শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪


পাশাপাশি বসিবার। ছবি সৌজন্য: সত্রাগ্নি।

বসুন্ধরা ভিলায় বাড়ির পুত্রবধূরা এখানে অনেক বেশি স্বাধীনতা পান। একমাত্র বাবলি ছাড়া সকলেই মোটামুটিসুখী। অবশ্য বাবলিও এখন স্বাধীন এবং তরুণকান্তির মাসোহারার ৭৫ ভাগ তরুণকান্তির নির্দেশে এখন বাবলি পায়। সুতরাং আর্থিকভাবেও যথেষ্ঠ স্বাবলম্বী। তবে মানসিকভাবে সুখ নেই বাবলির মনে। এত অপমান অত্যাচারের পরেও প্রণয়কান্তিকে বাবলি এখনও ভালবাসে। অথচ প্রণয়ের জীবনে বাবলির সম্ভবতঃ আর কোনও অস্তিত্ব নেই।তবেবাবলিএসেছে ’৯৮ সালে। তখনঅনেকবদলেগিয়েছে বসুন্ধরা ভিলা।

বসুন্ধরা ভিলার সকলের সঙ্গে ভালো করে আলাপপরিচয় হবার আগেই ঋতু ব্যাগ গুছিয়ে তনুদাদার হাত ধরে প্লেনে চাপল।

মাঞ্চেস্টারের সাওদার্ন ন্যু হ্যাম্পশায়ার ইউনিভার্সিটিতেই আমাদের খুড়তুতো বোন রোসিন পড়াশোনা করে। সেখানেই আবার পড়ান কীরা কাকিমার এক দাদার বৌ। রোসিন মামা-মামির কাছে থাকে। সেখানেই গিয়ে উঠবে তনু দাদা আর ঋতু। তবে এটা ইংল্যান্ডের ম্যাঞ্চেস্টার নয়। আমেরিকার ন্যু ইংল্যান্ডের উত্তরে ন্যু হ্যাম্পশায়ারের জমজমাট শহর ম্যাঞ্চেস্টার। বিলেতে অবশ্য হ্যাম্পশায়ারও আছে ম্যানচেস্টারও আছে। হ্যাম্পশায়ার লন্ডনের দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে পৌনে দু’ ঘণ্টার ড্রাইভ। আর ম্যানচেস্টার লন্ডন থেকে উত্তরে চার ঘণ্টা গাড়িতে।
অফিসের চাকরির মতোই সারা সপ্তাহ কলেজ সপ্তাহন্তে নির্ভেজাল ছুটি। কাজের দিনগুলো ঋতু একা একা বেড়াতো। উইকেণ্ডে তন্ময়-ঋতু আশপাশের পার্ক রিসর্টে বেড়াতে যেত। বিয়ের পর ছটা মাস স্বপ্নের মত কেটে গেল। সাত মাসে বাড়ি থেকে জরুরি তলব এল। সার্টিফিকেট এবং বউকে বগলদাবা করে বাড়ি ফিরতে হবে কারণ তন্ময়ের ছোট বোন তনিমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। চিন্ময়কান্তি তন্ময়কান্তি মৃন্ময়কান্তির পর তনিমা। মৃন্ময় বিয়ে করবে না জানিয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপে মৃন্ময় জয়েন করতে চায়নি। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র মৃন্ময় কলেজে পড়ায়। কাগজে পত্রিকায় ফ্রিল্যান্স লেখালেখি করে। ফটোগ্রাফি করে। সিনেমা তৈরি করার পাগলামি বয়ে নিয়ে জীবন কাটায়। তনিমা লেডি ব্রেবর্ন থেকে ফিলোজফি অনার্স নিয়ে পাস করেছে। পাত্র অনিরুদ্ধ সেনগুপ্ত চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট। পৈত্রিক ফার্মেই প্র্যাকটিস করে। বাবা চন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত বিখ্যাত চার্টাড অ্যাকাউন্টেন্ট ছিলেন।
আরও পড়ুন:

দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং..., ২য় খণ্ড, পর্ব-৪০: ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নের মতো, সেলিব্রিটির ফ্যানেরা যদি উবে যায়?

রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, ঘোমটা, পর্ব-১: বাবুর জীবনসঙ্গী বলতে কেবল একটি কাকাতুয়া

বিয়ে বাড়িতেই সুখবর পাওয়া গেল ঋতু সন্তানসম্ভবা। আর এই বিয়ে বাড়িতেই তনিমার এক হবু দেওরের সূত্রে জানা গেল মৃণ্ময়কান্তি আর ঋতু পরস্পরের যথেষ্ঠ পরিচিত।সে আবার যাদবপুর ইউনিভার্সিটির প্রাক্তনী। এই নিয়ে তো ওরা কেউই আগে কিছু বলেনি! মৃণ্ময় আর ঋতুকে মুখোমুখি চেপে ধরা হল ওরা জানালো যে এত দ্রুত সব ঘটে গিয়েছে। তারপর এতদিন ঋতুরা বাইরে ছিল। এসব নিয়ে কথাই ওঠেনি বা নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন হয়নি। মৃন্ময় জানাল, ও জানত যে তনুর বিয়েতে ব্যাপারটা ক্লিয়ার করে দেওয়া হবে যে, মৃন্ময় দাদার বউকে বৌদি নয় ঋতু বলে ডাকবে তুইতোকারি সম্পর্কটাই বজায় থাকবে। সেটাতে কোন সমস্যা নেই কারণ ছোটকা আমার মাকে সেজ বৌদি বললেও ‘তুই’ বলে।
বিয়ে বাড়িতেই সুখবর পাওয়া গেল ঋতু সন্তানসম্ভবা। আর এই বিয়ে বাড়িতেই তনিমার এক হবু দেওরের সূত্রে জানা গেল মৃণ্ময়কান্তি আর ঋতু পরস্পরের যথেষ্ঠ পরিচিত।সে আবার যাদবপুর ইউনিভার্সিটির প্রাক্তনী। এই নিয়ে তো ওরা কেউই আগে কিছু বলেনি! মৃণ্ময় আর ঋতুকে মুখোমুখি চেপে ধরা হল ওরা জানালো যে এত দ্রুত সব ঘটে গিয়েছে। তারপর এতদিন ঋতুরা বাইরে ছিল। এসব নিয়ে কথাই ওঠেনি বা নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন হয়নি। মৃন্ময় জানাল, ও জানত যে তনুর বিয়েতে ব্যাপারটা ক্লিয়ার করে দেওয়া হবে যে, মৃন্ময় দাদার বউকে বৌদি নয় ঋতু বলে ডাকবে তুইতোকারি সম্পর্কটাই বজায় থাকবে। সেটাতে কোন সমস্যা নেই কারণ ছোটকা আমার মাকে সেজ বৌদি বললেও ‘তুই’ বলে।
আরও পড়ুন:

অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-১২: ওই স্মৃতি ভুলতে কি আর পারি…

পরিযায়ী মন, পর্ব-১২: নেতারহাটের নাশপাতি বাগান

হইহই করে বিয়েবাড়ি মিটলো। বাড়ির সকলের আদর যত্নে দিন কাটাচ্ছিল সন্তানসম্ভবা ঋতু। হিসেব মতো মৃন্ময়কান্তির বিয়ে নিয়ে এবার বাড়িতে উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু পাত্র মৃণ্ময়ের কোন তাগিদ নেই। সে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। নিজের তোলা দারুণ দারুণ ছবিসহ ইংরিজিতে ভ্রমণকথা লেখে। বাবা মৃণ্ময়কান্তির ছবি এবং লেখার খুব প্রশংসা করেন।

