ্ট অবাক হয়েছিল। গায়ে-হলুদের তত্ত্বের বহর দেখে চমকে উঠেছিল সেনগুপ্ত পরিবার। ছেলের বিয়েতে প্রবোধের মা আসেননি। কিন্তু বিয়েতে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা দেখে প্রবোধের বাবা-ভাই মামাদের ধাঁধা লেগে গিয়েছিল। সে সময়ে কলকাতায় পংক্তিভোজই রীতি ছিল। নিমন্ত্রিতরা ঘুরেফিরে সাজানো খাবার দেখে দেখে পছন্দ মতো খাবার ডিসে তুলে নিচ্ছে। এমন ব্যুফে পদ্ধতি সেই সময়ে কল্পনাতেও ছিল না কারও। কলাপাতায় লুচি লম্বা বেগুনভাজা ছোলার ডালে অভ্যস্ত বরযাত্রীরা সারসার টেবিলে থরেথরে সাজানো সুগন্ধি ভাত, পোলাও বিরিয়ানি, অথবা লুচি কচুরি পরোটার নানান পদ বা রকমারি মাছ এবং মাংসের সম্ভার কিংবা হরেক কিসিমের চাটনি আচার টপকে সন্দেশ রসগোল্লা পান্তুয়া দই রাবড়ির চেনা চেহারা ছাড়িয়ে অসংখ্য অচেনা দিশি-বিলিতি মিষ্টি বা কেক-পেস্ট্রির আয়োজনে হতবাক। সেনগুপ্তদের আত্মীয়স্বজনের মধ্যে মাসখানেক গল্পকথা ছড়িয়ে পড়েছিল বসুন্ধরা ভিলায় প্রবোধের বিবাহ আয়োজনের। বিয়ের রাতে বাড়ি ফিরে প্রবোধের বাবা তাঁর স্ত্রী মানে শান্তিলতার হবু শাশুড়ি-মাকে বলেছিলেন— “বিয়ে তো দিলুম খোকার মা!! এখন তেলে-জলে মিশ খেলে হয়!!”
আরও পড়ুন:

শাশ্বতী রামায়ণী: পর্ব ২৬: ‘সত্যেরে লও সহজে’—রাজসুখ ছেড়ে কি তবে বনবাসী মন?

পর্দার আড়ালে, পর্ব-২১: ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ শুটিংয়ে সিউড়ির বাঁশবনে দু’ দুটি বাঘ আনিয়েছিলেন সত্যজিৎ

মহাভারতের আখ্যানমালা, পর্ব-৪৪: বনের পথে গল্প রাশি রাশি— যাত্রাপথ যত এগোয় তত অভিজ্ঞতার ঝুলি ভরে ওঠে পাণ্ডবদের

শান্তিলতা প্রকৃত অর্থেই শান্ত প্রকৃতির ছিল। মা স্বর্ণ’র মতো নয় বরং খানিকটা তার দিদিমা কণিকার মতো। গ্রাজুয়েট হবার পর মন্তেসরি ট্রেনিং নেবার ইচ্ছে ছিল। মা স্বর্ণময়ীর বই পড়ার শখ। গ্রে স্ট্রিটের বাড়িতে অতটা জায়গা ছিল না বলে মায়ের সব শখের বইপত্র বরানগরের দাদুর বাড়িতে রাখা ছিল। অন্যদের ক্ষেত্রে মামার বাড়ি বলা হয় কিন্তু গগন বিকাশ বা শান্তিদের তো মামা ছিল না। এই বরানগরের বাড়িটা দাদুর বাড়িই বলা হতো। গ্রে স্ট্রিটের বাড়ি থেকে বড়দাদা মেজদাদার সঙ্গে জিপে করে অনেকবার বরানগরে যাওয়া হয়েছে। বালিগঞ্জ প্লেসে বসুন্ধরা ভিলা তৈরি হবার পর একতলায় একটা লাইব্রেরির ঘর তৈরি করা হল। আর বরানগরের বাড়ি থেকে গাড়ি করে রাজ্যের বই এনে সেই লাইব্রেরি ঘরের সারসার আলমারি বোঝাই করা হলো। পরে অবশ্য সেই ঘরটা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করত শান্তির পরের ভাই-অমু। অমলকান্তি। লাইব্রেরি ঘরেই একটা বইতে ইতালিয়ান ডাক্তার মারিয়া মন্তেসরির কথা প্রথম পড়ে শান্তিলতা। খুব ভালো লেগেছিল বাচ্চাদের পড়ানোর জন্য তাঁর চিন্তাভাবনা। মন্তেসরি এডুকেশন নিয়ে ট্রেনিং নেবার ইচ্ছেটা কাউকে বলার আগেই বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। বাড়ির উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল ছিল শান্তিলতা। আগে থেকে তার মতামত আলাদা করে জানতে চাওয়া হয়নি আর সে কোন মতামত দেয়নি। বিয়ের সপ্তাহ দুয়েক আগে ঠাম্মি বলেছিল—
‘কিরে ছুঁড়ি বিয়েতে মতো আছে তো? দেখিস বাবা পরে আবার লোক হাসাস নি।’
আরও পড়ুন:

নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে, পর্ব -২৪: ন্যাশনাল থিয়েটারে মধুকবির ‘মেঘনাদবধ কাব্যে’র গিরিশচন্দ্রের নাট্যরূপ মুগ্ধ করেছিল দর্শকদের

ভালো-বাসা: বাড়ির ছাদ বারান্দাতেই আম, কলা, নারকেল, সবজি ফলাতে চান? মাথায় রাখুন এই দশটি টিপস

ত্বকের পরিচর্যায়: শীতে কি আপনার ত্বক শুকিয়ে যায়? মেনে চলুন ত্বক বিশেষজ্ঞের এই পরামর্শগুলি

শুনে শান্তিলতা হেসেছিল। তখন মাঝেমধ্যে বিয়ের রাতে ক’নে পালিয়ে যাওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। তবে বিয়েটা হয়ে যাবার কিছুদিন পর শান্তিলতার মনে হয়েছিল সবকিছু যেন সুরে বাজছে না। অন্য পাঁচটা মেয়ের মতো শান্তিলতাকেও গান শেখানো হয়েছিল। তানপুরা নিয়ে দস্তুরমতো শাস্ত্রীয় সংগীত। গানের মাস্টারমশাই হারমোনিয়াম ধরতেন। শান্তিকে তানপুরা নিয়ে গাইতে হতো। গান গাওয়াতে মজা পেত না শান্তি। কিন্তু সুরের কানটা খুব ভালো ছিল। খুব ভাল তানপুরা বাঁধতে পারত। বয়স্ক সঙ্গীত শিক্ষক বলতেন, মন দিয়ে গানটা শিখলে ভালো গাইত। গান গায়নি শান্তিলতা। ভেবেছিল মন দিয়ে সংসার করবে।—চলবে

ম্যাকিনন ম্যাকেঞ্জি বিল্ডিং (ছবি: সংগৃহীত)।

চিত্র সৌজন্য: সত্রাগ্নি
 

পরের পর্ব আগামী রবিবার

বসুন্ধরা যেন নিজের জীবনের প্রতিচ্ছবি আবার দেখতে পাচ্ছে। তফাৎ শুধু এইটুকু বসুন্ধরার স্বামী দেশান্তরি হয়েছিল। তাঁর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। শান্তিলতার স্বামী চিরদিনের মতো পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। বিনয়কে ডেকে বসুন্ধরা আলাদা করে বলে। শান্তির নামে একটা আলাদা করে ব্যবসা বা কিছু করে দে। যাতে সে কিছুটা রোজগার করতে পারে। দেখিস তার আত্মসম্মানে যেন কোনওদিন ঘা না লাগে।…বারোটা বছর আমি নিজে এই যন্ত্রণা সহ্য করেছি। আমি চাই না শান্তিলতা একই কষ্টে গুমরে মরুক।

* বসুন্ধরা এবং (Basundhara Ebong-Novel) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন৷ বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন৷ ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না৷ গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে৷ ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content