এতকিছুর মধ্যে হঠাৎ একটা ঘটনায় খেয়াল হল তারক নিয়োগীর বয়স বেড়েছে।দাদু বা ঠাম্মির বহু আপত্তি সত্ত্বেও তারক নিয়োগী তাঁর বাসস্থান ক্রিক রো-এর সেই বহুদিনের মেসবাড়ি বদল করেননি। ওপার বাংলায় ১৯৪৬-এর অনেক আগে ১৯৩০-এর দাঙ্গায় পরিবার পরিজন সকলকে হারিয়ে পাবনা থেকেকোনওক্রমে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছিলেন এই বঙ্গে। বনগাঁ কাছে একটি জায়গায়। দূরসম্পর্কের পরিচিতির সূত্রে এক নিম্ন মধ্যবিত্তের আশ্রয় থাকার সময় ক্রমাগত চাকরির চেষ্টা করতে করতে বিনয়কান্তির মুখোমুখি হলেন। হয়ে উঠলেন বিনয়কান্তির যোগ্য সহকারি। বসুন্ধরা ভিলার দিকনির্দেশিকা। অরিয়ন বা কালপুরুষ।
তারপর আজ পর্যন্ত কোম্পানি ও পারিবারিক নানা সমস্যায় এই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে কর্তব্য পালন করে গিয়েছেন ছোটখাটো চেহারার তারক নিয়োগী। বিনয়কান্তি তার পরবর্তীকালে গগনকান্তি বা তার ভাইয়েরা ক্রমাগত অনুরোধ করেছেন তারকবাবুকে মেস ছেড়ে বসুন্ধরা ভিলার আউটহাউসে উঠে আসার জন্য। ‘বাবু’রাজি হননি। তারকবাবুকে যে,এই পরিবারের সকলে নাম না বলে শুধুমাত্র ‘বাবু’ সম্বোধনে ডাকেন এটা এতদিনে পাঠকরা জেনে গিয়েছেন। তবে আমার মা সুরঙ্গমা যে তাকে অন্যদের মতো বাবু না বলে কাকাবাবু বলে ডাকে সেটা বলা হয়নি। এটাও বলা হয়নি যে বসুন্ধরা ভিলার দুজন সদস্য তাকে ‘তারক নিয়োগী’ বা শুধু ‘নিয়োগী’ বলে সম্বোধন করেন। তারা দু’জন হলেন আমার ন’কাকিমা সুজাতা এবং তার যোগ্য পুত্র প্রণয়কান্তি। বসুন্ধরা ভিলার আউটহাউসে থাকার সংকোচ বাকুণ্ঠাউপলব্ধি করে আমার বাবা অমলকান্তি বলেছিলেন বাবু যেন কাছাকাছি একটা কোন ছোটখাট ফ্ল্যাটে চলে আসেন। দাদু এই প্রস্তাবে খুব খুশি হলেও তারক নিয়োগী নিজে কিছুতেই রাজি হননি। বিনয়কান্তি কখনই তারক বাবুকে কোন বিষয়ে জোর করতেন না। সেবারও করেননি।
আরও পড়ুন:

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২১: ওঠো ওঠো রে! বিফলে প্রভাত বহে যায় যে!

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১৭: মা সারদার ভগবতী সাধনা

কিন্তু এবার আর কোন ওজর-আপত্তি টিকলো না। বসুন্ধরা ভিলার কাছাকাছি ব্রড স্ট্রিট আর পাম এভিনিউ এর জংশনের কাছাকাছি একটা বাড়ির একতলায় বাবুর জন্য একটা ফ্ল্যাট ব্যবস্থা করা হলো। তার আগে মাসখানেক পায়ে ব্যান্ডেজ করে বসুন্ধরা ভিলার আউটহাউসে বাবুকে শুয়ে থাকতে হয়েছে। আসলে অফিস থেকে ফিরে মেসের সিঁড়ি দিয়ে তার তিন তলার ঘরে যাচ্ছিলেন। হয়তো কোন কারনে অন্যমনস্ক ছিলেন। সিঁড়িতে ওঠার সময় পা’টা সিঁড়িতেঠোক্কর খেয়ে পড়ে যান। পায়ের পাতার উপরে পুরো শরীরের ভার গিয়ে পড়ে। পায়ের পাতায় চিড় ধরে। বাবু খবর দিতে না চাইলেও মেস ম্যানেজার পরে বকুনির ভয়ে বসুন্ধরা ভিলায় ফোন করে খবরটা জানিয়ে দিল। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির গাড়ি গিয়ে বাবুকে হাসপাতালে নিয়ে গেল কিন্তু ফেরত এলেন আউটহাউসে।চললো চিকিৎসা এক্সরে। তারপর বাবুর কোন ওজর আপত্তি না শুনে ব্রড স্ট্রিটের বাড়িতে বাবু থাকার ব্যবস্থা পাকাপাকি ভাবে করা হল।

১৯৮৫-র অগস্ট মাস। তনুদাদা হঠাৎ করে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে একটা ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে ডাক পেল। কিছু কিছু লোকের বিদেশের প্রতি একটা মোহ থাকে। তনুদাদা মানে তন্ময়কান্তির সেটা ভীষণভাবে ছিল। ডাক্তার ঋতুর এক্সপেক্টেড ডেলিভারি ডেট দিয়েছে অগাস্টের শেষাশেষি। ইনি পরিচিত সিনিয়র ডাক্তার। সানন্দার চেনা। যা হয় একেবারে বাড়ির রোগী হলে বাইরের ডাক্তারই দেখেন।
যাই হোক তন্ময়কান্তি ফিরে আসবে অগাস্টের ২৬শে। অন্য কেউ হলে হয়তো এই অবস্থায় যাওয়াটা ক্যানসেল করত। কিন্তু ওই যে বললাম তনুদাদার ভয়ংকর মোহ।বিদেশযাত্রার সুযোগ সে কোনভাবেই ছাড়তে রাজি নয়।তাছাড়া বাড়িতে এত লোকজন-মা-কাকিমারা রয়েছে। সানন্দার মতো একজন অভিজ্ঞ গাইনি রয়েছে হাতের কাছে।

ডাক্তাররা বলেন, ডেলিভারির দিনক্ষণ আগুপিছু হয়। সানন্দা মাঝেমাঝে এসে ঋতুকে বাড়িতে চেকআপ করে যেত। অগাস্টের ২১ তারিখ সে ঋতুকে দেখে মাকে বলে গেল।

—কোন সমস্যা হলে আমাকে খবর দিও। ঋতুকে দেখে মনে হচ্ছে ওর ডেলিভারি একটু এগিয়ে এসেছে।বেবি মুভ করে গিয়েছে। আমি ওর গাইনির সঙ্গে কথা বলছি।

ডাক্তার হিসেবে নিজের বোন সানন্দার অনুমানশক্তি যে কতখানি প্রখর তার পরিচয় পেলাম। ঠিক একদিন পর ২২তারিখ বিকেলের দিকে ঋতুর অস্থিরতা শুরু হল। সন্ধ্যের পর প্রসববেদনা শুরু হল রাতে এসে ঋতুকে দেখে সানন্দা নিজে গিয়ে বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা দিল।

২৩ তারিখ কাকভোরে মায়ের ঘরের টেলিফোন বাজল, মা ফোন ধরে যা শুনল সেই সাংঘাতিক দুঃসংবাদ শোনার ক্ষমতা বসুন্ধরা ভিলার কারোর ছিল না।—চলবে।

সুখে দুঃখে টেলিফোন। ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

 

বসুন্ধরা এবং… ২য় খণ্ড/পর্ব-৪২

…বসুন্ধরা ভিলায় এত নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে যা বলে বোঝানো যাবে না। জীবন-মৃত্যুর এমন নাটকীয় সন্ধিক্ষণ পৃথিবীর একপ্রান্তে স্রষ্টার শেষ অন্য প্রান্তে সৃষ্টির শুরু। কেউ কাউকে দেখলো না। কেউ কাউকে জানলো না।

ঠিক একদিন পর ২২ তারিখ বিকেলের দিকে ঋতুর অস্থিরতা শুরু হল। সন্ধের পর প্রসববেদনা শুরু হল। রাতে এসে ঋতুকে দেখে সানন্দা নিজে গিয়ে বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা দিল। ২৩ তারিখ কাকভোরে মায়ের ঘরের টেলিফোন বাজল, মা ফোন ধরে যা শুনল সেই সাংঘাতিক দুঃসংবাদ শোনার ক্ষমতা বসুন্ধরা ভিলার কারও ছিল না।
‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন৷ বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন৷ ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না৷ গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে৷ ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com

Skip to content